Kzj
Kvwqiv‡Zi me©‡kÖô Bev`Z
AbšÍKvje¨vcx
RvixK…Z gnvm¤§vwbZ mvBwq¨`yj AvÕBqv` kixd
Dbvi
mygnvb m¤§vbv‡_© cÖKvwkZ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْـمٰنِ الرَّحِيْمِ
وَآتِ
ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ
تَبْذِيرًا ﴿٢٦﴾
অর্থ: ‘আর তোমরা নিকটাত্মীয় কে
তার হক্ব (প্রাপ্য) দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। আর মোটেও
অপব্যায় করবে না।’ (পবিত্র সূরা বনি ইসরাঈল শরীফ, আয়াত শরীফ: ২৬)
m¤ú‡K©vbœqb
আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর সাথে
সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব ও ফযীলত
M‡elYv †K›`ª
: gyn¤§w`qv Rvwgqv kixd
cÖKvkbvq :
M‡elYv †K›`ª:
gyn¤§w`qv Rvwgqv kixd
5, AvDUvi
mvKz©jvi †ivW, ivRvievM kixd, XvKv-1217
†dvb
(wcGweG·) : 9338787, 8333927, 8333081
†gvevBj : 01711-238447, 01711-264694, 01712-648453
d¨v· :
88-02-9338788
I‡qe mvBU : http://uswatun-hasanah.net, http://al-ihsan.net
cÖ_g cÖKvk :
Rygv`vj DLiv 1440 wnRix mb
ZvwmÕ 1386
kvgmx mb
cÖvw߯’vb :
gyn¤§w`qv Rvwgqv kixd (weµq‡K›`ª)
5/1, AvDUvi mvKz©jvi †ivW, ivRvievM kixd,
XvKv-1217
†dvb (wcGweG·) : 48314848 (ewa©Z 125)
†gvevBj : 01710-320412,
017170-226664
Kw¤úDUvi Aj¼iY :
gyn¤§w`qv Rvwgqv kixd (Kw¤úDUvi wefvM)
5/1, AvDUvi mvKz©jvi †ivW, ivRvievM kixd,
XvKv-1217
†dvb (wcGweG·) : 48314848 (ewa©Z 121)
†gvevBj : 01712-855345
gy`ª‡Y :
gyn¤§w`qv eyK evBwÛs A¨vÛ wcÖw›Us †cÖm
13/2, †MvjvcevM, XvKv| †dvb : 7547796
†gvevBj : 01711-178684, 01834-962168
nvw`qv : ......... UvKv
اَلْـمُؤَسِّسُ وَالْـمُشْرِفُ
لِـمَرْكَزِ الْبَحْثِ مُـحَمَّدِيَّةٌ جَامِعَةٌ شَرِيْفٌ وَالْـمَجَلَّةُ الشَّهْرِيَّةُ
اَلْبَيّنَاتُ وَالْـجَرِيْدَةُ الْيَوْمِيَةُ اَلْاِحْسَانُ- خَلِيْفَةُ اللهِ، خَلِيْفَةُ
رَسُوْلِ اللهِ، اِمَامُ الشَّرِيْعَةِ
وَالطَّرِيْقَةِ، قُطُبُ الْعَالَـمِ، اَلْغَوْثُ الْاَعْظَمُ، سُلْطَانُ الْاَوْلِيَاءِ،
مَـخْزَنُ الْـمَعْرِفَةِ، خَزِيْنَةُ الرَّحْـمَةِ، مُعِيْنُ الْـمِلَّةِ، لِسَانُ
الْاُمَّةِ، تَاجُ الْـمُفَسّرِيْنَ، رَئِيْسُ الْـمُحَدّثِيْنَ، فَخْرُ الْفُقَهَاءِ،
حَاكِمُ الْـحَدِيْثِ، حُجَّةُ الْاِسْلَامِ، سَيّدُ الْـمُجْتَهِدِيْنَ، مُـحْىُ
السُّنَّةِ، مَاحِىُ الْبِدْعَةِ، صَاحِبُ الْاِلْـهَامِ، رَسُوْلِ نُـمَا، سَيّدُ
الْاَوْلِيَاءِ، سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ، اِمَامُ الصِّدِّيْقِيْنَ، اِمَامُ الْاَئِـمَّةِ،
اَلْـمُجَدّدُ الْاَعْظَمُ، قَيُّوْمُ الزَّمَانِ، اَلْـجَبَّارِىُّ الْاَوَّلُ، اَلْقَوِىُّ
الْاَوَّلُ، اَلسُّلْطَانُ النَّصِيْرُ، حَبِيْبُ اللهِ، جَامِعُ الْاَلْقَابِ، اَهْلُ
بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ، مَوْلَانَا
سَيِّدُنَا حَضْرَتْ اِمَامُ الْاُمَمِ
عَلَيْهِ السَّلَامُ
اَلْـحَسَنِىُّ وَالْـحُسَيْنِىُّ
وَالْقُرَيْشِىُّ وَالْـحَنَفِىُّ وَالْقَادِرِىُّ وَالْچِشْتِىُّ وَالنَّقْشَبَنْدِىُّ
وَالْـمُجَدِّدِىُّ
وَالْـمُحَمَّدِىُّ
رَاجَارْبَاغْ شَرِيْفٌ، دَاكَا
M‡elYv †K›`ª :
gyn¤§w`qv Rvwgqv kixd, ˆ`wbK Avj Bnmvb kixd Ges gvwmK Avj evBwq¨bvZ kixd Dbv‡`i
m¤§vwbZ cÖwZôvZv I c„ô‡cvlK- LjxdvZzjøvn,
LjxdvZz im~wjjøvn, Bgvgyk kixÔqvn IqvZ ZixK¡vn, KzZzeyj ÔAvjg, M¦DQyj AvÕhg,
myjZ¡vbyj AvDwjqv, gvLhvbyj gvÕwidvn, LhxbvZzi ingvn, gyCbyj wgjøvn, wjmvbyj
D¤§vn, ZvRyj gydvmwmixb, iCmyj gynvwÏQxb, dLiæj dzK¡vnv, nvwKgyj nv`xQ, û¾vZzj
Bmjvg, mvBwq¨`yj gyRZvwn`xb, gyn&BDm mybœvn, gvwnDj we`qvn, Qwneyj Bjnvg,
im~‡j bygv, mvBwq¨`yj AvDwjqv, myjZ¡vbyj ÔAvwidxb, BgvgyQ wQÏxK¡xb, Bgvgyj
AvB¤§vn, gyRvwχ` AvÕhg, K¡Bq~¨gyh hvgvb, RveŸvwiDj AvDIqvj, K¡DBqy¨j AvDIqvj,
myjZ¡vbyb bvQxi, nvexeyjøvn, RvwgÔDj Avj&K¡ve, Avn&jy evBwZ im~wjjøvn,
gvIjvbv-
mvBwq¨`ybv nhiZ Bgvgyj Dgvg AvjvBwnm mvjvg
Avj nvmvbx Iqvj ûmvBbx Iqvj KzivBkx
Iqvj nvbvdx Iqvj K¡vw`ix Iqvj wPkZx Iqvb bK&ke›`x Iqvj gyRvwÏ`x Iqvj
gyn¤§`x
ivRvievM kixd,
XvKv|
ভূমিকা : মানুষ একে অপরের সাথে বিভিন্ন সম্পর্কে জড়িত। মানুষের
মাঝের এই সম্পর্কের নাম হচ্ছে ‘আত্মীয়তা’। পরস্পরের সাথে জড়িত মানুষ হচ্ছে একে অপরের ‘আত্মীয়’। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে আত্মীয়তার সম্পর্ক
সর্বতোভাবে জড়িত। আত্মীয় ছাড়া এ জীবন অচল। আত্মীয়দের সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালবাসা নিয়েই মানুষ এ পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকে। আর
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় না থাকলে জীবন হয়ে যায় নীরস, আনন্দহীন,
একাকী ও বিচ্ছিন্ন। তাই পার্থিব জীবনে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার
গুরুত্ব অপরিসীম। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কেই আলোচ্য নিবন্ধে আলোকপাত করা
হবে ইনশাআল্লাহ।
আত্মীয়র পরিচয়: ‘আত্মীয়’ শব্দের অর্থ হচ্ছে স্বজন, জ্ঞাতি,
কুটুম্ব। এর আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে الرَّحِمُ (আর-রাহিমু) বা ذُو الرَّحِمِ (যুর রাহিমে)। আত্মীয়তা-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে অর্থাৎ এমন পথ-পন্থা
যাতে দু’ব্যক্তি, দল বা দেশ
পরস্পরের সাথে সদাচরণ করে বা পরস্পরে আলোচনা করে’।
কেউ কেউ বলেন,
وهم
من بينه وبين الآخر نسب سواء كان يرثه أم لاَ سواء كان ذا مـحرم أم لا-
অর্থ: ‘আত্মীয়
হচ্ছে তারা যাদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে, তারা সম্পদের
উত্তরাধিকারী হোক বা না হোক, মাহরাম হোক বা না হোক’।
আত্মীয়তার সম্পর্কের তাৎপর্য : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার অর্থ ও তাৎপর্য হচ্ছে স্বজন ও আপনজনের সার্বিক
খোঁজ-খবর রাখা ও তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা। ইবনুল আছীর বলেন,
وهي كناية عن الاحسان
إلى الأقربين من ذوى النسب والأصهار، والعطف عليهم والرفق لهم والرعاية لأحوالهم وكذلك
أن بعدوا وأساءوا- ‘
এটা হচ্ছে বংশীয় ও বৈবাহিক সম্পর্কীয়
আত্মীয়দের প্রতি অনুগ্রহ-অনুকম্পা প্রদর্শন করা, তাদের
প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের অবস্থার প্রতি খেয়াল
রাখা, যদিও তারা দূরে চলে যায় এবং খারাপ আচরণ করে।
আত্মীয়তার প্রকার : আত্মীয় প্রধানত দু’প্রকার। যথা-
(১) রক্ত সম্পর্কীয় বা বংশীয়। যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদী,
ভাইবোন, চাচা-চাচী, মামা-খালা
ইত্যাদি। (২) বিবাহ সম্পর্কীয়। যেমন শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকা
ইত্যাদি। যেমন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُوْنَ مِصْرَ وَهِىَ أَرْضٌ
يُسَمَّى فِيْهَا الْقِيْرَاطُ فَإِذَا فَتَحْتُمُوْهَا فَأَحْسِنُوْا إِلَى أَهْلِهَا
فَإِنَّ لَـهُمْ ذِمَّةً وَرَحِـمًا. أَوْ قَالَ ذِمَّةً وَصِهْرًا-
‘নিশ্চয়ই তোমরা অচিরেই মিসর জয় করবে। সেটা এমন
একটি ভূমি যাকে ‘কবীরাত্ব’ বলা হয়। অর্থাৎ যেখানে দীনার-দিরহামের প্রাচুর্য রয়েছে। যখন
তোমরা সেটা জয় করবে, তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে উত্তম
ব্যবহার করবে। কেননা তাদের জ্ঞাতি সম্পর্ক রয়েছে। অথবা তিনি বলেছেন, বংশীয় ও বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে’। অর্থাৎ ইসমাঈল (আঃ)-এর মাতা হাজেরার দিক দিয়ে বংশীয় বা রক্ত
সম্পর্ক এবং রাসূলপত্নী মারিয়া কিবতিয়ার দিক দিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক। (মুসলিম হা/২৫৪৩; মিশকাত হা/৫৯১৬)
পরিত্যক্ত সম্পদের অধিকারী হওয়ার দিক দিয়ে
আত্মীয় দু’প্রকার। (১) উত্তরাধিকারী; যেমন- পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী,
পুত্র-কন্যা প্রভৃতি (২) উত্তরাধিকারী নয়; যেমন-
চাচা-চাচী, মামা-খালা ইত্যাদি।
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার হুকুম: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার হুকুম ফরয, সুন্নাত ও বৈধ
বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে অবস্থার প্রেক্ষিতে এবং আত্মীয়দের ভিন্নতার কারণে। তবে
সাধারণভাবে সবার সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা ওয়াজিব এবং সম্পর্ক ছিন্ন
করা সকলের ঐক্যমতে হারাম। তবে কারো কারো নিকটে কবীরা গোনাহ।
(১) ফরয: পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা ফরয। কেননা
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
وَوَصَّيْنَا
الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً
অর্থ: ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহার করার নির্দেষ দিয়েছি’ (পবত্রি সূরা আনকাবূত, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَقَضَىٰ
رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا
يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ
وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا ﴿٢٣﴾
অর্থ: আপনার রব তায়ালা আদেশ করেছেন যে,
তিনি ব্যতীত তোমরা কারো ইবাদত করবে না। পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার
করবে, যদি তাদের একজন অথবা উভয়জন তোমার কাছে থেকে
(জীবদ্দশায়) বার্ধক্যে পৌছে, তাহলে তাদেরকে "উফ"
বলবে না এবং তাদেরকে ধমক দিবে না। আর তাদেরকে সম্মান করে কথা বলবে। (পবিত্র
সূরা বনী ইসরাইল, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
وَاخْفِضْ لَـهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ
مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا ﴿٢٤﴾
অর্থ: বলো, হে আমার রব তায়ালা!
উনাদের প্রতি দয়া করুন যেরূপ উনারা আমাকে ছোট বেলায় লালন-পালন করেছেন। (পবিত্র
সূরা বনী ইসরাইল, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অনেক নির্দেশ এসেছে। আর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে বড় গোনাহ
বলা হয়েছে। যেমন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি বলেন-
أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ
الْكَبَائِرِ. ثَلاَثًا. قَالُوْا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِ،
وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ. وَجَلَسَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ أَلاَ وَقَوْلُ الزُّوْرِ.
অর্থ: ‘আমি কি
তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহগুলো সম্পর্কে অবহিত করব না? সকলে বললেন, হ্যাঁ, বলুন হে মহান
আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছ্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শরীক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্যতা। অতঃপর তিনি হেলান
দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসলেন। এরপর বললেন, সাবধান, মিথ্যা কথা বলা’। (বুখারী শরীফ হা/২৬৫৪; মুসলিম
শরীফ হা/৮৭ তিরমিযী শরীফ হা/১৯০১)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন, এক বেদুইন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে এসে বলল, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কবীরা
গুনাহসমূহ কি? তিনি বললেন,
اَلْإِشْرَاكُ بِاللهِ. قَالَ ثُمَّ
مَاذَا قَالَ ثُمَّ عُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ. قَالَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ الْيَمِيْنُ
الْغَمُوْسُ. قُلْتُ وَمَا الْيَمِيْنُ الْغَمُوْسُ؟ قَالَ الَّذِىْ يَقْتَطِعُ مَالَ
امْرِئٍ مُسْلِمٍ هُوَ فِيْهَا كَاذِبٌ.
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ
পাক উনার সাথে শরীক করা’। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি
বললেন, ‘পিতামাতার অবাধ্যতা। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘মিথ্যা শপথ করা’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মিথ্যা শপথ কি? তিনি
বললেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা (শপথের সাহায্যে) মুসলিমের
ধন-সম্পদ হরণ করে নেয়’। (বুখারী
শরীফ হা/৬৯২০; আবু দাউদ শরীফ হা/২৮৭৫)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
أَىُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ
قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا. قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ.
قَالَ ثُمَّ أَىُّ قَالَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ.
অর্থ: ‘কোন আমল মহান
আল্লাহ পাক উনার নিকটে অধিক প্রিয়। তিনি বললেন, যথাসময়ে ছালাত
আদায় করা। হযরত ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, অতঃপর
পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। তিনি বললেন, অতঃপর কোনটি?
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি বললেন, ‘মহান আল্লাহ
পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করা’। (বুখারী শরীফ হা/৫২৭; মুসলিম শরীফ
হা/৮৫)
অন্যত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
رَغِمَ أَنْفُ ثُـمَّ رَغِمَ أَنْفُ
ثُـمَّ رَغِمَ أَنْفُ. قِيلَ مَنْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ
عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهـُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الـْجـَنَّةَ.
অর্থ: ‘তার নাক
ধূলায় ধুসরিত হোক। তার নাক ধূলায় ধুসরিত হোক। তার নাক ধূলায় ধুসরিত হোক’। বলা হ’ল, কার হে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতামাতার একজনকে অথবা উভয়কে বার্ধক্যে পেল, কিন্তু (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না’। (মুসলিম শরীফ হা/২৫৫১)
(২) সুন্নত: অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা সুন্নত।
যেমন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জনৈক
ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশকারী আমল সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে বলেন,
وَتَصِلُ الرَّحِمَ
অর্থ: ‘তুমি
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে’। (বুখারী শরীফ হা/১৩৯৬; আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯)
(৩) মানদূব বা বৈধ: কাফির-মুশরিক পিতা-মাতার সাথে সন্তানের
সুসম্পর্ক বজায় রাখা বৈধ। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
وَصَاحِبْهُمَا
فِي الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا
অর্থ: ‘আর
দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে’ (পবিত্র
লোক্বমান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১/১৫)
আসমা বিনতে হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَدِمَتْ عَلَىَّ أُمِّىْ وَهْىَ
مُشْرِكَةٌ، فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُوْلَ
اللهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ إِنَّ أُمِّىْ قَدِمَتْ وَهِىَ رَاغِبَةٌ، أَفَأَصِلُ
أُمِّىْ، قَالَ نَعَمْ صِلِى أُمَّكِ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার যুগে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট আসলেন। আমি
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ফতওয়া
জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা আমার নিকটে এসেছেন, তিনি আমার প্রতি (ভাল ব্যবহার পেতে) খুবই আগ্রহী, এমতাবস্থায়
আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনি আপনার মায়ের সাথে সদাচরণ
করবেন’। (বুখারী শরীফ
হা/২৬২০; মুসলিম শরীফ হা/১০০৩)
আত্মীয়দের মাঝে মর্যাদা বা স্তরের
ভিন্নতা: আত্মীয় নিকটত্ব ও দূরত্বের ভিত্তিতে এবং বংশ ও স্থানের
দূরত্বের দৃষ্টিকোণে ভিন্নতর হয়ে থাকে। সুতরাং বংশীয় দিক দিয়ে নিকটাত্মীয় হচ্ছেন
পিতা-মাতা। তবে এর মধ্যে মায়ের স্তর ঊর্ধ্বে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
وَوَصَّيْنَا
الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي
عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ
অর্থ: আমি মানুষকে তার পিতামাতার ব্যাপারে নির্দেশ
দিয়েছি, তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভ ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দু'বছরে। (নির্দেশ
দিয়েছি) শোকরগুযারী করার জন্য আমার এবং তোমার পিতামাতার, সবাই আমার
নিকটই প্রত্যাবর্তন করবে। (পবিত্র লোক্বমান শরীফ ৩১/১৪)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
أَبِى هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه
وسلم فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِى قَالَ أُمُّكَ.
قَالَ ثُـمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثـُمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُـمَّ
مَنْ قَالَ ثُـمَّ أَبُوْكَ.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে এসে
জিজ্ঞেস করল, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি বলল, তারপর কে?
তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে বলল, অতঃপর কে?
তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। (বুখারী শরীফ
হা/৫৯৭১; মুসলিম শরীফ হা/২৫৪৮)
অন্যত্র তিনি বলেন,
إِنَّ
اللهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الْأُمَّهَاتِ، وَوَأْدَ الْبَنَاتِ، وَمَنَعَ وَهَاتِ،
وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ.
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ
পাক তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মায়ের অবাধ্যতা বা নাফরমানী, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা, কারো প্রাপ্য না
দেয়া এবং অন্যায়ভাবে কিছু নেয়া। আর অপছন্দ করেছেন অনর্থক বাক্য ব্যয়, অধিক প্রশ্ন করা এবং মাল বিনষ্ট করা’। (বুখারী শরীফ হা/২৪০৮; মুসলিম
শরীফ হা/২৫৯৩)
নিকটাত্মীয়ের মধ্যে ভাই-বোনও অন্তর্ভুক্ত। তবে
ভাই-বোন বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় হয়ে থাকে। আবার সম্পর্কের কারণে তারা দূরবর্তীও হয়।
যেমন চাচাত, মামাত, খালাত,
ফুফাত ভাই।
আবার স্থানের দূরত্বের কারণেও স্তরের ভিন্নতা
হয়। যেমন নিজ মহল্লা ও নিজ শহরে বসবাসকারী আত্মীয় নিকটের। পক্ষান্তরে ভিন্ন
মহল্লায় ও ভিন্ন শহরে বসবাসকারী আত্মীয় দূরের অন্তর্ভুক্ত। তবে রক্ত বা বংশ
সম্পর্কিত আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা জরূরী অন্যদের অপেক্ষা। এখানে সময়ের
কোন নির্ধারিত সীমা নেই। আজীবন এ সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
প্রকৃত জ্ঞাতি সম্পর্ক : কোন ব্যক্তি যখন তার কোন আত্মীয়ের সাক্ষাৎ করার কারণে ঐ
আত্মীয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে, এটাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা বলে না।
বরং এটা হচ্ছে প্রতিদান স্বরূপ। অনুরূপভাবে যদি কোন কাজে সহযোগিতা ও প্রয়োজন পূর্ণ
করা হয় আত্মীয়ের অনুরূপ কাজের বিনিময়ে তাহ’লে এটাকেও আত্মীয়তা রক্ষা করা বলা হবে না। এটাও হচ্ছে প্রতিদান
বা বিনিময়। বরং প্রকৃত আত্মীয়তা রক্ষা হচ্ছে সম্পর্ক ছিন্ন করা হ’লেও যে তা বজায় রাখে। আত্মীয় দুর্ব্যবহার করলেও যে তাদের সাথে
সাক্ষাৎ করে, খোঁজ-খবর নেয়, তারা
তার সাথে অসদাচরণ করলেও সে উত্তম আচরণ করে। যেমন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
لَيْسَ
الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِئِ، وَلَكِنِ الْوَاصِلُ الَّذِىْ إِذَا قَطَعَتْ رَحِمُهُ
وَصَلَهَا.
অর্থ: ‘প্রতিদানকারী
আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবার পরও তা বজায় রাখে। (বুখারী
শরীফ হা/৫৯৯১; তিরমিযী শরীফ হা/২০২৩)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
রয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদা এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করল,
يَا رَسُوْلَ
اللهِ إِنَّ لِىْ قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُوْنِىْ وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيْئُوْنَ
إِلَىَّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُوْنَ عَلَىَّ. فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا
قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيْرٌ
عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ.
অর্থ: ‘ইয়া
রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, কিন্তু তারা আমার
সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি কিন্তু তারা আমার সাথে
অসদাচরণ করে। তারা আমার সাথে গোয়ার্তুমি করে। আমি সহ্য করে যাই। তখন রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘যদি তোমার বক্তব্য ঠিক হয়, তবে তো তুমি যেন তাদের মুখে
উত্তপ্ত ছাই পুরে দিচ্ছ। তোমার কারণে তাদের দুর্ভোগ আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এরূপ
করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ হ’তে একজন সাহায্যকারী তাদের মুকাবিলায় তোমার সাথে থাকবেন’। (মুসলিম শরীফ হা/২৫৫৮; মিশকাত শরীফ হা/৪৯২৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫২)
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার পদ্ধতি
ও উপায়: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কতিপয় কাজ করা জরূরী।
সেগুলো হচ্ছে-
* তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা, তাদের অবস্থা সম্পর্কে লক্ষ্য রাখা এবং তাদের খোঁজ-খবর নেয়া। তাদেরকে
উপহার-উপঢৌকন প্রদান করা, তাদের যথাযথ সম্মান করা ও মর্যাদা
দেয়া। তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র তাদেরকে দান করা।
* আত্মীয়-স্বজন বাড়ীতে আসলে তাদেরকে সানন্দে
গ্রহণ করা ও যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা এবং মাঝেমধ্যে বাড়ীতে আমন্ত্রণ করা। তাদের কোন
অভিযোগ থাকলে তা শোনা ও দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি তাদের
মর্যাদাকে সবার উপরে স্থান দেয়া।
* তাদের সুসংবাদে শরীক হওয়া এবং দুঃসংবাদে
সহমর্মী ও সমব্যথী হওয়া। তাদের নিরাপত্তা ও সংশোধনের জন্য দো‘আ করা। বিবদমান বিষয় দ্রুত মীমাংসা করা এবং সম্পর্কোন্নয়ন ও
মজবূত করণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
* আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কেউ অসুস্থ হ’লে তাকে দেখতে যাওয়া এবং সাধ্যমত তার সেবা-শুশ্রূষা করা। কোন
আত্মীয় দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত কবুল করা।
* আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, তাদের হেদায়াতের চেষ্টা করা,
সঠিক পথের দিকে তাদেরকে দাওয়াত দেয়া। সেই সাথে তাদেরকে সৎ কাজের
আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা, বাধা দেয়া।
আত্মীয়-স্বজন সৎ কর্মশীল হ’লে এবং সঠিক পথে থাকলে এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। পক্ষান্তরে আত্মীয়-স্বজন কাফের
বা পাপাচারী হ’লে তাদেরকে উপদেশ দেয়া এবং তাদের হেদায়াতের জন্য
চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
* যদি কোন আত্মীয়ের মধ্যে অহংকার, আত্মগৌরব, শত্রুতা ও বিরোধীভাব পরিলক্ষিত হয় অথবা
কেউ যদি এই আশংকা করে যে, তার কোন আত্মীয় তাকে প্রত্যাখ্যান
করবে ও তার সাথে বাড়াবাড়ি করবে, তাহ’লে তার সাথে নম্রতা অবলম্বন করা অথবা তাদের থেকে এমনভাবে দূরত্ব
বজায় রাখা যে, সেটা যেন তাদের কোন কষ্টের কারণ না হয়। আর
তাদের জন্য অধিক দো‘আ করা, যাতে মহান আল্লাহ পাক তাদের হেদায়াত দান
করেন। আত্মীয়দের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযায় শরীক হওয়া।
সর্বোপরি আত্মীয়-স্বজনের সাথে নম্র ব্যবহার
এবং তাদের সাথে সদ্ভাব-সম্প্রীতি স্থাপন ও পরস্পর ভালবাসার সৃষ্টির মাধ্যমে এ
সম্পর্ক অটুট রাখা যায়।
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অতি জরূরী। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি
বলেন,
وَاعْبُدُوا
اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى
وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْـجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْـجَارِ الْـجُنُبِ
وَالصَّاحِبِ بِالْـجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ
اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُـخْتَالاً فَخُوْرًا
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করো এবং উনার
সাথে কোন কিছুকে শরীক করবেনা। এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং নিকট-আত্মীয়, এতিম, মিসকীন, কাছের প্রতিবেশী, দূরের প্রতিবেশী, ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, মুসাফির এবং
তোমাদের গোলাম-বাদীদের সাথেও সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি দাম্ভিক
অহংকারীদের পছন্দ করেন না। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ, আয়াত শরীফ
৪/৩৬)
অন্যত্র তিনি বলেন,
وَاتَّقُوا
اللهَ الَّذِيْ تَسَاءَلُوْنَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْبًا
অর্থ: তোমরা ঐ মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো যার উছিলা দিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে (কোনো
কিছু) চেয়ে থাকো। এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে (মহান আল্লাহ পাক) উনাকে ভয় করো।
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন। (পবিত্র সূরা
নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪/১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন-
وَالَّذِيْنَ
يَصِلُوْنَ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُوْصَلَ وَيَـخْشَوْنَ رَبَّـهُمْ وَيَـخَافُوْنَ
سُوْءَ الْـحِسَابِ
অর্থ: যারা মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সম্পর্ক রক্ষা
করতে আদেশ করেছেন তা রক্ষা করে এবং তাদের রব তায়ালা উনাকে ভয় করে এবং কঠিন হিসাবকে
ভয় করে। (পবিত্র সূরা রা‘দ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩/২১)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন,
وَإِذْ
أَخَذْنَا مِيْثَاقَ بَنِيْ إِسْرائيْلَ لا تَعْبُدُوْنَ إِلاَّ اللهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ
إِحْسَاناً وَذِيْ الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ-
অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন) যখন আমি বনী
ইসরাঈলদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত কারো ইবাদত করবে না। আর উত্তম ব্যবহার করবে পিতা-মাতার
সাথে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে, ইয়াতীমদের সাথে,
মিসকীনদের সাথে। (পবত্রি সূরা বাক্বারাহ
শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২/৮৩)
তিনি আরো বলেন,
فَهَلْ
عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوْا فِى الأَرْضِ وَتُقَطِّعُوْا أَرْحَامَكُمْ
অর্থ: যদি তোমরা ক্ষমতা লাভ করো যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি
করার ব্যাপারে এবং তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে তোমরা কি নিশ্চয়তা
দিতে পারো। (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ, পবিত্র আয়াত
শরীফ ৪৭/২২)
অন্যত্র তিনি বলেন,
إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ
وَإِيتَاء ذِي الْقُرْبَى
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ
পাক তিনি ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের
নির্দেশ দেন’ (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬/৯০) তিনি আরো বলেন,
وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ
অর্থ: ‘আত্মীয়-স্বজনকে
তাদের অধিকার প্রদান করুন’ (পবিত্র
সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭/২৬; পবিত্র সূরা রূম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১/৩৮)।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও আত্মীয়তার
সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে অনেক তাকীদ এসেছে। যেমন- হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন,
لَمَّا
أُنْزِلَتْ هَذِهِ الآيَةُ (وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الأَقْرَبِيْنَ) دَعَا رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم قُرَيْشًا فَاجْتَمَعُوْا فَعَمَّ وَخَصَّ فَقَالَ يَا بَنِى
كَعْبِ بْنِ لُؤَىٍّ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِى مُرَّةَ بْنِ
كَعْبٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِى عَبْدِ شَمْسٍ أَنْقِذُوْا
أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِىْ عَبْدِ مَنَافٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ
النَّارِ يَا بَنِى هَاشِمٍ أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِى عَبْدِ
الْمُطَّلِبِ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا فَاطِمَةُ أَنْقِذِىْ نَفْسَكِ
مِنَ النَّارِ فَإِنِّىْ لاَ أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ
رَحِمًا سَأَبُلُّهَا بِبَلاَلِـهَا-
অর্থ: যখন আয়াত নাযিল হ’ল,
وَأَنْذِرْ
عَشِيْرَتَكَ الأَقْرَبِيْنَ
অর্থ: ‘আপনার
নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক কর’ (পবিত্র
সূরা শু‘আরা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬/২১৪)
তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ডাক দিলেন, হে বনী কা‘ব ইবনু লুই! নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন হ’তে রক্ষা কর! হে আবদে মানাফ গোত্রীয়
লোকজন! নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন হ’তে রক্ষা করুন! হে হাশেম বংশীয়রা! নিজেদেরকে আগুন হ’তে রক্ষা কর! হে হযরত আব্দুল মুত্তালিব
আলাইহিস সালাম উনার বংশের লোকজন! নিজেদেরকে আগুন হ’তে রক্ষা কর! হে হযরত যাহরা আলাইহাস
সালাম! নিজেকে আগুন হ’তে রক্ষা করুন! নতুবা আমি তোমাকে আল্লাহর কোপানল হ’তে রক্ষা করতে পারব না, আমার করার কিছুই থাকবে না; কেবল তোমরা
যে আমার রক্তের বন্ধনে বাঁধা, এই যা আমি আমার রক্তের হক আদায়
করি’। (মুসলিম
শরীফ হা/২০৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৮)
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনকে
বললেন,
أَخْبِرْنِىْ
بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِى الْجَنَّةَ. قَالَ مَا لَهُ مَا لَهُ وَقَالَ النَّبِىُّ صلى
الله عليه وسلم أَرَبٌ مَالَهُ، تَعْبُدُ اللهَ، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا،
وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِى الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ.
অর্থ: ‘আমাকে
এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তার কী হয়েছে! তার কী হয়েছে! এবং বললেন, তার দরকার রয়েছে তো। আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার ‘ইবাদত করবে, উনার সঙ্গে অপর
কোন কিছুকে শরীক করবে না। ছালাত আদায় করবে, যাকাত আদায় করবে
এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখবে’। (বুখারী হা/১৩৯৬।)
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বলেন, জনৈক বেদুঈন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক ভ্রমণকালে উনার খেদমতে উপস্থিত
হয়ে আরজ করল,
أَخْبِرْنِيْ مَا يُقَرِّبُنِيْ مِنَ الْـجَنَّةِ،
وَيُبَاعِدُنِيْ مِنَ النَّارِ؟ قَالَ تَعْبُدُ اللهَ وَلا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا،
وَتُقِيْمُ الصَّلاةَ، وَتُؤْتـِي الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِم-
অর্থ: ‘যা আমাকে
জান্নাতের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম হ’তে দূরবর্তী করবে, সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন,
‘ইবাদত করবে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার
সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না। ছালাত কায়েম করবে, যাকাত
প্রদান করবে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে’। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯;
সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৫০৮)
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ফযীলত :
আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার ফযীলত বহুবিধ। তন্মধ্যে কতিপয়
দিক এখানে উল্লেখ করা হ’ল।-
১. মহান আল্লাহ পাক ও পরকালের
প্রতি ঈমানের পরিচায়ক :
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ঈমানের পরিচায়ক। নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
وَمَنْ
كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ
অর্থ: ‘যে
ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক
বজায় রাখে’। (বুখারী শরীফ হা/৬১৩৮)
২. মহান আল্লাহ পাক উনার
আনুগত্যের প্রকাশ : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার
আনুগত্য করার বহিঃপ্রকাশ। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
وَالَّذِيْنَ يَصِلُوْنَ مَا أَمَرَ اللهُ
بِهِ أَنْ يُوْصَلَ وَيَـخْشَوْنَ رَبَّـهُمْ وَيَخَافُوْنَ سُوْءَ الْـحِسَابِ
অর্থ: ‘আর মহান আল্লাহ
পাক তিনি যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে, ভয় করে তাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করে কঠোর হিসাবকে’ (পবিত্র সূরা রা‘দ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩/২১)
৩. মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে
সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে
মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এ সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম তিনি বলেন,
إِنَّ الرَّحِمَ شُجْنَةٌ مِنَ الرَّحْمَنِ
تَقُوْلُ يَا رَبِّ إِنِّىْ قُطِعْتُ يَا رَبِّ إِنِّىْ ظُلِمْتُ يَا رَبِّ إِنِّىْ
أُسِىءَ إِلَىَّ يَا رَبِّ يَا رَبِّ. فَيُجِيْبُهَا رَبُّهَا عَزَّ وَجَلَّ فَيَقُوْلُ
أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ.
অর্থ: ‘রেহেম’ (রক্তের বাঁধন) ‘রহমানের’ অংশ বিশেষ। সে বলবে, ‘হে মহান আল্লাহ পাক! আমি মাযলূম, আমি ছিন্নকৃত। হে মহান আল্লাহ পাক! আমার সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। হে মহান
আল্লাহ পাক! হে মহান আল্লাহ পাক! তখন তার প্রতিপালক মহান আল্লাহ তা‘আলা তিনি জবাব দিবেন, তুমি কি সন্তুষ্ট
নও যে, যে ব্যক্তি তোমাকে ছিন্ন করবে, আমি
তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব এবং যে তোমাকে যুক্ত করবে, আমি
তার সাথে সম্পর্ক জুড়ে রাখব’? (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬৫, সনদ ছহীহ)
৪. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অছিয়ত প্রতিপালন করা: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম তিনি
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনহুম উনাদের মাধ্যমে স্বীয় উম্মতকে
বিভিন্ন বিষয়ে অছিয়ত করেছেন। তন্মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা অন্যতম। সুতরাং
আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা হ’লে তাঁর উপদেশ প্রতিপালন করা হবে। এ মর্মে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عَنْ
أَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَوْصَانِيْ خَلِيْلِيْ صلى الله عليه
وسلم بِخِصَالٍ مِنَ الْخَيْرِ أَوْصَانِيْ أَنْ لاَّ أَنْظُرَ إِلَى مَنْ هُوَ
فَوْقِيْ وَأَنْ أَنْظُرَ إِلَى مَنْ هُوَ دُوْنِيْ وَأَوْصَانِيْ بِحُبِّ
الْمَسَاكِيْنِ وَالدُّنُوِّ مِنْهُمْ وَأَوْصَانِيْ أَنْ أَصِلَ رَحِمِيْ وَإِنْ
أَدْبَرَتْ...-
অর্থ: হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বর্ণিত তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে কতিপয় উত্তম গুণের ব্যাপারে
উপদেশ দেন। তিনি আমাকে উপদেশ দেন যে, আমি যেন আমার চেয়ে উঁচু
স্তরের লোকের দিকে লক্ষ্য না করি; বরং আমার চেয়ে নিম্নস্তরের
লোকের দিকে তাকাই। তিনি আরো উপদেশ দেন, দরিদ্রদের ভালবাসতে ও
তাদের নিকটবর্তী হ’তে। তিনি উপদেশ দেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে, যদিও তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে...’(ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫২৫, সনদ ছহীহ)
৫. মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট
অন্যতম প্রিয় আমল: মানুষের কৃত অনেক আমল মহান আল্লাহ পাক উনার
নিকটে প্রিয় ও পছন্দনীয়। তন্মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা অন্যতম। এ মর্মে পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وَعَنْ
رَجُلٍ مِنْ خَثْعَمَ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ فِيْ
نَفَرٍ مِّنْ أَصْحَابِهِ فَقُلْتُ أَنْتَ الَّذِيْ تَزْعُمُ أَنَّكَ رَسُوْلُ
اللهِ قَالَ نَعَمْ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ الله أَيُّ الْأَعْمَالِ أَحَبُّ
إِلَى اللهِ قَالَ الإيْمَانُ بِاللهِ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ثُمَّ مَهْ
قَالَ ثُمَّ صِلَةُ الرَّحِمُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ثُمَّ مَهْ قَالَ
ثُمَّ الأَمْرُ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّهِيْ عَنِ الْمُنْكَرِ قَالَ قُلْتُ يَا
رَسُوْلَ اللهِ أَيُّ الأَعْمَالِ أَبْغَضُ إِلَى اللهَ قَالَ الإشْرَاكُ بِاللهِ
قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ثُمَّ مَهْ قَالَ ثُـمَّ قَطَيْعَةُ الرَّحِمِ
قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ثُـمَّ مَهْ قَالَ ثُـمَّ الأَمْرُ الْمَنُكَرِ
وَالنَّهِيُ عَنِ الْمَعْرُوْفِ-
অর্থ: ‘খাছ‘আম গোত্রের জনৈক লোক হ’তে বর্ণিত সে বলল, আমি নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবারে
আসলাম। তিনি তখন ছাহাবীদের একটি ক্ষুদ্র দলের সাথে ছিলেন। আমি বললাম, আপনিইতো মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল? তিনি বললেন,
হ্যাঁ। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন আমল মহান
আল্লাহ পাক উনার নিকটে পছন্দনীয়? তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার উপরে ঈমান আনা। আমি বললাম, হে মহান আল্লাহ
পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরপর কি? তিনি
বললেন, আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা। আমি বললাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরপর কি?
তিনি বললেন, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ
করা। আমি বললাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন আমল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে অপছন্দনীয়? তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শরীক স্থাপন
করা। আমি বললাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরপর কি? তিনি বললেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা। আমি বললাম, হে মহান আল্লাহ
পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরপর কি? তিনি
বললেন, গর্হিত কাজের নির্দেশ দেওয়া এবং সৎকাজে নিষেধ করা’। (ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫২২, সনদ ছহীহ)
৬. বয়স ও রিযিক বৃদ্ধির উপায়: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে মানুষের বয়স ও জীবিকা বৃদ্ধি পায়। এ সম্পর্কে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
مَنْ
سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِىْ رِزْقِهِ، وَأَنْ يُنْسَأَ لَهُ فِىْ أَثَرِهِ، فَلْيَصِلْ
رَحِمَهُ
অর্থ: ‘যে চায়
যে, তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে ঘনিষ্ঠ আচরণ করে’। (বুখারী
শরীফ হা/২০৬৭, ৫৯৮৫; মুসলিম শরীফ হা/২৫৫৭)
অন্যত্র তিনি বলেন,
مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِىْ رِزْقِهِ،
وَيُنْسَأَ لَهُ فِىْ أَثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِـمَهُ
অর্থ: ‘যে তার
জীবিকার প্রশস্ততা এবং আয়ু বৃদ্ধি পছন্দ করে, সে যেন
আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম আচরণ করে’। (বুখারী শরীফ হা/৫৯৮৬; মুসলিম শরীফ
হা/২৫৫৭)
এখানে বয়স বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে হায়াতে বরকত লাভ
করা। সেই সাথে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ দেহ, শক্তিমত্তা এবং
অধিক কাজ করার ক্ষমতা লাভ করা।
কেউ কেউ বলেন, বয়স ও
রিযিক বৃদ্ধির তাৎপর্য হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি
প্রকৃতই বান্দার বয়স ও জীবিকা বাড়িয়ে দেন। এখানে এ প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নেই যে,
বয়স ও রিযিক নির্ধারিত; সুতরাং তা কিভাবে
বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে? কেননা হায়াত ও রিযক দু’ধরনের। যথা- ১. সাধারণ, যা কেবল মহান আল্লাহ
পাক তিনি জানেন। এটা অপরিবর্তিত। ২. লিপিবদ্ধ, যা তিনি হযরত ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে লিখিয়েছেন ও উনাদের অবহিত করেছেন; বিভিন্ন কারণ ও ঘটনার প্রেক্ষিতে এটা হ্রাস-বৃদ্ধি হয়।
৭. আত্মীয়দের মাঝে পারস্পরিক
মুহাববত বৃদ্ধির মাধ্যম : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে
আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ভালবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন,
مَنِ اتَّقَى رَبَّهُ وَوَصَلَ رَحِمَهُ نُسِىءَ
فِيْ أَجَلِهِ وَثُرِىَ مَالُهُ وَأَحَبَّهُ أَهْلُهُ-
অর্থ: ‘যে
ব্যক্তি তার প্রতিপালককে ভয় করে এবং তার আত্মীয়-স্বজনকে জুড়ে রাখে, তার মৃত্যু পিছিয়ে দেওয়া হয়, তার সম্পদ বৃদ্ধি করা
হয় এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে ভালবাসে’। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৮) অন্য শব্দে এসেছে এভাবে,
مَنِ اتَّقَى رَبَّهُ، وَوَصَلَ رَحِمَهُ،
أُنْسِيءَ لَهُ فِيْ عُمُرِهِ وَثُرِىَ مَالُهُ، وَأَحِبَّهُ أَهْلُهُ.
অর্থ: ‘যে
ব্যক্তি তার প্রতিপালককে ভয় করে, আত্মীয়তার বন্ধন জুড়ে রাখে,
তার আয়ু বর্ধিত করা হয়, তার ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করা
হয় এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে ভালবাসে। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯) তিনি আরো বলেন,
تَعَلَّمُوْا مِنْ أَنْسَابِكُمْ مَا تَصِلُوْنَ
بِهِ أَرْحَامَكُمْ فَإِنَّ صِلَةَ الرَّحِمِ مَحَبَّةٌ فِى الأَهْلِ مَثْرَاةٌ فِى
الْمَالِ مَنْسَأَةٌ فِى الأَثَرِ.
অর্থ: ‘তোমরা
তোমাদের বংশপরিচয় শিখে নাও, যা দ্বারা তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায়
রাখবে। কেননা আত্মীয়তার সম্পর্ক পরিবার-পরিজনের মধ্যে হৃদ্যতা বৃদ্ধি করে, সম্পদ বাড়ায় এবং বয়স বৃদ্ধি করে’। (তিরমিযী হা/১৯৭৯; মিশকাত হা/৪৯৩৪)
৮. পৃথিবীর অধিবাসীদের উন্নয়ন : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা পৃথিবীবাসীদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে এবং তাদের বয়স
বৃদ্ধি করে। এ মর্মে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, উম্মুল
মু’মীনিন আছ ছালীছা হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম
হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
বলেছেন,
إِنَّهُ مَنْ أُعْطِىَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ
فَقَدْ أُعْطِىَ حَظَّهُ مِنْ خَيْرِ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَصِلَةُ الرَّحِمِ وَحُسْنُ
الْخُلُقِ وَحُسْنُ الْجِوَارِ يَعْمُرَانِ الدِّيَارَ وَيَزِيْدَانِ فِى الأَعْمَارِ.
অর্থ: ‘যাকে
নম্রতা দান করা হয়েছে, তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের বহু কল্যাণ দেওয়া
হয়েছে। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, উত্তম চরিত্র ও সৎ
প্রতিবেশী দুনিয়ার অধিবাসীদের উন্নয়ন ঘটায় এবং বয়স বৃদ্ধি করে’। (মুসনাদ আহমাদ শরীফ; ছহীহ আত-তারগীব শরীফ হা/২৫২৪)
৯. দ্রুত ছওয়াব লাভের উপায় : আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে অবিলম্বে ছওয়াব বা প্রতিদান লাভ করা যায়। এ
মর্মে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন,
لَيْسَ شَيْءٌ أُطِيعُ اللهَ فِيهِ أَعْجَلَ
ثَوَابًا مِنْ صِلَةِ الرَّحِمِ، وَلَيْسَ شَيْءٌ أَعْجَلَ عِقَابًا مِنَ الْبَغْيِ
وَقَطِيعَةِ الرَّحِمِ-
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ
পাক উনার আনুগত্যে সম্পন্ন এমন কোন কাজ নেই, যার মাধ্যমে
দ্রুত ছওয়াব লাভ করা যায় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ব্যতীত। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক
ছিন্ন করা ও বিদ্রোহ করা ব্যতীত কোন কাজে দ্রুত শাস্তি আপতিত হয় না’। (বায়হাক্বী শরীফ)
১০. আত্মীয়তার সম্পর্ক ক্বিয়ামতের
দিন সাক্ষী দিবে : যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে
ক্বিয়ামতের দিন অপরাপর আত্মীয়-স্বজন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
وَكُلُّ رَحِمٍ آتِيَةٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
أَمَامَ صَاحِبِهَا تَشْهَدُ لَهُ بِصِلَةٍ إِنْ كَانَ وَصَلَهَا وَعَلَيْهِ بِقَطِيْعَةٍ
إِنْ كَانَ قَطَعَهَا-
অর্থ: ‘রক্তের
বন্ধন ক্বিয়ামতের দিন তার সংশ্লিষ্টজনের সম্মুখে এসে দাঁড়াবে এবং যদি সে তাকে
দুনিয়ায় যুক্ত রেখে থাকে, তবে সে তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে, যদি সে তাকে দুনিয়ায় ছিন্ন করে থাকে, তবে সে তার
বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে’। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩)
১১. জান্নাতে প্রবেশের উত্তম
মাধ্যম : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে জান্নাতে প্রবেশ করা সহজ হয়।
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, বারা ইবনু
আযীব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদা জনৈক বেদুঈন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেদমতে
এসে আরয করল, হে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
عَلِّمْنِىْ
عَمَلاً يُدْخِلُنِىْ الْجَنَّةَ فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ أَقْصَرْتَ الْخُطْبَةَ
لَقَدْ أَعْرَضْتَ الْمَسْأَلَةَ أَعْتِقِ النَّسَمَةَ وَفُكَّ الرَّقَبَةَ
فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَوَلَيْسَتَا بِوَاحِدَةٍ قَالَ لاَ إِنَّ عِتْقَ
النَّسَمَةِ أَنْ تَفَرَّدَ بِعِتْقِهَا وَفَكَّ الرَّقَبَةِ أَنْ تُعِيْنَ فِىْ
عِتْقِهَا وَالْمِنْحَةُ الْوَكُوْفُ وَالْفَْىءُ عَلَى ذِى الرَّحِمِ الظَّالِمِ
فَإِنْ لَمْ تُطِقْ ذَلِكَ فَأَطْعِمِ الْجَائِعَ وَاسْقِ الظَّمْآنَ وَأْمُرْ
بِالْمَعْرُوْفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ فَإِنْ لَمْ تُطِقْ ذَلِكَ فَكُفَّ
لِسَانَكَ إِلاَّ مِنَ الْخَيْرِ.
অর্থ: আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন যা আমাকে
জান্নাতে প্রবেশ করাবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘তোমার কথা যদি এই পর্যন্তই হয়ে থাকে, তবে একটা প্রশ্নের মতো প্রশ্নই তুমি করেছ। গোলাম আযাদ কর এবং গর্দান মুক্ত
কর’। সে ব্যক্তি বলল, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দু’টা একই বস্ত্ত নয় কি? নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না, গোলাম আযাদ করা তো কোন গোলামকে আযাদ করাই এবং
গর্দান মুক্ত করা মানে আত্মীয়-স্বজনের মুক্তির জন্য সাহায্য করা এবং প্রিয় বস্ত্ত
(অর্থ-সম্পদ) দান করা। যদি তা না পার, তবে ক্ষুধার্তকে খাদ্য
খাওয়াবে, পিপাসার্তকে পানি পান করাবে, সৎকাজের
আদেশ করবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে। যদি তাতেও সমর্থ না হও, তবে
কল্যাণকর কথা ব্যতীত তোমার মুখ বন্ধ রাখবে’। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬৮; মিশকাত শরীফ হা/৩৩৮৪)
অন্যত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
يَا أَيُّهَا
النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصِلُوا الأَرْحَامَ وَصَلُّوْا
بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ-
অর্থ: ‘হে লোক
সকল! পরস্পর সালাম বিনিময় কর, অন্যকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ, রাতে ছালাত আদায় কর
মানুষ যখন ঘুমন্ত থাকে, নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ কর’। (ইবনু মাজাহ শরীফ হা/৩৩৭৪; মিশকাত শরীফ হা/১৯০৭)
আত্মীয়তার সম্পর্ক বৃদ্ধির কতিপয়
উপায় : আত্মীয়তার সম্পর্ককে সুদৃঢ় ও মযবূত করা এবং তা অক্ষুণ্ণ ও অবিচল
রাখার জন্য কিছু কাজ সম্পন্ন করা যরূরী। নিম্নে সেসব উল্লেখ করা হ’ল।-
১. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার
গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া : কোন জিনিসের ফলাফল ও শুভ পরিণতি
অবগত হ’লে সে কাজ সম্পাদনে মানুষ উৎসাহী ও আগ্রহী হয় এবং
তা সম্পাদনে সচেষ্ট ও যথাসাধ্য তৎপর হয়। তাই আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব ও ফযীলত
অবগত হওয়া আবশ্যক।
২. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার
পরিণতি জানা : আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পাপ ও পরিণতি
অবগত হ’লে মানুষ এসব থেকে সাবধান হবে। তাছাড়া এ কারণে
যে পার্থিব অনিষ্ট রয়েছে তা জানলে এ বন্ধন সংরক্ষণে সচেষ্ট হবে।
৩. মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে
সাহায্য প্রার্থনা : আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা নেকীর
কাজ। তাই এ কাজ করার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে তাওফীক কামনা করতে হবে।
পক্ষান্তরে এ সম্পর্ক ছিন্ন করা পাপ। তাই এ পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্যও মহান আল্লাহ
পাক উনার কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
৪. আত্মীয়-স্বজনের দুর্ব্যবহার
সুন্দরভাবে মোকাবিলা করা : জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর মাঝে মুহাববত বজায়
রাখা, তাদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা এবং অসদাচরণেও ধৈর্য ধারণ করা
ও তা সুন্দরভাবে মোকাবিলা করা।
৫. ভুলের পর তাদের পেশকৃত কৈফিয়ত
গ্রহণ করা : আত্মীয়-স্বজন ভুল করার পর কৈফিয়ত পেশ করলে তাদের সে কৈফিয়ত
গ্রহণ করা এবং তাদের ক্ষমা করে দেওয়া।
৬. তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া :
মানুষ মাত্রই ভুল করে, অপরাধ করে।
সুতরাং আত্মীয়-স্বজনের কৃত অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া উদার চিত্ত ও ভদ্র-শালীন মানুষের
পরিচয়। তাদের এ অপরাধ ভুলে যাওয়া এবং পরবর্তীতে কখনো এসব তাদের সামনে উচ্চারণ না
করা। এতে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।
৭. তাদের সাথে বিনয়ী ও নম্র আচরণ
করা : আত্মীয়দের সাথে নম্র-ভদ্র আচরণ করলে সর্ম্পক মযবূত হয়।
সম্পর্কের সেতুবন্ধন অক্ষুণ্ণ থাকে। আত্মীয়-স্বজন আরো নিকটতর হয়। তাই আত্মীয়দের
ভুল-ত্রুটি আমলে না নিয়ে তা উপেক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে।
৮. তাদের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করা
: মানুষের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করা মহত্ত্বের পরিচয়। বিশাল
হৃদয়ের মানুষের পক্ষেই এটা সম্ভব। এর মাধ্যমে হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়, বৈরিতা দূরীভূত হয়।
৯. তাদের জন্য সাধ্যমত ব্যয় করা :
আত্মীয়দের জন্য সাধ্যমত ব্যয় করা। কেননা তাদের জন্য দান
করলে অধিক ছওয়াব পাওয়া যায় এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা হয়।
১০. খোঁটাদান পরিহার ও তাদের নিকট
দাবী-দাওয়া থেকে বিরত থাকা : দান করে খোঁটা দেওয়া পাপ এবং এর
পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
لاَ
يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ
অর্থ: ‘খোঁটাদানকারী
জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (বুখারী হা/৬৬৮৪; মুসলিম হা/২৫৫৬; মিশকাত হা/৪৯২২)
বিধায় আত্মীয়-স্বজনকে দান করে খোঁটা দেওয়া
থেকে বিরত থাকতে হবে। তেমনি তাদের নিকট থেকে কোন কিছু চাওয়া বা তাদের নিকটে কোন
কিছু দাবী করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
১১. স্বজনদের অল্প উপঢৌকনেও তুষ্ট
থাকা : উপহার-উপঢৌকন দিলে পারস্পরিক মুহাববত বৃদ্ধি পায়। মানুষের
সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় না ঘটলে, পরস্পরকে উপহার দেওয়ার
ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত বস্ত্ত উপহার প্রদান করতে পারে না। তাই আত্মীয়দের প্রদত্ত
উপহারে সন্তুষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যদিও তা পরিমাণে কম হয়।
১২. তাদের অবস্থা ও অবস্থানের
প্রতি লক্ষ্য রাখা : মাঝে-মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের
খোঁজ-খবর রাখা, বছরে একবার হ’লেও তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা প্রত্যেকের কর্তব্য। সেটা সম্ভব
না হ’লে অন্তত টেলিফোন বা মোবাইলে খোঁজ-খবর নেওয়া এবং
তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা যরূরী। তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা এবং যথাসাধ্য সুসম্পর্ক
বজায় রাখা। তাদের অধিকার পরিপূর্ণভাবে আদায় করা। এছাড়া তাদের মর্যাদা ও স্তর অনুযায়ী
যথোপযুক্ত সম্মান করা। এতে করে আত্মীয়তার বন্ধন অটুট থাকবে এবং পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতা
বৃদ্ধি পাবে।
১৩. তাদের কষ্ট না দেওয়া ও তাদের
সমস্যা দূর করা : কোন আত্মীয়কে কখনও কষ্ট না দেওয়া এবং তাদের
সমস্যাবলী যথাসাধ্য দূর করার চেষ্টা করা। আত্মীয়-স্বজন যখন জানবে যে, অমুক ব্যক্তি আত্মীয়দের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, সে
কাউকে কষ্ট দেয় না এবং তাদের অসুবিধা দূর করতে সচেষ্ট ও তাদের সমস্যায় সহযোগিতা
করে, তখন তার সাথে সকলে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে; তার প্রতিও সকলে সহমর্মী ও সহযোগী হবে।
১৪. তাদের ভৎর্সনা ও তিরস্কার করা
থেকে বিরত থাকা : আত্মীয়-স্বজন বাড়ীতে আসলে আনন্দিত হওয়া এবং
তাদের সমাদর করা। কখনও কোন কাজে ত্রুটি হ’লে তাদের ভৎর্সনা ও তিরস্কার না করা। শালীন ব্যক্তি মাত্রই মানুষের যথোপযুক্ত হক
প্রদান করে থাকেন। তিনি নিজের হকের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করেন না; অপরে তার অধিকার আদায় করুক বা না করুক সেদিকেও লক্ষ্য রাখেন না; বরং অপরের হক আদায়ে তৎপর থাকেন। তেমনি কোন আত্মীয় কারো যথাযথ হক আদায় না
করলেও তাকে তিরস্কার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৫. আত্মীয়দের সমালোচনা সহ্য করা
: বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের অন্যতম গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে
তাদের সাথে অতি জঘন্য, যন্ত্রণা ও পীড়াদায়ক আচরণ করা হ’লেও তাঁরা সেসব অম্লান বদনে সহ্য করেন এবং তাদের সাথে খারাপ
আচরণ করেন না, বরং উত্তম ব্যবহার করেন। সুতরাং আত্মীয়দের
সাথেও অনুরূপ আচরণ করতে হবে। কখনও তারা সমালোচনা করলেও তা সহ্য করতে হবে। এতে তারা
আরো নিকটতর হবে।
১৬. আত্মীয়দের সাথে হাসি-ঠাট্টায়
মধ্যপন্থা অবলম্বন করা : সমাজের সকল মানুষ সব জিনিস পসন্দ
করে না। যেমন অনেকে হাসি-ঠাট্টা পসন্দ করেন না। আত্মীয়দের মাঝেও অনুরূপ মানুষ থাকা
অস্বাভাবিক নয়। তাই তাদের মন মেজায বুঝে হাসি-মশকরা করতে হবে এবং এতেও মধ্যপন্থা
অবলম্বন করতে হবে। যাতে এসব তুচ্ছ কারণে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না হয়।
১৭. ঝগড়া-বিবাদের পথ পরিহার করা :
মানুষ হিসাবে পরস্পর মনোমালিন্য সৃষ্টি হ’তে পারে। আর এটা কখনো ঝগড়া-বিবাদে রূপ নেয়। কিন্তু আত্মীয়দের
মাঝে যাতে এরূপ না ঘটে তার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। কেননা এর মাধ্যমে শত্রুতা সৃষ্টি
হয়, অন্তরে প্রতিশোধ পরায়ণতা জেগে ওঠে। কাজেই ঝগড়া-বিবাদের পথ
সর্বোতভাবে পরিহার করতে হবে।
১৮. পরস্পর উপঢৌকন বিনিময় করা : উপহার-উপঢৌকন মুহাববত বৃদ্ধি করে, খারাপ ধারণা
দূরীভূত করে এবং আন্তরিক বিদ্বেষকে প্রতিহত করে। তাই আত্মীয়দের মাঝে পরস্পর হাদিয়া
বিনিময় করা আবশ্যক। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি বলেন,
تَـهَادُّوْا
تـَحـَابُّوْا
অর্থ: ‘তোমরা
পরস্পরকে হাদিয়া দাও, একে অপরের মধ্যে হৃদ্যতা বৃদ্ধি কর’। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৯৪)
১৯. আত্মীয়কে চোখের মণি ভাবা : আত্মীয়-স্বজনকে নিজের দেহের অংশ হিসাবে জ্ঞান করে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার
চিন্তা মনে না আনা। বরং তাদের সম্মান-মর্যাদাকে নিজের সম্মান এবং তাদের অপমানকে
নিজের লাঞ্ছনা মনে করা। আত্মীয়দের প্রতি কারো এরূপ মনোভাব থাকলে এ বন্ধন আরো সুদৃঢ়
হবে।
২০. আত্মীয়দের সাথে বৈরিতা অনিষ্ট
ও বিপদের কারণ : আত্মীয়-স্বজনের সাথে শত্রুতা ও বৈরী মনোভাব না
থাকা। এতে অকল্যাণ ও বিপদের পথ প্রশস্ত হয়। কেননা মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। নিজের
জীবন চলার পথে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা তার প্রয়োজন হয়। এ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে
আত্মীয়রা সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে। আর আত্মীয়দের সাথে বৈরিতা থাকলে তারা বিপদ-মুছীবতের
সময়ও দূরে থাকে। ফলে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি আরো অকল্যাণ ও বিপদের সম্মুখীন হয়। এজন্য
আত্মীয়দের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
২১. যথাসময়ে আত্মীয়দের স্মরণ করতে আগ্রহী হওয়া : যথাসময়ে আত্মীয়দের স্মরণ করার অর্থ হচ্ছে বিবাহ-শাদী, ওয়ালীমা বা এ ধরনের অনুষ্ঠান ও সমাবেশে তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া এবং তাদের
অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভুলবশত কেউ বাদ পড়ে গেলে তার কাছে গিয়ে
কৈফিয়ত পেশ করে, সাধ্যমত তাকে রাযী-খুশি করা। এতে সম্পর্ক
আরো বৃদ্ধি পাবে।
২২. আত্মীয়দের মাঝে বিবাদ মীমাংসায় উৎসাহী হওয়া : আত্মীয়দের পরস্পরের মাঝে বিবাদ মীমাংসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। কেননা
আত্মীয়দের মাঝের ঝগড়া-বিবাদ ও ফিৎনা-ফাসাদ মিটিয়ে না ফেললে এটা বাড়তে থাকে। যা এক
সময় অন্যান্য আত্মীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এই বিবাদের অগ্নি সকলকে জ্বালিয়ে
মারে। পক্ষান্তরে বিবাদ মিটিয়ে ফেললে সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
২৩. পরিত্যক্ত
সম্পদ বণ্টনে দ্রুততা : কোন স্বজনের রেখে যাওয়া সম্পদ
উত্তরাধিকারীদের মাঝে দ্রুত বণ্টনের ব্যবস্থা করা। সেই সাথে বণ্টনে ন্যায়-ইনছাফ
বজায় রাখা, যাতে প্রত্যেক প্রাপক তার যথাযথ অংশ পায়। আর
পরিত্যক্ত সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পূর্বেই এ কাজ সম্পন্ন করা শ্রেয়। এতে
আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে সম্পর্ক কালিমামুক্ত ও নিষ্কলুষ হয়।
২৪. যৌথ অনুষ্ঠানে ঐক্যমতের প্রতি আগ্রহী হওয়া : কোন যৌথ অনুষ্ঠানে সকল ক্ষেত্রে সবার সাথে ঐক্যমত পোষণ করার প্রতি আগ্রহী
হওয়া। নিজের মত প্রতিষ্ঠা বা নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অটল থাকার মন-মানসিকতা
পরিহার করা। তাদের মধ্যে হৃদ্যতা বৃদ্ধি, পরামর্শ প্রদান,
সকলের প্রতি অনুগ্রহ করা এবং সততা ও আমানত রক্ষা করা। আর প্রত্যেকেই
নিজের জন্য যা পসন্দ করবে অন্যের জন্যও তাই পসন্দ করবে। তদ্রূপ প্রত্যেককেই নিজের
ও অপরের হক সম্পর্কে অবগত হওয়া। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং সমস্যা সমাধানের
জন্য বিস্তারিত ও খোলামেলা আলোচনা করা। তাদের সাথে ঘনিষ্ট আচরণ করা এবং
অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ থেকে সর্বোতভাবে বিরত থাকা। কখনও তাদেরকে উপেক্ষা না করা। কেউ
কোন ব্যাপারে একমত না হ’লেও তার সাথে ভাল ব্যবহার করা। এভাবে চলতে পারলে তাদের মধ্যে রহমত অবধারিত হবে, হৃদ্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের মধ্যে বরকত নাযিল হবে।
২৫. আত্মীয়তার প্রমাণ সংরক্ষণ : আত্মীয়তার
প্রমাণ সংরক্ষণ দু’ভাবে করা যায়। (ক) কাগজে আত্মীয়দের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে
সংরক্ষণ করা এবং সকলকে কপি দেওয়া। বংশীয় সম্পর্ক বা আত্মীয়তার সম্পর্ক লিখে বা
মুখস্থ করে সংরক্ষণের ব্যাপারে হাদীছে নির্দেশ এসেছে। যেমন হযরত জুবায়র ইবনু মুতঈম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, তিনি হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে মিম্বরের উপর ভাষণরত অবস্থায় বলতে
শুনেছেন,
تَعْلَمُوْا
أَنْسَابَكُمْ، ثُمَّ صِلُوْا أَرْحَامَكُمْ، وَاللهِ إِنَّهُ لَيَكُوْنُ بَيْنَ
الرَّجْلِ وَبَيْنَ أَخِيْهِ الشَّيْءُ، وَلَوْ يَعْلَمُ الَّذِيْ بَيْنَهُ
وَبَيْنَهُ مِنْ دَاخِلَةِ الرَّحِمِ، لَأَوْزَعَهُ ذَلِكَ عَنْ اِنْتِهَاكِهِ.
অর্থ: তোমাদের বংশপঞ্জিকা (নসবনামা) জেনে রাখ
এবং (তদনুযায়ী) ঘনিষ্ঠজনদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা কর। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম!
অনেক সময় কোন ব্যক্তি ও তার (বংশানুক্রমিক) ভাইয়ের মধ্যে (অপ্রীতিকর) কিছু একটা
ঘটে যায়; যদি সে জানতে পারত যে, তার এবং এর মধ্যে রক্তের বন্ধন বিদ্যমান রয়েছে, তবে
তারা তাকে তার ভাইকে অপদস্থ করা হ’তে নিবৃত্ত করত। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭২)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
اَحْفَظُوْا
أَنْسَابَكُمْ، تَصِلُوْا أَرْحَامَكُمْ؛ فَإِنَّهُ لاَ بَعُدَ بِالرِّحْمِ إِذَا قَرَّبْتَ،
وَإِنْ كَانَتْ بَعِيْدَةً، وَلاَ قَرُبَ بِهَا إِذَا بَعُدَتْ، وَإِنْ كَانَتْ قَرِيْبَةً،
وَكُلُّ رِحْمٍ أَتَيِهٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمَامَ صَاحِبِهَا، تَشْهَدْ لَهُ بِصِلَةٍ؛
إِنْ كَانَ وَصَلَهَا، وَعَلَيْهِ بِقَطِيْعَةٍ إِنْ كَانَ قَطَعَهَا.
অর্থ: ‘বংশপঞ্জিকা
সংরক্ষণ কর (এবং তদনুযায়ী) ঘনিষ্ঠজনদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ। কেননা দূরের
আত্মীয়ও ঘনিষ্ঠ আচরণ দ্বারা ঘনিষ্ঠতর হয়ে যায় এবং নিকটাত্মীয়ও ঘনিষ্ঠ আচরণের অভাবে
দূর হয়ে যায়। রক্তের বন্ধন কিয়ামতের দিন তার সংশ্লিষ্টজনের সম্মুখে এসে দাঁড়াবে
এবং যদি সে তাকে দুনিয়ায় যুক্ত রেখে থাকে, তবে সে তার পক্ষে
সাক্ষ্য দিবে, যদি সে তাকে দুনিয়ায় ছিন্ন করে থাকে, তবে সে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে’। (আল-আদাবুল মুকরাদ হা/৭৩)
(খ) আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার সময় সন্তান-সন্ততিকে সঙ্গে নেওয়া।
যাতে তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় তারা অভ্যস্ত হয় এবং তাদের সাথে পরিচিত হয়।
২৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা
করাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম মনে করা : সর্বোপরি
সকল ক্ষেত্রে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর রাযী-খুশির উদ্দেশ্যে কাজ করতে হবে, এতে অন্য কাউকে শরীক করা চলবে না। সকল কাজ হবে নেকী ও তাক্বওয়ার ব্যাপারে
সহযোগিতা, জাহিলী কোন বিষয়ের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন লক্ষ্য হবে
না। তেমনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকে ছওয়াব অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম
হিসাবে গ্রহণ করলে এ সম্পর্কে কখনও চিড় ধরবে না।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার
অর্থ : আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্ট ও ছিন্ন হওয়ার অর্থ ও তাৎপর্য
হচ্ছে জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর সাথে দুর্ব্যবহার করা, তাদের প্রতি
অনুগ্রহ, অনুকম্পা পরিহার করা, পূর্ববর্তী
আত্মীয়দের বংশধরদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা, শারঈ ওযর ব্যতীত
তাদের প্রতি ইহসান না করা, কারো প্রতি আত্মীয়তার সম্পর্ক
বিনষ্ট করার দোষ চাপানো ইত্যাদি।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার
হুকুম : আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কবীরা গোনাহ। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করতে এবং তাদের হক যথাযথভাবে
আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার নির্দেশ
দিয়েছেন এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
জান্নাতে প্রবেশ করবে না বলে উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে পিতা-মাতার
সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম। আর অন্যান্য আত্মীয়ের
সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা গোনাহের কারণ, যা ইতিপূর্বে আলোচিত
হয়েছে।
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার
অপকারিতা ও পাপ : আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা অতি বড় গোনাহের
কাজ। এর ফলে পারস্পরিক বন্ধন নষ্ট হয়, বংশীয় সম্পর্ক
ক্ষুণ্ণ হয়, শত্রুতা ও বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়, বিচ্ছিন্নতা ও একে অপরকে পরিত্যাগ করা অবধারিত হয়। এটা পারস্পরিক
সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, হৃদ্যতা ও ভালবাসা দূর করে, অভিশাপ ও শাস্তি ত্বরান্বিত করে, জান্নাতে প্রবেশের
পথকে বাধাগ্রস্ত করে, হীনতা ও লাঞ্ছনা আবশ্যক করে। এছাড়া এর
কারণে মানবমনে চিন্তা ও পেরেশানী বৃদ্ধি পায়। কেননা মানুষ যার নিকট থেকে ভাল
ব্যবহার, কল্যাণ ও সুসম্পর্ক কামনা করে, তার পক্ষ থেকে কোন বিপদ আসলে সেটা অধিক পীড়াদায়ক ও অসহনীয় হয়। এতদ্ব্যতীত
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বর্ণনামতে জ্ঞাতি সম্পর্ক ছিন্ন করার কিছু পাপ ও
অপকারিতা নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।
১. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
অভিশপ্ত : কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ পাক তিনি আত্মীয়তার সম্পর্ক
ছিন্নকারীকে অভিশপ্ত বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
فَهَلْ
عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَن تُفْسِدُوْا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوْا
أَرْحَامَكُمْ، أُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ لَعَنَهُمُ اللهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى
أَبْصَارَهُمْ-
অর্থ: ‘তবে
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হ’লে সম্ভবত
তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ এদেরকে
লা‘নত করেন এবং করেন বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন’ (পবিত্র মুহম্মদ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৭/২২-২৩)। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আব্দুর রহমান ইবনু
নাছের আস-সা‘দী বলেন, এতে দু’টি বিষয় রয়েছে। ১. মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য আবশ্যকীয় করে
নেয়া এবং উনার আদেশকে যথার্থভাবে পালন করা। এটা কল্যাণ, হেদায়াত ও কামিয়াবী। ২. মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য থেকে বিমুখ হওয়া,
উনার নির্দেশ প্রতিপালন না করা। যার দ্বারা দুনিয়াতে কেবল বিপর্যয়
সৃষ্টি হয়। আর এ বিপর্যয় সৃষ্টি হয় পাপাচার ও অবাধ্যতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে
এবং জ্ঞাতি বন্ধন ছিন্ন করার কারণে। তারাই ঐসকল লোক যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি
করে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার মাধ্যমে। আল্লাহ স্বীয় রহমত থেকে তাদেরকে দূর
করে দিয়ে এবং তাঁর ক্রোধের নিকটবর্তী করে তাদের অভিসম্পাত করেন’।
অন্যত্র তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি
বলেন,
وَالَّذِيْنَ
يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ بَعْدِ مِيْثَاقِهِ وَيَقْطَعُوْنَ مَا أَمَرَ
اللهُ بِهِ أَنْ يُوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِي الأَرْضِ أُوْلَئِكَ لَهُمُ
اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْءُ الدَّارِ
অর্থ: ‘যারা মহান
আল্লাহ পাক উনার সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হবার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে
এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের জন্য আছে লা‘নত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস’ (পবিত্র সূরা রা‘দ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩/২৫)
২. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী
ক্ষতিগ্রস্ত ফাসেকদের দলভুক্ত: জ্ঞাতি সম্পর্ক বিনষ্টকারী
পাপাচারী ও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا
يُضِلُّ بِهِ إِلاَّ الْفَاسِقِيْنَ، الَّذِيْنَ يَنقُضُوْنَ عَهْدَ اللهِ مِنْ بَعْدِ
مِيْثَاقِهِ وَيَقْطَعُوْنَ مَا أَمَرَ اللهُ بِهِ أَنْ يُوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِي
الأَرْضِ أُولَـئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ-
অর্থ: ‘বস্ত্তত
তিনি ফাসেকদের ব্যতীত কাউকে বিভ্রান্ত করেন না। যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে
দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হবার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক
অক্ষুণ্ণ রাখতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং দুনিয়ায়
অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত’ (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ, পবিত্র আাত শরীফ ২/২৬-২৭)
৩.
পার্থিব শাস্তি ত্বরান্বিত হওয়া ও পরকালীন শাস্তি বাকী থাকা : আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার
কারণে পরকালে কঠোর শাস্তি তো রয়েছেই। তাছাড়া দুনিয়াতেও তাদের দ্রুত শাস্তি হবে। হযরত
ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন,
مَا مِنْ
ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُعَجِّلَ اللهُ تَعَالَى لِصَاحِبِهِ الْعُقُوبَةَ فِى الدُّنْيَا
مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِى الآخِرَةِ مِثْلُ الْبَغْىِ وَقَطِيْعَةِ الرَّحِمِ
অর্থ: ‘আল্লাহ তা‘আলা বিদ্রোহী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর ন্যায় অন্য কাউকে পৃথিবীতে দ্রুত
শাস্তি দেয়ার পরও পরকালীন শাস্তিও তার জন্য জমা করে রাখেননি’। (আবু দাঊদ হা/৪৯০২; তিরমিযী হা/২৫১১; ইবনু মাজাহ হা/৪২১১; মিশকাত হা/৪৯৩২)
অন্য
বর্ণনায় এসেছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূল পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
مَا مِنْ
ذَنْبٍ أَحْرَى أَنْ يُّعَجِّلَ اللهُ لِصَاحِبِهِ الْعُقُوْبَةَ فِي الدُّنْيَا، مَعَ
مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ قَطِيْعَةِ الرَّحِمِ وَالْبَغْيِ.
অর্থ: ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন এবং বিদ্রোহের মত দুনিয়াতেই ত্বরিৎ
শাস্তির উপযুক্ত আর কোন পাপ নেই। পরকালে তার জন্য যে শাস্তি সঞ্চিত রাখা হবে, তা তো আছেই’। (আল-আদাবুল মুফরাদ
হা/৬৭)
৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর
সাথে আল্লাহ সম্পর্ক ছিন্ন করেন : যে ব্যক্তি আত্মীয়তার
সম্পর্ক ছিন্ন করে মহান আল্লাহ পাক তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে
প্রবেশ করবে না : জ্ঞাতি সম্পর্ক বিনষ্টকারী ব্যক্তি জান্নাতে
প্রবেশ করবে না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন,
لاَ يَدْخُلُ
الْجَنَّةَ قَاطِعٌ
‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ
করবে না’। (বুখারী হা/৫৯৮৪;
মুসলিম, হা/২৫৫৬; আল-আদাবুল
মুফরাদ হা/৬৪)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান
হয় যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা অতি বড় গোনাহের কাজ। একাজের
মাধ্যমে দুনিয়াতে বিভিন্ন লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও শাস্তি রয়েছে,
পরকালে তো বটেই। তাই আমাদেরকে এ থেকে সাবধান হ’তে হবে এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সর্বাত্মক
চেষ্টা করতে হবে। এমনকি আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের থেকে দূরে থাকা যরূরী।
উপসংহার : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অতীব যরূরী। কেননা এটা হায়াত ও রিযক বৃদ্ধির
মাধ্যম এবং জান্নাত লাভের উপায়। পক্ষান্তরে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্ট করা জান্নাত
থেকে মাহরূম হওয়ার কারণ। অতএব প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ-নারীকে
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে
তাওফীক দান করুন-আমীন!
0 Comments:
Post a Comment