৬৪১ নং- সুওয়াল : যারা পাপী ও সীমা লংঘনকারী, তারা কি নাযাত পাবে? তাদের নাযাতের পথ কি?


সুওয়াল : যারা পাপী ও সীমা লংঘনকারী, তারা কি নাযাত পাবে? তাদের নাযাতের পথ কি?


জাওয়াব : হ্যাঁ, তারা নাযাত পাবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
قل يا عبادى الذين اسر فوا على انفسهم لا تقنطوا من رحمة الله- ان الله يغفر الذنوب جميعا انه هو الغفورالرحيم.
অর্থ : “(হে হাবীব) আপনি বলুন, হে আমার (মহান আল্লাহ পাক উনার) বান্দারা, তোমরা যারা নফসের উপর জুলুম করেছ, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সমস্ত গুণাহখাতা ক্ষমাকারী। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
كل بنى ادم خطا نون خير الخطاء ين التوابون.
অর্থ : সমস্ত আদম সন্তান গুণাহগার। শ্রেষ্ঠ গুণাহগার ঐ ব্যক্তি, যে বেশী বেশী তওবা, ইস্তেগফার করে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্রাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন,
التائب عن الذئب كمن لاذنبله.
অর্থ : তওবাকারী যেন কোন গুণাহই করেনি।       কবি বলেন,                    
بازا بازا هران..ه هستى بازا كر كافر وكبر وبت ..ر ستى بازا اين دزكاهء ما دركاهء ناميد نيست صد باركر توبه شكستى بازا بازا.
অর্থ : ফিরে আস, ফিরে আস, তুমি যে কেউ হওনা কেন, ফিরে আস। যদিও তুমি কাফির, অগ্নি উপাসক ও মুর্তিপুজক হওনা কেন, তবুও ফিরে আস। (আল্লাহ পাক উনার দরবার) এটা এমন এক দরবার, যেখান থেকে কেউই নিরাশ হয়ে ফিরেনা। শতবারও যদি তওবা ভেঙ্গে থাক, তবুও ফিরে আস, ফিরে আস।
অতএব কোন বান্দা যদি মহাপাপ ও সীমালংঘন করে থাকে, তবে তার উচিৎ খালেছ তওবা করে আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হওয়া। তাহলে মহান আল্লাহ পাক তার গুণাহখাতা ক্ষমা করবেন।
আর এ পথে কায়েম থাকতে হলে প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব বা কাজ হচ্ছে, কোন খালেছ আল্লাহ পাক উনার ওলীর নিকট বায়াত হওয়া। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
يا ايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصادقين.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং সাদেক্বীন বা আল্লাহ ওয়ালাগণের সঙ্গী হয়ে যাও।
অর্থাৎ আল্লাহওয়ালাগণের ছোহবত ইখতিয়ার করে, যিকির-আযকার করার মাধ্যমে ও উনার নির্দেশ মতো চলে নিজেকে ইছলাহ বা সংশোধন করার কোশেশ করা। এটাই হচ্ছে তার নাযাতের পথ। (তাফসীরে কবীর, তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, মকতুবাত শরীফ, ফতহুর রব্বানী, কিমিয়ায়ে সায়াদাত ইত্যাদি)

মিসেস পারভীন আক্তার, মান্দারীখিল, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
সুওয়াল : মহিলাদের পায়ে মেন্দি ব্যবহার করা কি? অনেকে বলে থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ী মুবারকে মেন্দি ব্যবহার করেছেন। কাজেই সে মেন্দি কিভাবে পায়ে ব্যবহার করা যায়। এটা আদবের খেলাফ নয় কি?
জাওয়াব : মহিলাদের পায়ে মেন্দি ব্যবহার করা জায়েয। সবচেয়ে সহীহ ও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েতে বর্ণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো দাঁড়িতে মেন্দি ব্যবহার করেননি। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাঁড়ি ও চুল মুবারক মিলে সর্বমোট প্রায় ১৭ থেকে ২৩ খানা পেকেছিল, সেহেতু মেন্দি দেয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। কেননা মেন্দি দেয়া হয় সাদা দাঁড়ি লাল করার জন্য। অবশ্য প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম, উনি উনার পাকা দাঁড়ি মুবারকে মেন্দি ব্যবহার করেছিলেন। জানা আবশ্যক যে, মেয়েদের রং ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। যা দেখা যায়, তাও স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য। তবে প্রলেপ বা আবরণ পড়ে এমন রং ব্যবহার করা যাবে না, যার কারণে ওযু-গোসল হয় না। যেমন- নেইল পালিশ ইত্যাদি। আর সাধারণভাবে মেয়েদের জন্য সুঘ্রাণ ব্যবহার করা জায়িয নেই। তবে স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য এতটুকু সুঘ্রাণ ব্যবহার করতে পারবে, যার ঘ্রাণ তার ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ বাহির থেকে ঘ্রাণ পাওয়া না যায় এবং এই সুঘ্রাণ নিয়ে ঘরের বাইরে চলাচল করতে পারবে না। আর পুরুষের জন্য তার বিপরীত। অর্থাৎ পুরুষেরা সুঘ্রাণ ব্যবহার করতে পারবে, রং ব্যবহার করতে পারবে না হাতে পায়ে ইত্যাদি স্থানে। তবে অবশ্যই পাকা দাঁড়িতে মেন্দি ব্যবহার করা সুন্নাতে সাহাবার অন্তর্ভূক্ত। মেন্দি ব্যবহার করা উম্মুল মুমিনীনগণের সুন্নাত। দাঁড়িতে মেন্দি ব্যবহার করলে যদি হাতে পায়ে ব্যবহার করা নাজায়েয হয়, তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানি পান করেছেন, পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়েছেন। তাহলে সেই পানি দিয়ে ওযু-ইস্তেঞ্জা করাও জায়েয হতো না। কিন্তু পানি দিয়ে ওযু-ইস্তেঞ্জা করা, নাপাকীকে পাক করা ইত্যাদি সর্বপ্রকার কাজে পানি ব্যবহার করা শুধু জায়েযই নয়, ফরজ- ওয়াজিবও বটে। (উম্মুল মুমিনীনগণের সীরাত গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)
মেন্দি শুধু মেয়েদের প্রসাধনী হিসেবেই ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়নি, সাথে সাথে ওষুধ হিসেবে ব্যবহারেরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত সালমা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কেউ মাথা ব্যথার অভিযোগ করলে, তিনি তাকে শিঙ্গা লাগানোর নির্দেশ দিতেন, আর পায়ে কষ্ট, ব্যথা কিম্বা যখমের অভিযোগ করলে, তিনি তাকে মেন্দি লাগানোর নির্দেশ দিতেন। (আবূ দাউদ শরীফ)
ভাষার কিছু তারতম্যে অনুরূপ বর্ণনা তিরমিযী শরীফ-উনার রয়েছে। 
আবা-৩৫

0 Comments: