৪৭৫ নং- সুওয়াল :-জুমার দ্বিতীয় আজানের জবাব দেয়া এবং আজানের দোয়া পড়া জায়েয হবে কি? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

সুওয়াল :- “মাসিক আত তাওহীদ নভেম্বর ১৯৯৫ ঈসায়ী সংখ্যায় নিম্নোক্ত সমস্যা ও তার সমাধান ছাপানো হয়-
সমস্যা:- জুমার দ্বিতীয় আজানের জবাব দেয়া এবং আজানের দোয়া পড়া জায়েয হবে কি? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
সমাধান:- জুমার খুতবার জন্য ইমাম প্রস্তুত হওয়ার পর কোন ধরনের নামাজ, তাসবীহ-তাহলীল ও কথাবার্তা বলা মাকরূহ, অপছন্দনীয়। সুতরাং মুক্তাদীর জন্য দ্বিতীয় আজানের উত্তর দেওয়া ও দোয়া পড়া মাকরূহ। (শামী, ফতওয়া দারুল উলুম।)
এখন আমার প্রশ্ন হলো- মাসিক আত তাওহীদের উপরোক্ত সমাধান কি শুদ্ধ হয়েছে? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহ সহকারে জানাবেন। কারণ, আমরা সানী আজানের জাওয়াব দিয়ে থাকি এবং মুনাজাতও করে থাকি। 

জাওয়াব :- মাসিক আত তাওহীদের উপরোক্ত সমাধান শুদ্ধ হয়নি। কেননা, জুমুয়ার সানী বা দ্বিতীয় আযান যা জুমুয়ার মূল আযান। যেটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ছিলো। আর তিনি স্বয়ং নিজেই এ আযানের জাওয়াব দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ ও নাসাঈ শরীফ-এ হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে রেওয়ায়েত রয়েছে যে, তিনি বলেন, আমি শুনেছি ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জুমুয়ার দিন মিম্বরের উপর বসে মুয়াজ্জিনের আযানের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও আযানের শব্দসমূহকে উচ্চারণ করেন এবং আযান শেষে বলেন, হে লোক সকল! আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জুমুয়ার দিন মিম্বরে বসা অবস্থায় মুয়াজ্জিনের আযান শ্রবণে এরূপ বলতে শুনেছি, যেরূপ তোমরা আমার থেকে শুনতে পেলে।
আর আযান ও ইক্বামতের দোয়ার ব্যাপারে বুখারী শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আযানের পরে দোয়া পাঠ করবেন, আমি তার জন্য শুপারিশ করবো।”
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পাঠ করা সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।
এখানে উল্লেখ্য যে, তিবরানী শরীফ-এ একটি হাদীছ শরীফ-এর মাফহুম ও ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে বা বুঝতে ভুল করার কারণে শুধু মাসিত আত তাওহীদ-ই নয়, এ ধরণের আরো অনেক পত্রিকা ও কিতাবাদীতে জুমুয়ার দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পড়া মাকরূহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফটি হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
*
অর্থ:- “ইমাম যখন (খুৎবার জন্য) বের হয়, তখন নামায পড়া ও কথা বলা নিষেধ।”
এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, 
*
অর্থ:- “ইমাম যখন খুৎবা দেয়ার জন্য হুজুরা থেকে বের হন, তখন কোন নামায নেই। আর যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়িয়ে যান, তখন কোন কথা নেই।”
অর্থাৎ ইমাম ছাহবে যখন খুৎবা দেয়ার জন্য হুজরা শরীফ থেকে বের হন, তখন কেউ যদি নামায শুরু করে, তবে তার পক্ষে এ অল্প সময়ের মধ্যে অর্থাৎ খুৎবা শুরু করার পূর্বে নামায শেষ করা সম্ভব নয়। তাই কোন নামায নেই এবং নামায শুরু করা মাকরূহ। আর যখন খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়াবেন অর্থাৎ খুৎবা শুরু করবেন, তখন কোন কথাবার্তা বলা নিষেধ।
অতএব, খুৎবা শুরু করার পূর্বে দোয়া-দুরুদ, তাসবীহ-তাহলীল, দ্বীনি কথাবার্তা বলা জায়িয রয়েছে। অনুরূপ দ্বিতীয় আযানের জাওয়াব দেয়া ও দোয়া পড়া জায়িয বরং সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত। 
(দলীলসমূহ : বুখারী শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মুয়াত্তা শরীফ, তিবরানী শরীফ, আইনী শরহে বুখারী, উমদাতুর রেওয়াইয়াহ, আলমগীরী, কাফী, সিরাজুল ওয়াহহাজ, তাহতাবী, হিদায়া, নূরুল হিদায়া, নূরুদ দেরায়াহ, এনায়া, নেহায়া, হামিয়ায়ে হিদায়া, শরহে বিকায়াহ ইত্যাতি।)
[বিস্তারিত জানার জন্য আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১৮তম সংখ্যা পড়ুদন।]
আবা-২৯

আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-

0 Comments: