* সুওয়াল: কিছু লোক ছোঁয়াচে রোগের পক্ষে বলে এবং তাদের দৃষ্টিতে কিছু দলীল দেয়ার অপচেষ্টা করে। এ বিষয়ে দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে বাধিক করবেন।
জাওয়াব: ক্বিল্লতে ইলম ও ক্বিল্লতে ফাহাম তথা কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে কিছু অসংখ্যক উলামায়ে সূ’ ১খানা আছার এবং ২খানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে বলেছেন, ‘ছোঁয়াচে বলতে কোনো রোগ নেই’ এ বিষয়টি অস্বীকার করতে চায় এবং ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ আছে বলে প্রমাণ করতে চায়। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!১) আছারটি হচ্ছে-
كَانَ فِي وَفْد ثَقِيف رَجُل مَجْذُوم فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاك فَارْجِعْ
অর্থ: “বনী সাক্বীফের প্রতিনিধ দলে একজন ব্যক্তি কুষ্ঠরোগী ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ ব্যক্তি উনার নিকট সংবাদ পাঠিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে বাই‘আত করে নিয়েছি। সুতরাং আপনি ফিরে যান।”
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দুইখানা হচ্ছেন-১ নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ-
(وَفِّرْ مِنْ الْمَجْذُوم فِرَارك مِنْ الْأَسَد)অর্থ: “সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।”
২ নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ-
(لَا يُورِد مُمْرِض عَلَى مُصِحّ)এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার অর্থ একেক জন একেকভাবে তুলে থাকে। যেমন-
* ‘অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির সামনে উপস্থিত করা যাবে না।’
* ‘চর্মরোগাক্রান্ত উটের মালিক যেন সুস্থ উটের পালে তার উট না নিয়ে যায়।’
উপরোক্ত আছারটি নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার বিপরীতে ইখতিলাফপূর্ণ আছার দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুষ্ঠরোগীকে বাইয়াত করানো থেকে দূরে থাকার বিষয়টি’ অর্থাৎ উপরোক্ত আছারটি খ-ন করে দিয়েছেন। আর উপরোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দুইখানা ছালছে ছালিহীনগণ প্রত্যাখান করেছেন। কেউ কেউ বানোয়াটও বলেছেন। আবার কাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকে মানসূখ বলেছেন। বিশেষ করে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে (وَفِّرْ مِنْ الْمَجْذُوم فِرَارك مِنْ الْأَسَد) এই হাদীছ শরীফখানা প্রত্যাখান করেছেন এবং তিনি বলেছেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কস্মিনকালেও এরূপ বলেননি। তাছাড়া উপরোক্ত আছার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দুইখানা উনাদের মাধ্যমে ‘ছোঁয়াচে রোগের অস্থিত্ব কস্মিনকালেও প্রমাণ হয় না। অন্যদিকে অনেক সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে কোনো রোগ নেই। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ দ্বারা কেউ কস্মিনকালেও প্রমাণ করতে পারবে না যে, ছোঁয়াচে বা সংক্রমাক রোগ আছে। আর যারা বলে থাকে, তারা মনগড়া ও বানিয়ে বলে থাকে এবং ইবলীসের মত ভিত্তিহীন যুক্তি প্রদান করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! যা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত ইসলামী মুবারক উনার দৃষ্টিতে কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয়।
মূলত, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ছোঁয়াচে বলতে কোনো রোগই নেই। কোনো রোগের কোনো ক্ষমতা নেই যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা ব্যতীত কারো উপর আক্রমণ করে। আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত জিন-ইনসান ও প্রাণী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের হায়াত-মাওত, বালা-মুছীবত, বিপদ-আপদ, রোগ-বালাই এবং রিযিক্বসমূহ সবকিছুই পূর্ব থেকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! আইয়্যামে জাহিলীয়াতের যুগে মুশরিকরা ছোঁয়াচে রোগ বিশ্বাস করতো।যেমন- এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَامَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : لاَ يُعْدِي شَيْءٌ شَيْئًا لاَ يُعْدِي شَيْءٌ شَيْئًا لاَ يُعْدِي شَيْءٌ شَيْئًا فَقَامَ أَعْرَابِيٌّ ، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ النُّقْبَةُ مِنَ الْجَرَبِ تَكُونُ بِمِشْفَرِ الْبَعِيرِ أَوْ بِذَنَبِهِ فِي الإِبِلِ الْعَظِيمَةِ فَتَجْرَبُ كُلُّهَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا أَجْرَبَ الأَوَّلَ لَا عَدْوٰى وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ خَلَقَ اللَّهُ كُلَّ نَفْسٍ فَكَتَبَ حَيَاتَهَا وَمُصِيبَاتِهَا وَرِزْقَهَا.অর্থ: “ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের সামনে দন্ডায়মান হয়ে ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন কিছু কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না। কোন কিছু কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না। কোন কিছু কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না (অর্থাৎ তিন বার বললেন)। তখন একজন বেদুঈন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) এক বিশাল উট পালের মধ্যে প্রথমে একটি উটের ঠোঁট বা চোয়ালে অথবা লেজে খুঁজলি-পাঁচড়ার সূচনা হলো। তারপর উক্ত বিশাল উট পালের সমস্ত উটগুলো খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হয়ে গেলো। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তাহলে প্রথম উটটিকে খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত করলো কে? ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছু নেই, পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং সম্মানিত ছফর শরীফ মাসে অশুভ বলতে কিছুই নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। তারপর তার হায়াত, তার বালা-মুছীবত, বিপদ-আপদ, রোগ-বালাইসমূহ এবং তার রিযিক্ব নির্ধারণ করে দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ১/৪৪০, হাদীছ ৪১৯৮, ত্বহাবী ২/৩৭৮ ইত্যাদি)
ওহাবীদের গুরু আলবানী তার ‘ছহীহুল জামিয়িছ ছগীর’-এ এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনাকে ছহীহ বলেছে। (ছহীহুল জামিয়িছ ছগীর ২/১২৭৮)
আর সে তার ‘সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ’-এ মধ্যে বলেছে,
وهذا إسناد صحيح على شرط مسلم،অর্থ: “এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার সনদ ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শর্ত অনুযায়ী ছহীহ।” (সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ ৩/১৪৩ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ১১৫২)
0 Comments:
Post a Comment