“পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র
হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র
ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে
কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া”-
পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র
দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি
সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব উনার উপর মউত পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকা ফরয
পূর্ব প্রকাশিতের পর
পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব
থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা
শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে
পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের
দলীল-আদিল্লাহ মোতাবেক সম্মানিত ইসলামী শরীয়াত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলার
জন্য কারো অনুসরণ করাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী
তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’,
‘তাকলীদুদ্
দীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িলিল আরবায়াহ’ অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল উনাদের
অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
নি¤েœ পবিত্র তাফসীর শরীফ উনাদের নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে ‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার সমর্থনে পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উল্লেখ
করে উনাদের ছহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও আহকাম বা বিধি-বিধান আলোচনা করা হলো।
(৫৩২)
{اَهْلَ الذِّكْرِ} هم العلماء.
(لطائف الاشارات اى تفسير القشيرى سورة النحل شريفة ۴۳ الاية الشريفة المؤلف: عبد
الكريم بن هوازن بن عبد الملك القشيرى رحمة الله عليه المتوفى ۴۶۵ هجرى(
অর্থ: (তোমরা আহলুয্ যিক্র উনাকে অনুসরণ কর)
আহলুয যিক্র হচ্ছেন হক্কানী ও রব্বানী উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম।
(লাত্বায়িফুল ইশারাত অর্থাৎ তাফসীরুল কুশাইরী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র
আয়াত শরীফ নং ৪৩ লেখক: হযরত আব্দুল করীম বিন হাওয়াযিন বিন আব্দুল মালিক কুশাইরী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৪৬৫ হিজরী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার তাফসীর থেকে
প্রমাণিত হলো যে, আহলুয্ যিক্র
হচ্ছেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরুম মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি, হযরত ওয়ালিদার
রসূল আলাইহিমাছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনারা,
হযরত
উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস
সালাম উনারা, হযরত আহলু বাইত
শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা, হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা, হযরত আউলিয়া কিরাম
রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অর্থাৎ হক্কানী ও রব্বানী হযরত উলামায়ে কিরাম
রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা।
আরো প্রমাণীত হয়েছে যে, ‘ইজমাউল উম্মাহ’ ও ‘ছহীহ ক্বিয়াস’ সম্মানিত শরীয়াত উনার অকাট্য দলীল। আর চার
মাযহাবের ইমাম উনাদের যে কোন একজনকে মান্য করা ইজমাউল উম্মাহ মতে ফরয।
পবিত্র আয়াত
শরীফ নম্বর- ৩৩
وَيَوْمَ
نَبْعَثُ فِى كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِمْ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ
شَهِيدًا عَلى هؤلَاءِ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ
شَىْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرى لِلْمُسْلِمِينَ. (سورة النحل شريفة ৮৯ الاية
الشريفة(
অর্থ: সেদিন প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে আমি একজন
স্বাক্ষী তাদের মধ্য থেকেই তাদের বিপক্ষে দাঁড় করাবো এবং তাঁদের বিষয়ে আপনাকে
স্বাক্ষীস্বরূপ উপস্থাপন করবো। আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা প্রত্যেক বিষয়ের বর্ণনাকারী, হিদায়াত,
রহমাত
এবং মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ। (পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং
৮৯)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার বিশুদ্ধ
তাফসীর বা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
(৫৩৩)
{وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الكتاب
تِبْيَانًا} بليغاً {لّكُلِّ شَىْءٍ} من امور الدين. اما فى الاحكام المنصوصة
فظاهر، وكذا فيما ثبت بالسنة او بالاجماع او بقول الصحابة او بالقياس، لان مرجع
الكل الى الكتاب حيث امرنا فيه باتباع رسوله عليه السلام وطاعته بقوله: {اَطِيعُوا
الله وَاَطِيعُوا الرسول} [سورة المائدة الشريفة:
৯২] وحثنا على الاجماع فيه بقوله: {وَيَتَّبِعْ
غَيْرَ سَبِيلِ المؤمنين} [سورة النساء شريفة: ১১৫] وقد رضى
رسول الله صلى الله عليه وسلم لامته باتباع اصحابه بقوله: اصحابى كالنجوم بايهم
اقتديتم اهتديتم وقد اجتهدوا وقاسوا
ووطّئوا طرق الاجتهاد والقياس مع انه امرنا به بقوله {فاعتبروا يا اولى الابصار}
[سورة الحشر شريفة: ২] فكانت
السنة والاجماع وقول الصحابى والقياس مستندة الى تبيان الكتاب فتبين انه كان
تبيانًا لكل شىء {وَهُدًى وَرَحْمَةً وبشرى لِلْمُسْلِمِينَ} ودلالة الى الحق
ورحمة لهم وبشارة لهم بالجنة. (مدارك التنزيل وحقائق التأويل اى تفسير النسفى سورة
النحل شريفة ৮৯ الاية
الشريفة المؤلف: الامام ابو البركات عبد الله بن احمد بن محمود النسفى الحنفى
الماتريدى رحمة الله عليه المتوفى ৭১০ هجرى(
অর্থ: (আমি আপনার প্রতি বর্ণনা সম্বলিত কিতাব
নাযিল করেছি) যা অলঙ্কারপূর্ণ বা বিশুদ্ধ (যা প্রত্যেক বিষয়ের বর্ণনাকারী,) সম্মানিত দীন ইসলাম উনার বিষয়ে। যা প্রকাশ্য
দলীল বিশিষ্ট বিধি-বিধান সমূহ। অনুরূপ যা পবিত্র সুন্নাহ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত
অথবা ইজমাউল উম্মাহ দ্বারা প্রমাণিত অথবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম
উনাদের ক্বওল মুবারক দ্বারা প্রমাণিত অথবা ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তাও ‘তিবইয়ান’ উনার অন্তর্ভূক্ত।
কেননা এগুলোর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে পবিত্র কুরআন মাজীদ। যেহেতু পবিত্র কুরআন মাজীদ
উনার মধ্যে নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ ও আনুগত্য করতে আমাদেরকে নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে।
যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ উনার ৯২ নং আয়াত শরীফ
উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন: ‘তোমরা মহান আল্লাহ
তায়ালা উনার আনুগত্য করো এবং নূরুম্ মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার আনুগত্য তথা অনুসরণ-অনুকরণ কর।’
পবিত্র
কুরআন মাজীদ আমাদেরকে ইজমাউল উম্মাহ উনার প্রতি উৎসাহিত করে। যেমনটি মহান আল্লাহ
তায়ালা তিনি পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ উনার ১১৫ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেন: ‘যে ব্যক্তি
ঈমানদারগণের পথ ব্যতীত অন্য পথের ইত্তিবা (অনুসরণ-পায়রবী) করে, আমি তাকে সে পথে নিয়ে যাব, যে পথ সে পছন্দ করে এবং তাকে জাহান্নামে
পৌঁছাবো। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।’
অনুরূপ
নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
উনার উম্মতদেরকে স্বীয় ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে
নির্দেশ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যেমনটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে: ‘আমার হযরত ছাহাবাহ
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা তারকা সাদৃশ্য, উনাদের যেকোন একজনকে যেকোন ব্যক্তি যেকোন ব্যাপারে অনুসরণ
করবে সে হিদায়াত পেয়ে যাবে।’ সুবহানাল্লাহ। আর
উনারা তো ইজতিহাদ মুবারক করেছেন ও ক্বিয়াস শরীফ করেছেন এবং ইজতিহাদ মুবারক ও
ক্বিয়াস শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন। তৎসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পবিত্র ক্বিয়াস
শরীফ করতে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পবিত্র
সূরাতুল হাশর শরীফ উনার ২ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন: ‘অতএব, হে চক্ষুস্মান
(জ্ঞানী) ব্যক্তিগণ আপনারা গবেষণা (ইজতিহাদ,
ক্বিয়াস)
করুন।’ সুতরাং পবিত্র সুন্নাহ
শরীফ তথা হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ, ক্বওলুছ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও ছহীহ
ক্বিয়াস শরীফ পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার তিবইয়ান তথা বিশদ বর্ণনা উনার দলীল। এ
বর্ণনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র কুরআন
মাজীদ উনার মধ্যে সব কিছুর বর্ণনা রয়েছে। (হিদায়াত, রহমাত এবং মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ) অতএব, পবিত্র কুরআন মাজীদ এবং উনার সংশ্লিষ্ট পবিত্র
সুন্নাহ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও
ছহীহ ক্বিয়াস হক্বের দলীল, মু’মিন-মুসলমানগণের জন্য রহমত এবং উনাদের জন্য জান্নাত লাভের
সুসংবাদ। সুবহানাল্লাহ। (মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তানযীল অর্থাৎ তাফসীরুন
নাসাফী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৯ লেখক: ইমাম আবুল বারাকাত
আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমূদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
ওয়াফাত: ৭১০ হিজরী)
(৫৩৪)
{ونزَّلنا عليك الكتاب تبيانًا}
قال الزجاج رحمة الله عليه: التبيان اسم فى معنى البيان. فاما قوله تعالى: {لكل
شىء} فقال العلماء بالمعانى: يعنى لكل شىء من امور الدين، اما بالنص عليه او
بالاِحالة على ما يوجب العلم مثل بيان رسول الله صلى الله عليه وسلم او اجماع
المسلمين. (زاد المسير فى علم التفسير اى تفسير الجوزى سورة النحل شريفة ৮৯ الاية
الشريفة المؤلف: الامام جمال الدين عبد الرحمن بن على بن محمد الجوزى الحنبلى
الاشعرى رحمة الله عليه المتوفى ৫৯৭ هجرى(
অর্থ: (আমি আপনার প্রতি বর্ণনা সম্বলিত কিতাব
নাযিল করেছি) হযরত যুজাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: এখানে ‘তিবইয়ান’ শব্দটি বর্ণনা
অর্থে একটি বিশেষ্য। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: (যা প্রত্যেক
বিষয়ের বর্ণনাকারী) হযরত উলামায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলেন: প্রত্যেক বিষয়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নির্দেশনা
মুবারক রয়েছে। কোনো বিষয়ে স্পষ্ট দলীল রয়েছে অথবা যা ইল্ম ওয়াজিব হওয়ার সূত্র যেমন
নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়ান
মুবারক তথা সুন্নাহ শরীফ অথবা ইজমাউল মুসলিমীন। (যাদুল মাসীর ফী ইলমিত তাফসীর
অর্থাৎ তাফসীরুল জাওযী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৯ লেখক: ইমাম
জামালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আলী বিন মুহাম্মাদ জাওযী হাম্বালী আশয়ারী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ওয়াফাত: ৫৯৭ হিজরী)
(৫৩৫)
وكونُه
تبيانًا لكل شىء من امور الدين باعتبار ان فيه نصًا على بعضها واحالةً لبعضها على
السنة حيث اُمر باتباع النبى عليه السلام وطاعته، وقيل فيه: {وَمَا يَنطِقُ عَنِ
الهوى} وحثًّا على الاجماع وقد رضى رسول الله صلى الله عليه وسلم لامته باتباع
اصحابه حيث قال: اصحابى كالنّجوم بايهم اقتديتم اهتديتم وقد اجتهدوا وقاسوا
ووطّأوا طرقَ الاجتهاد فكانت السنة والاجماعُ والقياسُ مستندةً الى تبيان الكتاب.
(ارشاد العقل السليم الى مزايا الكتاب الكريم اى تفسير ابى السعود سورة النحل شريفة ৮৯ الاية الشريفة المؤلف: ابو السعود العمادى
محمد بن محمد بن مصطفى رحمة الله عليه المتوفى ৯৮২ هجرى(
অর্থ: পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম উনার প্রত্যেক বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। এই দৃষ্টিতে যে, যা স্পষ্ট দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে এবং যা
পবিত্র সুন্নাহ শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যেহেতু নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ
হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ ও আনুগত্য
করতে আমাদেরকে নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন: ‘নূরুম মুজাস্সাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের থেকে কোন কথা বলেন না’ পবিত্র কুরআন
মাজীদ আমাদেরকে ইজমাউল উম্মাহ উনার প্রতি উৎসাহিত করে। অনুরূপ নূরুম মুজাস্সাম
হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মাতদেরকে
স্বীয় ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে নির্দেশ মুবারক করে
সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যেমনটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে: ‘আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা তারকা সাদৃশ্য,
উনাদের
যেকোন একজনকে যেকোন ব্যক্তি যেকোন ব্যাপারে অনুসরণ করবে সে হিদায়াত পেয়ে যাবে।’ সুবহানাল্লাহ। আর উনারা তো ইজতিহাদ মুবারক
করেছেন ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ করেছেন এবং ইজতিহাদ মুবারক ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ
শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও পবিত্র ছহীহ
ক্বিয়াস শরীফ পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার ‘তিবইয়ান’ তথা বিশদ বর্ণনা উনার দলীল। (ইরশাদুল আক্বলিস
সালীম ইলা মাযাইয়াল কিতাবিল কারীম অর্থাৎ তাফসীরু আবিস সাঊদ পবিত্র সূরাতুন্
নাহ্ল: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৯ লেখক: আবুস সাঊদ ইমাদী মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ বিন
মুছ্তফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৯৮২ হিজরী)
(৫৩৬)
قلت كونه
تبيانا لكل شئ من امور الدين باعتبار ان فيه نصا على بعضها واحالة لبعضها على
السنة حيث امر باتباع النبى صلى الله عليه وسلم وطاعته وقيل فيه {وما ينطق عن
الهوى} وحثا على الاجماع وقد رضى رسول الله لامته باتباع اصحابه يحث قال اصحابى
كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم وقد
اجتهدوا وقاسوا ووطأوا طرق الاجتهاد فكان السنة والاجماع والقياس مستندة الى تبيان
الكتاب. (روح البيان فى تفسير القران اى تفسير الحقى
سورة النحل شريفة ৮৯ الاية الشريفة المؤلف: حضرت
اسماعيل حقى بن مصطفى
الاستانبولى الحنفى الخلوتى البروسوى رحمة الله عليه تاريخ الوفاة ۱۱۲۷ هجرى(
অর্থ:
হযরত আল্লামা মুফাসসির ইসমাঈল হাক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি বলি: পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রত্যেক বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। এই দৃষ্টিতে যে, যা স্পষ্ট দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে এবং যা
পবিত্র সুন্নাহ শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। যেহেতু নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ
হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ ও আনুগত্য
করতে আমাদেরকে নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন: ‘নূরুম মুজাস্সাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের থেকে কোন কথা
বলেন না’ পবিত্র কুরআন মাজীদ আমাদেরকে পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ
উনার প্রতি উৎসাহিত করে। অনুরূপ নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উম্মাতদেরকে স্বীয় ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে নির্দেশ মুবারক করে সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ
করেছেন। যেমনটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে: ‘আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা তারকা
সাদৃশ্য, উনাদের যেকোন একজনকে যেকোন
ব্যক্তি যেকোন ব্যাপারে অনুসরণ করবে। সে হিদায়াত পেয়ে যাবে।’ সুবহানাল্লাহ। আর উনারা তো পবিত্র ইজতিহাদ
মুবারক করেছেন ও ক্বিয়াস করেছেন এবং ইজতিহাদ ও ক্বিয়াস শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং
পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ,
পবিত্র
ইজমাউল উম্মাহ শরীফ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার তিবইয়ান তথা বিশদ
বর্ণনা উনার দলীল। (রূহুল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন অর্থাৎ তাফসীরুল হাক্কী পবিত্র
সূরাতুন্ নাহ্ল: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৯ লেখক: হযরত ইসমাঈল হাক্কী বিন মুছতফা
ইস্তাম্বূলী হানাফী খালওয়াতী বারূসাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১১২৭ হিজরী)
(৫৩৭)
واما
الفقهاء فانهم قالوا القران انما كان تبيانًا لكل شىء لانه يدل على ان الاجماع
وخبر الواحد والقياس حجة فاذا ثبت حكم من الاحكام باحد هذه الاوصل كان ذلك الحكم
ثابتًا بالقران. (مفاتيح الغيب اى التفسير الكبير اى تفسير الرازى سورة النحل
شريفة ৮৯ الاية
الشريفة المؤلف: الامام العالم العلامة والحبر البحر الفهامة فخر الدين محمد بن
عمر التميمى الرازى الشافعى المتوفى سنة ৬০৬ هجرى(
অর্থ: হযরত ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি
আলাইহিম উনারা বলেন: পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে প্রত্যেক বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে।
কেননা, পবিত্র কুরআন মাজীদ প্রমাণ
করে যে পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ,
খবারুল
ওয়াহিদ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ সম্মানিত শরীয়াত উনার দলীল। যখন প্রমাণিত হচ্ছে এগুলো
সম্মানিত শরীয়াত উনার উছূল সম্মানিত শরীয়াত উনার বিধান, তখন প্রমাণিত হয় যে এগুলো পবিত্র কুরআন মাজীদ
উনার দ্বারাই প্রমাণিত। (মাফাতীহুল গইব অর্থাৎ আত-তাফসীরুল কবীর অর্থাৎ তাফসীরুর
রাযী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৯ লেখক: আল-ইমামুল আলিমুল আল্লামা, আল-হিবরুল আহরুল ফাহ্হামাহ ফখরুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন উমর তামীমী রাযী শাফিয়ী আশয়ারী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ৬০৬ হিজরী)
(৫৩৮)
وكون
الكتاب تبيانا لذلك باعتبار ان فيه نصا على البعض واحالة للبعض الاخر على السنة
حيث امر باتباع النبى صلى الله عليه وسلم، وقيل فيه: وَما يَنْطِقُ عَنِ الْهَوى
[سورة النجم شريفة: ৩] وحثا على الاجماع في قوله سبحانه:
وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ [سورة النساء شريفة: ১১৫] الاية فانها على ما روى عن الشافعى رحمة الله
عليه وجماعة دليل الاجماع، وقد رضى صلى الله عليه وسلم لامته باتباع اصحابه حيث
قال عليه الصلاة والسلام. عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين من بعدى عضّوا عليها
بالنواجذ.وقد اجتهدوا وقاسوا ووطؤوا طرق الاجتهاد فكانت السنة والاجماع والقياس
مستندة الى تبيان الكتاب. (روح المعانى فى تفسير القران العظيم والسبع المثانى اى
تفسير الالوسى سورة النحل شريفة ৮৯ الاية
الشريفة المؤلف: شهاب الدين ابى الثناء السيد محمود بن عبد الله الالوسى البغدادى
الشافعى رحمة الله عليه المتوفى سنة ১২৭০ هجرى(
অর্থ: পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে সম্মানিত
দ্বীন ইসলাম উনার প্রত্যেক বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। এই দৃষ্টিতে যে, যা স্পষ্ট দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে এবং যা
পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে, যেহেতু নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ ও আনুগত্য করতে আমাদেরকে
নির্দেশ মুবারক দেয়া হয়েছে। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পবিত্র সূরাতুন নজম
শরীফ উনার ৩নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন: ‘নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের থেকে কোন কথা বলেন না’ পবিত্র কুরআন মাজীদ
আমাদেরকে পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ শরীফ উনার প্রতি উৎসাহিত করে। যেমনটি মহান আল্লাহ
তায়ালা তিনি পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ উনার ১১৫ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক করেন: ‘যে ব্যক্তি
ঈমানদারগণের পথ ব্যতীত অন্য পথের ইত্তিবা (অনুসরণ-পায়রবী) করে, আমি তাকে সে পথে নিয়ে যাব, যে পথ সে পছন্দ করে এবং তাকে জাহান্নামে
পৌঁছাবো। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।’
অত্র
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বর্ণনা করেন, এখানে হযরত
উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে পবিত্র ইজমাউল উম্মাহ উনার দলীল রয়েছে।
অনুরূপ নূরুম মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উনার উম্মাতদেরকে স্বীয় ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে
অনুসরণ-অনুকরণ করতে নির্দেশ মুবারক করে সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করেছেন। যেমনটি
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে: ‘আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা তারকা সাদৃশ্য, উনাদের যেকোন একজনকে যেকোন ব্যক্তি যেকোন
ব্যাপারে অনুসরণ করবে সে হিদায়াত পেয়ে যাবে।’
সুবহানাল্লাহ।
আর উনারা তো পবিত্র ইজতিহাদ শরীফ করেছেন ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ করেছেন এবং পবিত্র
ইজতিহাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ
তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল
উম্মাহ শরীফ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার ‘তিবইয়ান’ তথা বিশদ বর্ণনা
উনার দলীল। (রূহুল মায়ানী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আযীম ওয়াস সাবয়িল মাছানী অর্থাৎ
তাফসীরুল আলূসী পবিত্র সূরাতুন্ নাহ্ল: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ৮৯ লেখক: হযরত
শিহাবুদ্দীন আবুছ ছানা সাইয়্যিদ মাহমূদ বিন আব্দুল্লাহ আলূসী বাগদাদী শাফিয়ী
আশয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াফাত: ১২৭০ হিজরী)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ এবং উনার ব্যাখ্যা থেকে
এটাই প্রমাণিত হলো যে, ‘পবিত্র কুরআন
মাজীদ উনার মধ্যে সবকিছুর বর্ণনা দেয়া হয়েছে’
তার
অর্থ হলো পবিত্র কুরআন মাজীদ উনার মধ্যে সব বিষয়ের মৌলিক আলোচনা করা হয়েছে। আর
পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমাউল
উম্মাহ শরীফ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে সেই মৌলিকতার বিস্তারিত ব্যাখ্যা
দেয়া হয়েছে। তাই পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার মতই পবিত্র ইজমাউল
উম্মাহ শরীফ ও ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে যা আলোচিত হয়েছে তাও পবিত্র কুরআন
মাজীদ উনার ইশারা বা ইঙ্গিত। কেননা,
পবিত্র
ইজমাউল উম্মাহ শরীফ, ছহীহ ক্বিয়াস শরীফ, পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ
উনাদের দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত।