ইয়াজিদের উপর লা’নত করার ব্যাপারে সকল ইমাম ও উলামায়ে কিরামগন একমত।
অত্যান্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় আমাদের সমাজের এক শ্রেনীর মানুষ তারা ইয়াজিদকে নির্লজ্জভাবে সমর্থন করে থাকে। দেওবন্দী ও সালাফী ফির্কার লোকরা রীতিমত তার প্রশংসাও করে থাকে। তার নামের শেষে তাবেয়ী ও রহমতুল্লাহ লাগানোর মত ধৃষ্টতাও তারা দেখিয়ে থাকে। যখন কোন সুন্নী ইয়াজিদের হাক্বীকত প্রকাশ করে কিছু বলে তখন তারা ইয়াজিদের পক্ষ নেয়। নাউযুবিল্লাহ।
ইয়াজিদের বিষয়টা আজকে আমি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা করবো ,ইনশা আল্লাহ।
ইয়াজিদের উপর লা’নত করার ব্যাপারে সকল ইমাম ও উলামায়ে কিরামগন একমত। এ বিষয়ে বিখ্যাত তাফসীরের কিতাব “তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী”তে সূরা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ২২ নং আয়াত শরীফের তাফসীরে এ বিষয়ে সকল ইমাম মুস্তাহিদ উনাদের রায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে-
وقد صرح بكفره وصرح بلغنه جماعة من العلماء منهم الحافظ ناصر السنة ابن الجوزي وسبقه القاضي ابو يعلي وقال العلامة التفتازاني لانتوقف في شانه بل في ايمانه لعنة الله تعالي عليه وعلي انصاره واعوانه وممن صرح بلعنه الجلال السيوطي عليه الرحمت
অর্থ- ইয়াজীদ কাফির হওয়া সম্পর্কে এবং তার প্রতি লানত করা বৈধতার বিষয়ে এক জামাতের উলামা পরিস্কার মন্তব্য করেছেন। উনারা হলেন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নতের মদদগার ইবনুল জাওজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আর উনার পূর্বে হযরত কাজী আবু ইয়ালা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আর আল্লামা হযরত তাফতানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমরা ইয়াজীদের ব্যাপারে দ্বিধা করবো না। এমনকি তার ঈমানের ব্যাপারে ও না। তার প্রতি, তার সাহায্যকারী দের প্রতি , এবং শুভকামনা কারীদের প্রতি আল্লাহ পাকের লানত। যারা ইয়াজীদ সুস্পষ্ট লানত করেছেন তাদের মধ্যে ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রয়েছেন।"(দলীল-তাফসিরে রুহুল মায়ানী ২৫ খন্ড ৭২ পৃষ্ঠা )
এবার আসুন আমরা একটু কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ দ্বারা দেখি কাদের লা’নত করা যাবে-
পবিত্র কোরআন শরীফে লানত শব্দটি ৪১ বার ব্যবহৃত হয়েছে। لعن : এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অভিসম্পাত করা, খোদার রহমত ও মাগফেরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া, বদ দোয়া করা।
আসুন এবার লা’নত সংশ্লিষ্ট কতিপয় আয়াত শরীফ উল্লেখ করা যাকঃ
১) তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। (বাকারা-৮৮)
২) অতএব অস্বীকারকারীদের উপরে আল্লাহর অভিসম্পাত। (বাকারা- ৮৯)
৩) নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেসমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেস্তা এবং সমগ্র মানুষের লানত। (বাকারা-১৬১)
৪) এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের উপর লা’নত করেছেন আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং। বস্তুতঃ আল্লাহ যার উপর লা’নত করেন তুমি তার কোন সাহায্যকারী খুঁজে পাবে না। (সূরা নিসা- ৫২)
৫) যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে,তার শাস্তি জাহান্নাম,তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা নিসা- ৯৩)
৬) ওয়াদা করেছেন আল্লাহ, মুনাফেক পুরুষ ও মুনাফেক নারীদের এবং কাফেরদের জন্যে দোযখের আগুনের-তাতে পড়ে থাকবে সর্বদা। সেটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট। আর আল্লাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আযাব।(সূরা তওবা- ৬৮)
৭) তাদের চেয়ে বড় যালেম কে হতে পারে, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। এসব লোককে তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত সম্মূখীন করা হবে আর সাক্ষিগণ বলতে থাকবে, এরাই ঐসব লোক, যারা তাদের পালনকর্তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। শুনে রাখ, যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে। (সূরা হুদ- ১৮)
৮) যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালেঅভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা আহযাব- ৫৭)
৯) নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা আহযাব- ৬৪)
১০) আল্লাহ বললেনঃ (হে ইবলিস) বের হয়ে যা, এখান থেকে। কারণ, তুই অভিশপ্ত। (সূরা ছোয়াদ- ৭৭)
১১) তোর প্রতি আমার এ অভিশাপ বিচার দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে। (সূরা ছোয়াদ- ৭৮)
১২) ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন। (সূরা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ২২,২৩)
১৩) কেমন করে আল্লাহ এমন জাতিকে হেদায়েত দান করবেন, যারা ঈমান আনার পর এবং রসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর এবং তাদের নিকট প্রমাণ এসে যাওয়ার পর কাফের হয়েছে। আর আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না। এমন লোকের শাস্তি হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই অভিসম্পাত। (সূরা আলে ইমরান- ৮৬, ৮৭)
১৪) বনী-ইসলাঈলের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে দাউদ আলাইহিস সালাম
ও ঈসা আলাইহিস সালাম উনাদের মুখে অভিসম্পাত করানো হয়েছে। এটা একারণে যে, তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমা লংঘন করত। (সূরা মায়েদা- ৭৮)
১৫) সে দিন যালেমদের ওযর-আপত্তি কোন উপকারে আসবে না, তাদের জন্যে থাকবে অভিশাপ এবং তাদের জন্যে থাকবে মন্দ গৃহ। (সূরা মুমিন- ৫২)
সূতরাং ইয়াজিদের ফয়সালা আপনারাই চিন্তা করে দেখেন। কোন মু’মিন ঈমানদারকে কি লা’নত করা যায়? একমাত্র চুড়ান্ত অবাধ্য, চুড়ান্ত জালিম, ও বেঈমান কাফির শ্রেনীর লোক হলেই তাকে লা’নত করা সম্ভব। আর যে কিনা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শহীদকারী, মদীনা শরীফে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী তার চাইতে বড় অবাধ্য, জালিম, কাফির আর কে হতে পারে???
0 Comments:
Post a Comment