হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১০৬০-১২৭৯) (ঝ)


 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন,
 جَعَلَ عَلَى النّاقَةِ حضرت قَيْسَ بْنَ أَبِي صَعْصَعَةَ رضى الله تعالى عنه أَخَا بَنِي مَازِنِ بْنِ النّجّارِ .
 অর্থ: সে দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাফিলার পশ্চাৎভাগে বনূ মাযিন ইবনে নাজ্জারের সদস্য হযরত কায়স ইবনে আবী সা’সা’হ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিযুক্ত করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
 وَكَانَتْ رَايَةُ الْأَنْصَارِ مَعَ حضرت سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ رضى الله تعالى عنه
 অর্থ: সে দিন হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পতাকা মুবারক ছিলো হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকে। সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুন নববী- ইবনে হিশাম, আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, আর রহীকুল মাখতূম, আব বিদায়া ওয়ান নিহায়া, হায়াতু মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ )
স্বরণীয় যে, এই সম্মানিত ঐতিহাসিক বদর জিহাদে মুসলিম বাহিনীর দক্ষিণ বা ডান বাহুর নেতৃত্বে হযরত সাআদ ইবনে খায়ছাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং বাম বাহুর নেতৃত্বে হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
 عَنْ حضرت عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ رضى الله تعالى عنه قَالَ  جَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شِعَارَ الْمُهَاجِرِينَ يَوْمَ بَدْرٍ يَا بَنِى عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَشِعَارَ الْخَزْرَجِ يَا بَنِى عَبْدِ اللَّهِ وَشِعَارَ الأَوْسِ يَا بَنِى عُبَيْدِ اللَّهِ وَسَمَّى خَيْلَهُ خيل الله.
 অর্থ: হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত জিহাদ উনার কিছু সংকেতিক বিষয় মুবারক নির্ধারণ করেছিলেন, (১) মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আহবান করার জন্যে ‘ইয়া বনী আবদির রাহমান’ (২) খাযরাজ গোত্রের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আহবান করার জন্যে ‘ইয়া বনী আবদিল্লাহ’ এবং (৩) আঊস গোত্রের হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সঙ্কেতসূচক শব্দ মুবারক ছিলো ‘ইয়া বনী উবাইদিল্লাহ’। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ঘোড়া মুবারক উনার নাম রাখা হয়েছিলো ‘ খাইলুল্লাহ’। সুবহানাল্লাহ! (সুনানুল বাইহাক্বিল কুবরা, মা’রিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, দালায়িলুন নবুওওয়াহ, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 প্রসিদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে,
 قَالَ  حضرت ابْنُ إسْحَاقَ رحمة الله عليه وَدَفَعَ اللّوَاءَ إلَى حضرت مُصْعَبِ بْنِ عُمَيْرِ بْنِ هَاشِمِ عليه السلام. قَالَ حضرت ابْنُ هِشَامٍ رحمة الله عليه وَكَانَ أَبْيَضَ . قَالَ حضرت ابْنُ إسْحَاقَ رحمة الله عليه وَكَانَ أَمَامَ رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ رَايَتَانِ سَوْدَاوَانِ إحْدَاهُمَا مَعَ حضرت حضرت عَلِيّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ عليه السلام، يُقَالُ لَهَا  الْعُقَابُ وَالْأُخْرَى مَعَ بَعْضِ الْأَنْصَارِ-
 অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুছয়াব ইবনে উমাইর ইবনে হাশিম আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে সম্মানিত জিহাদের পতাকা মুবারক অর্পণ করা হয়। হযরত ইবনে হাশিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত পতাকা মুবারক উনার রং ছিলো সাদা। সুবহানাল্লাহ! হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে ছিলো দুটি কালো পতাকা মুবারক। উনার একটি ছিলো সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে। এ পতাকা মুবারকের নাম ছিলো উকাব (ঈগল)। আর অন্য পতাকাটি ছিলো জনৈক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারকে। সুবহানাল্লাহ!
 উল্লেখ্য যে, এ সম্মানিত বদর জিহাদে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনমহু উনাদের মধ্য থেকে ৬ জন মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং ৮ জন আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শাহাদাতী শা’ন মুবারক প্রকাশ করেন। এই সম্মানিত জিহাদ সংঘটিত হয়েছিলো দ্বিতীয় হিজরী পবিত্র ১৭ই রমাদ্বান শরীফ ইয়ামুল জুমআহ বা জুমুয়াবারের দিন। সুবহানাল্লাহ!
 অপর দিকে কুরাইশদের সৈন্য সংখ্যা ছিলো এক হাজার। তাদের সঙ্গে ছিল একশত অশ্ব এবং যুদ্ধাস্ত্র বোঝাই সাতশত বা তার চাইতেও অধিক সংখ্যক উট। তাছাড়া তাদের অশ্বারোহী প্রত্যেকটি সৈনিক বর্মাচ্ছাদিত ছিলো। এমনকি পদাতিক সৈন্যরাও বর্মধারী ছিল। কাফির মুশরিকরা তাদের সর্দারসহ মোট ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়। তারা শোচনীয় ভাবে  হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কাছে পরাজিত হয়। সুবহানাল্লাহ!


 পবিত্র বদরের পথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম : হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাফিলা, যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধের মাল-সামানা নিয়ে নিরাপদে পবিত্র মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন এবং অপর দিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষতি করার জন্য কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের নেতৃত্বে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা যুদ্ধের জন্য ধেয়ে আসছিল। নাউযূবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের আগমনের সংবাদ অবহিত হলে কিভাবে এই জালিম কাফির মুশরিকদের মোকাবিলা করা যায় এ নিয়ে তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে ‘রাওহা’ নামক স্থানে পরামর্শ মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ! কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের হননি।
  উক্ত পরামর্শ মাজলিসে হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার এবং হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই উপস্থিত ছিলেন। সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হচ্ছে এই বিষয়টি জানালেন। এ খবর শোনা মাত্র আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়ে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে নিজেকে কুরবানী বা উৎসর্গ করার কথা ঘোষণা দিলেন। অতপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়ালেন এবং তিনিও অত্যন্ত সুন্দর ভাবে কুরবানী বা আত্মোৎসর্গের ঘোষণা দিলেন। সুবহানাল্লাহ! 
 অতপর হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দঁড়ালেন এবং আরয করলেন,
 امْضِ لِمَا أَمَرَك اللَّهُ  تعالى فَنَحْنُ مَعَك ، وَاَللَّهِ لَا نَقُولُ كَمَا قَالَتْ بَنُو إسْرَائِيلَ لحضرت موسى عليه السلام اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّك فَقَاتِلَا إنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ ، وَلَكِنْ اذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّك فَقَاتِلَا إنَّا مَعَكُمْ مُقَاتِلُونَ
 অর্থ: ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে যে বিষয়ে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন, আপনি সে ভাবেই ব্যবস্থা  নিন অবশ্যই আমরা সবাই আপনার সাথেই আছি। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা বণী ইসরায়ীলদের মতো কখনই বলবো না যে, হে সাইয়্যিদুনা হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি এবং আপনার রব গিয়ে জিহাদ করুন, আমরা এখানে বসে থাকলাম। নাউযূবিল্লাহ! বরং আমরা বণী ইসরায়ীলদের বিপরীত বলবো, আপনি এবং আপনার খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যে জিহাদ মুবারক করবেন অবশ্যই অবশ্যই সেই জিহাদে আমরাও হাযির থাকবো। সুবহানাল্লাহ! (মুসতাদরিকে হাকিম, হায়াতু মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আস সীরাতু লিইবনে হাব্বান, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনার বর্ণনায় আছে,
وَلَكِنَّا نُقَاتِلُ عَنْ يَمِينِكَ وَعَنْ شِمَالِكَ وَبَيْنَ يَدَيْكَ وَخَلْفَكَ
অর্থ: আমরা আপনার ডানে, বামে সামনে ও পিছনে থেকে জিহাদ করবো। সুবহানাল্লাহ!
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিশিষ্ট বর্ণনাকারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি দেখেছি ঐ সময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূরুর রহমত (বা চেহারা মুবারক) আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলো। সুবহানাল্লাহ!
  হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য দোয়া মুবারক করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
 ‘মুসনাদে আহমদের’ মধ্যে হাসান সনদে বর্ণিত রয়েছে,
 قال اصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم لا نقول كما قالت بنو اسرائيل و لكن انطلق انت و ربك فقاتلا انا معكم-
 অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা একমত হয়ে বলেছিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কখনও বণী ইসরায়ীলদের মতো কথা বলবো না। বরং আমরা বলবো আপনি এবং আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করবেন অবশ্যই অবশ্যই আমরাও সে জিহাদ মুবারকে সর্বাবস্থায় আপনার সাথেই থাকবো এবং কাফির মুশরিক ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো। সুবহানাল্লাহ!
