মক্কা-শরীফ এবং মদীনা শরীফে ঈদে মিলাদুননবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন।
- মক্কাবাসীদের মিলাদ পালন -
ইমাম শামসুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি সূত্রে মোল্লা আলী ক্বা্রী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মক্কা বাসীরা অধিকতর মঙ্গল ও বরকতের অধিকারী।এই পবিত্র নগরীর দিকে মুসলিম মিল্লাত অতি আগ্রহের মাধ্যমে অগ্রসর হও্য়ার চেষ্টা করে।এটার কারন এই যে,এখানে হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মৌলুদ শরীফ(পবিত্র জন্মস্থান) বিদ্যমান।এ পবিত্র জন্মস্থানটি তৎকালীন ‘সুকুল লাইল’নামে খ্যাত ছিল।যা বর্তমানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের পূর্ব পাশে ‘মাকতবা আল মক্কা আল মুকাররমা’ নামে দালান হিসেবে অবস্থিত।
উক্ত পবিত্র স্থানে লোকেরা দলে দলে অতি আগ্রহের সাথে মনোবাসনা নিয়ে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন করতেন।বিশেষ করে ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফে ঈদে মিলাদুন্নাবী’র দিনে অনেক গুরুত্বসহকারে লোকজন মাহফিলের আয়োজন করতেন।ধনী-গরীব,আমীর-প্রজা সকলেই এতে অংশগ্রহন করতেন। তৎকালীন মক্কা নগরীর কাযী এবং প্রখ্যাত আলেম আল বুরহানী আশ-শাফেয়ী যিয়ারতকারী ও ঈদে মিলাদুন্নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলে অংশগ্রহনকারীদেরকে তাবাররুক বা খানা খাওয়ানোর ব্যাবস্থা করতেন।আর ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে হেযাযের আমীর তাঁর বাসভবনে হেযাযের নাগরীকদের জন্য ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে বিশাল খাবারের আয়োজন করতেন এবং এই নিয়ত করতেন যে,এই মিলাদে পাকের দ্বা্রা তাঁর অনেক মুসিবত দূরীভূত হবে।তাঁর পরবর্তীতে তাঁর উত্তরসূরী পূত্র “আল-জমালী” এই মাহফিলের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন।"
- দুই.‘মাহনামা তরিক্বত’ লাহোর পত্রিকায় মক্কা শরীফে জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বর্ণনাঃ-
১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসে ‘মাহনামা তরিক্বত’ লাহোর পত্রিকার রিপোর্টের মধ্যে মক্কা শরীফের জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের বর্ণনা এভাবে দেন যে, “হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শুভাগমন দিবসে মক্কা শরীফের মধ্যে বড় ধরনের আনন্দ উৎসব পালন করা হয়।ঐ দিবসকে ‘ঈদে ইয়াওমে বেলাদতে রাসূল’ বলা হয়।ঐ দিন চারিদিকে পতাকা উড়তে থাকে।হেরেম শরীফের গভর্ণর এবং হেযাযের কমান্ডারসহ আরো অন্যান্য কর্মকর্তাগণ আভিজাত্য পোশাক পরিধান করে মাহফিলে উপস্থিত হতেন এবং হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘পবিত্র জন্মস্থানে’-এ গিয়ে কিছুক্ষন নাত-গজল পরিবেশন শেষে ফিরে যেতেন।হেরেম শরীফ থেকে ‘মৌলিদুন্নবী’(পবিত্র জন্মস্থান) পর্যন্ত দুই সাড়িতে আলোকসজ্জা করা হত।ঐ মৌলিদ শরীফের স্থান নূরের আলোর ভূমিতে পরিণত হত এবং মৌলিদ শরীফের স্থানে সু-কন্ঠে প্রিয় নবীর মিলাদ পালন করত।এ অবস্থায় রাত দুইটা পর্যন্ত মিলাদখানী,নাত এবং বিভিন্ন খত্ম পড়ত।দলে দলে লোকজন এসে নাত পরিবেশন করত।১১ রবিউল আউয়াল শরীফের মাগরীব হতে ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফের আসর পর্যন্ত ২১ টি তোপধ্বনি করা হত।মক্কা শরীফের ঘরে ঘরে মিলাদুন্নাবী উপলক্ষে খুশি আনন্দ এমনকি স্থানে স্থানে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হত।”
- মদিনাবাসীর মিলাদ পালনঃ-
মক্কাবাসীদের ন্যায় মদীনা পাকের অধিবাসীরাও ঈদে মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের আয়োজন করতেন।
- হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজের মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক মিলাদ পালন-
দেওবন্দীদের পীর-মুর্শিদ হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজের মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমাদের ওলামা মৌলুদ শরীফ সম্পর্কে অনেক বিতর্ক শুরু করে দিয়েছেন।এর পরেও ওলামায়ে কেরামের এ কাজ(মিলাদুন্নাবী পালন)বৈধ হবার পক্ষে মত দিয়েছেন।যখন বৈধ হওয়ার কথা আছে,কেন এ (দেওবন্দী,তাবলীগী) আলেমরা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।আমাদের হেরেমাইন (মক্কা ও মদিনা শরীফ)এর অনুসরন যথেষ্ট।
তিনি আরো বলেন,দুই হেরেমের অধিবাসীরা যে মিলাদ শরীফ পালন করেন তা আমাদের জন্য দলীল হবার ব্যাপারে যথেষ্ট।
তিনি আরো বলেন, “ফকীরের(নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেন) মাযহাব হল মিলাদুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাহফিলে অংশগ্রহন করা।শুধু তাই নয় বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে আমি প্রতি বছর তা অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে পালন করি এবং সালাত-সালামের সময় কিয়ামের মধ্যে অনেক রুহানী স্বাদ পেতে থাকি।”
- হযরত আব্দুল হক দেহলভীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক মিলাদ পালন
পাক ভারতে হাদীস চর্চার অন্যতম মুহাদ্দীস হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ’ এর ৮২ পৃষ্ঠার মধ্যে জশনে ঈদে মিলাদুন্নাবী এর পালন বৈধতা ও উপকারীতার অনেক দলীল ও প্রমাণ প্রদান করেছে।শেখ দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যিনি পাক ভারত উপমহাদেশে সুন্নী নয় শুধু ,দেওবন্দীদের নিকট গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিত্ব।তাঁর সম্পর্কে দেওবন্দীদের বুযূর্গ আশ্রাফ আলী থানভী বর্ণনা করেন, “শাহ আব্দুল হক দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রত্যেক দিন নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর দিদার লাভে ধন্য হতেন।”
সূত্র সমূহঃ
*আল মওরেদুর রবী ১৫ পৃষ্ঠা কৃত মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
*শামায়েলে এমদাদিয়া ৮৭,৮৮,৯৪ পৃষ্ঠা কৃত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী।
*ফয়সালা-এ হাফত মাসায়েল ৯ পৃষ্ঠা কৃত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী।
*শেফাউল সায়েল কৃত শাহ আব্দুল গনি দেহলভী।
*হাওলুল ইহতেফাল বেযিকরা আল মৌলেদিন নববী আল-শরীফ কৃ শেখ মুহাম্মদ আলভী মালেকী মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি(ইন্তেকাল ১৪২৫হিজরী২০০৪ইংরেজী)
0 Comments:
Post a Comment