একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৮৬

 


ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইসমে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

কারামত  মুবারক-

আলোচ্য কারামতশব্দটির সঙ্গে কেবল মুসলমানই নয়, অন্য সব ধর্মের মানুষও পরিচিত। প্রায় সকলকেই কথাটি বলতে শোনা যায়। তাদের আনাড়ি বিবেচনায় অলৌকিক/লোকাতীত (خرق عادت) বিষয়ের নামই কারামত। সাধারণ অর্থে তাদের ধারণা মিথ্যে নয়। তবে সূক্ষ্ম ও তাত্ত্বিক বিবেচনায় তাদের প্রচলিত এ উপলদ্ধি সঠিক নয়। কারামত-উনার সাধারণ অর্থ শক্তি, ক্ষমতা, প্রতাপ, প্রভাব ইত্যাদি। উনার প্রকৃত অর্থ হলো, আল্লাহ পাক প্রদত্ত অতুলনীয় সম্মান। এ সম্মান আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় উনার মাধ্যমে উনাদের অপরিমেয় বুযূর্গী নির্ধারিত হয়। হিদায়েতের প্রয়োজনে আল্লাহ পাক মাখলুকের কাছে উনার মনোনীত ওলীগণের মান, শান, প্রভাব, প্রতিপত্তি ও সম্মানের প্রকাশ ও বিস্তার ঘটিয়ে থাকেন। অর্থাৎ, ওলীগণ অপরিচিত থাকেন না। কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে:

ان رحمت الله قريب من المحسنين.

অর্থঃ- নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-উনার রহমত উনার মুহসিন বান্দাগণের (ওলীআল্লাহ) নিকটে।” (সূরা আরাফ-৫৬) আরো ইরশাদ হয়েছে:

الله يجتبى اليه من يشاء ويهدى اليه من ينيب.

অর্থঃ- আল্লাহ পাক যাকে ইচ্ছা তাকে আপন ওলী (বন্ধু) মনোনীত করেন।” (সূরা আশ্ শুরা-১৩) ওলীগণের জন্য আল্লাহ পাক-উনার তরফ থেকে বন্ধুত্ব ও বেলায়েতের দরজা অনুক্ষণ অবারিত। কারামত’-উনার এক অর্থ ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি। ওলীআল্লাহ নন্ এমন মানুষ, এমনকি বিধর্মীরাও মন্দ অর্থে এই ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হয়ে থাকে। সকলেরই জানা যে, সব ভালো বিষয়ের বিপরীতেই মন্দ প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকে। মানুষের ধারণা ও উপলব্ধতিতে যানেই, তাতার কাছে অবোধ্য এবং অস্পষ্ট ধারণার বিষয় তার কাছে দুর্বোধ্য। প্রেক্ষিত কারণে মানুষ যাজানে না, বোঝেনা, তা-ই অসাধারণ, তা-ই অলৌকিক। প্রচলিত ও বোধগম্য রীতির বিপরীতে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সাল্লামগণের মুবারক জীবনাচরণে প্রকাশিত এমন সব বিষয়ের নাম মুজিযা।ওলীআল্লাহগণের ক্ষেত্রে তার নাম কারামত।ভিন্ন অর্থ ও তাৎপর্যে শিশু, অবোধ, বদ্ধপাগল ও মজ্যুব মানুষের ক্ষেত্রে তার নাম আওন।শরীয়ত গর্হিত যাদুকরদের অস্বাভাবিক ও চোখ ধাঁধানো কাজ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার নাম ইস্তিদ্রাজ (ভেল্কিবাজী)।নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ শক্তি ও ক্ষমতা উনাদের মুবারক স্বভাব-সঞ্জাত আচরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই সম্পৃক্ততা এতো গভীর, সূক্ষ্ম ও প্রজ্ঞা-সমৃদ্ধ যে, মানুষের পক্ষে তাঅনুধাবন করা সম্ভব হয়নি। তাই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সহজাত শক্তি ও ক্ষমতাকে মানুষ মুজিযানামে অভিহিত করেছে। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের যে বিষয়গুলো মানুষের অবোধ্য, তাই মুজিযা। নুবুওওয়াত ও রিসালত প্রমাণের একটি প্রধান উপায় মুজিযা। সমঝ্দার ও সমঝ্হীন মানুষের মাঝামাঝি স্তরের অসচ্ছ দৃষ্টির মানুষ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার মুবারক মুজিযা দেখে ঈমান এনেছেন। জলীলুল ক্বদর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-উনার কেউই মুজিযা দেখে ঈমান আনেননি। কারণ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুন্ নাবিয়্যীন, শাফিউল উমাম, মাশুকে মাওলা, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আযীমুশ্শান মাহাত্ম্য ও রিসালতের গুণ-বৈশিষ্ট্য উনারা আপন দৃষ্টির গভীরতায় পরিপূর্ণরূপে উপলব্ধি করে প্রত্যয়ী হয়ে উঠেছিলেন। উনাদের ঈমান গ্রহণে মুজিযার সহায়ক ভূমিকার কোন প্রয়োজন ছিলনা। আকরামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, সাইয়্যিদুস্ সাক্বালাইন, সাইয়্যিদুল আনাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সবকিছুই উনার মুবারক স্বাভাবিক স্বভাব ও আচরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। (অসমাপ্ত)

আবা-১৪৬

0 Comments: