পিডিএফ লিংক - https://drive.google.com/open?id=14Opfey_ftWL9iOZuNwNnVPDcqMw13N-x
সুওয়াল-১৪
সুওয়াল-১৪
নদী ভাঙ্গনের কারণে অনেক মসজিদের স্থান নদীর মাঝখানে চলে গেছে। এতে এলাকাবাসী নতুন জেগে ওঠা চরে স্থান নির্দিষ্ট করে ঐ মসজিদের বদল হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত?
জাওয়াব: উপরোক্ত সুওয়ালের জাওয়াবে বলতে হয় যে, যদি নদী ভাঙ্গনের ফলে কোন মসজিদের স্থান নদীগর্ভে চলে যায়, এমতাবস্থায় এলাকাবাসী নদীর পার্শ্ববর্তী কোন চরে উক্ত মসজিদের বদলে বা পরিবর্তে নতুন কোন মসজিদ তৈরী করে, তাহলে প্রথম মসজিদের মালিকানা রহিত হবে না বরং নতুন মসজিদটি ভিন্ন আরেকটি মসজিদ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
তবে যদি কখনোও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে প্রথম মসজিদের স্থান পুনরায় জেগে উঠে তাহলে সেই স্থানটি মসজিদের স্থান হিসেবে ধর্তব্য হবে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। উক্ত জমি থেকে জনসাধারণ দুনিয়াবী কোন ফায়দা হাছিল করতে পারবে না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, উক্ত মসজিদের জেগে উঠা জায়গাটির হুকুম কী হবে?
এর জবাবে বলতে হয় যে, মসজিদের জেগে উঠা জায়গাটি যেহেতু মসজিদেরই হুকুম রাখে সেহেতু তা সীমানা নির্ধারণ করে চিহ্নিত করে হেফাযত করতে হবে। অথবা বিভিন্ন ফল-ফলাদি বা দামী কাঠের গাছ লাগানো যেতে পারে, যাতে লাগানো গাছের ফল বা উপযুক্ত গাছ বিক্রি করে তার অর্থ স্বীয় এলাকার মসজিদের কাজে খরচ করা যায়। পরবর্তী সময়ে সে স্থানে আবার কখনো জনবসতি গড়ে উঠলে যেন তারা ওয়াকফকৃত মসজিদের স্থানকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কারণ ওয়াক্বফকৃত স্থানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ থাকুক বা না থাকুক সে স্থানটির মালিক হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার জায়গাটি ক্বিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মসজিদ হিসেবেই গণ্য হবে। এর ব্যতিক্রম করা কাট্টা হারাম ও কুফরী। যারা ব্যতিক্রম করবে তাদের জন্য জাহান্নাম ফরজ হবে।
{দলীলসমূহঃ (১) “ফতওয়ায়ে কাযীখান” (২) “আল মুখতারুল কুদূরী” (৩) “আল জাওহারতুন নাইয়্যারাহ” (৪) “আল লুবাব লিল মায়দানী” (৫) “আল হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” (৬) “আইনুল হিদায়া” (৭) “ফতহুল ক্বাদীর” (৮) “আল কিফায়া” (৯) “আল ঈনায়া” (১০) “হাশিয়ায়ে চলপী” (১১) “বাদায়েয়ুস সানায়া” (১২) “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” (১৩) “আল বাহরুর রায়েক” (১৪) “আল মুযমিরাত” (১৫) “ফতওয়ায়ে কুরবা” (১৬) “আয্্ যাখীরাহ” (১৭) “খাযানাতুল মুফতীন” (১৮) “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” (১৯) “আল কুনিয়া” (২০) “আল মুনিয়া” (২১) “মুহীতে সারাখসী” (২২) “সিরাজুল ওয়াহ্হাজ” (২৩) “ফতওয়ায়ে শামী” (২৪) “ই’লাউস সুনান” (২৫) “ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ” ইত্যাদি}
সুওয়াল-১৫
অনেক এলাকায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরের জন্য বছরের পর বছর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে সম্মানিত ছলাত আদায় করা বন্ধ আছে, সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এর ফায়সালা কি?
জাওয়াব: সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা জায়েয নেই। অর্থাৎ দুনিয়াবী কোনো উদ্দেশ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা সম্পূর্ণরূপে হারাম-নাজায়েয এবং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার কোনো কারণে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরিত করতে হয়, তাহলে পূর্বে যেই জায়গায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ছিলো, সে জায়গায় দুনিয়াবী কোনো ফায়দা হাছিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা জায়েয নেই; বরং কাট্টা হারাম ও কুফরী। উল্লেখ্য, উক্ত জায়গায় গাছ-গাছালী লাগিয়ে রাখতে পারে তা থেকে যা আয় হবে সেই অর্থ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার কাজে খরচ করতে হবে। তাছাড়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার স্থানে অন্য কোনো কিছু করা জায়েয নেই। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরের নামে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বন্ধ রেখে সম্মানিত মুসলমান উনাদেরকে সম্মানিত ছলাত আদায় করা থেকে বিরত রাখা সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে কাট্টা হারাম-নাজায়েয এবং কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। না‘ঊযুবিল্লাহ!
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِيْـنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِـى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইস্ম বা নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করতে চেষ্টা করে। (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, ভেঙ্গে ফেলে অর্থাৎ যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করে না,) তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে আহমদী” উনার ৫৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اِنَّ هٰذِهِ الْاٰيَةَ تَدُلُّ عَلٰى اَنَّ هَدْمَ الْـمَسَاجِدِ وَتَـخْـرِيْبَهَا مَـمْنُوْعٌ وَكَذَا الْـمَنْعُ عَنِ الصَّلٰوةِ وَالْعِبَادَةِ وَاِنْ كَانَ مَـمْلُوْكًا لِّلْمَانِعِ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ তথা হারাম। অনুরূপভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ সম্মানিত ছলাত আদায় এবং ইবাদত করতে নিষেধ করাও হারাম, যদিও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকটি নিষেধকারীর অধীনে থাকে।” (তাফসীরে আহমদী ৫৫৬ নং পৃষ্ঠা)
‘দুরারুল হুক্কাম’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
قَالَ حَضْرَتْ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ هُوَ مَسْجِدٌ اَبَدًا اِلـٰى قِيَامِ السَّاعَةِ لَا يَعُوْدُ مِيْرَاثًا وَلَا يَـجُوْزُ نَقْلُهٗ وَنَقْلُ مَالِهٖ اِلـٰى مَسْجِدٍ اٰخَرَ سَوَاءٌ كَانُوْا يُصَلُّوْنَ فِيْهِ اَوْ لَا وَهُوَ الْفَتْوٰى.
অর্থ: “হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত আবাদুল আবাদ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হিসেবেই থাকবেন, কোনো উত্তরাধিকারীর অধিকারভুক্ত হবে না। আর উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তর করা এবং উনার সম্পত্তি অন্য কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ স্থানান্তর করাও জায়িয হবে না, লোকজন সেখানে নামায পড়ুক অথবা না পড়–ক। এটাই হচ্ছে ফতওয়া।” সুবহানাল্লাহ! (দুরারুল হুক্কাম ২/১৩৫)
বিশ্বখ্যাত ফিক্বহের কিতাবসমূহে বর্ণিত রয়েছে,
وَاِذَا بَنٰـى مَسْجِدًا لَـمْ يَزُلْ مِلْكُهٗ عَنْهُ حَتّٰـى يَفْرِزَهٗ عَنْ مِلْكِهٖ بِطَرِيْقِهٖ وَيَاْذَنَ لِلنَّاسِ بِالصَّلٰوةِ فِيْهِ فَاِذَا صَلّٰى فِيْهِ وَاحِدٌ زَالَ عِنْدَ اَبِـىْ حَنِيْفَةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ مِلْكِهٖ)
অর্থ: “যদি কেউ কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ করে, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত উনার মালিকানা দূরিভূত হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত সে উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক রাস্তাসহ তার মালিকানা থেকে পৃথক করে লোকদেরকে উনার মধ্যে ছলাত বা নামায পড়ার অনুমতি না দিবে। অত:পর যখন উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ একজন মুছল্লীও ছলাত বা নামায পড়বে, তখন ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে তার মালিকানা দূর হয়ে যাবে।” (হেদায়াহ্ ৩/২০, বিদায়াহ্ ১/১২৯, ইনায়াহ্ ৬/২৩৩, বিনায়াহ্ ৭/৪৫৩, লিসানুল হুক্কাম ১/২৯৫, আল লুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১৮৬)
আরো বর্ণিত রয়েছে,
وَقَالَ اَبُوْ يُوْسُفَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَزُوْلُ مِلْكُهٗ بِقَوْلِهٖ جَعَلْتُهٗ مَسْجِدًا.
অর্থ: “আর ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তার এ কথার দ্বারা মালিকানা দূর হয়ে যাবে যে, আমি উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বানিয়েছি।” (হেদায়াহ্ ৩/২০, বিদায়াহ্ ১/১২৯, ইনায়াহ্ ৬/২৩৩, তাবঈনুল হাক্বাইক্ব ৩/৩৩০, আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্ ১/৩৩৭, বিনায়াহ্ ৭/৪৫৪, লিসানুল হুক্কাম ১/২৯৫, আল বাহ্রুর রাইক্ব ৫/২৬৮ ইত্যাদি)
‘ফতওয়ায়ে আলমগীরী’ কিতাবের ২য় খ- ৩৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اَمَّا حُكْمُهٗ فَعِنْدَهُـمَا زَوَالُ الْـعَيْـنِ عَنْ مِلْكِهٖ اِلَـى اللهِ تَعَالـٰى.
অর্থ: “হযরত ছাহেবাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের নিকট ওয়াক্ফের হুকুম হলো এই যে, ওয়াক্ফকৃত সম্পদের স্বত্ত্ব বা মালিকানা ওয়াক্ফকারীর অধিকারমুক্ত হয়ে তা মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী মালিকানায় চলে যায় অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি মালিক হয়ে যান।”
‘শারহু যাদিল মুস্তাক্বনি’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اَلشَّخْصُ اِذَا اَوْقَفَ مَسْجِدًا خَرَجَ مِنْ مِلْكِهٖ حَتّٰـى صَاحِبُ الْاَرْضِ لَا يَسْتَطِيْعُ اَنْ يَّتَصَرَّفَ فِيْهِ لِاَنَّهٗ خَرَجَ مِنْ مِلْكِيَّتِهٖ لِلّٰهِ{وَاَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلّٰهِ} فَالْـمَسْجِدُ اِذَا اَوْقَفَ خَرَجَ عَنْ مِلْكِيَّةِ صَاحِبِهٖ.
অর্থ: “কোনো ব্যক্তি যখন কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ওয়াক্বফ করে, তখন উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক তার মালিকানা থেকে বের হয়ে যায়। এমনকি যে ব্যক্তি জায়গা দান করেছে, সে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করারও ক্ষমতা রাখে না। কেননা উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক তার মালিকানা থেকে বের হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার মালিকানায় চলে গেছেন। (আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,) নিশ্চয়ই সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। অর্থাৎ সমস্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদের মালিক হচ্ছেন স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি। সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা জিন শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮) সুতরাং যখন কেউ কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ওয়াক্বফ করে, তখন তা তার মালিকানা থেকে বের হয়ে যায়।”
দেওবন্দীদের গুরু আশরাফ আলী থানবী তার ‘বেহেশতী জেওর’ কিতাবের ৩য় খ-ের ৬৯ পৃষ্ঠায় বলেছে,
جس چیز کو وقف کر دیا اب وه چیز اسکی نہی رہی اللہ تعالی کی ہو گئی اب اسکو بیچنا کسی کو دینا درست نہیں-
অর্থ: “কোনো জিনিস ওয়াক্বফ করার পর সেটা আর নিজের থাকে না, সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! সেটা বেচা-কেনা করা বা কাউকে দান করা জায়েয নেই।” (বেহেশতী জেওর ৩/৬৯)
কাজেই, এলাকাবাসী ও মুছুল্লীদের জন্য ফরয হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক স্থানান্তরের নামে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বন্ধ রাখার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ করা এবং অতিশীঘ্রই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক খুলে দিয়ে সম্মানিত ছলাত আদায় করার যথাযথ ব্যবস্থা করা। অন্যথায় এলাকাবাসী এবং মুছুল্লীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই কাট্টা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইহকাল ও পরকালে কঠিন আযাব-গযবে গ্রেফতার হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! (তথ্যসূত্র: ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবত্রি কুরআন শরীফ, ২. মুসনাদে আহমদ, ৩. শরহুস সুন্নাহ, ৪. শু‘য়াবুল ঈমান, ৫. ছহীহ ইবনে হিব্বান, ৬. হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৭. শরহুল বুখারী শরীফ, ৮. মিশকাত শরীফ, ৯. মিরক্বাত, ১০. তাফসীরে কুরতুবী শরীফ, ১১. দুররে মানছূর, ১২. আব্দুর রাজ্জাক্ব ১৩. ইবনে আবী হাতিম, ১৪. ত্ববারী, ১৫. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ১৬. আল মুহাররুল ওয়াজীয, ১৭. তাফসীরে জালালাইন, ১৮. তাফসীরে সমরকন্দী, ১৯. তাফসীরে খাযিন, ২০. তাফসীরে বাগবী, ২১. ফাতহুল ক্বদীর, ২২. তাফসীরে কবীর, ২৩. তাফসীরে বায়যাবী, ২৪. তাফসীরে মাযহারী ২৫. তাফসীরে মাওয়ারদী, ২৬. তাফসীরে রূহুল মা‘য়ানী, ২৭. তাফসীরে রূহুল বায়ান, ২৮. তাফসীরে আহমদী, ২৯. হেদায়াহ্, ৩০. বিদায়াহ্, ৩১. ইনায়াহ্, ৩২. বিনায়াহ্, ৩৩. লিসানুল হুক্কাম, ৩৪. আল লুবাব ফী শরহিল কিতাব, ৩৫. তাবঈনুল হাক্বাইক্ব, ৩৬. আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্, ৩৭. আল বাহ্রুর রাইক্ব, ৩৮. ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ৩৯. র্দুরুল মুখতার, ৪০. দুরারুল হুক্কাম, ৪১. বেহেশতী জেওর, ৪২. ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ইত্যাদি)
সুওয়াল-১৬
রাস্তা সোজা করতে যেয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙতে হবে নাকি রাস্তা বাঁকা করে নিতে হবে?
জওয়াব: রাস্তা সোজা করতে যেয়ে কস্মিনকালেও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা যাবে না। বরং রাস্তা নির্মাণ করতে যেয়ে কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সামনে পড়লে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার সম্মানার্থে রাস্তা বাঁকা করে নিতে হবে। এটাই সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া। কেননা সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী রাস্তার অজুহাত দেখিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা সম্পূর্ণরূপে হারাম-নাজায়িয এবং কাট্টা কুফরী ও চির জিহান্নামী হওয়ার কারণ। এ সম্পর্কে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ وَسَعٰى فِـىْ خَرَابِـهَا اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَـهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَا اِلَّا خَآئِفِيْـنَ لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ وَّلَـهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইস্ম বা নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করতে চেষ্টা করে। (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, ভেঙ্গে ফেলে, বিরান করে অর্থাৎ যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করে না,) তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১১৪)
এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَا اَحَدَ اَظْـلَمُ مِـمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْـمُهٗ.
অর্থ: “ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় যালিম, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইস্ম বা নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয়।”
(অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, বিরান করে, ভেঙ্গে ফেলে, যথাযথ তা’যীম তাকরীম করে না।) (তাফসীরে জালালাইন ১/২৪, তাফসীরে মাযহারী ১/১১৬, আস সিরাজুল মুনীর ১/৮৭ ইত্যাদি)
‘তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ, তাফসীরে খাযিন শরীফ ও তাফসীরে বাগবী শরীফ’ উনার মধ্যে وَمَنْ اَظْـلَمُ “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে?” এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে, وَمَنْ اَكْفَرُ“ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় কাফির আর কে?
অর্থাৎ ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইস্ম বা নাম মুবারক স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরান করতে এবং ভাঙ্গতে চেষ্টা করে।” (অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক বন্ধ করে রাখে, হক্ব আদায় করে না, বিরান করে, ভেঙ্গে ফেলে, যথাযথ তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করে না।) না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে সমরকন্দী শরীফ ১/৮৬, তাফসীরে খাযিন শরীফ ১/৭২, তাফসীরে বাগবী শরীফ ১/১৫৭ ইত্যাদি)
আল্লামা কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ قَتْلٌ وَسَبْـىٌ وَّذِلَّةٌ بِضَرْبِ الْـجِزْيَةِ وَّلَـهُمْ فِـى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ اَلنَّارُ الْـمُؤَبَّدَةُ بِكُفْرِهِمْ وَظُـلْمِهِمْ.
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কতল (মৃত্যুদ-), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) এবং জিযিয়া কর প্রদানের অবমাননা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (অর্থাৎ পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে তাদের কুফরী ও যুলুমের কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী শরীফ ১/১১৬)
দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত ও সর্বজনমান্য তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে জালালাইন শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
{لَـهُمْ فِـى الدُّنْيَا خِزْىٌ}هَوَانٌ بِالْقَتْلِ وَالسَّبْـىِ وَالْـجِزْيَةِ {وَّلَـهُمْ فِـى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ} هُوَ النَّارُ.
অর্থ: “তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ার যমীনে লাঞ্ছনা। (অর্থাৎ) কত্বল (মৃত্যুদ-), বন্দিত্ব (জেল-হাজত) এবং জিযিয়া কর প্রদানের অবমাননা। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (অর্থাৎ পরকালে) তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে জালালাইন শরীফ ১/২৪, আস সিরাজুল মুনীর ১/৮৮ ইত্যাদি)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকির মুবারক করতে, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইস্ম বা নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয়ার কারণে এবং সেগুলোকে উজার বা বিরান করে দেয়ার বা ভেঙ্গে ফেলার কোশেশ করার কারণে অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহকে হাক্বীক্বীভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ না করার কারণে সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, চির মাল‘ঊন ও চির জাহান্নামী হতে হয় এবং দুনিয়ার যমীনে অবমাননা, লাঞ্ছনা, জেল-হাজত, গ্রেফতার ও কত্বল তথা মৃত্যুদ-ের শিকার হতে হয়, তাহলে রাস্তা সোজা করার নামে যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগীতা করবে এবং সমর্থন করবে তাদের ফায়ছালা কী? মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের সম্মানিত ফতওয়া মুবারক অনুযায়ী- “নিঃসন্দেহে তারা সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, চির মাল‘ঊন ও চির জাহান্নামী হবে। তাদের প্রত্যেককেই অবশ্যই অবশ্যই গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রবেশ করাতে হবে। অতঃপর তওবা করার জন্য তিন দিন সময় দিতে হবে। যদি তারা তওবা করে ভালো; অন্যথায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া মুতাবিক তাদের প্রত্যেককেই মৃত্যুদ- দিতে হবে।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خِصَالٌ لَّا تَنْبَغِىْ فِـى الْمَسْجِدِ لَا يُتَّخَذُ طَرِيْقًا.
অর্থ: “হযরত ইবনে ‘উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কতগুলো অভ্যাস বা কাজ রয়েছে সেগুলো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদের মধ্যে করা জায়িয নেই। যেমন- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে (ভেঙ্গে) রাস্তা বানানো জায়েয নেই। বরং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার মুবারক আদেশ করা হয়েছে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ্ শরীফ, আল জামি‘উছ ছগীর ১/৩৬৬, আল ফাতহুল কাবীর ২/৮২, জামি‘উল আহাদীছ ১২/২৭৫, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/১২১১১, কান্যুল ‘উম্মাল ৭/৬৬৭, মিছবাহুয যুজাযাহ ১/৯৫, আত তানভীর শরহু জামি‘য়িছ ছগীর ৫/৪৮২, আল বাদরুল মুনীর ৯/৫১১, আদ দিরায়াহ ১/২৮৮, আল বাহরুল রায়িক্ব ৬/৩১৭, আদ দুররুল মানছূর লিস সুয়ূত্বী ১১/৭৮, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৬/৬৩, মুখতাছরু তাফসীরে ইবনে কাছীর ২/৬০৮, আল মুহাররুল ওয়াজীয ৬/৪৩৭, আল মাত্বালিবুল ‘আলিয়াহ্ ৩/৫০৮, ফতহুল বারী লি ইবনে হাজার ১৩/১৫৭, ‘উমদাতুল ক্বারী ৭/৬৫, হাশিয়াতুস সিন্দী ১/২৫৩, আল বাদরুল মুনীর ৯/৫১১, নাছবুর রাইয়াহ্ ২/৪৯৩, তুহ্ফাতুল আশরাফ ৬/৯৬ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَتَّخِذُوا الْمَسَاجِدَ طُرُقًا.
অর্থ: “হযরত ইবনে ‘উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে (ভেঙ্গে) রাস্তা হিসেবে গ্রহণ করো না (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে রাস্তা তৈরী করো না বরং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করো।)।” (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ১০/৪৫৩, আল মু’জামুল আওসাত্ব ১/১৪, শরহু সুনানি ইবনে মাজাহ লিল মুগলত্বাই ১/১২৪৪, ফাইযুল ক্বদীর ৬/৫০২, আত তাইসীর বিশরহিল জামি‘িয়ছ ছগীর ২/৯৪৫, মাছাবীহুত তানভীর ২/২৫, আত তানভীর শরহুল জামি‘িয়ছ ছগীর ১১/৮২, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৪, আল জামি‘উছ ছগীর ২/৩৮৮, আল ফাতহুল কাবীর ৩/৩০০, দায়লামী শরীফ ৫/১৫, জামি‘উল আহাদীছ ১২/২৭৫ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ نَـهٰى اَنْ تُتَّخَذَ الْـمَسَاجِدُ طُرُقًا.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এবং হযরত ইবনে ‘উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনাদেরকে রাস্তা বানাতে (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ করতে) নিষেধ করেছেন। বরং উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করার মুবারক আদেশ করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে ত্বয়ালসী ১/৩০৯, মু’জামুল কাবীর লিত্ ত্ববরানী ৮/২৩৫, মুসনাদে ইবনে আবী শায়বাহ্ ১/১৯৪, মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ্ ১/৩৩৯, আল বাদরুল মুনীর ৯/৫১১, বায়ানুল ওয়াহাম ২/৫৮৭, আত্ তালখীছুল হাবীর লি ইবনে হাজার ৬/৩১৪৭, মুখতাছারু ইস্তিদরাকিল হাফিযিয্ যাহাবী ৭/৩২৯৯, শরহু সুনানি ইবনে মাজাহ ১/১২৫০, যাখীরতুল হুফ্ফায ২/৮৮৬ ইত্যাদি)
সুতরাং রাস্তা সোজা করতে যেয়ে কস্মিনকালেও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা যাবে না। বরং রাস্তা নির্মাণ করতে যেয়ে কোনো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক সামনে পড়লে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার সম্মানার্থে রাস্তা বাঁকা করে নিতে হবে। এটাই সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া। সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী রাস্তার অজুহাত দেখিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা সম্পূর্ণরূপে হারাম-নাজায়িয এবং কাট্টা কুফরী ও চির জিহান্নামী হওয়ার কারণ। (তথ্যসূত্র: ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, ২. সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, ৩. আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী, ৪. আল মু’জামুল আওসাত্ব, ৫. শরহু সুনানি ইবনে মাজাহ লিল মুগলত্বাই, ৬. ফাইযুল ক্বদীর, ৭. আত তাইসীর বিশরহিল জামি‘িয়ছ ছগীর, ৮. মাছাবীহুত তানভীর, ৯. আত তানভীর শরহুল জামি‘িয়ছ ছগীর, ১০. মাজমাউয যাওয়াইদ, ১১. আল জামি‘উছ ছগীর, ১২. আল ফাতহুল কাবীর, ১৩. দায়লামী শরীফ, ১৪. জামি‘উল আহাদীছ, ১৫. যাখীরতুল হুফ্ফায, ১৬. মিছবাহুয যুজাযাহ, ১৭. আল বাদরুল মুনীর, ১৮. আদ দিরায়াহ, ১৯. আল বাহরুল রায়িক্ব, ২০. আদ দুররুল মানছূর লিস সুয়ূত্বী, ২১. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ২২. আল মুহাররুল ওয়াজীয, ২৩. তাফসীরে জালালাইন, ২৪. তাফসীরে সমরকন্দী, ২৫. তাফসীরে খাযিন, ২৬. তাফসীরে বাগবী, ২৬. তাফসীরে মাযহারী, ২৭. আস সিরাজুল মুনীর, ২৮. আস সিরাজুল মুনীর, ২. জাম‘উল জাওয়ামি’ শরীফ, ৩০. কান্যুল ‘উম্মাল, ৩১. আত তানভীর শরহু জামি‘য়িছ ছগী, ৩২. মুখতাছরু তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৩৩.আল মাত্বালিবুল ‘আলিয়াহ্, ৩৪. ফতহুল বারী লি ইবনে হাজার, ৩৫. ‘উমদাতুল ক্বারী, ৩৬. হাশিয়াতুস সিন্দী, ৩৭. আত্ তানবীর শরহুল জামি‘ইছ ছগীর, ৩৮. নাছবুর রাইয়াহ্, ৩৯. তুহ্ফাতুল আশরাফ, ৪০. মুসনাদে ত্বয়ালসী, ৪১. মু’জামুল কাবীর লিত্ ত্ববরানী, ৪২. মুসনাদে ইবনে আবী শায়বাহ্, ৪৩. মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ্, ৪৪. বায়ানুল ওয়াহাম, ৪৫. যখীরতুল হুফ্ফায, ৪৬. আত্ তালখীছুল হাবীর লি ইবনে হাজার, ৪৭. মুখতাছারু ইস্তিদরাকিল হাফিযিয্ যাহাবী, ৪৮. আত তানভীর শরহু জামি‘য়িছ ছগীর ইত্যাদি)
সুওয়াল-১৭
সরকারী কাজে যদি অন্য উপায় না থাকে, তবে বিকল্প মসজিদ বানিয়ে দেয়ার শর্তে মসজিদ ভাঙ্গা যায়। এই কথা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
জাওয়াব: উক্ত কথা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয়। বরং সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ।
কাজেই, সরকারী কাজে হোক অথবা বেসরকারী কাজে হোক, অন্য কোন উপায় থাকুক বা না থাকুক বিকল্প মসজিদ বানিয়ে দেয়ার শর্তে কোন মসজিদ ভাঙ্গা যাবে না। কারণ শরয়ী মসজিদ যেখানে হয়েছে বা রয়েছে উক্ত স্থানের হুকুম মসজিদের হুকুম হিসেবেই কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
অতএব, বিকল্প যত মসজিদই বানানো হোক তার পরিবর্তে কোন মসজিদই ভাঙ্গা জায়িয হবে না। তা সরকারী প্রয়োজনে হোক অথবা অন্য প্রয়োজনে হোক।
মূলতঃ মসজিদ ভাঙ্গার চিন্তা কিংবা কোন অজুহাত পেশ করা সবই কুফরী এবং ঈমান নষ্টের কারণ।
দলীলসমূহ: তাফসীরে আহমদী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে নীসাপূরী, মাজমাউয যাওয়াদ, জামিউল আহাদীছ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে মজমুয়া ইত্যাদি।
সুওয়াল-১৮
একাধিক ছোট ছোট আকারের মসজিদ উনার জমি সরকারী/বেসরকারী কাজে ব্যবহার করে তার বদলে অন্যত্র একটি বড় মসজিদ নির্মাণ করল, সেটা কি বৈধ হবে?
জাওয়াব: যা মসজিদ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে তা ছোট হোক, মাঝারি হোক কিংবা বড় হোক কোনটাই ভাঙ্গা যাবে না। যে স্থান মসজিদ হিসেবে নির্ধারিত তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত মসজিদ হিসেবেই বহাল থাকবে। উক্ত স্থান সরকারী/বেসরকারী কোন কাজেই ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করলে হারাম ও কুফরী হবে।
মসজিদ বড় বানাতে হবে এমন আদেশ শরীয়তে নেই। বরং অবস্থাভেদে মসজিদ ছোট, বড়, মাঝারি সবধরণের হতে পারে। এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান। এক স্থানের ছোট মসজিদ ভেঙ্গে অন্য স্থানে বড় মসজিদ বানানো, এটা সম্মানিত শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয, হারাম এবং কুফরী। এ কুফরী থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক ঈমানদারের জন্যেই ফরয।
দলীলসমূহ: তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে আহমদী, তাফসীরে খাযিন, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, ক্বাযীখান, আইনুল হিদায়া ইত্যাদি।
সুওয়াল-১৯
মসজিদ স্থানান্তর করার স্বপক্ষে কেউ কেউ বলে থাকে যে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে কূফার দায়িত্বশীল ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু। একদা মসজিদ হতে বাইতুল মাল চুরি হয়ে গেলে সে ঘটনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানানো হয়। তিনি মসজিদ স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। ফলে মসজিদ স্থানান্তরিত করা হয় এবং পূর্বের স্থান খেজুর বিক্রির বাজারে পরিণত হয়। আর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, তোমাদের উপর অপরিহার্য হলো, আমার সুন্নত ও আমার খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের সুন্নতকে আকড়ে ধরা। অতএব, একান্ত প্রয়োজনে মসজিদ স্থানান্তর করা যায়। তারা দলীল হিসেবে যে কিতাব সমূহের নাম উল্লেখ করেছে তা হচ্ছে ১. ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াহ ৩১ খ-, ২১৭ পৃষ্ঠা, ইমাম তবারানী আল মু’জামুল কবীর, হা/৮৮৫৪, ২. আবূ দাউদ হা/৪৬০৭, তিরমিযী হা/২৬৭৬, মিশকাত হা/১৬৫।
তাদের উক্ত বক্তব্য ও দলীল কতটুকু ঠিক? জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার আরজি জানাচ্ছি।
জাওয়াব: মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়ে তাদের উক্ত বক্তব্য ও দলীল মোটেও সঠিক হয়নি। বরং তা সম্পূর্ণ মনগড়া, মিথ্যা, জালিয়াতিপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর, গোমরাহীমূলক, হারাম ও কুফরী হয়েছে।
তারা মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়ে ফতওয়ায়ে ইবনে তায়মিয়াহ ও আল মু’জামুল কাবীর লিত তবারানী কিতাব দু’টির দলীল দিয়েছে।
আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত আঁকড়ে ধরা অপরিহার্য সে বিষয়ে দলীল দিয়েছে আবূ দাউদ, তিরমিযী ও মিশকাত শরীফ কিতাব তিনটির। কিন্তু তারা দলীল হিসেবে ৫টি কিতাবের নাম একসাথে উল্লেখ করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। কারণ সাধারণ মানুষ মনে করবে, মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়ে হয়তো উক্ত ৫টি কিতাবেই উল্লেখ রয়েছে। অথচ শুধুমাত্র ইবনে তাইমিয়ার কিতাবটি ব্যতীত আর বাকী ৪টি কিতাবের কোন কিতাবেই মসজিদ স্থানান্তর করার বিষয়টি উল্লেখ নেই।
কিন্তু সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসারীদের নিকট এবং বিশেষ করে সম্মানিত হানাফী মাযহাবের অনুসারীদেরও নিকট ইবনে তাইমিয়ার ফতওয়া আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ইবনে তায়মিয়াহ বাতিল ৭২ ফিরক্বার অন্যতম মুশাব্বিহা ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। তার বহু আক্বীদা ও আমলে কুফরী রয়েছে।
যেমন- সে তার সমসাময়িক আলিম-উলামাদেরকে গালি-গালাজ করতো। নাঊযুবিল্লাহ! ছোট-বড়, প্রবীন ও নবীন সকল আলিম-উলামাদের বিরোধিতা করতো। নাঊযুবিল্লাহ! এমনকি সে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সমালোচনাকালে উনাকে কোন এক বিষয়ে ভ্রান্ত বলে উল্লেখ করে। নাঊযুবিল্লাহ!
শুধু তাই নয়, সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কেও বলে যে, তিনি ১৭টি মাসয়ালায় ভুল করেছেন এবং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার খিলাফ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
সে একবার জুমুয়ার দিন বলে যে, আমি যেরূপ (মিম্বরের উপরিস্থ তাক থেকে নি¤œ তাকে) নামছি, সেরূপ মহান আল্লাহ পাক তিনিও (আরশ হতে) প্রথম আকাশে নেমে থাকেন। নাঊযুবিল্লাহ!
পূর্ববর্তী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম ও আলিমগণ এমনকি তার সমসাময়িক আলিমগণ সম্পর্কেও সে বদ ধারণা পোষণ করতো। নাঊযুবিল্লাহ!
তার আরো বক্তব্য হচ্ছে, রাত্রিতে অপবিত্র অর্থাৎ গোসল ফরজ হলে গোসল ব্যতীত তাহাজ্জুদ পড়ে নিবে, নাঊযুবিল্লাহ! কুরআন শরীফ মাখলুক্ব, নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আকৃতি আছে, নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আরশে থাকেন, নাঊযুবিল্লাহ! তিনি আরশের পরিমাণ আয়তন বিশিষ্ট, নাঊযুবিল্লাহ! তিনি আকাশ হতে নেমে আসেন, নাঊযুবিল্লাহ! নবীগণ নিষ্পাপ নন, নাঊযুবিল্লাহ! রওজা শরীফ যিয়ারতের নিয়তে সফর করা হারাম, নাঊযুবিল্লাহ! এবং তাওরাত শরীফ ও ইনজীল শরীফ-এর শব্দ পরিবর্তন হয় নাই।” নাঊযুবিল্লাহ! অনুরূপ আরো বহু শরীয়ত বিরোধী আক্বীদা-আমল রয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! (দলীলসমূহ: আদ্-দুরারুল কামিনাহ, রিহ্লাতু ইবনে বতুতা, লিসানুল মীযান, শরহে মাওয়াহিব লিয যারকানী, তুহফাতুন নাজার, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ, আল-জাওহারুল মুনায্যাম, তবাকাতুল কুবরা ইত্যাদি)
উক্তসব কুফরী আক্বীদা ও আমলের কারণে তার সমসাময়িক অনুসরণীয় হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ ইবনে তাইমিয়াকে হত্যা অথবা কারারুদ্ধ করার জন্য বাদশাহকে বাধ্য করেন। বাদশাহ তাকে বন্দী করেন এবং সে কারারুদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
আর তারা যে ‘আল মু’জামুল কাবীর লিত তবারানী’ কিতাবের হাদীছ শরীফখানার কথা বলেছে তাতে তারা চরম মিথ্যা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের সেই চরম মিথ্যা, জালিয়াতি ও বিভ্রন্তি থেকে মুসলমানদের হিফাজতের লক্ষ্যে উল্লেখিত হাদীছ শরীফখানা মূল কিতাব হতে উল্লেখ করা হলো-
عَنْ حَضْرَتِ الْقَاسِمِ رَحـْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَدِمَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ وَقَدْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ الْقَصْرَ وَاتَّـخَذَ مَسْجِدًا فِـيْ أَصْحَابِ التَّمْرِ فَكَانَ يَـخْرُجُ إِلَيْهِ فِـي الصَّلَوَاتِ فَلَمَّا وَلـِيَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ بَيْتَ الْمَالِ نَقَبَ بَيْتَ الْمَالِ فَأَخَذَ الرَّجُلَ فَكَتَبَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ إِلٰـى حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَكَتَبَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنْ لَّا تَقْطَعْهُ وَانْقُلِ الْمَسْجِدَ وَاجْعَلْ بَيْتَ الْمَالِ مِـمَّا يَلِى الْقِبْلَةَ فَإِنَّهٗ لَا يَزَالُ فِـي الْمَسْجِدِ مَنْ يُّصَلِّيْ فَنَقَلَهٗ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ وَخَطَّ هَذِهِ الْخُطَّةَ وَكَانَ الْقَصْرُ الَّذِيْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ شَاذَرَ وَاِنْ كَانَ الْإِمَامُ يَقُوْمُ عَلَيْهِ فَأَمَرَ بِه حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ فَنُقِضَ حَتَّى اسْتَوٰى مَقَامُ الْإِمَامِ مَعَ النَّاسِ.
অর্থ: “হযরত ক্বাসিম ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি কূফায় আগমন করেন। সেখানে হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। আর (উক্ত ভবনের একটা অংশে) তিনি খেজুর মালিকদের জন্য নামাযের স্থান নির্ধারণ করেছেন। তিনি সেখানে নামায আদায়ের জন্য তাশরীফ নিতেন। অতঃপর যখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ‘বাইতুল মালের’ দায়িত্বশীল হলেন, তখন কোনো এক লোক বাইতুল মালে সিঁধ কেটে প্রবেশ করলো। তিনি লোকটিকে ধরলেন।
অতঃপর এই বিষয়টি জানিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট চিঠি লিখলেন। উক্ত চিঠির জবাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি চিঠি লিখে পাঠালেন যে, আপনি তার হাত কাটবেন না। বরং আপনি নামাযের স্থানটি (একটু পেছনে) সরিয়ে নেন। আর ‘বাইতুল মাল’ সামনের দিকে ক্বিবলা বরাবর নির্ধারণ করুন। কেননা, নামায আদায়ের স্থানে (সাধারণতঃ) মুছল্লীগণ সবসময় অবস্থান করবেন (তখন বাইতুল মাল সামনে থাকায় কোনো ক্ষতি হবে না)। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উক্ত নামায আদায়ের স্থানটি সরিয়ে নিলেন (আর বাইতুল মালকে ক্বিবলার দিকে রাখলেন) এবং তিনি উক্ত স্থানটির সীমানা চিহ্নিত করার জন্য দাগ দিলেন। হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি যে ভবনটি নির্মাণ করেছেন তা প্রশস্ত ছিলো। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার নির্দেশ মুবারকে ইমাম দাঁড়ানোর স্থানকে ভেঙ্গে ফেলা হয়, এমনকি ইমামের স্থান মুক্তাদির স্থানে স্থির করা হয়। (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৯/১৯২, মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হাইছামী ৬/২৭৫)
উক্ত হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা প্রতিভাত যে,
(এক) হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র নামায ঘরের স্থানকে সরানোর জন্য বলেছেন, তাই উনার নির্দেশ অনুযায়ী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি শুধুমাত্র ইমামের দাঁড়ানোর স্থানটিকে ভেঙ্গে সেখানে বাইতুল মাল স্থাপন করেন। ফলে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান মুক্তাদির কাতারে স্থিরকৃত হয়।
(দুই) বাইতুল মাল থেকে মাল চুরি হয়নি। বরং চুরির জন্য বাইতুল মালে কেবল প্রবেশ করেছিল। তাই ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ব্যক্তির হাত কাটতে নিষেধ করেছিলেন।
(তিন) নামায ঘরে শুধুমাত্র ইমামের দাঁড়ানোর স্থানটি ভেঙ্গে সেখানে বাইতুল মাল নির্ধারণ করা হয়। ফলে সেখানে খেজুর বিক্রির বাজার হওয়ার কোনো সুযোগই নেই।
অতএব, ক্বিল্লতে ইলম-ক্বিল্লতে ফাহম তথা কম ইলম ও কম বুঝের কারণে কতক মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী, নীম মোল্লা শ্রেণীর লোক পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার সঠিক মর্মার্থ উদঘাটন করতে অক্ষম হয়ে মিথ্যা, মনগড়া ও ভুল অর্থ করে সাধারণ মুসলমান উনাদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কেননা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে-
وَقَدْ بَنٰى حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ الْقَصْرَ وَاتَّـخَذَ مَسْجِدًا فِـيْ أَصْحَابِ التَّمْرِ.
অর্থ: “হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। আর তিনি (উক্ত ভবনের একটা অংশে) খেজুর মালিকদের জন্য নামাযের স্থান নির্ধারণ করেছেন।”
কিন্তু এখানে বলা হয়নি যে, তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ নির্মাণ করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে مَسْجِدًا (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা মূলতঃ নামায পড়ার ঘর বা স্থানকে বুঝানো হয়েছে। শরয়ী কোন মসজিদকে নয়।
স্মরণীয় যে, مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ উল্লেখ থাকলেই যে, মসজিদ বা জামে মসজিদকে বুঝাবে, বিষয়টি এমন নয়। বরং مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সময়কেও বুঝানো হয়ে থাকে আবার নামাযের সাধারণ স্থানকেও বুঝানো হয়ে থাকে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ২৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَأَقِيْمُوْا وُجُوْهَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
অর্থ: আর তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় স্বীয় মুখমন্ডল সোজা রাখ অর্থাৎ সোজা ক্বিবলার দিকে রাখতে যতœবান হও।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে ইবনে আব্বাস’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
{عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ} عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ
অর্থাৎ “...প্রত্যেক নামাযের সময়।”
অনুরূপ উক্ত পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ৩১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يَا بَنِـيْۤ اٰدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
অর্থ: হে বনী আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় উত্তম পোশাক তথা তাক্বওয়ার পোশাক বা সুন্নতী পোশাক পরিধান করে নাও।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সময়কে বুঝানো হয়েছে।
একইভাবে مَسْجِد (মসজিদ) শব্দ মুবারক দ্বারা নামাযের সাধারণ স্থানকে বুঝানো হয়েছে। সে সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
جُعِلَتْ لـِىَ الْاَرْضُ مَسْجِدًا وَّطَهُوْرًا
অর্থ: “আমার জন্য সমস্ত যমীনকে পবিত্র ও নামাযের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
خَيْـرُ مَسَاجِدِ النِّسَآءِ قَعْرُ بُيُوْتِـهِنَّ
অর্থ: “মহিলাদের জন্য নামাযের শ্রেষ্ঠ স্থান হচ্ছে তাদের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ।” (মুসতাদরাকে হাকিম)
উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ইমাম ত্ববারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
خَيْـرُ صَلَاةِ النِّسَآءِ فـِيْ قَعْرِ بُيُوْتِـهِنَّ
অর্থ: “মহিলাদের ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠের নামাযই শ্রেষ্ঠ নামায।” (ত্ববারানী শরীফ)
উল্লেখিত হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যথাক্রমে مَسْجِدًا ও مَسَاجِد শব্দ মুবারক দ্বারা আমভাবে মসজিদ বা জামে মসজিদ কোনটাই বুঝানো হয়নি। বরং নামাযের সাধারণ স্থানকে বুঝানো হয়েছে।
তাহলে কি মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী ও নীম মোল্লা শ্রেণীর লোকেরা মহিলাদের প্রত্যেকটি ঘরকে মসজিদ বা জামে মসজিদ বলবে? নাকি সমস্ত যমীনকে বলবে?
মূলতঃ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে মহিলাদের প্রত্যেকটি ঘর এবং সমস্ত যমীনকে মসজিদ বা জামে মসজিদ কোনটিই বুঝানো হয়নি। এ বিষয়টিই মূর্খ, গুমরাহ, লা-মাযহাবী, নীম মোল্লাদের জানা নেই। তাই এদের ব্যাপারে কিতাবে লিখা হয়-
نیم حکیم خطر جان+ نیم ملا خطر ایمان
“নীম হেকীম খত্বরে জান, নীম মোল্লা খত্বরে ঈমান।”
অর্থ: “আধা ডাক্তাররা জীবন নাশের কারণ, আধা মোল্লারা ঈমান ধ্বংসের কারণ।”
অপরদিকে বলতে হয় যে, সুওয়ালে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত নামাযের স্থানকে যদি মসজিদ বা জামে মসজিদ-ই বুঝানো হতো তবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ইবারতে وَقَدْ بَنٰى... الْقَصْرَ (তিনি ভবন বানালেন) এর স্থলে وَقَدْ بَنٰى... مَسْجِدًا (তিনি মসজিদ বানালেন) উল্লেখ থাকতো। মূলতঃ হযরত সা’দ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার প্রয়োজনে একটি ভবন নির্মাণ করেছিলেন এবং উক্ত ভবনের কোনো একটি কক্ষের একটি অংশকে সেখানে আগমনকারী লোকদের সুবিধার্থে নামাযের স্থান হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তীতে বাইতুল মাল চুরি হওয়ার আশংকায় ইমামের দাঁড়ানোর স্থানকে কিছুটা পেছনে নিয়ে বাইতুল মালকে ক্বিবলার দিকে মুছল্লীদের সামনে রাখা হয় যেন তা চুরি না হয়। যেহেতু নামাযের উক্ত স্থানটি কোনো মসজিদ ছিলো না সেহেতু তা আগে-পিছে করা বা পরিবর্তন করা স্বাভাবিকই ছিলো।
কিন্তু এই পবিত্র হাদীছ শরীফকে মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর বৈধ হওয়ার দলীল হিসেবে ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়িয হবে না। বরং হারাম-নাজায়িয ও কাট্টা কুফরী হবে। কেননা নামায পড়ার সাধারণ স্থান ও শরয়ী মসজিদ একই বিষয় নয়। নামায পড়ার সাধারণ স্থানকে প্রয়োজনে সরানো বা স্থানান্তরিত করা যায়, কিন্তু মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত স্থানকে কোনোভাবেই ভাঙ্গা বা স্থানান্তরিত করা জায়িয নেই। এটাই হচ্ছে মহাসম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার সর্বস্বীকৃত মত বা ফতওয়া।
সুতরাং মেট্রো রেলের নামে হোক, নদী রক্ষার নামে হোক, রাস্তা সম্প্রসারণের নামে হোক, উন্নয়ন কর্মসূচীর নামে হোক বা যেকোনো অজুহাতেই হোক মসজিদ ভাঙ্গা বা স্থানান্তর করা কস্মিনকালেও শরীয়তসম্মত নয়; বরং তা সুস্পষ্ট হারাম ও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাঊযুবিল্লাহ!
{দলীলসমূহঃ (১) তবারানী শরীফ (২) বায়হাক্বী শরীফ (৩) মাজমাউয যাওয়ায়িদ (৪) জামিউল কাবীর (৫) জামিউছ ছগীর (৬) ফতহুল বারী (৭) ইরশাদুল ক্বারী (৮) মুসতাদরাকে হাকিম (৯) ফতহুল কাবীর (১০) ইবনে খুযাইমাহ (১১) মাওসূআতুল ফিক¡িহয়্যাহ (১২) মুসনাদে আযহারী (১৩) মিরআতুল মাফাতীহ (১৪) মুসলিম শরীফ (১৫) মিশকাত শরীফ (১৬) মিরকাত শরীফ (১৭) ফতহুল মুলহিম (১৮) কান্যুল উম্মাল (১৯) আল্-ফিরদাউস (২০) জামিউল আহাদীছ (২১) নাইলুল আওতার (২২) তারগীব-তারহীব (২৩) মুসনাদে শিহাব (২৪) আবূ ইয়া’লা (২৫) তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল্ জাসসাস (২৬) তাফসীরে কুরতুবী (২৭) তাফসীরে তাবারী (২৮) তাফসীরে বায়দ্ববী (২৯) তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী (৩০) তাফসীরে রুহুল বায়ান (৩১) তাফসীরে ইবনে কাছীর (৩২) তাফসীরে দুররে মানছূর (৩৩) তাফসীরে জালালাইন (৩৪) তাফসীরে কামালাইন (৩৫) তাফসীরে মাযহারী (৩৬) তাফসীরে কবীর (৩৭) ফতওয়ায়ে শামী (৩৮) দূরারুল হুক্কাম (৩৯) দূররুল মুখতার (৪০) বাহ্রুর রায়িক (৪১) ফতওয়ায়ে আলমগীরী (৪২) মাজমুয়ায়ে ফতওয়া-আব্দুল হাই লখনৌবী (৪৩) ফতওয়ায়ে দারুল ইফতাহ্্ মিছর, (৪৪) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (৪৫) ইমদাদুল ফতওয়া (৪৬) লুগাতুল কুরআন (৪৭) লুগাতুল আহাদীছ (৪৮) লিসানুল আরব (৪৯) মিছবাহুল লুগাত (৫০) আল-মুনজিদ ইত্যাদি}
সুওয়াল-২০
বিভিন্ন অজুহাতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙলে এর গুনাহের দায় কি এলাকাবাসী ও মুছুল্লীদের উপর বর্তাবে?
জওয়াব: হ্যাঁ, অবশ্যই বিভিন্ন অজুহাতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙলে এর গুনাহের দায় যারা ভাঙ্গবে এবং যারা সহযোগীতা ও সমর্থন করবে তারাসহ এলাকাবাসী ও মুছুল্লী সকলের উপর বর্তাবে।
কারণ, এলাকাবাসী ও মুছুল্লী সকলে মিলে যদি সর্বশক্তি দিয়ে জোড়ালো প্রতিবাদ করে, তাহলে কারো পক্ষে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
স্বাভাবিকভাবে কারো ঘর-বাড়ি যদি কেউ ভাঙতে আসে, তাহলে সে তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বাধা প্রদান করে এবং মামলা-মুকাদ্দামা করে। যদি তাই হয়, তাহলে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক হচ্ছেন যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যদি কেউ ভাঙতে আসে, তাহলে সমস্ত এলাকাবাসী ও মুছুল্লীদের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে নিজের ঘর-বাড়ি হেফাযতের জন্য যেরূপ সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বাধা প্রদান করে থাকে এবং মামলা-মুকাদ্দামা করে থাকে, তার চেয়ে লক্ষ কোটি গুণ বেশি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বাধা প্রদান করা এবং আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এটাই ঈমানের দাবি।
কেননা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَحَبَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ فَلْيُحِبَّنِـىْ وَمَنْ اَحَبَّنِـىْ فَلْيُحِبَّ اَصْحَابِـىْ وَمَنْ اَحَبَّ اَصْحَابِـىْ فَلْيُحِبَّ الْقُرْاٰنَ وَمَنْ اَحَبَّ الْقُرْاٰنَ فَلْيُحِبَّ الْمَسَاجِدَ فَاِنَّـهَا اَفْنِيَةُ اللهِ اَبْنِيَتُهٗ.
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করে, সে যেন আমাকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি আমাকে মুহব্বত করে, সে যেন আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে মুহব্বত করে, সে যেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মুহব্বত করে। আর যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে মুহব্বত করে, সে যেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদেরকে মুহব্বত করে। (মুহব্বতের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অর্থাৎ যাতে কেউ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গতে না পারে বা কোনো প্রকার ক্ষতি করতে না পারে এবং মুছুল্লীদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক কেন্দ্রিক কোনো ইবাদতে বিঘœ সৃষ্টি করতে না পারে। সুবহানাল্লাহ!)
কেননা নিঃসন্দেহে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার আঙ্গিনা, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী শরীফ ১২/২৬৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ১৩/৭৩৪, শরহুল বুখারী শরীফ ১/৪১৪ ইত্যাদি)
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার থেকে যেই বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট তা হচ্ছে- যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে মুহব্বত করে, তার জন্য ফরযে আইন হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদেরকে মুহব্বত করা। আর মুহব্বতের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অর্থাৎ যাতে কেউ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙতে না পারে বা কেনো প্রকার ক্ষতি করতে না পারে এবং মুছুল্লীদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ কেন্দ্রিক কোনো ইবাদতে বিঘœ সৃষ্টি করতে না পারে। আর যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকসমূহ উনাদেরকে মুহব্বত করে না, সে মূলত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে মুহব্বত করে না। না‘ঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ সে ঈমানদার নয়; বরং কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدِ ۣ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ رَاٰى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّـرْهُ بِيَدِهٖ فَاِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهٖ فَاِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهٖ وَذٰلِكَ اَضْعَفُ الْاِيْـمَانِ.
অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউ যখন সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত মুবারক উনার খিলাফ কোনো কাজ দেখবে, তখন সে যেন তা হাত দিয়ে বাধা দেয়। যদি হাত দিয়ে বাধা দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন তা মুখ দিয়ে বাধা দেয়। যদি তাতেও সম্ভব না হয়, তাহলে যেন তা অন্তরে বাধা দেয়।
অর্থাৎ অন্তরে খারাপ জেনে সেখান থেকে দূরে সড়ে যায়। এটা হচ্ছে সম্মানিত ঈমান মুবারক উনার সর্বনি¤œ স্তর।” (মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মুসনাদে আহমদ ৩/৫৪, কান্যুল ‘উম্মাল ৩/৬৬, ছহীহ ইবনে হিব্বান ১/৫৪২, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৬/৯৪, আল মুসনাদুল মুস্তাখরাজ লি আবী না‘ঈম ১/১৩৬, মাছাবীহুস সুন্নাহ্ লিল বাগবী ৩/৪০৭, আল আহ্কামুশ শর‘ইয়্যাতুল কুবরা লিল ইশবীলী ১/৯৭, আল ঈমান লি ইবনে মুন্দাহ্ ১/৩৪২, আদ্ র্দুরুল মানছূর ৫/৪০০, তাফসীরুল ক্বরতুবী ৪/৪৯, তাফসীরে ইবনে কাছীর ২/৯১, তাফসীরে বাগবী ২/৮৫, আল বাহ্রুল মুহীত্ব ৩/২৯০, আল জাওয়াহিরুল হুস্সান লিছ ছা‘আলাবী ১/২৩৪, তাফসীরুল ঈজী জামি‘উল বায়িন ফী তাফসীরিল কুরআন ১/২৮৭, তাফসীরে খাযিন ১/২৮১, ফাত্হুর রহমান ফী তাফসীরিল কুরআন ২/৮, আল মুর্হারারুল ওয়াজীয্ ১/৪৮৭, ফুতূহুল গাইব ৭/৩০৬, শরহুস সুন্নাহ ১৪/৩৪৯, আল আমরু বিল মা’রূফ ওয়ান নাহ্য়ু ‘আনিল মুন্কার ১/১৯, ফাত্হুল বারী লি ইবনে হাজার ১৩/৫৩, শরহুল বুখারী লি ইবনে বাত্ত্বাল ১৯/৬২, ইকমালুল মু’লিম ১/২০৮, হিলইয়াতুল আউলিয়া ১০/২৭, আদ্ দীবাজ ১/৬৩, জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম লি ইবনে রজব ১/৩১৯,শরহুল বুলূগ ১/৩০,‘আওনুল মা’বূদ ১২/২৮৩, আল বায়ান ওয়াত্ তা’রীফ ২/২১৭, মিরক্বাতুল মাফাতীহ্ ৮/৩২০৮, নাইলুল আত্বার ৭/২০৬, আত্ তাওদ্বীহ্ লি শরহিল জামি‘ইছ ছহীহ্ ৩২/৩৬৮, যখীরাতুল ‘উক্ববা ১৩/১০৮, আত্ তা‘ঈন ফী শরহিল আরবা‘ঈন ১/২৮৭, আল ফাত্হুল মুবীন বি শরহিল আরবা‘ঈন ১/৫৩৯, তুহ্ফাতুল আশরাফ ৩/৩৫২, রিয়াদ্বুছ ছালিহীন ১/১৪৬, আল আহ্কামুল উসত্বা লিল ইশবীলী ১/৮৭, আত্ তা’দীল ওয়াত্ তাজরীহ্ ১/৮৬, আল আহ্কামুছ ছুগরা লিল ইশবীলী ১/৯১, আল ইলমাম বি আহাদীছিল আহ্কাম ইত্যাদি)
অপর বর্ণনায় রয়েছে-
وَلَيْسَ وَرَاءَ ذٰلِكَ مِنَ الْاِيْـمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ.
অর্থ: “এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণও সম্মানিত ঈমান মুবারক অবশিষ্ট থাকবে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ইকমালুল মু’লিম শারহু ছহীহ মুসলিম ১/২১১, আল মুফহিম ১/১৪৭, শারহুন নববী ‘আলা মুসলিম ১/১৩২, আদ দীবাজ ‘আলা মুসলিম লিস সুয়ূত্বী ১/৬৫, ফাইদ্বুল ক্বদীর শারহুল জামি‘িয়ছ ছগীর ৬/১৬৯, জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম ২/৩৬, দালীলুল ফালিহীন ২/১৬২, মিছবাহুত তানভীর ১/২৪৭, শারহুল আরবা‘ঈন ১/৩০, আল ইফ্ছাহ্ ২/৯৮, তুহ্ফাতুল আবরার ১/১৩১, যাখীরাতুল ‘উক্ববা ফী শারহিল মুজত্ববা ৩৭/২৯৪, আল ফাতহুর রব্বানী ১/১৯৫, ফাতহুল মুন‘ইম শারহু ছহীহ মুসলিম ১/১৯০, আত তাহ্বীর ১/৩৩৩, আল মাফাতীহ্ ফী শারহিল মাছাবীহ্ ১/২৬০, আল মু‘ঈন ১/৩৯৭, শারহুল মাছাবীহ্ লিইবনিল মালিক ১/১৬৩, আল কাওকাবুল ওয়াহ্হাজ ২/৪০৪, আত তা’ঈন ১/২৯১, আল ফাত্হুল মুবীন শারহুল আরবা‘ঈন লিইবনে হাজার হাইতামী ১/৫৪৬ ইত্যাদি)
অতএব, কেউ যদি নিজেকে ঈমানদার দাবি করতে চায়, তার জন্য ফরযে আইন হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক ভাঙ্গার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ করা এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে হিফাযতে অংশগ্রহণ করা।
(তথ্যসূত্র: ১. মুসলিম শরীফ, ২. নাসাঈ শরীফ, ৩. মুসনাদে আহমদ, ৪. শরহুস সুন্নাহ, ৫. ছহীহ ইবনে হিব্বান, ৬. হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৭. তাফসীরে কুরতুবী শরীফ, ৮. শরহুল বুখারী লি ইবনে বাত্ত্বাল, ৯. মিশকাত শরীফ, ১০. ইকমালুল মু’লিম শারহু ছহীহ মুসলিম, ১১. আল মুফহিম, ১২. শারহুন নববী ‘আলা মুসলিম, ১৩. আদ দীবাজ ‘আলা মুসলিম লিস সুয়ূত্বী, ১৪. ফাইযুল ক্বদীর, ১৫. জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম লি ইবনে রজব, ১৬. দালীলুল ফালিহীন, ১৭. মিছবাহুত তানভীর, ১৮. আল ইফ্ছাহ্, ১৯. তুহ্ফাতুল আবরার, ২০. যাখীরাতুল ‘উক্ববা ফী শারহিল মুজত্ববা, ২১. আল ফাতহুর রব্বানী, ২২. ফাতহুল মুন‘ইম শারহু ছহীহ মুসলিম, ২৩. আত তাহ্বীর, ২৪. আল মাফাতীহ্ ফী শারহিল মাছাবীহ্, ২৫. আল মু‘ঈন, ২৬. শারহুল মাছাবীহ্ লি ইবনিল মালিক, ২৭. আল কাওকাবুল ওয়াহ্হাজ, ২৮. আত তা’ঈন, ২৯. আল ফাত্হুল মুবীন শারহুল আরবা‘ঈন লিইবনে হাজার হাইতামী, ৩০. মিরক্বাতুল মাফাতীহ্, ৩১. শরহুত ত্বীবী, ৩২. আদ্ র্দুরুল মানছূর, ৩৩. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৩৪. তাফসীরে বাগবী, ৩৫. আল বাহ্রুল মুহীত্ব, ৩৬. আল জাওয়াহিরুল হুস্সান লিছ ছা‘আলাবী, ৩৭. তাফসীরুল ঈজী জামি‘উল বায়িন ফী তাফসীরিল কুরআন, ৩৮. আল ইলমাম বি আহাদীছিল আহ্কাম, ৩৯. তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম, ৪০. কান্যুল ‘উম্মাল, ৪১. ছহীহ ইবনে হিব্বান, ৪২. সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, ৪৩. আল মুসনাদুল মুস্তাখরাজ লি আবী না‘ঈম, ৪৪. মাছাবীহুস সুন্নাহ্ লিল বাগবী, ৪৫. আল আহ্কামুশ শর‘ইয়্যাতুল কুবরা লিল ইশবীলী, ৪৬. আল ঈমান লি ইবনে মুন্দাহ্, ৪৭. তাফসীরে খাযিন, ৪৮. ফাত্হুর রহমান ফী তাফসীরিল কুরআন, ৪৯. আল মুর্হারারুল ওয়াজীয্, ৫০. ফুতূহুল গাইব, ৫১. আল আমরু বিল মা’রূফ ওয়ান নাহ্য়ু ‘আনিল মুন্কার, ৫২. ফাত্হুল বারী লি ইবনে হাজার, ৫৩. আদ্ দীবাজ, ৫৪. শরহুল বুলূগ, ৫৫. ‘আওনুল মা’বূদ, ৫৬. আল বায়ান ওয়াত্ তা’রীফ, ৫৭. নাইলুল আত্বার, ৫৮. আত্ তাওদ্বীহ্ লি শরহিল জামি‘ইছ ছহীহ্, ৫৯. যখীরাতুল ‘উক্ববা, ৬০. আত্ তা‘ঈন ফী শরহিল আরবা‘ঈন, ৬১. তুহ্ফাতুল আশরাফ, ৬১. রিয়াদ্বুছ ছালিহীন, ৬২. আল আহ্কামুল উসত্বা লিল ইশবীলী, ৬৩. আত্ তা’দীল ওয়াত্ তাজরীহ্, ৬৪. আল আহ্কামুছ ছুগরা লিল ইশবীলী ইত্যাদি)
সুওয়াল-২১
পবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার অপচেষ্টা করা হলে বা পবিত্র মসজিদের ইজ্জত-হুরমত বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করা হলে এলাকাবাসী বা মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য কি?
জাওয়াব: এলাকাবাসীর দায়িত্ব হচ্ছে মসজিদ ভাঙ্গার উক্ত ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করা। এটা প্রত্যেক মুছল্লী ও ঈমানদারের জন্য ফরযে আইন। এক্ষেত্রে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من را منكم منكرا فليغيره بيده فان لـم يستطع فبلسانه فان لـم يستطع فبقلبه وذلك اضعف الايمان. وفى رواية ليس وراء ذلك من الايمان حبة خردل.
অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় বা হারাম কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেনো তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেনো যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেনো অন্তরে ঘৃণা করে উক্ত অন্যায় বা হারাম কাজ থেকে দূরে সরে থাকে। আর এটা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণ অংশও অবশিষ্ট নেই।”
অর্থাৎ প্রথমতঃ হাতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা হাতে বাধা দিবে না। দ্বিতীয়তঃ মুখে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা মুখে বাধা দিবে না। তৃতীয়তঃ অন্তরে খারাপ জেনে যারা দূরে সরেও থাকবে না। তাদের মূলত ঈমানই নেই।
আর দূরে সরে যাওয়ার যেহেতু কোন জায়গা নেই সেহেতু ঈমান-আমল বাঁচাতে সম্মিলিতভাবে কঠোর প্রতিবাদ করতে হবে। এটা ফরজ। আর প্রতিবাদের বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে। সংবাদ সম্মেলন করা, হাইকোর্টে রিট করা, সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওযূ ব্যতীত আযান দেয়া মাকরূহ তানযীহী। এ মাকরূহ তানযীহী কাজটা অহরহ করলে পুরো মহল্লাবাসীর উপর গযব নাযিল হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। অনুরূপ প্রত্যেক জামে মসজিদে কমপক্ষে একজন রোযাদারকে রমাদ্বান শরীফের শেষ ১০ দিন সুন্নতময় ই’তিকাফ করা কর্তব্য। অন্যথায় মহল্লাবাসী সকলেই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরকের কারণে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে।
এখন মুয়াযযিনের মাকারূহে তানযীহী আমলের কারণে মহল্লাবাসী সকলেই যদি গযবের সম্মুখীন হয় এবং একজন রোযাদার ই’তিকাফ না করলে পুরো মহল্লাবাসী সকলেই যদি কবীরা গুনাহের উপযুক্ত হয়, তাহলে কোন এলাকায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর মসজিদ ভাঙ্গলে সে এলাকাবাসী যে কত কঠিন আযাব-গযবের উপযুক্ত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلَامِ الدُّنْيَا فِىْ خَـمْسَةِ مَوَاضِعٍ اَحْبَطَ اللهُ تَعَالـٰى مِنْهُ عِبَادَةَ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً اَلْاَوَّلِ فِـى الْـمَسْجِدِ وَالثَّانِـىْ فِى تِلَاوَةِ الْقُرْاٰنِ وَالثَّالِثِ فِـىْ وَقْتِ الْاَذَانِ وَالرَّابِـــعِ فِـىْ مَـجْلِسِ الْعُلَمَاءِ وَالْـخَامِسِ فِـىْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পাঁচ স্থানে দুনিয়াবী কথা বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ৪০ বছরের ইবাদাত নষ্ট করে দিবেন। অর্থাৎ তার উক্ত অপরাধের কারণে ৪০ বৎসরের আমল নষ্ট হয়ে যায়। ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার মধ্যে, ২. পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার সময়, ৩. সম্মানিত আযান উনার সময়, ৪. আলিম-উলামাগণ উনাদের মজলিসে এবং ৫. ক্ববর যিয়ারতের সময়।” (তাফসীরে আহ্মদী ৭১০ পৃষ্ঠা, লুবাবুল হাদীছ লিলইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূত্বী ১/১৩)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, পবিত্র মসজিদ উনার মধ্যে সাধারণ দুনিয়াবী কথা বলার অপরাধে যদি ৪০ বছরের ইবাদত বা আমল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মহাপবিত্র মসজিদ যদি ভেঙ্গে ফেলা হয় তাহলে তার অপরাধ কত বেশি বা কত কঠোর হবে সেটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। আর মসজিদ ভাঙ্গার পর রাস্তা বা অন্য কোন কিছু নির্মাণ করা হলে, সেখানে হারাম, নাজায়িয, কুফরী, শেরেকী করা হলে, গান-বাজনা করা হলে, শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ করা হলে, যানবাহন চলাচল করলে অথবা বেদ্বীন-বদদ্বীন অপবিত্র মানুষ যাতায়াত করলে, কত কঠিন কবীরাহ গুনাহ এবং কত আযাব-গজব পতিত হবে সেটা মানুষের কল্পনার বাইরে। সেটাই বলা হয়েছে যে, মসজিদ ভাঙ্গার অপরাধ হচ্ছে কুফরী। আর কেউ কুফরী করলে তার যিন্দেগীর সমস্ত নেক আমল নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তার ঈমানও নষ্ট হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ সে মু’মিন মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির, মুনাফিক ও মুরতাদে পরিণত হয়ে যায়। যদিও সে মুলমান দাবি করুক না কেন, তার মুসলমানী নাম হোক না কেন, তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন মুসলমান হোক না কেন। নাউযুবিল্লাহ!