  এ প্রেরণাদায়ক ও সন্তোষজনক জবাবে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
اشيروا على ايها الناس
  অর্থ: ‘হে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহম আপনারা আমাকে পরামর্শ দিন।’ হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাইয়্যিদ হযরত সা’দ ইবনে মু’আয রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরব ও আ’যমের সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধভাষী ছিলেন, তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ পরিস্কার ইঙ্গিত ও সূক্ষ্ম ইচ্ছা মুবারক বুঝে ফেললেন এবং তৎক্ষনাৎ তিনি আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই এই ইঙ্গিত হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ। যেহেতু হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে এ ওয়াদা হয়েছিলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর কোন শত্রু আক্রমন আসলে তার বিরুদ্ধে উনারা উনাকে সর্বাত্তক সাহায্য-সহযোগিতা ও উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিবো, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে গিয়ে উনার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণের ওয়াদা ছিলো না। এ জন্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বারবার হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি তাকাচ্ছিলেন।  সুবহানাল্লাহ!
হযরত সা’দ ইবনে মু’আয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আত্মোৎসর্গের বক্তব্য:
 يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لقد آمنا بك و صدقناك و شهدنا أن ما جئت به هو الحقّ، و أعطيناك على ذلك عهود و مواثيق. على السمع و الطاعة و لعلك يا رسول الله صلى الله عليه و سلم خرجت لامر فاحدث الله غيره فامض لما شئت و صد حيال من شئت و اقطع حبال من شئت و سلم من شئت و عاد من شئت و خذ من اموالنا ما شئت و اعطينا ما شئت و ما اخذت منا كان احب الينا مما تركت و ما امرت به من امرنا فامرنا تبع لامرك لئن سرت حتى تاتى برك الغماد لنسيرن معك فوالذى بعثك بالحق لراستعرضت بنا هذا البحر فخضناه و ما تخلف منا رجل واحد ، وما نكره أن تلقى عدوّنا إنا لصبر عند الحرب ، صدق عند اللقاء ، ولعلّ اللّه يريك منا ما تقرّبه عينك، فسر بنا على بركة اللّه-
 অর্থ: ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমরা আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনাকে হক্ব বা সত্য নবী-রসূল এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসাবে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আর আমরা এ সাক্ষ্য দিয়েছি যে, আপনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তা সবই হক্ব বা সত্য। আমরা আপনার আনুগত্য করার এবং আপনার জন্য আত্মোৎসর্গ করার জন্য দৃঢ় শপথ ও মজবূত প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছি। নিশ্চয়ই পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে আপনি আমাদেরকে নিয়ে ভিন্ন উদ্দেশ্য মুবারক নিয়ে বের হয়েছিলেন। আর এখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আরেক অবস্থার সৃষ্টি করে দিয়েছেন। দয়া করে আপনি যে পথে চলা উত্তম মনে করেন সে পথ মুবারকেই চলুন, যার সাথে ইচ্ছা সম্পর্ক সৃষ্টি করুন এবং যার সাথে ইচ্ছা সম্পর্ক ছিন্ন করুন আর যার সাথে ইচ্ছা সন্ধি করুন এবং যার সাথে ইচ্ছা শত্রুতা করুন, সর্বাবস্থায়ই আমরা আপনার সাথে থাকবো। ইনশাআল্লাহ! আমাদের ধন-সম্পদ থেকে যা খুশি তাই নিয়ে নিন এবং আপনি যতটুকু চান ততটুকুই আমাদেকে দান করুন। আর আমাদের সম্পদের যে অংশ আপনি গ্রহণ করবেন তা আমাদের নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয় হবে যা আপনি আমাদের জন্য রেখে দিয়েছেন তার থেকে। সুবহানাল্লাহ! আপনি যদি আমাদেরকে নিয়ে সুদূর ইয়ামানের (মতান্তরে আবিসিনিয়ার) বারকুল গামাদ নামক স্থানেও যাওয়ার নির্দেশ মুবারক দেন, তাহলে আমরা আপনার সথে সেখানেই যাবো। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যিনি আপনাকে হক্ব বা সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, যদি আপনি আমাদেরকে সমুদ্রে লাফিয়ে পরার আদেশও করেন, তা হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়তে প্রস্তুত। আমাদের এক ব্যক্তিও এতে পিছপা হবে না। আমরা শত্রুর মুকাবিলা করাকে অন্যায় মনে করি না। সুবহানাল্লাহ! আমরা অবশ্যই জিহাদের ময়দানে ধৈর্যশীল ও সম্মুখ সমর বা যুদ্ধে সত্যবাদি। আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আর্জি রাখি যে, তিনি আমাদের দ্বারা আপনাকে এমন দৃশ্য দেখাবেন যাতে আপনার চক্ষু মুবারক জুড়িয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! কাজেই আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উনার বরকতে আমাদের নিয়ে জিহাদে চলুন। সুবহানাল্লাহ! (যারকানী, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
স্বরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সা’দ ইবনে মুআয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এরূপ আতেœাসর্গ এবং নিজেকে কুরবানী মূলক বক্তব্য শুনে অত্যন্ত খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
 পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
  قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " سِيرُوا عَلَى بَرَكَةِ اللّهِ فَإِنّ اللّهَ قَدْ وَعَدَنِي إحْدَى الطّائِفَتَيْنِ. وَاَللّهِ لَكَأَنّي أَنْظُرُ إلَى مَصَارِعِ الْقَوْمِ
 অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত বরকতে আপনারা অগ্রসর হন। আপনাদের জন্য সুসংবাদ! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সাথে ওয়াদা মুবারক করেছেন যে, দু’টি দল (তথা সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধের মাল-সামানার কাফিলা এবং কাট্টা কাফির আবু জাহিলের বাহিনী)-এর মধ্যে যে কোন একটি দলের উপর বিজয়ী দান করবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! শত্রুরা কে কোথায় মারা যাবে আমি তাদের সে স্থানগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচিছ। সুবহানাল্লাহ! (সীরতে ইবনে হিশাম, তাফসীরে ত্ববারী, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَإِذْ يَعِدُكُمُ اللَّـهُ إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللَّـهُ أَن يُحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِينَ - لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ-
 অর্থ: স্মরণ করুন! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের কাছে ওয়াদা করেছেন যে, দু’দলের এক দল আপনাদের আয়ত্তাধীন হবে, অথচ আপনারা চাচ্ছিলেন যে, নিরস্ত্র দলটি আপনাদের আয়ত্তাধীন হোক। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি চাচ্ছিলেন যে, সত্যকে তিনি উনার কালাম পাক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কাফিরদের নির্মূল করবেন। এজন্য তিনি হক্ব বা সত্যকে হক্ব বা সত্যরূপে, নাহক্ব বা অসত্যকে নাহক্ব বা অসত্যরূপে প্রতিপন্ন করেন, যদিও অপরাধীরা এটা পছন্দ করে না। (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭-৮)
 অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাফিলার গতিবিধি লক্ষ করার জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে যখন জানতে পারলেন উক্ত কাফিলা মুসলমান উনাদের আওতার বাইরে চলে গিয়েছে। বিপরীদে কাট্টা কাফির আবূ জাহিলের নেতৃত্বে সশ্বস্ত্র বাহিনী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতী নিয়ে কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে।  এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে কুরাইশ কাফির মুশরিকদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হলেন, পরিশেষে তাদেরকে পরাজিত করলেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি এই সম্মানিত জিহাদ উনার মাধ্যমে হক্ব বা সত্যকে স্বমহিমায় সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুমহান শা’ন মুবারক প্রকাশিত করলেন। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
 প্রসিদ্ধ সীরত ও তারিখ গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 ثم ارتحل رسول الله صلى الله عليه وسلم من ذفران فسلك على ثنايا يفال لها الأصافر ثم اانحط منها الى بلد قال له الدبة وترك الحنان بيمين وهو كثيب عظيم كالجبل العظيم ثم نزل قريبا من بدر فركب هو و رجل من اصحابه. قال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه، الرجل هو حضرت ابو بكر الصديق عليه السلام 
 অর্থ: অতপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাফরান নামক স্থান থেকে রওয়ানা হয়ে  আছাফির নামক উঁচু পার্বত্য পথ ও দাব্বাহ নামক নি¤œভূমি অতিক্রম করে হিনান নামক বিরাট পার্বত্য এলাকা ডানে রেখে বদরের কাছাকাছি গিয়ে থামলেন। এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের একজনকে সাথে নিয়ে ঘোড়া মুবারকের পিঠে সাওয়ার হয়ে বেরিয়ে পড়লেন। হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সেই ব্যক্তি ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: