শবে মিরাজের ছুটি বাধ্যতামূলক করা হোক
আর কয়েকদিন পর শবে মেরাজ। বাংলাদেশে অনেক উপলক্ষে বাধ্যতামূলক ছুটি থাকলেও শবে মিরাজ উপলক্ষে ছুটি বাধ্যতামূলক নয়, বরং ঐচ্ছিক। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশ বাংলাদেশে এটা সত্যিই একটি আশ্চর্যজনক বিষয়।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি দেয়া হয় শবে বরাত, শবে ক্বদর, আশুরা শরীফে। কিন্তু দিবস গুরুত্বের বিবেচনায় শবে মেরাজের গুরুত্ব শবে বরাত, শবে ক্বদর ও আশুরা শরীফ থেকে অনেক অনেক উপরে। শবে বরাতে দুয়া কবুল হয়, মানুষের ১ বছরের ভাগ্য গঠিত হয়। শবে ক্বদরে পবিত্র কুরআন শরীফ নাজিল হয়।
আশুরা শরীফে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে এবং কেয়ামত সংগঠিত হবে। কিন্তু শবে মেরাজ এমন একটি উপলক্ষ,
যখন স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সমস্ত সৃষ্টির মূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ মুবারক হয়। সুবহানাল্লাহ। সৃষ্টিকর্তা ও উনার হাবীবের সাক্ষাতের সাথে কি অন্য বিষয়ের তুলনা চলে?
আবার অন্যভাবে যদি চিন্তা করি, বাংলাদেশের মানুষ আর যাই করুক ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করে। অফিস-আদালতে গেলে দেখবেন, সবাই নামাজের সময় ঠিকই নামাজ আদায়ের চেষ্টা করেন। সব কাজ ফেলে সর্বত্র নামাজ আদায়ের জন্য সময় নেন। কিন্তু সেই নামাজ যে উপলক্ষে আসলো, মানে শবে মেরাজ,
সেই দিবস পালনে কেন এত অনিহা? কেন সেটা ঐচ্ছিক হবে? নামাজকে যদি আপনি গুরুত্ব দেন, তবে যে উপলক্ষে সেই নামাজ আসলো, সেই উপলক্ষেও অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। একটা বিষয়কে গুরুত্ব না দিলেই তো সেটাকে ঐচ্ছিক করা হয়, তাই নয় কি?
এ ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে শক্ত দাবী তোলা উচিত, শবে মিরাজ শরীফের ছুটি বাধ্যতামূলক করার জন্য। ঐচ্ছিক ছুটি দিয়ে এ পবিত্র দিবসটির অবজ্ঞা বা মানহানী করা হচ্ছে- এটা কখনই মেনে নেয়া যায় না। উল্লেখ্য, গত বছর থেকে কুয়েত ও ওমান শবে মিরাজ উপলক্ষে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি।
একটি বিষয় আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে। ইসলামী দিবসগুলোকে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে এবং সকলকে সঠিকভাবে তা পালনের সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ ইসলামী দিবসগুলো পালনের মধ্য দিয়ে ইসলামী সংস্কৃতি বা তাহজীব তামাদ্দুনের প্রচার-প্রসার ঘটে, নতুন প্রজন্ম বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারে। আজকে মুসলমানরা ইসলামী দিবসগুলো পালনকে গুরুত্ব দেয় না, প্রায় অনিহা দেখায়। এতে ইসলামী সংস্কৃতি বা তাহজীব-তামাদ্দুনের প্রচারও নেই বললেই চলে। ইসলামী দিবস না থাকায় তরুণ প্রজন্ম বিজাতীয় দিবস পালনের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং সেগুলো পালন করে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হচ্ছে। থার্টি ফাস্ট নাইট, সাকরাইন, ভ্যালেন্টাইন ডে, কিস ডে, হ্যাগ ডে, হ্যালোইন, টেডি ডে অমুক তমুক বিজাতীয় ও নোংরা দিবসকে কেন্দ্র করে তারা একত্রিত হচ্ছে এবং বিজাতীয় সংস্কৃতি নাচ-গান-ডিজে, মদ খাওয়া ইয়াবা খাওয়াতে অভ্যস্ত হচ্ছে। এসব বিজাতীয় কালচারে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আদৌ মুসলমান থাকবে কি না, সেটা নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠায় পড়ে গেছি। এর মূল কারণ হলো ইসলামী দিবস ও সংস্কৃতিকে আমরা পালন করি নাই, প্রচার করি নাই। আর সেই শূণ্যস্থানের সুযোগে প্রবেশ করেছে বিজাতীয় দিবস ও সংস্কৃতি।
তাই আসুন প্রতিটি ইসলামী দিবস আর আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও শান-শওকতের সাথে পালন করি।
0 Comments:
Post a Comment