“উছূলুল্ আছার” কিতাবে উল্লেখ আছে, “শরীয়তের বিধান প্রতিষ্ঠায় গ্রহণীয় ও প্রমাণযোগ্য আহাদ হাদীছ শরীফ সমূহ চার প্রকার। যথা -
(ক) صَحِيْحُ لِذَاتِهِ (ছহীহ লিযাতিহী)
(খ) حَسَنُ لِذَتِهِ (হাসান লিযাতিহী)
(গ) صَحِيْحُ لِغَيْرِهِ (ছহীহ লিগাইরিহী)
(ঘ) حَسَنُ لِغَيْرِهِ (হাসান লিগাইরিহী)।”
(ক) صَحِيْحُ لِذَاتِهِ (ছহীহ লিযাতিহী) : এটা খবরে ওয়াহিদের এমন এক প্রকার হাদীছ শরীফ যার রাবী বা হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ধারাবাহিকভাবে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত পৌঁছেছে। যার রাবী পূর্ণ যব্ত বা প্রখর স্মরণশক্তি সম্পন্ন এবং ন্যায় পরায়ন। مُعَلَّلٌ (মুয়াল্লাল) তথা কোন গোপন দোষত্রুটি থেকে মুক্ত এবং شَاذٌ (শায) তথা অন্য রাবীর বিশুদ্ধ বর্ণনার বিপরীত বর্ণনা থেকে মুক্ত। যেমন,
حَدَّثَنَا حَضَرَتْ اِلْحُمَيْدِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَدَّثََنَا ....... اِنَّمَا اَلْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ.......
অর্থ : “হযরত হুমাইদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, (হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,) নিশ্চয়ই কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (বুখারী, মিশকাত )
(খ) حَسَنُ لِذَتِهِ (হাসান লিযাতিহী) : যদি বর্ণনাকারীর শুধুমাত্র যবত তথা স্বরণশক্তি কম থাকে, তাহলে তাকে হাসান লিযাতিহী বলে। যথা-
عَنْ حَضَرَتْ سُفْيَانَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضَرَتْ عَبْدِ اللهِ ابْنِ عَقِيْلٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضَرَتْ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَنَفِيَّةِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضَرَتْ عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مِفْتَاحُ الصَّلَوةِ الطُّهُوْرُ ........
অর্থ : “হযরত ছূফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আক্বীল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে হানাফিয়্যা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘নামাযের চাবি হচ্ছে পবিত্রতা।’ (তিরমিযী শরীফ)
এ হাদীছ শরীফ-এর রাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আক্বীল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সব গুণাবলী ছিল তবে স্মরণ শক্তি কিছুটা কম ছিল।
(গ) صَحِيْحُ لِغَيْرِهِ (ছহীহ লিগাইরিহী) : এটা হাসান লিযাতিহী হাদীছ শরীফ-এর অনুরূপ। ছহীহ হাদীছ শরীফ-এর কোন রাবীর মধ্যে স্মরণ শক্তি কিছুটা কম থাকে। তবে সেই অভাব বা ত্রুটিটুকু অন্যান্য উপায়ে এবং অধিক রিওয়ায়েত দ্বারা পুরণ হয়ে যায়। মোট কথা, উহার সমর্থনে বহু রিওয়ায়েত বর্ণিত থাকায় তার ত্রুটির ক্ষতিপুরণ হয়ে গেছে। এরূপ হাদীছ শরীফকে ছহীহ লিগাইরিহী।
(ঘ) حَسَنُ لِغَيْرِهِ (হাসান লিগাইরিহী) : এটা ঐ দ্বঈফ হাদীছ শরীফকে বলে যে হাদীছ শরীফ বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হওয়াতে বর্জনের স্তর অতিক্রম করে দলীল হিসাবে গ্রহণের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। মূলতঃ কোন হাদীছ শরীফকে দ্বঈফ বলা যাবে না। কোন হাদীছ শরীফ-ই দ্বঈফ নহে। বরং রাবীর গুনাগুণের কারণেই এভাবে নামকরণ করা হয়েছে। দ্বঈফ বলতে দ্বঈফুস্ সনদকেই বুঝায়।
এছাড়াও আরো অনেক প্রকারের হাদীছ শরীফ রয়েছে। যেমন,
১) مُتَّصِلٌ (মুত্তাছিল) : যে হাদীছ শরীফ-এর সনদের মধ্যে কোন স্তরের কোন রাবী বাদ পড়েননি। অর্থাৎ সকল স্তরের সকল রাবীর নামই যথাস্থানে উল্লেখ রয়েছে তাকে হাদীছে মুত্তাসিল বলে। আর এ বাদ না পড়াকে বলা হয় ইত্তিসাল।
২) مُنْقَطِعٌ (মুনকাতে) : যে হাদীছ শরীফ-এর সনদের মধ্যে কোন স্তরের কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে হাদীছে মুনকাতে বলে। আর এ বাদ পড়াকে বলা হয় ইনকিতা। এ হাদীছ শরীফ প্রধানত দুই প্রকার মুরসাল ও মুয়াল্লাক।
ক) مُرْسَلٌ (মুরসাল) : যে হাদীছ শরীফে সনদের ইনকিতা শেষের দিকে হয়েছে অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারকই বাদ পড়েছে এবং স্বয়ং তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক করে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীছে মুরসাল বলে। (ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মধ্যে কেবল হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাই এটাকে নিঃসঙ্কোচে গ্রহণ করেছেন। উনাদের মতে তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শুধু তখনই ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারক বাদ দিয়ে সরাসরি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন যখন এটা উনার নিকট নিঃসন্দেহে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ বলে সাব্যস্ত হয়েছে।
খ) مُعَلَّقٌ (মুয়াল্লাক্ব) : যে হাদীছ শরীফ-এর সনদের ইনকিতা প্রথম দিকে হয়েছে অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পর এক বা একাধিক নাম বাদ পড়েছে তাকে ‘মুয়াল্লাক’ বলে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কোন কোন গ্রন্থকার কোন কোন হাদীছ শরীফ-এর পূর্ণ সনদকে বাদ দিয়ে কেবল মূল হাদীছ শরীফটিকেই বর্ণনা করেছেন। এরূপ করাকে তা’লীক বলে। কখনও কখনও তা’লীক রূপে বর্ণিত হাদীছ শরীফকেও তা’লীক বলে। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে এরূপ বহু তা’লীক রয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমস্ত তা’লীকেরই মুত্তাসিল সনদ রয়েছে। অপর সংকলনকারী উনারা এই সমস্ত তা’লীক মুত্তাসিল সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন।
৩) مُدَلَّسٌ (মুদাল্লাস) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবী নিজের প্রকৃত শায়খ (উস্তাদ) উনার নাম না করে উনার উপরস্থ শায়খ উনার নামে এভাবে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন যাতে মনে হয় যে, তিনি নিজেই এটা উপরস্থ শায়খ উনার নিকট শুনেছেন অথচ তিনি নিজে এটা শুনেননি, (বরং উনার প্রকৃত উস্তাদ উনার নিকটই এটা শুনেছেন) সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুদাল্লাস বলে। এরূপ করাকে তাদলীস বলে। আর যিনি এরূপ করেছেন উনাকে মুদাল্লিস বলে। মুদাল্লিসের হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়। যে পর্যন্ত না তিনি একমাত্র ছিকাহ রাবী হতেই তাদ্লীস করেন বলে সাব্যস্ত হয় অথবা তিনি এটা আপন শায়খ উনার নিকট শুনেছেন বলে পরিস্কারভাবে বলে দেন।
৪) مُضْطَرَبٌ (মুদ্বতারাব) : যে হাদীছ শরীফ-এর মতন বা সনদকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকারে গোলমাল করে বর্ণনা করেছেন। সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুদ্বতারাব বলে। যে পর্যন্ত না এটার কোনরূপ সমন্বয় সাধন সম্ভবপর হয় সে পর্যন্ত এটা সম্পর্কে তাওয়াক্কুফ (অপেক্ষা) করতে হবে। (অর্থাৎ এটাকে দলীল তথা প্রমাণে ব্যবহার করা চলবে না।)
৫) مُدْرَجٌ (মুদরাজ) : যে হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে রাবী উনার নিজের অথবা অপর কারো উক্তি ভ্রুক্ষেপ করেছেন সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুদ্রাজ বলে এবং এরূপ করাকে ইদ্রাজ বলে। ইদ্রাজ হারাম- যদি না এটা কোন শব্দ বা বাক্যের অর্থ প্রকাশার্থে হয় এবং মুদ্রাজ বলে সহজে বুঝা যায়।
৬) مُسْنَدٌ (মুসনাদ) : যে মারফূ’ হাদীছ শরীফ-এর কারো মতে যে কোন রকম হাদীছ শরীফ-এর সনদ সম্পূর্ণ মুত্তাসিল সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুসনাদ বলে।
৭) مَحْفُوْظٌ وَ شَاذٌ (মাহফুয ও শায) : কোন ছিক্বাহ রাবী উনার হাদীছ শরীফ অপর কোন ছিক্বাহ রাবী বা রাবীগণ উনাদের হাদীছ শরীফ-এর বিরোধি হলে যে হাদীছ শরীফ-এর রাবীর যব্ত গুণ অধিক বা অপর কোন সূত্র দ্বারা যার হাদীছ শরীফ-এর সমর্থন পাওয়া অথবা যার হাদীছ শরীফ-এর শ্রেষ্ঠত্ব অপর কোন কারণে প্রতিপাদিত হয় উনার হাদীছ শরীফটিকে হাদীছে মাহফুয এবং অপর রাবীর হাদীছটিকে হাদীছে শায বলে এবং এরূপ হওয়াকে শুযূয বলে। হাদীছ শরীফ-এর পক্ষে শুযূয একটি মারাত্মক দোষ। শায হাদীছ শরীফ ছহীহ্রূপে গণ্য নয়।
৮) مَعْرُوْفٌ وَ مُنْكَرٌ (মা’রূফ ও মুনকার) : কোন দ্বঈফ রাবীর হাদীছ শরীফ অপর কোন দ্বঈফ রাবীর হাদীছ শরীফ-এর বিরোধি হলে অপেক্ষাকৃত কম দ্বঈফ রাবীর হাদীছ শরীফকে হাদীছে মা’রূফ এবং অপর রাবীর হাদীছ শরীফটিকে হাদীছে মুনকার বলে এবং এরূপ হওয়াকে নাকারাৎ বলে। নাকারাৎ হাদীছ শরীফ-এর পক্ষে একটা বড় দোষ।
৯) مُعَلَّلٌ (মুয়াল্লাল) : যে হাদীছ শরীফ-এর সনদে এমন কোন সূক্ষ্ম ত্রুটি রয়েছে যাকে কোন বড় হাদীছ শরীফ বিশেষজ্ঞ ব্যতীত ধরতে পারেন না, সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুয়াল্লাল বলে। আর এরূপ ত্রুটিকে ইল্লত বলে। ইল্লত হাদীছের পক্ষে একটা মারাত্মক দোষ। মুয়াল্লাল হাদীছ ছহীহ্ হতে পারে না।
১০) مُطَابِعٌ وَ شَاهِدٌ (মুতাবি’ ও শাহিদ) : এক রাবীর হাদীছ শরীফ-এর অনুরূপ যদি অপর রাবীর কোন হাদীছ শরীফ পাওয়া যায় তাহলে এই দ্বিতীয় রাবীর হাদীছটিকে প্রথম রাবীর হাদীছ শরীফটির মুতাবি বলে, যদি উভয় হাদীছের মূল রাবী (অর্থাৎ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) একই ব্যক্তি হন। আর এরূপ হওয়াকে মুতাবায়াত বলে। যদি মূল রাবী একই ব্যক্তি না হন, তবে দ্বিতীয় ব্যক্তির হাদীছ শরীফকে প্রথম ব্যক্তির হাদীছ শরীফ-এর শাহেদ বলে। আর এরূপ হওয়াকে শাহাদত বলে। মুতাবায়াত ও শাহাদত দ্বারা প্রথম হাদীছ শরীফটির শক্তি বৃদ্ধি পায়।
১১) صَحِيْحٌ (ছহীহ্) : যে মুত্তাসিল হাদীছ শরীফ-এর সনদের প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যব্ত গুণসম্পন্ন এবং হাদীছ শরীফটি শুযুয ও ইল্লত হতে দোষমুক্ত সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে ছহীহ্ বলে। (অর্থাৎ যে হাদীছ শরীফটি মুনকাতে নয় মু’দাল নয়, মুয়াল্লাক নয়, মুদাল্লাস নয়, কারো কারো মতে মুরসাল’ও নয়, মুবহাম অথবা প্রসিদ্ধ দ্বঈফ রাবীর হাদীছ শরীফ নয়, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার দরুণ অনেক ভুল করেন এমন মুগাফ্ফার বারীর হাদীছ শরীফ নয় এবং হাদীছ শরীফটি শায্ ও মুয়াল্লাল’ও নয়- একমাত্র সে হাদীছ শরীফকেই হাদীছে ছহীহ্ বলে।)
১২) حَسَنٌ (হাসান) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবীর যব্ত গুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে হাসান বলে। (ফক্বীহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সাধারণত এই দুই প্রকার হাদীছ হতেই আইন প্রণয়ণে সাহায্য গ্রহণ করেন।)
১৩) ضَعِيْفٌ (দ্বঈফ) : যে হাদীছ শরীফ-এর দ্বারা কোন রাবী হাসান হাদীছ শরীফ-এর রাবীর গুণসম্পন্ন নয় সে হাদীছ শরীফকে হাদীছে দ্বঈফ বলে। (রাবীর দ্বু’ফ বা দুর্বলতার কারণেই হাদীছ শরীফটিকে দ্বঈফ বলা হয়, অন্যথায় (নাউযুবিল্লাহ) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন কথাই দ্বঈফ নয়। দ্বঈফ হাদীছের দ্বু’ফ কম ও বেশী হতে পারে। খুব কম হলে এটা হাসানের নিকটবর্তী থাকে। আর বেশী হতে হতে এটা একাবারে মাওদুউ’তেও পরিণত হতে পারে। প্রথম পর্যায়ের দ্বঈফ হাদীছ শরীফ আমলের ফযীলত বা আইনের উপকারিতার বর্ণনায় ব্যবহার করা যেতে পারে, আইন প্রণয়নে নয়।)
১৪) مَوْضُوْعٌ (মাওদুউ’) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবী জীবনে কখনও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে ইচ্ছা করে কোন মিথ্যা কথা রচনা করেছে বলে সাব্যস্ত হয়েছে- তার হাদীছ শরীফকে হাদীছে মাওদুউ’ বলে। এরূপ ব্যক্তির কোন হাদীছ শরীফই কখনও গ্রহণযোগ্য নয়- যদিও তিনি অতঃপর খালিছ তওবা করেন।
১৫) مَتْرُوْكٌ (মাতরূক) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবী হাদীছের ব্যাপারে নয়, বরং সাধারণ কাজ-কারবারে মিথ্যা কথা বলেন বলে খ্যাত হয়েছেন- তার হাদীছ শরীফকে হাদীছে মাত্রূক বলে। এরূপ ব্যক্তিরও সমস্ত হাদীছ পরিত্যাজ্য। অবশ্য তিনি যদি পরে খালিছ তওবা করেন এবং মিথ্যা পরিত্যাগ ও সত্য অবলম্বনের লক্ষণ উনার কাজ-কারবারে প্রকাশ পায়, তা হলে তার পরবর্তীকালের হাদীছ শরীফ গ্রহণ করা যেতে পারে।
১৬) مُبْهَمٌ (মুবহাম) : যে হাদীছ শরীফ-এর রাবীর উত্তমরূপে পরিচয় পাওয়া যায়নি- যাতে উনার দোষ-গুণ বিচার করা যেতে পারে, উনার হাদীছ শরীফকে হাদীছে মুবহাম বলে। এরূপ ব্যক্তি ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু না হলে উনার হাদীছ গ্রহণ করা যায় না।
১৭) مُحْكَمٌ (মুহকাম) : কোন হাদীছ শরীফ বিপরীতার্থক অপর কোন হাদীছ শরীফ থেকে নিরাপদ হলে তাকে মুহকাম হাদীছ শরীফ বলে। এরূপ বিপরীত অর্থ বোধক অবস্থায় উভয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব না হলে এটাকে مُخْتَلِفُ الْحَدِيْثِ “মুখতালিফুল হাদীছ শরীফ” বলে।
১৮) نَاسِخٌ - مَنْسُوْخٌ (নাসেখ-মানসূখ) : পরস্পর বিপরীতমুখী দু’টি হাদীছ শরীফকে কোনভাবেই যখন সমন্বয় সাধন সম্ভব না হয় এবং একটিকে পূর্বের ও অপরটিকে পরের বলে জানা যায় তখন পরেরটিকে নাসেখ বলে। আর পূর্বের বর্ণনাকে মানসূখ বলে। আর নাসেখ ও মানসূখ-এর হুকুম বা বিধান হলো নাসেখ-এর উপর আমল করা আবশ্যক তথা ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর মানসূখ হাদীছ যার উপর আমল করা বৈধ নয়। এ প্রসঙ্গে “বুখারী শরীফ”-এ উল্লেখ আছে,
عَنْ حَضَرَتْ اَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَنَتَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَهْرًا يَدْعُوْ عَلى رِعْلٍ وَذَكْوَانَ
অর্থ : “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন যে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রিল ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের প্রতি বদ্ দোয়ায় একমাস ফজরের নামাযে কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।”
এ হাদীছ শরীফ খানা নিম্নে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা মানসূখ হয়ে যায়। । যেমন, “মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عَنْ حَضَرَتْ اَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ اِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَنَتَ شَهْرًا ثُمَّ تَرَكَ
অর্থ : “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুনূতে নাযেলা কেবলমাত্র একমাস পড়েছিলেন। অতঃপর ঐ কুনূতে নাযেলা পাঠ করা পরিত্যাগ করেছেন” বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর প্রথম অংশ অর্থাৎ ‘এক মাস কুনূতে নাযেলা পাঠ করেছেন।’ এটা হলো মানসূখ। আর দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ ‘অতঃপর তা পরিত্যাগ করেছেন।’ এটা হলো নাসেখ।
0 Comments:
Post a Comment