১২২ নং- সুওয়ালঃ সালোয়ার কামিজ পরিধান করে ব্যাডমিন্টন খেলা যাবে কিনা?


সুওয়ালঃ এপ্রিল/৯০ সংখ্যায় মাসিক মদীনায় নিম্নোক্ত প্রশ্ন-উত্তর ছাপা হয়:
প্রশ্নঃ সালোয়ার কামিজ পরিধান করে ব্যাডমিন্টন খেলা যাবে কিনা?
উত্তরঃ- শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে এসব খেলা অবৈধ নয়। উপরোক্ত জাওয়াব বিশুদ্ধ কিনা জানাবেন।
জাওয়াবঃ মোস্তাদরেকে হাকেমের মধ্যে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, সর্বপ্রকার খেলা বাতিল তিনটি ব্যতীত- (১) তীর-ধনুক চালনা করা, (২) অশ্বকে প্রশিক্ষণ দান, (৩) নিজের স্ত্রীর সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-খুশী।
আরও উল্লেখ্য যে, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাজাহ ইত্যাদি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার গ্রন্থেও হযরত ওকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের হতে অনুরূপ পবিত্র হাদীছ বর্ণিত আছে, তবে তার শব্দের কিছু তারতম্য রয়েছে।     
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হতে রেওয়ায়েত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মুমিনের শ্রেষ্ঠ খেলা সাঁতার কাটা আর নারীর শ্রেষ্ঠ খেলা সূতা কাটা।        
সহীহ মুসলিম ও মসনদে আহমদ শরীফ উনার মধ্যে হযরত সালমান ইবনে আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হতে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দৌড় অনুশীলনে এজাযত দিয়েছেন।          
আর আবূ দাউদ শরীফ কিতাবে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোকনা পাহলোয়ানকে কুস্তিতে ধরাশায়ী করেছিলেন।
খেলা এমন কাজকে বলা হয়, যাতে কোন উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় ও পার্থিব উপকারিতা নেই। যে খেলা দ্বীন থেকে পথভ্রষ্ট হওয়ার এবং অপরকে পথভ্রষ্ট করার উপায় হয়, তা কুফরী। আর যে খেলা মানুষকে ইসলামী বিশ্বাস থেকে সরিয়ে নেয় না কিন্তু কোন হারাম ও গুণাহের কাজে লিপ্ত করে দেয়, এরকম খেলা কুফরী নয়, তবে হারাম ও কঠোর গুণাহ্। আর যে সকল খেলায় কুফরী ও হারাম কোনটাই নেই, প্রকাশ্য কোন গুণাহ্ও নেই, সে সকল খেলা মাকরূহ, কারণ এতে অনর্থক কাজে আপন শক্তি ও সময় বিনষ্ট করা হয়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ان المبذرين كانوا اخوان الشياطين.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে,
من حسن الاسلام المرء تركه مالا يعيه.
 অর্থঃ-  কোন ব্যক্তির দ্বীনে সৌন্দর্য হলো অহেতুক বা অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকা       
কাজেই যেগুলো জায়েয বলা হয়েছে, সেগুলোর সাথে ধর্মীয় ও পার্থিব অনেক উপকারিতা জড়িত রয়েছে। যেমন তীর নিক্ষেপ, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সাঁতার কাটা, দৌড় অনুশীলন ইত্যাদি জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্তর্ভূক্ত। আর সূতা কাটা মেয়েদের সাংসারিক কাজের অন্তর্ভূক্ত। এবং স্ত্রীর সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-খুশী করা বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যকে পূর্ণতা দান করে।          
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হাফিয আল্লামা রুহুল আমীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম ওনার মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আমিনিয়া কিতাবে লিখেন, ‍‌জায়েয কাজ দ্বারা যখন ব্যায়াম করার উপায় আছে, তখন নাজায়েয কাজের দ্বারা কিরূপে জায়েয হবে? খেলার প্রতিযোগীতা করলে কি ফল হবে? কিন্তু লাঠি তীর ছোড়া, তরবারী ভাজা, ঘৌড়-দৌড় ইত্যাদিতে শত্রুদের হস্ত হতে কতকটা নিষ্কৃতি লাভের উপায় হতে পারে। পক্ষান্তরে খেলাতে এই প্রকার কোন লাভ হতে পারে না। বরং ওটা খাঁটি খেলবাজি ভিন্ন আর কিছুই নহে। কাজেই ওটা কিছুতেই জায়েয হতে পারে না। কেবল দুনিয়াদার স্বার্থপর আলেম দুএকজন ওটা জায়েয হওয়ার ফতওয়া দিয়েছেন। তাদের ফতওয়া কিছুতেই গ্রহণীয় হতে পারে না।
আবা-১৩

0 Comments: