৬৬৫ নং- সুওয়াল : মেয়েদের জন্য জুমুয়া ও ঈদের নামায আবশ্যক কিনা? যদি আবশ্যক হয় তারা কি একাকী আদায় করবে, না জামাতে আদায় করবে? জানতে চাই।


সুওয়াল :মাসিক আত্ তাওহীদপত্রিকার রবিউল আউয়াল ১৭ হিজরী জুলাই/আগষ্ট৯৬ইঃ সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে নিম্নলিখিত সমস্যা ও তার সমাধান দেয়া হয়-
সমস্যা : মেয়েদের জন্য জুমুয়া ও ঈদের নামায আবশ্যক কিনা? যদি আবশ্যক হয় তারা কি একাকী আদায় করবে, না জামাতে আদায় করবে? জানতে চাই। 
সমাধান : মেয়েদের জন্য জুমা ও ঈদের নামায বাধ্যতামূলক নয়। ফিৎনার সম্ভাবনার কারণে তাদের জন্য জুমাতে উপস্থিত হওয়া অনুচিৎ। তবুও যদি পর্দা সহ নামাযে শরীক হয় নামায আদায় হবে। কিন্তু জুমুয়া না পড়ে ঘরে যোহর পড়া ও ঈদের জামাতে শরীক না হওয়া উত্তম।মাসিক আত্ তাওহীদপত্রিকার উক্ত সমাধানে একবার বলা হয়েছে- মেয়েদের জুমাও ঈদের নামায বাধ্যতামূলক নয় ও ফিৎনার জন্য উপস্থিত হওয়া অনুচিৎ এবং শরীক না হওয়াই উত্তম। আবার বলা হয়েছে পর্দাসহ নামাজে শরীক হলে নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে- সত্যি কি মেয়েদের জন্য ঈদ ও জুমুয়ার নামা বাধ্যতামূলক নয়? আর পর্দার সহিত যদি আদায় করে তাহলে আদায় হয়ে যাবে

জাওয়াব : মাসিক আত্ তাওহীদত্রিকার উক্ত সমাধান অশুদ্ধ হয়েছেপ্রথমত : মেয়েদের জন্য জুমুয়া ও ঈদের নামাজের জামায়াত বাধ্যতামূলক নয়। বরং একথা না বলে শরীয়তে মেয়েদের জন্য জুমুয়া ও ঈদের জামায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলা উচিৎ ছিল।
কেননা পর্দার  গুরুত্ব ও মহিলাদের  ঘরে নামা পড়ার উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ হাদীছ শরীফ উনার দিকে লক্ষ্য রেখে আমীরুল মুমিনীন, হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালামইজতিহাদ করতঃ মহিলাদেরকে মসজিদে এসে জামায়াতে নামা পড়তে নিষেধ করেন। তখন মহিলারা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে, জবাবে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,

لوان رسول الله صلى الله عليه وسلم رأى ما احد ثت النساء لمنعهن.
অর্থ :যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, তবে অবশ্যই তিনি নিষেধ করতেন।” (বোখারী, মুসলীম, আবু দাউদ, আইনী শরহে বোখারী, ফাতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, বজলুল মাজহুদ, শরহে নববী, ফাতহুল মুলহিম) 
হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার এ কথার আসল অর্থ হলো- হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম যা করেছেন, ঠিকই করেছেন। অর্থাৎ আমি উনার একথাকে পূর্ণরূপে সমর্থন করি। আর তাংর কথাকে করার অর্থই হলো, মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা।কাজেই যেখানে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালামপবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ মহিলাদের মসজিদে উপস্থিত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তা পূর্ণরূপে সমর্থণ করেন, সেখানে এর বিরোধীতা করে প্রথম যুগের দোহাই দিয়ে, মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামা পড়া সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়,
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الرا شدين المهدين.
অর্থ :তোমাদের জন্য আমার সুন্নত এবং হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত পালন করা ওয়াজিব।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরহে মিশকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজিহ্, তালিকুছ ছবীহ)
এছাড়াও নিম্নোক্ত সকল কিতাবে মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী লেখা হয়েছে- উমদাতুল ক্বারী, ফয়জুল বারী, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, আলমগীরী, তাতারখানিয়া, বাহ্রুর রায়েক, আইনী, বাদায়েউস সানায়ে, গায়াতুল আওতার, তাহ্তাবী, শামী, দুররুল মোখতার, রদ্দুল মোহ্তার, ফতওয়ায়ে হিন্দীয়া, আইনুল হেদায়া, নেহায়া, হেদায়া, ফাতহুল ক্বাদির, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, ফতওয়ায়ে রহিমীয়া, বাহ্রুর রায়েক, শরহে কানজুদ দাক্বায়েক্ব, মাদানুল হাক্বায়েক্ব, আহ্সানুল মাসায়েল, মিনহাতুল খালিক, আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্, মারাকিউল ফালাহ্, মুহীত্ব, ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্, আযীযুল ফতওয়া, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ, কিফায়াতুল মুফতী, বেহেস্তী জিওর ও ফতওয়ায়ে মাহ্মুদীয়াহ্)
দ্বিতীয়ত : পর্দার সহিত আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে, এটা বলাও শুদ্ধ হয়নি। এটা ইজমায়ে আযীমতের খেলাফ হয়েছে। সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদগণ ফতওয়া দিয়েছেন, মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ তাহরীমী। যদিও কোন কোন ইমাম-মুজতাহিদ শর্ত সাপেক্ষে মাকরূহতাহরীমী ফতওয়া দিয়েছেন। কিন্তু হানাফী মায্হাবের সকল ইমাম-মুজতাহিদগণ বিনাশর্তে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দিয়েছেন। 
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, 
قد اجمعت الامة على كراهة خروج النساء الى مسجد الجماعة.
অর্থ :মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” (ইমদাদুল আহ্কাম)
কাজেই, যেখানে বিশ্বের অসংখ্য ইমাম-মুজতাহিদগণ মহিলাদের মসজিদে যাওয়া মাকরূহতাহরীমী হিসেবে ফতওয়া প্রদান করেছেন, সেখানে এর বিরোধীতা করে এটাকে জায়েয বলা, মারাত্মক অপরাধ হয়েছে।
এখানে উল্লেখ যে, উমদাতুল ক্বারী, ফয়জুল বারী, বযলুল মাজহুদ, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, আলমগীরী, তাতারখানিয়া, বাহ্রুর রায়েক, আইনী, বাদায়েউস সানায়ে ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবে মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী বলা হয়েছে। আর নামাজ মাকরূহ্ তাহরীমী হলে তা দোহ্রায়ে (পুণরায়) পড়া ওয়াজিব। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব দ্রষ্টব্য) মাসিক আত্-তাওহীদপত্রিকার যারা ফতওয়া দাতা তাদের সকলেরই তাহ্ক্বীক্ব করে ফতওয়া দেয়া উচিৎ। কেননা বিনা তাহ্ক্বীক্বে অশুদ্ধ ফতওয়া দেয়ার কারণে ফতওয়া দাতা এবং যারা ফতওয়ার উপর আমল করবে, তারা সকলেই পরকালের ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
[আরো বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যনাত পত্রিকা১১তম সংখ্যা দেখুন। সেখানে অসংখ্য দলীল-আদিল্লার মাধ্যমে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে যে, মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, জুমুয়া ও ঈদের নামাজের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহরীমী]
আবা-৩৭
মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহরীমীর ফতওয়া- . https://khawajarazi.blogspot.com/2018/09/blog-post_840.html

0 Comments: