৬৪৩ নং- সুওয়াল : বর্তমানে কিছু লোক রয়েছে, যারা সূফী দাবি করে অথচ তারা পূণঃজন্ম ও জন্মান্তর বিশ্বাস করে এবং মানুষকেও বিশ্বাস করতে বলে। কিন্তু আমরা জানি যে, পূণঃজন্ম ও জন্মান্তর হিন্দু ও বৌদ্ধদের আক্বীদা। অতএব এ আক্বীদা কোন মুসলমান পোষণ করলে সে ব্যক্তি মুসলমান বা ঈমানদার থাকবে কিনা?


সুওয়াল : বর্তমানে কিছু লোক রয়েছে, যারা সূফী দাবি করে অথচ তারা পূণঃজন্ম ও জন্মান্তর বিশ্বাস করে এবং মানুষকেও বিশ্বাস করতে বলে। কিন্তু আমরা জানি যে, পূণঃজন্ম ও জন্মান্তর হিন্দু ও বৌদ্ধদের আক্বীদা। অতএব এ আক্বীদা কোন মুসলমান পোষণ করলে সে ব্যক্তি মুসলমান বা ঈমানদার থাকবে কিনা?

জাওয়াব : কোন ব্যক্তি যদি পূণঃজন্ম ও জন্মান্তর বিশ্বাস করে, তবে সে ঈমানদার বা মুসলমান হিসেবে পরিগণিত হবেনা। বরং সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামি হবে। কেননা পূণঃজন্ম হচ্ছে- বিশেষ করে হিন্দুদের আক্বীদা, আর জন্মান্তর হচ্ছে- বিশেষ করে বৌদ্ধদের আক্বীদা। তবে ক্ষেত্র বিশেষে উভয়ে উভয়ের আক্বীদার প্রতি আস্থা রাখে।
পূণঃজন্ম বলতে বুঝায়, কোন ব্যক্তি যদি নির্বান (আত্মশুদ্ধি) লাভ করে মারা যায়, তাহলে সে আর পুণরায় পৃথিবীতে ফিরে আসবেনা। আর যদি নির্বান লাভ না করে মারা যায়, তাহলে সে তার কর্ম অনুযায়ী পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ (লুলা- ল্যাংড়া, অন্ধ-খঞ্জ, বোবা-বধির) ইত্যাদি হয়ে পুণরায় পৃথিবীতে ফিরে আসবে এবং সে নির্বান (আত্মশুদ্ধি) লাভ না করা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে উপরোক্ত বিভিন্ন ছূরতে বা আকৃতিতে পৃথিবীতে একবার জন্ম গ্রহণ করবে, আবার মারা যাবে। আবার জন্ম গ্রহণ করবে, আবার মারা যাবে। এভাবে মারা যাওয়া ও জন্ম গ্রহণের ধারা চলতেই থাকবে।
আর জন্মান্তর বলতে বুঝায়, কোন ব্যক্তি যদি নির্বান (আত্মশুদ্ধি) লাভ করে মারা যায়, তাহলে সে পৃথিবীতে আর ফিরে আসবে না। আর যদি নির্বান (আত্মশুদ্ধি) লাভ না করে মারা যায়, তাহলে সে তার কর্ম অনুযায়ী লুলা-ল্যাংড়া, অন্ধ-খঞ্জ, বোবা-বধির ইত্যাদি বিভিন্ন রূপ ধারণ করে পুণরায় পৃথিবীতে ফিরে আসবে। এভাবে সে নির্বান (আত্মশুদ্ধি) লাভ না করা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে উক্ত ছূরতে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করবে, আবার মারা যাবে। আবার জন্ম গ্রহণ করবে, আবার মারা যাবে। এভাবে মারা যাওয়া ও জন্ম গ্রহণের ধারা চলতেই থাকবে।
আর পূণঃজন্ম ও জন্মান্তরে বিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাস ও মতের স্বপক্ষে তারা যে বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকার দলীল পেশ করে থাকে, তা মূলতঃ সেই হিন্দু-বৌদ্ধ, ফিরিঙ্গী, কাফের ইত্যাদি বিধর্মীদেরই লেখা, যা দলীল হিসেবে মুসলমানদের নিকট বিন্দুমাত্র গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলমানদের জন্য গ্রহণযোগ্য দলীল হলো- পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস।
পূণঃজন্ম ও জন্মান্তর বিশ্বাস করা কোন মুসলমানের উচিত নয়। কেননা এটা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার খিলাফ বা পরিপন্থী। সুতরাং এ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা মুমিনুন শরীফ উনার মধ্যে ৯৯ ও ১০০নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
حتى اذاجاء احدهم الموت قال رب ابرجعون لعلى اعمل صالحا فيما تركت كلا انها كلمة هو قانلها ومن ورائهم برزح الى يوم يبعثون.
অর্থ : যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুণরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ করুন, যাতে আমি নেক কাজ করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এটাতো তার অবান্তর কথা। তারা আলমে বরযখে (মৃত্যুর পর হতে অর্থাৎ কবর থেকে পুণরুত্থান পর্যন্ত) অবস্থান করবে।” (সমূহ তাফসীর ও আক্বাইদের কিতাব দ্রষ্টব্য)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে, সে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর দুনিয়াতে ফিরে আসবে না। তাহলে পূণঃজন্ম ও জন্মান্তর কি করে সম্ভব? অর্থাৎ এটা কস্মিণকালেও সম্ভব নয়। বরং সে বরযখে অবস্থান করবে। বরযখ হচ্ছে- মৃত্যুর পর হতে অর্থাৎ কবর থেকে ক্বিয়ামতের দিবস বা পুণরুত্থান দিবস পর্যন্ত সময়কালকে আলমে বরযখ বলা হয়।
আবা-৩৫

0 Comments: