নেতা/ইমাম, নিয়ামতওয়ালা ও কাফির – কিছু প্রশ্ন ও করণীয় !

নেতা/ইমাম, নিয়ামতওয়ালা ও কাফির – কিছু প্রশ্ন ও করণীয় !



মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,‌ “যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ আহবান করব” (সূরা বনী ইসরাঈল-৭১)
“যে ব্যক্তি আমার দিকে রুজু হয়েছেন উনাকে অনুসরণ করো।” [পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফঃ পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫]
“হে ঈমানদারগণ তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়ার জন্য উসীলা তলব করো তথা মধ্যস্থতা অবলম্বন করো।”
“আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।” ( পবিত্র সূরা ফাতিহা, ৬-৭)
“আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম।” [সূরা আন-নিসা শরীফের ৬৯ নম্বর আয়াত]
“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিনীন বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটবর্তী।” (পবিত্র সূরা আরাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
“জেনে রাখ! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার যাঁরা ওলী উনাদের কোনো ভয় নেই এবং কোনো চিন্তা বা পেরেশানীও নেই। উনারাই হচ্ছেন প্রকৃত ঈমানদার এবং প্রকৃত মুত্তাক্বী। উনাদের জন্যেই রয়েছে সুসংবাদ পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও। মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম বা কথা মুবারকসমূহের কোনো পরিবর্তন হয় না। ইহা হচ্ছে ওয়ালিয়্যুল্লাহ উনাদের জন্য বিরাট সফলতা।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২, ৬৩, ৬৪)
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,“আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত ৭২টি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! যে একটি দল নাযাত প্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথের উপর যারা কায়েম থাকবে, (তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ)
হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, ৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর ১টি দল জান্নাতে যাবে। (আবূ দাউদ, মসনদে আহমদ,মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)
** নেতা/ইমাম কি :
———————————–
=> পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী চলেন ?
=> সুন্নত মুবারক উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করেন ?
=> সেই মোতাবেক/অনুযায়ী আমাদের কে গাইড করেন ?
=> আল্লাহ পাক উনার রহমতের নিকটবর্তী ?
** নেতা/ইমাম কোন দলের অন্তর্ভূক্ত ? তিনি কোন আক্বিদায় বিশ্বাসী ?
** উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ গুলো খেকে কি খুজে পাই ?
আমরা কি নেতার নিকট পরিপূর্ণভাবে ঈমান-আক্বীদা-ইখলাছ, আমল ও আখলাক সম্পর্কে জানতে পারবো, অর্জন করতে পারবো, গ্রহণ করতে পারবো, বাস্তবে প্রতিপালন করতে পারবো,পরিশুদ্ধ করতে পারবো ?
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উলিল আমর উনাদেরকে ইতায়াত :
———————————————————————–
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “যদি তোমরা মু’মিন-মুসলমান হয়ে থাকো তাহলে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে অনুসরণ করো।” (সূরা আনফাল : আয়াত শরীফ-১)
“হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো বা পালন করো এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর : আয়াত শরীফ ৭)
“যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করলো প্রকৃতপক্ষে সে মহান আল্লাহ পাক উনারই অনুসরণ করলো।” (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ-৮০)
“যদি তোমরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করো তবেই তোমরা হিদায়েত লাভ করবে।” (সূরা আন নূর : আয়াত শরীফ-৫৪)
“হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করো: অবশ্যই তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে।” (সূরা আন নূর : আয়াত শরীফ-৫৬)
“(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভালবেসে বা মুহব্বত করে থাক, তবে আমাকে (সুন্নতকে) অনুসরণ করো। তবেই আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন ও তোমাদের গুনাহখাতাসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।”
(সূরা ইমরান-৩১)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- ” যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহব্বত (অনুসরণ) করলো, সে ব্যক্তি আমাকেই মুহব্বত (অনুসরণ) করলো।” (মিশকাত, মেরকাত)
“তোমরা ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিকদের সাথে কখনও সদৃশ্য রেখো না। যে ব্যক্তি তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (পবিত্র মিশকাত শরীফ)
“কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, আমি যা এনেছি তার আনুগত্য বা অনুসরণ না করবে।” (শরহুস সুন্নাহ, মিশকাত)
“আল্লাহ পাক- উনার ইতায়াত কর এবং রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার ইতায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর তাঁদের ইতায়াত কর।” (সূরা আন নিসা : আয়াত শরীফ ৫৯)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও।” (সূরা তওবাঃ আয়াত শরীফ-১১৯)
“যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহলঃ আয়াত শরীফ- ৪৩ ও সূরা আম্বিয়াঃ আয়াত শরীফ-৭)
আল্লাহওয়ালাদের সাহচার্য লাভের ফযীলত সম্পর্কে মাওলানা হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- “কিছু সময় আল্লাহওয়ালা উনাদের সাহচার্যে (ছোহবতে) থাকা, একশত বৎসরের রিয়াহীন নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।” তিনি আরো বলেন- “যদি তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে বসতে চাও, তবে আল্লাহওয়ালা উনাদের সাথে বস।”
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক বলেন, যে ব্যাক্তি আমার ওলীর বিরোধিতা করে আমি তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করি।” [বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ]
“নিশ্চয়ই আমার ওলীগণ উনারা আমার কুদরতী জুব্বা মুবারক উনার নিচে অবস্থান করে থাকেন। আমি ব্যতীত এবং আমার ওলীগণ ব্যতীত উনাদেরকে কেউই চিনে না।” (রাহাতুল মুহিব্বীন)
“মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদেরকে তোমরা মুহব্বত করো; কেননা উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কবুলকৃত, আর উনাদের বিদ্বেষ বা শত্রুতা পোষণ করো না; কেননা উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত।” (কানযুল উম্মাল শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় উনাদের রবকে ডাকে উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক, উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বলবী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহ্বত (সাক্ষাত) এখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (সূরা কাহাফঃ আয়াত শরীফ- ২৮)
“যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ”।
“সাবধান! মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির দ্বারা দিল ইতমিনান হয়”. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবের উপর বসে, যখন আল্লাহ পাক উনার যিকির করে তখন পালিয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান ওসওয়াসা দেয়”।
সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে, “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান”। (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)
“তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছ, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)
=> ইলম অর্জন করা ফরজ।
হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহী তিনি বর্ননা করেন, “ইলম দু’প্রকার।
-একটি হচ্ছে ক্বলবী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ (যা দ্বারা আত্নিক শুদ্ধি অর্জন করা যায়).
-অপরটি হচ্ছে যবানী ইলম বা ইলমে ফিক্বাহ (যা দালীলীক জ্ঞান)।
[দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, লুময়াত শরীফ]
মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার রঈছুল মুহাদ্দিছীন হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহী তিনি তিনি “মিরকাত শরীফ” এ উল্লেখ করেন,”মালিকী মাজহাবের ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ হযরত ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহী বলেন, যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো অথচ ইলমে ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইলমে ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো অথচ ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো না, সে কাফির। আর যে উভয়টাই অর্জন করলো, সে মুহাক্কিক।”
——————————-
** নেতা/ইমাম কি আল্লাহওয়ালা ও তিনি কি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ ও অনুকরন করেন সদা-সর্বদা ? তিনি কি ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিকদের সাথে সদৃশ্য রাখেন ?
** নেতা/ইমাম কি ইলমে তাছাউফ ও ইলমে ফিক্বাহ সম্বন্ধে ভালো জানেন ?
——————————————–
কাফির :
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, কাফির-মুশরিকরা হচ্ছে মুসলমান উনাদের শত্রু।
যেমন, ‘পবিত্র সূরা কাফিরূন শরীফ’ উনার শেষ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাবৎ কাফির-মুশরিকগোষ্ঠীকে বলে দিন যে, তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য আর আমাদের দ্বীন আমাদের জন্য।”
‘পবিত্র সূরা মুমতাহিনা শরীফ’ উনার প্রথম আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না।”
‘পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ’ উনার ৮২ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে অতঃপর মুশরিকদেরকে।”
“মুমিনরা মু’মিন ব্যতীত কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না। যে এরূপ করবে তার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো সম্পর্ক নেই।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রাণীকুলের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হচ্ছে তারাই, যারা কাফির-মুশরিক। অতএব, তারা এমন যে, যারা ঈমানদার নয়। (পবিত্র সূরা আনফাল : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)
“হে মু’মিনগণ! আপনারা আপনাদের আপনজন ব্যতীত কাউকেও (অন্য ধর্মাবলম্বী) অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করবেন না। (কেননা) এই কাফির-মুশরিকরা আপনাদের অনিষ্ট করতে (মোটেও) ত্রুটি করে না। তারা (মনে-প্রাণে) এটাই কামনা করে যে, আপনারা (পার্থিব ও ধর্মীয় ব্যাপারে) বিপন্ন হন। (আপনাদের প্রতি শত্রুতায় তাদের মন এতই ভরপুর যে) শত্রুতা প্রসূত বিদ্বেষ (মাঝে মাঝে অনিচ্ছাকৃত ভাবে) তাদের মুখেই প্রকাশ পায়। আর তাদের হৃদয়ে যা গোপন রাখে তা আরো গুরুতর। আমি আপনাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করছি, যদি আপনারা অনুধাবন করে থাকেন। (তবে এসব নিদর্শন দ্বারা বুঝে নিন কাফিররা তোমাদের কত বড় শত্রু)।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : আয়াত শরীফ ১১৮)
“নিশ্চয় মু’মিনগণ উনারা সকলেই ভাই ভাই।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-“এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই।” (বুখারী, মুসলিম, আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি “পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ” উনার ১০৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “ইহুদী-নাছারা তথা আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই প্রতিহিংসাবশত চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফির বানিয়ে দিতে।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আর যা নিকৃষ্ট বা হারাম তা থেকে শুধু নিকৃষ্ট বা হারামই বের হয়ে থাকে।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আখিরী যামানায় অনেক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকো এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখো। তাহলে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না।’
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “মুসলমান উনাদের মধ্যে যারা কাফিরদের সাথে মুহব্বত রাখবে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” নাউযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
“যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তাদের হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” “যে ব্যক্তি (মুসলমান) যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ, মসনদে আহমদ, আবূ দাউদ শরীফ)
করণীয় :
———
=> তাই, আমরা কি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ গুলো সেল্ফ এ সাজিয়ে রেখে দিব ? সুন্নত মুবারক উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করব না ?
