হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১০৬০-১২৭৯) (ণ)


প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 وكان في الأسارى أبو وداعة بن صبيرة السهمي فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن له بمكة ابنا كيسا تاجرا ذا مال وكأنكم به قد جاءكم في طلب فداء ابيه فلما قالت قريش لا تعجلوا بفداء أسرائكم لا بأرب عليكم حضرت محمد صلى الله عليه و سلم وأصحابه قال المطلب بن ابي وداعة وهو الذي كان رسول الله صلى الله عليه وسلم عني صدقتم لا تعجلوا وانسل من الليل فقدم المدينة فأخذ اباه بأربعة آلاف درهم فانطلق به
 অর্থ: “(হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) সম্মানিত বদর জিহাদে বন্দীদের মধ্যে আবূ ওদা’য়া ইবনে যবীরা সাহমী ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, পবিত্র মক্কা শরীফ-এ তার একটা চতুর ছেলে আছে, যে ব্যবসায়ী ও বিত্তশালী। নিশ্চয়ই সে তার পিতাকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য আসবে।
 অন্যদিকে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা বলাবলি করছিল যে, তোমরা তোমাদের বন্দীদের ফিদইয়া বা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবে না, এতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা কঠোর ব্যবস্থা নিবেন। এদিকে মুত্তালিব ইবনে আবূ ওদা’য়া ছেলেটি যার কথা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছিলেন, সে বলল তোমরা সত্যই বলেছ। তোমরা ঠিকই বলেছ, তড়াহুড়া করা ঠিক হবে না। কিন্তু সে গোপনে গভীর রাতে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বেরিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফ-এ পৌঁছে চার হাজার দিরহাম দিয়ে তার পিতাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল।”
এরপর কুরাইশরা তাদের বন্দীদের মুক্তির জন্য লোক পাঠাল। তখন মিকরায ইবনে হাফস ইবনে আখয়াফ নামে এক ব্যক্তি সে হযরত সুহাইল ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুক্তির জন্য এলো। (তিনি তখনও দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন নি।) আর উনাকে বন্দী করেছিলেন, বনূ সালিম ইবনে আওস এর ভাই হযরত মালিক ইবনে দাখশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেন, আমি হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনহু উনাকে বন্দী করেছি। উনার পরিবর্তে অন্য কাউকে আমি বন্দী করতে পছন্দ করিনি।
  বনূ খিনদাফের এ কথা জানা আছে যে, হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিই সে গোত্রের সবচেয়ে সাহসী পুরুষ ছিলেন। যখন কোন যুলুম-নির্যাতনের বিনিময় গ্রহণের সময় আসত তখন একমাত্র সাহসী যুবক হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এর প্রতিশোধ নিতেন। আমি হযরত মালিক ইবনে দাখশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিহাদের ময়দানে তরবারি দিয়ে আঘাত করলে তিনি আমার দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং আমি উনার ঠোঁটে আঘাত করতে বাধ্য হই। (উল্লেখ্য যে, হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নীচের ঠোঁট মুবারক একটু কাটা ছিলো)।
 অন্যদিকে হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন বন্দী হলেন তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি অনুমতি মুবারক দিলে আমি হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সামনের উপরের ও নীচের দুটো দাঁত উপড়ে ফেলি। যাতে উনার মুবারক জিহ্বা বেরিয়ে আসে এবং আপনার বিরুদ্ধে আর বক্তৃতা দিতে না পারেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি উনার মুখ মুবারক বিকৃত করব না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে এরূপ করা শোভনীয় নয় এবং মহান আল্লাহ পাক তিনিও সেটা পছন্দ করেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে এ কথা মুবারকও বললেন যে, এক সময় হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এমন এক ভূমিকা পালন করবেন যার কারণে তিনি প্রশংসিত হবেন।
 যখন মিকরায সে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুক্তির ব্যাপারে কথাবার্তা বলে উনাদেরকে খুশি করলো, তখন উনারা তাকে বললেন, তুমি মুক্তিপণ দিয়ে দাও। সে বলল, উনার মুক্তিপণের পরিবর্তে আমাকে বন্দী করে রাখুন। আর হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ছেড়ে দিন, যাতে তিনি আপনাদের কাছে উনার ফিদয়া বা মুক্তিপণ পাঠাতে পারেন বা নিয়ে আসতে পারেন। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে ছেড়ে দিলেন এবং মিকরাযকে বন্দী করে রাখলেন। মিকরায বলল আমি অপমানিত হওয়াকে ভয় করছি এবং আপনারা জেনে রাখুন হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি।” (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, উয়ূনুল আছার ফি ফুনূনুল মাগাযী)

সম্মানিত বদর জিহাদ উনার পরের দিন ১৮ই রমাদ্বান শরীফ সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত  বিছালী শান মুবারক গ্রহণ:

 সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ হিজরত মুবারক করার পর প্রায় এক বছর কয়েক মাস দুনিয়ার যমীন-এ অবস্থান মুবারক করেন। দ্বিতীয় হিজরী সনের সম্মানিত শা’বান মাসের শুরুর দিকে উনার গুটিবসন্ত হয়। তখন থেকে তিনি সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করেন। সেই যুগের যাহিরী সকল চিকিৎসাই উনাকে করা হয়েছিলো। কিন্তু কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; বরং ধীরে ধীরে মারীদ্বী শান মুবারক বেশি আকারে প্রকাশ পেতে থাকে। এই দিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত বদর জিহাদে যাওয়ার প্রস্তুতি মুবারক গ্রহণ করছেন। এমতাবস্থায় যখন বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত মারিদ্বী শান মুবারক খুব বেশি আকারে প্রকাশ পেয়ে যায়, তখন তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বলেন, আপনাকে সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক-এ যেতে হবে না। আপনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য সম্মানিত মদীনা শরীফেই অবস্থান করুন এবং উনার যথাযথ সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিন। উনার সাথে তিনি হযরত উসামা বিন যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও একই কারণে সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ অবস্থান করার জন্য নির্দেশ মুবারক দেন। এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
خَلَفَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَضْرَتْ عُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَلـٰى حَضْرَتْ رُقَيَّةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فِـىْ مَرَضِهَا وَخَرَجَ اِلـٰى بَدْرٍ وَّهِىَ وَجِعَةٌ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে এবং হযরত উসামা বিন যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে সম্মানিত মদীনা শরীফ রেখে সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক উনার উদ্দেশ্যে বের হন। তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক বেশি আকারে প্রকাশ পায়।”
উল্লেখ্য যে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা বানাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়ার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত উসামা বিন যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে সম্মানিত বদরের জিহাদে না নিয়ে সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ রেখে যান। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিতা বানাত সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক সবকিছুর উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
মূলত, উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া সমস্ত ইবাদাত থেকে; এমনকি জিহাদ থেকেও শ্রেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ! কত শ্রেষ্ঠ এটা জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক সংঘটিত হয় ১৭ রমাদ্বান শরীফ আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন ১৮ই রমাদ্বান শরীফ লাইলাতুস অর্থাৎ সাব্ত শরীফ শেষ রাত্রে। সুবহানাল্লাহ! তখন উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ২১ বছর ৫ মাস ১৫ দিন। হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনিই সর্বপ্রথম সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত কাফন মুবারক পরান এবং উনাকে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
فَجَاءَ حَضْرَتْ  زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ بَشِيْرًا ۢبِوَقْعَةِ بَدْرٍ وَّحَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلـٰى قَبْرِسَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ رُقَيَّةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِنْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْفِنُهَا.
অর্থ: “অতপর সাইয়্যিদুনা হযরত যায়িদ ইবনে হারিছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এমতাবস্থায় সম্মানিত বদর জিহাদ বিজয়ের সুসংবাদ নিয়ে এসেছেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন্ন করছেন তথা উনাকে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখছেন।”(সুনানে কুবরা লিল বাইহাক্বী, তারিখে মদীনাতিন নববিয়্যাহ, খুলাছাতুল ওফা)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুপস্থিতিতে সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সংবাদ মুবারক পাওয়ার সাথে সাথে অবিরত ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিয়ে উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ যিয়ারত করেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত রওজা শরীফে যেয়েও তিনি অজস্র ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করেন। তখন হযরত মহিলা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও কান্না মুবারক করতে থাকেন। এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনাদের কান্না মুবারক বন্ধ করতে উদ্যত হন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বলেন,  হে হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম আপনি থামুন! উনারা তো কান্না মুবারক করছেন অন্তর মুবারক ও চোখ মুবারক-এ। আর অন্তর এবং চোখ মুবারক থেকে যা বের হয়, তা সম্মানিত রহমত মুবারক উনার কারণ। আর হাত ও মুখ থেকে যে ক্রিয়া প্রকাশ পায়, তা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
وَجَعَلَتْ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ تَبْكِىْ عَلـٰى شَفِيْرِ قَبْرِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ رُقَيَّةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَجَعَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَــمْسَحُ الدُّمُوْعَ عَنْ وَّجْهِهَا بِالْيَدِ اَوْ بِالثَّوْبِ.
অর্থ: “আর সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রাবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার কাছেই (দাঁড়িয়ে বা বসে) সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করছিলেন। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত হাত মুবারক অথবা সম্মানিত কাপড় মুবারক দিয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক থেকে সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক মুছে দিচ্ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে ত্বয়ালসী, মুসনাদে আহমদ, মুছান্নাফে আবী শায়বাহ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ইত্যাদি)
এছাড়া স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার জন্য বেমেছালভাবে সম্মানিত দোয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়ার কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক-এ না যেয়েও সম্মানিত বদর জিহাদ মুবারক-এ উপস্থিত থেকে জিহাদ করার বেমেছাল ফযীলত মুবারক হাছিল করেছেন। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ উনার ফযীলত মুবারক উনার মধ্যে সমান অংশীদার হবেন। সুবহানাল্লাহ! এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত বদর জিহাদ উনার সম্মানিত গনীমতের মাল মুবারকও বণ্টন করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এরূপ দৃষ্টান্ত কায়িনাতের বুকে দ্বিতীয় আর নেই। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,
اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَسَمَ يَوْمَ بَدْرٍ لِّعُثْمَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَهْمَهٗ
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদ শেষে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত গণীমতের মাল মুবারকের একটি অংশ মুবারক দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৫৩, যখায়েরুল উক্ববা)
 স্মরনীয় যে, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আ‘লাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, বিনতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, মহাসম্মানিতা বানাত (মেয়ে)। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা হযরত বানাত (মেয়ে) আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে তিনি হচ্ছেন ‘ছানিয়াহ তথা দ্বিতীয়া।’ সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক, সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুক্বইয়্যাহ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিতা আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াতী ও রিসালতী শান মুবারক প্রকাশের ৭ বছর পূর্বে ৩রা রবী‘উছ ছানী শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ সকাল বেলা। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত যাওজুম মুকাররম, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে নিসবতে আযীম শরীফ সম্পন্ন হওয়ার সময় উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ১০ বছর। উনার আওলাদ, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বযূর্গী-সম্মান মুবারক বেমেছাল সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাবাসীর চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! 

পবিত্র মদীনা শরীফ-এ প্রত্যাবর্তন এবং ঘরে ঘরে বিজয়ের সুসংবাদ:
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে,
 أنه كان إذا ظهر على قوم أقام بالعرصة ثلاثة أيام، وقد أقام رسول الله صلى الله عليه و سلم بعرصة بدر ثلاثة أيام كما تقدم وكان رحيله منها ليلة الاثنين، فركب ناقته ووقف على قليب بدر فقرع أولئك الذين سحبوا إليه، ثم سار صلى الله عليه و سلم ومعه الاسارى والغنائم الكثيرة وقد بعث صلى الله عليه و سلم بين يديه بشيرين إلى المدينة بالفتح والنصر والظفر على من أشرك بالله وجحده وبه كفر، أحدهما حضرت عبد الله بن رواحة رضى الله تعالى عنه إلى أعالي المدينة، والثاني حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه إلى السافلة.
 قال  حضرت أسامة بن زيد رضى الله تعالى عنه فأتانا الخبر حين سوينا [ التراب ] على سيدنا حضرت رقية بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان زوجها سيدنا حضرت عثمان بن عفان عليه السلام قد احتبس عندها يمرضها بأمر رسول الله صلى الله عليه وسلم، وقد ضرب له رسول الله صلى الله عليه و سلم بسهمه وأجره في بدر.
 قال حضرت أسامة رضى الله تعالى عنه فلما قدم أبي- حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه - جئته وهو واقف بالمصلى وقد غشيه الناس وهو يقول قتل عتبة بن ربيعة، وشيبة بن ربيعة. وأبو جهل بن هشام، وزمعة بن الاسود، وأبو البختري العاص بن هشام، وأمية بن خلف، ونبيه ومنبه ابنا الحجاج. قال قلت: يا أبة أحق هذا ؟ قال إي والله يا بني.  
  অর্থ: নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন সম্প্রদায়ের উপর বিজয় হলে সেখানে তিন দিন অবস্থান মুবারক করতেন। সে মুতাবিক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদর রণাঙ্গনে তিন দিন অতিবাহিত করেন। লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম রাত্রি মুবারকে বদর প্রান্তর থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি উনার সম্মানিত উটনী মুবারকে আরোহণ করে বদর কুপে নিক্ষিপ্ত কাফির মুশরিকদের লাশদের সম্বোধন করে তাদের পরাজয় ও লাঞ্চনার কথা ব্যক্ত করেন। অতপর তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ-এর অভিমুখে রওয়ানা করেন। আর উনার সাথে ছিলেন বন্দীরা এবং গণীমতের মাল-সামানা। কাফির মুুশরিকদের বিরুদ্ধে বিজয় ও সাহায্যের সুসংবাদ জানানোর জন্য তিনি পূর্বেই দু’জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফে প্রেরণ করেছিলেন। উনারা হলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উঁচু এলাকা মুবারকে পাঠান। আর দ্বিতীয় জন হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনাকে পাঠান নিচু এলাকা মুবারকে। সুবহানাল্লাহ!
 হযরত উসামা ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা যখন পবিত্র বদর জিহাদ উনার বিজয়ের সুসংবাদ পেলাম তখন সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র দাফন কাফন মুবারকের কাজ সুসম্পন্ন করে ফেলেছি। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ী আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মারিদ্বী শা’ন মুবারক গ্রহণ করলে উনার সম্মানিত যাওজুম মুর্কারম সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নুরাইন আলাইহিস সালাম  উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে রেখে যান। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত বদরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত বলে সুসংবাদ দেন এবং প্রাপ্ত গনীমতের মালের একটি অংশ উনাকে দেন। সুবহানাল্লাহ! (তার একটি কারণ হলো, সম্মানিত আহলে বাইতে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা বিনতু মিন বানাতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিয়েছেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাধ্যমে সম্মানিত আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করা,  খিদমত মুবারক করাকে ফরজ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! )
 হযরত উসামা ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমার পিতা হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আগমনের সংবাদ পেয়ে আমি উনার নিকট গেলাম। দেখলাম তিনি ছলাত বা নামাজ আদায়ে করে বসে আছেন এবং  লোকজন উনাকে ঘিরে রয়েছেন। আর তিনি বলছেন, মক্কার কাফির মুশরিকদের নেতা উতবা ইবনে রবীয়া, শায়বা ইবনে রবীয়া, আবূ জাহিল ইবনে হিশাম, যামরা ইবনে আসওয়াদ, আবুল বুখতারী আছ ইবনে হিশাম, উমাইয়া ইবনে খালফ, হাজ্জাদের দুই পুত্র নাবীহ ও মুনাব্বিহ এরা সবাই নিহিত হয়েছে। আমি বললাম, আব্বা ঘটনা কি সত্য? তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! হ্যাঁ হে আমার সন্তান! ঘটনা সত্য। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, জিলদ-৩ পৃষ্ঠা- ৩০৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
  قال حضرت الواقدي  رحمة الله عليه- سيد المرسلين، امام المرسلين، خاتم النبيين، النور المجسم، حبيب الله صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم مرجعه من بدر العصر بالاثيل  فلما صلى ركعة تبسم فسئل عن تبسمه فقال مر بي حضرت  ميكائيل عليه السلام وعلى جناحه النقع فتبسم إلي وقال إني كنت في طلب القوم، وأتاه حضرت جبريل عليه السلام حين فرغ من قتال أهل بدر، على فرس أنثى معقود الناصية وقد عصم ثنييه الغبار، فقال يا حضرت محمد صلى الله عليه و سلم إن ربي بعثني إليك وأمرني أن لا أفارقك حتى ترضى، هل رضيت ؟ قال: نعم.
