আত-তাক্বউইমুশ শামসী
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ইসলামী সৌর ক্যালেন্ডার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার রচিত সূর্যের আবর্তন
সাপেক্ষে। আর মুসলমানদের কাছে প্রচলিত হিজরী ক্যালেন্ডার রচিত চাঁদের আবর্তন
সাপেক্ষে। মাস শুরু, শেষ এবং বিশেষ দিন নির্ধারনে চাঁদের ক্যালেন্ডারের
পাশাপাশি ওয়াক্ত নির্ণয়ে সৌর ক্যালেন্ডার আবশ্যকীয়।
অথচ মুসলমানদের রচিত কোনো সূর্য ক্যালেন্ডারের তথ্য ইতিহাসে পাওয়া যায় না। ফলে
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারেই মুসলমানরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা উচিত নয়।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- তোমরা কাফির, মুশরিক তথা ইহুদী, নাছারা ও
বিধর্মীদের অনুসরণ-অনুকরণ করোনা।
হাদীছ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুসরণ
করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে।
এ কারণেই মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার খাছ আওলাদ, আওলাদে রসূল
সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদের সাথে গভীর নিছবত মুবারকের কারণে এই বিশেষ তাক্বউইম (দিন গণনা
পদ্ধতি) রচনা করেন।
আরবীতে ‘তাক্বউইম’ অর্থ ক্যালেন্ডার আর ‘শামস’ অর্থ
‘সূর্য’ আর দুয়ে মিলে-“আত তাক্বউইমুশ শামসি”।
‘আত-তাক্বউইমুশ
শামসী’র কয়েকটি
বৈশিষ্ট্য-
১. উদ্দেশ্য: এই ক্যালেন্ডার রচনার মূল উদ্দেশ্য মুসলমানগণ যেন কাফিরদের
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ না করে। বরং এই মুবারক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে
পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের পূর্ণ অনুসরণ করতে পারেন।
২.
প্রবর্তন ও নামকরণ: এই সৌর বছর গণনা পদ্ধতি প্রবর্তন এবং নামকরণ করেছেন
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আল মানছুর সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল
উমাম আলাইহিস সালাম তিনি।
৩.
উৎস: এই সৌর বছর গণনা পদ্ধতি পৃথিবীর কোনো ক্যালেন্ডারের অনুকরণে তৈরি না করে বরং
খাছ খোদায়ী মদদে ইলহাম-ইলকার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
৪.
শুরুর সময়কাল: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মহাপবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের বছর ১১ হিজরী এবং সে বছরের
পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ। উক্ত মাসের ১ম দিন থেকে এই আত-তাক্বউইমুশ শামসি-এর ০
বছর ১ম মাস ১ম দিন শুরু হয়েছে। (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮ই জুন ৬৩২ ঈসায়ী। )
৫.
শুরুর সময়কালের তাৎপর্য: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ১২ই রবিউল আউওয়াল শরীফ বিছালী শান মুবারক গ্রহণ করেন। ফলে
শামসি তাক্বউইম শুরু করা হয়েছে বিছালী শান মুবারক গ্রহণের বৎসর থেকে এবং এই
তাক্বউইম-এর ১ম বৎসরের ১২ তারিখ হচ্ছে ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল
আযীম (সোমবার)।
৬.
বৎসরের মাসের নামকরণ: এই তাক্বউইম-এর মাস সমূহের নামকরণ করা হয়েছে আরবী পদ্ধতি
অনুযায়ী। ১ম মাস থেকে ১২তম মাস পর্যন্ত নামকরণ করা হয়েছে- “আউয়াল, ছানী, ছালিছ, রবি’, খামিছ, সাদিছ, সাবি’, সামিন, তাসি, আ’শির, হাদি আ’শার এবং ছানী আ’শার”।
৭.
দিনের নামকরণ: আরবী মাসের প্রতিটি দিনের নামানুসারেই নামকরণ। যথা: ইছনাইনিল আযীম
(সোমবার), ছুলাছা (মঙ্গলবার), আরবিয়া (বুধবার), খামীস
(বৃহস্পতিবার), জুমুয়াবার, সাবত (শনিবার), আহাদ (রোববার)।
৮.
মাস গণনা পদ্ধতি: প্রতিটি বিজোড়তম মাস ৩০ দিনে এবং জোড়তম মাস ৩১ দিনে, শুধু ব্যতিক্রম
১২তম মাস। কিন্তু ৪ দ্বারা বিভাজ্য সালগুলো ৩১ দিনে হবে। তবে ১২৮ দ্বারা বিভাজ্য
সালগুলো ব্যতীত।
৯.
বাৎসরিক বিচ্যুতি: পৃথিবীর অসম ঘূর্ণনের ফলে বছর শেষে সময়ের যে বিচ্যুতি দেখা যায়
তা ০.২ সেকেন্ডেরও কম।
১০.
লিপইয়ার পদ্ধতি: অতিরিক্ত একদিন বছরে শেষে যোগ হওয়ায় পরিবর্তন লক্ষণীয় নয় (যা চার
বছর পর পর করা হয়)। কেননা নতুন বছর শুরু হয়ে যায়।
১১.
অনুসরণের ফল: এই তাক্বউইম এ বিধর্মীদের অনুসরণ বাদ দিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাদের স্মরণ মুবারক হয়। যা মুসলমানদের জন্য রহমত, বরকত, সাকীনা লাভের কারণ।
১২.
মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব: কাফিররা সব ক্ষেত্রে মুসলমানদের অনুসরণ করবে। কারণ
কাফিরদের সৃষ্টি হয়েছে মুসলমানদের খিদমতের জন্য। এই শামসি তাক্বউইম তৈরির ফলে এর
ব্যাপক প্রচার-প্রসার হলে ধীরে ধীরে কাফিররা এর অনুসরণ করবে এবং মুসলমানদের
শ্রেষ্ঠত্ব ও আভিজাত্য বৃদ্ধি পাবে ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আমাদেরকে এই
আত-তাক্বউইমুশ
শামসি অনুসরণ-অনুকরণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
0 Comments:
Post a Comment