=> আমরা কি এমন একজন নেতা/ইমাম তালাশ করব না যিনি নিজে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে চলেন, অনুসরন, অনুকরন করেন এবং সকল মুসলিম কেও সঠিক ভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনাদের আলোকে পরিচালিত করে থাকেন এবং সঠিকভাবে আল্লাহওয়ালা হওয়ার পথের সন্ধান দান করেন।
“একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবে না।” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)
=> তাই, সময় ফুরাবার আগে কি একটুও সুযোগ নিব না ! না কি…পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, উন্মুক্তমনা, রীতিনিতি ও যুগের চাহিদা মত যোগান দিতে থাকব, গা-ভাসিয়ে দিতে থাকব ?
————
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত সম্মানিত দ্বীন হচ্ছেন পবিত্র ইসলাম।” আর ‘ইসলাম’ অর্থ শান্তি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “তোমাদের জন্য আমার সম্মানিত সুন্নত মুবারক ও হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত মুবারক পালন করা আবশ্যক।”
যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রকৃত অনুসারী হবেন, উনারা দুনিয়া ও আখিরাতে প্রকৃত শান্তিতে থাকবেন- এটাই চিরন্তন সত্য কথা। যেটা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারকে পরিপূর্ণরূপে লক্ষ্য করা যায়।
আমাদের দেশে শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ লোক মুসলমান। তারপরেও কেন এই দেশবাসী শান্তিতে নেই? কেন বর্তমানে সারা দেশে চরম অশান্তি বিরাজ করছে? তার একটাই কারণ আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার থেকে দূরে সরে গিয়েছি।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন যিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সত্য দ্বীন ও পবিত্র হিদায়েতসহ পাঠিয়েছেন অতীতের পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নাযিলকৃত সমস্ত দ্বীন এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানবরচিত সমস্ত তন্ত্র-মন্ত্র ও মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে দিয়ে। আর সাক্ষী হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট।” সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যদি কেউ অনুসরণ না করে তাহলে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সে বিদয়াতী-বেশরা, বিধর্মীদের অনুসরণ করতে বাধ্য। ফলে সে কুফরী ও গুমরাহীতে মশগুল হবে এবং পরিণামে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। যেমন, ‘সূরা আহযাব’-এর ৬৬নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন জাহান্নামের আগুনে তার চেহারা ঝলসিয়ে দেয়া হবে সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আনুগত্য করতাম।”
মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল করার বা আল্লাহওয়ালা হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে- পরিপূর্ণভাবে সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।
তাই, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বাইফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেক কামিল ওলীগণ উনারা বলেছেন, কাউকে পানি দিয়ে হাঁটতে, বাতাস দিয়ে উড়তে ও আগুনের মধ্যে বসে থাকতে দেখেই তাকে ওলীআল্লাহ মনে করবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ করতে না দেখবে।”
কেননা তাছাউফের কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে, যিনি হক্কানী ও কামিল মুর্শিদ বা ওলী আল্লাহ হবেন; তিনি ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করা বা ছেড়ে দেয়া তো দূরের কথা বরং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন সুন্নতে যায়েদাহ বা মুস্তাহাবও তরক করবেন না। অনুরূপ হারাম ও নাজায়িয কাজ করা তো দূরের কথা বরং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মাকরূহ কাজও করবেন না। সুবহনাল্লাহ!

0 Comments: