ঝেঙ হে' - চীনের সর্বশ্রেষ্ঠ নৌ-সেনাপতি ও একজন বীর মুসলিম
ইবনে বতুতা বা আলবেরুনী ছাড়াও দুনিয়া পরিভ্রমণ করে বিখ্যাত আরেকজন মুসলিম পরিব্রাজক; তিনি চীনা এডমিরাল ‘ঝেঙ হে’। প্রকৃত নাম “মা হে”। চীনা ভাষায় ‘মা’ অর্থ মুহাম্মদ। চীনের রাজা তাঁকে “ঝেঙ” উপাধি দেন।
তাঁর সর্ম্পকে ঐতিহাসিক দলিলে লেখা হয়েছে ঝেঙ হে ছিলেন দীর্ঘদেহী, প্রায় ৭ ফুট লম্বা, বলিষ্ঠ গড়ন, স্পস্ট অবয়ব, বাঘের মত চলন, পরিস্কার জোরালো কন্ঠস্বর।
জন্ম - ১৩৭১ খ্রিস্টাব্দ ও মৃত্যু - ১৪৩৩/১৪৩৫ খ্রিস্টাব্দ
তিনি চীনের ইতিহাসের সবচেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ নৌ-সেনাপতি ও মহান পরিব্রাজক। ১৪০৫ থেকে ১৪৩৩ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ৭ বার সমুদ্র অভিযানে বের হন। তিনি ভ্রমণ করেন ব্রুনেই, জাভা, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত, ইরান, মক্কা-মদীনা থেকে পূর্ব-আফ্রিকার সোমালিয়া-কেনিয়া; এমনকি বাংলাদেশও।
তিনিই সমুদ্রপথে চীনা সিল্ক রোড সৃষ্টি করেন। ১৪০৫ থেকে ১৪৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অ্যাডমিরাল ঝেঙ হে শতাধিক জাহাজের বিশাল বহর নিয়ে সাতটি সমুদ্র অভিযান পরিচালনা করেন এবং এশিয়া ও আফ্রিকার ৩০টি দেশ ও অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন। অ্যাডমিরাল ঝেঙ হের নৌবহর দুবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। বাংলার শাসক সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ তাঁর রাজধানী সোনারগাঁয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানান চীন থেকে আসা অ্যাডমিরালকে।
সেইসময় ভারত মহাসাগরে দলদস্যুদের বড় উৎপাত ছিল। ঝেঙ হে সেই সব নির্মম জলদস্যুদের কঠোরভাবে দমন করেছিলেন।
ইতিহাস অনুযায়ী ‘ঝেঙ হে’ কলম্বাসের ৮৭ বছর আগে, ভাস্কো ডা গামা এর ৯৩ বছর আগে এবং ম্যাজেলান এর ১১৬ বছর আগে এই সমস্ত সমুদ্রযাত্রা করেন। [ সূত্র - ChinaCulture.org এবং লিঙ্কঃ http://bit.ly/ZhengHeHistory ]
তাঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন ইরানী, হানাফি মাজহাবের অনুসারী। ‘ঝেঙ হে’ এর পূর্বপুরুষ সৈয়দ আজজল শামস আল দ্বীন ওমর ছিলেন মোগল আমলে মোগল রাজবংশের একজন শাসনকর্তা এবং চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর। ইতিহাস অনুযায়ী ‘ঝেঙ হে’ এর পিতামহ ও পিতা দুজনেই সেই সময়ে হজ্বব্রত পালন করেন এবং হাজী লক্বব ব্যবহার করতেন। ঐতিহাসিক পিটারসেন এর তথ্য অনুযায়ী ‘ঝেঙ হে’ আরবী ভাষাতে কথা বলতে পারতেন।
সম্রাটের আদেশে তিনি ১৪০৫ সালে প্রথম সমুদ্রযাত্রার জন্য বের হন। এই সমুদ্র যাত্রায় তাঁর নৌবহরে ছিল ৩১৭ টি জাহাজ আর প্রায় ৩০,০০০ সৈন্য ও নাবিক। তাঁর জাহাজগুলো ছিল সে সময়ের সবচেয়ে বড় জাহাজ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, কলম্বাসের জাহাজ যখন ছিল ২৬ মিটার দীর্ঘ তখন তাঁর জাহাজের দৈর্ঘ্য ছিল ১২০ মিটার।
তিনি যখন বাংলায় আসেন সে সময় বাংলার সুলতান ছিলেন গিয়াসউদ্দীন আযম শাহ। সুলতান তাঁর পোষা জেব্রাকে চীনা সম্রাটের জন্য উপহার হিসেবে তাঁর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেন।
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ইসলাম প্রচারেও ‘‘ঝেঙ হে’ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সেই সাথে বিভিন্ন স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা হয় তাঁর আদেশে।
বিস্তারিত পড়তে -
0 Comments:
Post a Comment