অতএব, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয হচ্ছে, পবিত্র মসজিদ বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রতিবাদ ও আন্দোলন করা।
দলীলসমূহ: আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে কুরতুবী, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে শামী, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার ইত্যাদি।
সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, কল-কারখানা নির্মাণ
এবং সৌন্দর্য্যবর্ধনসহ দুনিয়াবী কোন অজুহাতে
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গার পক্ষ অবলম্বনকারীদের
প্রতি প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ
“সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, কল-কারখানা নির্মাণ এবং সৌন্দর্য বর্ধণসহ দুনিয়াবী কোন অযুহাতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ ভাঙ্গা হারাম ও কুফরী হওয়ার অকাট্য প্রমাণ” সম্পর্কিত আমাদের এ কিতাব নিয়ে ইখতিলাফ বা মত বিরোধিকারীদের প্রতি রাজারবাগ শরীফ উনার পক্ষ থেকে ‘১০০ কোটি টাকার প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ’ ঘোষণা করা হচ্ছে।
বাহাছের শর্তসমূহ
১. নিরপেক্ষ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বাহাছ অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
২. বাহাস অবশ্যই প্রকাশ্য ময়দানে হতে হবে। কোন হলরুমে বা বদ্ধরূমে বাহাস হলে পরাজিত পক্ষ বাহাস শেষে মিথ্যা বলার সুযোগ পাবে। যা ফিতনার কারণ।
৩. উভয়পক্ষের ৫ (পাঁচ) জন আলিম আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে সহকারী হিসেবে সর্বোচ্চ ৭ জন উপস্থিত থাকতে পারবে।
৪. বাহাছের মানদ- হবে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।
৫. উভয়পক্ষ নিজস্ব সিলসিলার কোন কিতাব থেকে দলীল দিতে পারবে না, তার পূর্ববর্তী ও নির্ভরযোগ্য কিতাব হতে দলীল দিতে হবে।
৬. যে পক্ষ দলীল বেশি পেশ করতে পারবে, সেই পক্ষের ফতওয়াই গ্রহণযোগ্য হবে এবং বিজয়ী হিসেবে গণ্য হবে।
৭. যে লিখিত বিষয়ের বাইরে আলোচনা করবে, সে আলোচনার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
৮. যদি চুক্তিনামায় স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গের কেউ বাহাছে রাজী না হয়, বরং তাদের প্রতিনিধি পাঠায় তবে তাদেরকে এই মর্মে লিখিত দিতে হবে যে, ‘আমাদের প্রতিনিধি বাহাছে পরাস্ত হলে আমরাও বাহাছে পরাস্ত হলাম’।
৯. বাহাছে কোন মাদরাসা কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক। কেননা প্রাতিষ্ঠানিক সিলেবাসভিত্তিক শিক্ষায় দ্বীন ইসলামের সকল বিষয়ের শিক্ষা দেয়া হয়না বরং তাতে কেবলমাত্র কিছুটা যোগ্যতা তৈরী হয়। এর বাইরেও আরো অসংখ্য ধর্মীয় বিষয় রয়েছে। এবং বিশেষ করে সিলেবাসভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইলমে তাছাওউফের শিক্ষা সম্পূর্ণই অনুপস্থিত।
১০. বাহাছ অনুষ্ঠানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার সভাপতি হিসেবে থাকতে পারেন। তবে বাহাছে কোন্ পক্ষ সঠিক বা বিজয়ী তা উপস্থিত জনগণই নির্ধারণ করবেন। কেননা সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিম যেই হোক তিনি অবশ্যই কোন পক্ষের হবেন এবং তিনি বাহাছকারী আলিমদের চেয়ে অধিক যোগ্যতাধারী নাও হতে পারেন।
১১. বাহাছ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে বাহাছকারী মূল ও সহযোগী উভয়পক্ষের প্রত্যেক আলিমের নিজ নিজ দস্তখত থাকতে হবে এবং তা পূর্বেই উভয়পক্ষের কাছে পৌঁছাতে হবে। যারা দস্তখত দিবে না বা দিতে গড়িমসি করবে, বুঝতে হবে তারা বাহাছ চাচ্ছেনা। বরং বাহাছের নামে টালবাহানা করে রাজারবাগ শরীফের মুর্শিদ ক্বিবলা উনার অনুসারীদের মাহফিল বন্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যদি তা না হবে, তাহলে মাহফিল বন্ধের জন্য তারা ঠিকই অনেক হাফিয, ক্বারী, মাওলানা, মুফতীর দস্তখতসহ কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর আবেদন করেছে। কাজেই বাহাছকারী প্রত্যেকেরই নিজ হস্তে দস্তখত থাকতে হবে এবং উপস্থিত থাকতে হবে।
১২. উভয় পক্ষের বক্তব্য অডিও রেকর্ড করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে বাহাছ অনুষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা, ভিডিও ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তুলতে পারবে না।
১৩. উভয়পক্ষের তরফ হতে বাহাছের সমস্ত খরচ বহন করা হবে। তবে যারা পরাজিত হবে তারা বিজয়ীদের সমস্ত খরচ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে।
১৪. চুক্তিনামায় উল্লিখিত বিষয়সমূহের বাইরে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে না।
১৫. চুক্তিনামায় আবদ্ধ হওয়ার পর যথাসময়ে যদি কোন পক্ষ উপস্থিত না হয় অথবা কোন বাহানা দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে অনুপস্থিত পক্ষই পরাজিত বলে পরিগণিত হবে এবং বাহাছের যাবতীয় খরচ বহন করতে বাধ্য থাকবে।
১৬. বাহাছে যারা পরাস্ত হবে তারা বিজয়ীপক্ষের নিকট ভুল স্বীকার করে তওবা করবে ও জনসম্মুখে প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা দিয়ে সমস্ত কিছু মেনে নিতে বাধ্য থাকবে।
১৭. বাহাছকারী উভয় পক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা জামানত হিসেবে প্রত্যেক পক্ষের মূল আলোচকের নিকট অবশ্যই জমা রাখতে হবে। যে পক্ষ বাহাছে পরাজিত হবে তার জমাকৃত টাকা বিজয়ী পক্ষ আনুষাঙ্গিক খরচ হিসেবে পাবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : উপরোক্ত বিষয়সমূহের মধ্যে কোন বিষয় যদি বিরোধী পক্ষ রাজারবাগ শরীফ সিলসিলার সাথে একমত পোষণকারী হয় তাহলে সে বিষয় বা বিষয়সমূহ বাহাছের বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। তা অবশ্যই পূর্বেই জানাতে হবে।
প্রকাশিত হয়েছে!
“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ফতওয়া মুবারক”
সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদসমূহ উত্তমভাবে তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করা ফরয
আপনার কপির জন্য যোগাযোগ করুন-
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (বিক্রয়কেন্দ্র)
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন (পিএবিএক্স) : ৪৮৩১৪৮৪৮ (বর্ধিত ১৪১)
মোবাইল : ০১৭১০-৩২০৪১২, ০১৭১৭-২২৬৬৬৪২
0 Comments:
Post a Comment