 অর্থ: “হযরত ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সম্মানিত বদর জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আছীল নামক স্থানে এসে সম্মানিত আছর নামায আদায় করেন। এক রাকয়াত নামায আদায়ের পর তিনি তাবাস্সুমী শা’ন মুবারক প্রকাশ করেন। তাবাস্সুমী শা’ন মুবারক প্রকাশ উনার কারণ সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি হযরত মীকাইল আলাইহিস সালাম উনাকে দেখতে পেলাম, উনার ডানায় ধুলাবালি লেগে রয়েছে এবং তিনি আমার দিকে লক্ষ্য করে মুচকি হেসে বলছেন আমি এতক্ষণ শত্রুদের পিছু ধাওয়া করেছি। এছাড়া সম্মানিত বদর জিহাদ উনার শেষে  হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি একটি মাদী ঘোড়ায় চড়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসেন। ঘোড়াটির কপালের চুল ছিলো বাঁধা এবং তার মুখ ধুলাবালি থেকে রক্ষিত ছিলো। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে আপনার খিদমত মুবারকে  এই নির্দেশ মুবারক নিয়ে পাঠিয়েছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সন্তুষ্ট না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আপনার খিদমত মুবারক থেকে যাবো না। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তিনি উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে দিয়ে বললেন, এখন আপনি কি সন্তুষ্ট? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হ্যাঁ আমি সন্তুষ্ট।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নবুওয়াহ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, জিলদ- ৩ পৃষ্ঠা- ৩০৪)
প্রসিদ্ধ তারিখ ও ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে,
 قال حضرت الواقدي رحمة الله عليه- قالوا وقدم رسول الله صلى الله عليه وسلم حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه و حضرت عبد الله بن رواحة رضى الله تعالى عنه من الاثيل فجاءا يوم الاحد حين اشتد الضحى، وفارق حضرت عبد الله بن رواحة رضى الله تعالى عنه حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه من العقيق، فجعل حضرت عبد الله بن رواحة رضى الله تعالى عنه ينادي على راحلته، يا معشر الانصار رضى الله تعالى عنهم، أبشروا بسلامة رسول الله صلى الله عليه وسلم وقتل المشركين وأسرهم، قتل ابنا ربيعة، وابنا الحجاج، وأبو جهل، وقتل زمعة بن الاسود، وأمية بن خلف، وأسر سهيل بن عمرو.
قال حضرت عاصم بن عدي رضى الله تعالى عنه فقمت إليه فنحوته فقلت احقا يا حضرت ابن رواحة رضى الله تعالى عنه ؟ فقال إي والله وغدا يقدم رسول الله صلى الله عليه وسلم بالاسرى مقرنين. ثم تتبع دور الانصار بالعالية يبشرهم دارا دارا والصبيان ينشدون معه يقولون قتل أبو جهل الفاسق، حتى إذا انتهى إلى دار بني أمية وقدم حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه على ناقة رسول الله صلى الله عليه وسلم القصواء يبشر أهل المدينة، فلما جاء المصلى صاح على راحلته: قتل عتبة وشيبة ابنا ربيعة، وابنا الحجاج، وقتل أمية بن خلف وأبو جهل وأبو البختري وزمعة بن الاسود، وأسر سهيل بن عمرو ذو الأنياب في أسرى كثير، فجعل بعض الناس لا يصدقون حضرت زيدا رضى الله تعالى عنه ويقولون ما جاء حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه إلا فلا حتى غاظ المسلمين ذلك وخافوا. وقد حضرت زيد رضى الله تعالى عنه حين سوينا [التراب] على سيدتنا حضرت رقية بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم بالبقيع،
 অর্থ: “হযরত ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন। ইতিহাস বর্ণনাকারীগণ বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত যায়িদ ইবনে হারিছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে আছীল নামক স্থান থেকে অগ্রগামী দল হিসেবে পবিত্র মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেন। উনারা ইয়াওমুল আহাদি দ্বোহ বা চাশতের সময় এসে পৌঁছেন। আক্বীক্ব নামক স্থানে আসার পর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে পৃথক হয়ে যান। তারপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সাওয়ারীর উপর থেকে এই বলে ঘোষণা দিতে থাকেন, হে হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনারা সুসংবাদ গ্রহণ করুন! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিরাপদে আছেন এবং কাফির মুশরিকরা নিহত হয়েছে ও বন্দী হয়েছে। রবীয়ার দুই পুত্র, হাজ্জাজের দুই পুত্র, আবূ জাহিল, যাময়া ইবনে আসওয়াদ ও উমাইয়া ইবনে খালফ এরা সবাই নিহত হয়েছে এবং সুহাইল ইবনে আমরকে বন্দী করা হয়েছে। হযরত আছিম ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি উঠে উনার কাছে যেয়ে বললাম, হে হযরত ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি যা বলছেন ইহা কি সত্য? তিনি বললেন মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! হ্যাঁ অবশ্যই ইহা সত্য। আগামী কাল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বন্দীদেরকে বেঁধে নিয়ে আসবেন। এরপর তিনি পবিত্র মদীনা শরীফের উঁচু এলাকায় হযরত আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুসংবাদ দিতে থাকলেন। ছোট ছোট বালক আনসার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার সাথে সুর করে বলতে থাকেন ‘কাফির আবূ জাহিল নিহত হয়েছে’। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন বনূ উমাইয়ার আবাসস্থলের কাছে পৌঁছলেন তখন হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত উটনী কাসওয়া মুবারকের উপর আরোহণ করেন এবং পবিত্র মদীনাবাসী উনাদেরকে সুসংবাদ শুনাতে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! যখন তিনি ঈদগাহের কাছে আসলেন, তখন সাওয়ারীর উপর থেকেই উচ্চঃস্বরে বললেন, রাবীয়ার দুই পুত্র  উতবা ও শায়বা এবং হাজ্জাজের দুই পুত্র নিহত হয়েছে। উমাইয়া ইবনে খালফ, আবূ জাহিল, আবুল বুখতারী এবং যাময়া ইবনে আসওয়াদ এরা সবাই নিহত হয়েছে এবং সুহাইল ইবনে আমর যুল আনিয়াবসহ বহু লোক বন্দী হয়েছে। যারা মুনাফিক ছিলো তারা হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা মুবারক অস্বীকার করলো। তারা বলাবলি করতে লাগলো, হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পরাজিত হয়ে এসেছেন। নাউযূবিল্লাহ! এতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা চিন্তিত হয়ে পরলেন এবং উনারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন। হযরত আছিম ইবনে আদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন যখন হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছেন তখন আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুছ ছানিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে পবিত্র জান্নাতুল বাকীতে দাফন মুবারক করে  ফিরছিলাম।” সুবহানাল্লাহ!
وقال رجل من المنافقين لاسامة: قتل صاحبكم ومن معه؟ وقال آخر لابي لبابة رضى الله تعالى عنه قد تفرق أصحابكم تفرقا لا يجتمعون فيه أبدا وقد قتل علية أصحابه وقتل حضرت محمد صلى الله عليه و سلم وهذه ناقته نعرفها، وهذا حضرت زيد رضى الله تعالى عنه لا يدري ماذا يقول من الرعب، وجاء فلا فقال أبو لبابة رضى الله تعالى عنه يكذب الله قولك. وقالت اليهود  ما جاء حضرت زيد رضى الله تعالى عنه إلا فلا. قال حضرت أسامة رضى الله تعالى عنه، فجئت حتى خلوت بأبي فقلت أحق ما تقول ؟ فقال إي والله حق ما أقول يا بني فقويت نفسي ورجعت إلى ذلك المنافق فقلت أنت المرجف برسول الله صلى الله عليه و سلم وبالمسلمين، لنقدمنك إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا قدم فليضربن عنقك، فقال إنما هو شئ سمعته من الناس يقولونه. قال فجئ بالاسرى وعليهم حضرت شقران رضى الله تعالى عنه مولى رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان قد شهد معهم بدرا.
  قال حضرت الواقدي رحمة الله عليه، وهم سبعون في الاصل مجتمع عليه لا شك فيه. قال ولقي رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى الروحاء رؤوس الناس يهنئونه بما فتح الله عليه. فقال له حضرت أسيد بن الحضير رضى الله تعالى عنه يا رسول الله صلى الله عليه و سلم الحمد لله الذي أظفرك وأقر عينك، والله يا رسول الله صلى الله عليه و سلم ما كان تخلفي عن بدر وأنا أظن أنك تلقى عدوا، ولكن ظننت أنها عير ولو ظننت أنه عدو ما تخلفت. فقال له رسول الله صلى الله عليه و سلم " صدقت " -
 অর্থ: জনৈক মুনাফিক হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে বলল, আপনার যিনি নবী ও রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। নাউযূবিল্লাহ! উনার সাথে উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও শহীদ হয়েছেন। নাউযূবিল্লাহ! আর এক মুনাফিক হযরত আবূ লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলল, আপনাদের যিনি নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এমন ভাবে ছত্রভঙ্গ হয়েছেন যে, আর কোনদিন উনারা একত্রিত হতে পারবেন না। নাউযূবিল্লাহ! এই জিহাদে হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং উনার সঙ্গী তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা শহীদ হয়েছেন। নাউযূবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও বিছালী শা’ন মুবারক গ্রহণ করেছেন। নাউযূবিল্লাহ! মুনাফিকরা বলল, এইতো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উষ্ট্রী মুবারক। আমরা সেই সম্মানিত উষ্ট্রী মুবারক চিনি। আর হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ভীত হয়ে কি বলছেন না বলছেন তা তিনি নিজেই বুঝতে পারছেন না। আর তিনি পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছেন। নাউযূবিল্লাহ! হযরত আবূ লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে দিবেন। অপর দিকে ইহুদীরা বলতে লাগলো হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিতো পরাজিত হয়েই এসেছেন। নাউযূবিল্লাহ! হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এসব কথাবার্তা শুনে আমি একান্তে আমার  পিতা হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে মিলিত হলাম এবং উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি যে সংবাদ দিয়েছেন তা কি সত্য? তিনি বললেন, হে আমার ছেলে! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি যা বলছি তা অবশ্যই সত্য। হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন এবার আমি নিজেকে শক্ত করে নিলাম এবং ঐ মুনাফিকের নিকট গিয়ে বললাম, তুমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ফিরে আসলে তোমাকে উনার সম্মুখে হাযির করা হবে। তখন তিনি অবশ্যই তোমার গর্দান উড়িয়ে দিবেন। সেই মুনাফিক বলল, নিশ্চয়ই এ কথাগুলো আমি লোকদেরকে বলতে শুনেছি, তাই বলছি। যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন এবং উনার সাথে উনার আযাদকৃত গোলাম হযরত শাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বন্দীদেরকে নিয়ে আসছিলেন। কেননা হযরত শাকরান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত বদর জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
 হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, যুদ্ধ বন্দীদের প্রকৃত সংখ্যা ছিলো ৭০ জন। এর উপর ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এই মতে কোন সন্দেহ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, পবিত্র মদীনা শরীফের নেতৃস্থানীয় লোকজন রাওয়াহা নামক স্থানে অগ্রসর হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহলান সাহলান! এবং বিজয় সুসংবাদ জানান। হযরত উসাইদ ইবনে হুদ্বাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সমস্ত প্রসংশা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যিনি আপনাকে বিজয় মুবারক হাদিয়া করেছেন এবং আপনার চক্ষু মুবারক জুড়িয়ে দিয়েছেন অর্থাৎ আপানাকে পূর্ণ বিজয় মুবারক হাদিয়া করে আপনাকে সন্তুষ্ট ও খুশি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি শত্রুর মোকাবেলা করবেন তা বুঝতে পারলে আমি সম্মানিত বদর জিহাদে যেতাম। আমি জানি আপনি বাণিজ্যিক কাফিলার গতিবিধি পর্যাবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে গিয়েছেন। আপনি শত্রুর উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন ইহা জানলে আমি কিছুতেই বসে থাকতাম না। হযরত উসাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন আপনি ঠিকই বলেছেন। সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, জিলদ- ৩ পৃষ্ঠা- ৩০৪)

0 Comments: