৬৪৮ নং- সুওয়াল : মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী- فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون. (سورة نحل-৪৩) অর্থ : “তোমরা যারা জাননা, যারা জানেন তাদের নিকট থেকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৪৩) এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা কি? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন?


সুওয়াল : মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী-  
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون. (سورة نحل-৪৩)
অর্থ : তোমরা যারা জাননা, যারা জানেন তাদের নিকট থেকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৪৩)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সঠিক ব্যাখ্যা কি? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন?

জাওয়াব : প্রকাশ থাকে যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের নুযুলসমুহ খাছ কিন্তু হুকুম আম। অর্থাৎ পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ কোন অবস্থা, ঘটনা বা বিশেষ বিষয় সমূহকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়েছে। কিন্তু তার হুকুম ব্যাপক।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার মূল কারণ স্বরূপ উল্লেখ করা হয়- যখন সকল মানুষ একজন প্রতিশ্রুত হযরত নবী-রাসুল আলাইহিমুস সালাম উনার জন্য অপেক্ষমান ছিল, সেই মূহুর্তে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াতের বিকাশ ঘটলো, তখন আহলে কিতাব, কোরাইশ ও অনান্য সম্প্রদায়গণ সংশয় ও সন্দেহে পতিত হয়ে দ্বিমত পোষণ করেছিল যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই প্রতিশ্রুত হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত কিনা। তাদের এই সন্দেহকে দূরীভূত করার জন্য উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ খানা নাযিল হয়।
আর আহলে যিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আহলে কিতাবদের আলিম সম্প্রদায়। কারণ আহলে কিতাবদের প্রতি নাযিলকৃত তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবে আখেরী নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন ও পরিচিতি সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ ছিল।
এ থেকে এটা ছাবেত বা প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের কোন বিষয় সর্ম্পকে কারো জানা না থাকলে তার সঠিক ফায়সালা বা সমাধান জানার জন্য যাঁরা আহলে যিকির, উনাদের নিকট  জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হবে।
হযরত মুফাসসিরে কিরাম উনারা আহলে যিকিরের ব্যাখ্যায় বলেন, আহলে যিকির হলেন উনারাই, যাঁরা আহলে ইলম ও আহলে কুরআন শরীফ। আর আহলে কুরআন ও আহলে ইলম বলতে উনাদেরই বোঝানো হয়েছে, যাঁরা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফে  তাকমীলে বা পূর্ণতায় পৌঁছেছেন, যাঁরা ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত এবং যাঁদের প্রতি ইলহাম ইলকা হয়ে থাকে। যাঁদের শানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
العلماء ورثة الانبياء
অর্থ : আলিম উনারা হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিশ।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আহলে যিকির বলতে যদিও আহলে কিতাবদের আলিম উনাদেরকে বোঝানো হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে আহলে যিকির হলেন হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। আর হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরে ইমাম, মুজতাহিদ ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে ।
অতএব, যারা শুধু ইলমে ফিক্বাহ চর্চা করেন কিন্তু ইলমে তাসাউফ চর্চা করেনা, তারা আহলে যিকিরের অন্তর্ভূক্ত নয় এবং তারা হক্কানী আলিমেরও উপযুক্ত নয়।
তাই তাদেরকে দ্বীনের তত্ত্বমূলক বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা যাবেনা বা সে সম্পর্কে তাদের প্রদত্ত সমাধানও গ্রহণ করা যাবেনা। কেননা তারা সে ব্যাপারে সঠিক ফায়সালা দিতে সক্ষম নয়। মূলতঃ আহলে যিকির হচ্ছেন উনারাই, যাঁরা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফে তাকমিলে পৌঁছেছেন। যাঁরা খোদায়ী জ্ঞান তথা ইলমে লাদুন্নী দ্বারা সমৃদ্ধ এবং যাঁরা ইলহাম-ইলকা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
(তাফসীরে বায়হাক্বী, খাজেন, বাগবী, কুরতুবী, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, কামালাইন, মাযহারী, হক্কানী, হুসাইনী ইত্যাদি)
আবা-৩৫

0 Comments: