ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দা’ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইসমে আ’যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-
একজন
কুতুবুয যামান উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান
কারামত মুবারক-
তাওহীদ প্রকাশের প্রয়োজনে রিসালতের সঙ্গে সংশ্লেষিত যে সব অলৌকিক ঘটনা (خرق عادت) মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, তাই মু’জিযা। কোন অবস্থায়ই নুবুওওয়াত ও রিসালতের রূপান্তর ঘটেনি। তাই মুবারক মর্যাদা ও মর্তবার মানদ- বিবেচনায় তায়িফ ও উহুদ ময়দানে কাফিরদের আক্রমণ এবং মক্কা শরীফ বিজয় ও মি’রাজ শরীফ গমনের মধ্যে কোন পার্থক্য সূচিত হয়না। কারণ, আযীমুশ্শান সকল বিষয় ও অবস্থায়ই তিনি আল্লাহ পাক-উনার মাশুক এবং হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পাক কুরআন শরীফে মু’জিযাকে বলা হয়েছে ايات (নিদর্শন) এবং برهان (দলীল) হিসেবে। কালামুল্লাহ শরীফে বিধৃত ঘটনাসমূহের মধ্যে রূহানী হালত (আত্মিক অবস্থা)-উনার প্রসঙ্গ সর্বাপেক্ষা গভীর প্রজ্ঞা ও উপদেশে পরিপূর্ণ। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ, বিশেষত: ফখরে দু’জাঁহা, সুলতানুন্ নাছীর, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতুলনীয় মুবারক শক্তির প্রভাবেই সকল ক্ষেত্রে কামিয়াবী লাভ করেছেন, জিহাদ-অস্ত্র-সস্ত্র অথবা অন্য কোন বিষয়ের প্রভাবেই নয়। এই মুবারক রূহানী শক্তিরই এক নাম মু’জিযা। আল্লাহ পাক বলেন:
انا فتحنا لك فتحا مبينا.
অর্থঃ- “(হে
প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয়
দান করেছি।” (সূরা ফাতহ্-০১) আল্লাহ পাক-উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম নিজেই মু’জিযা। কুরআন শরীফকে বলা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ মু’জিযা। নুবুওওয়াত ও রিসালতের সঙ্গে
মু’জিযা ও স্বপ্নের নিগূঢ় সংশ্লেষ রয়েছে। মু’জিযা, রিসালতের
অত্যাবশ্যক অনুষঙ্গ। মু’জিযা দেখে ভ্রান্ত মানুষ ভীত-বিহ্বল হয়ে ঈমান গ্রহণ করেছে। প্রত্যেক নবী-রসূল
আলাইহিমুস্ সালাম-উনার সঙ্গেই মু’জিযা’র সম্বন্ধ যেমন, ঠিক তেমনই ওলী আল্লাহগণের সঙ্গে
কারামতের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাওহীদ প্রকাশের প্রয়োজনে মু’জিযা
তাওহীদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মাধ্যমে মু’জিযা
প্রকাশ পাওয়া আল্লাহ পাক অত্যাবশ্যক করেছেন। কিন্তু ওলীআল্লাহগণের কারামত থাকা
জরুরী নয় এবং তা’
প্রকাশিত হওয়াও অবধারিত নয়। কারামত, কামালতের
(কামিয়াবী) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কখনোই কামালত-কারামতের উপর নির্ভরশীল
নয়। ওলীআল্লাহগণের উচ্চতর মাকামে উত্তরণের সোপান নিরূপণের জন্য কারামত আদৌ কোন
মানদ- নয়। তবে আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের কারামত প্রত্যক্ষ করে বিদিশা মানুষ
সিরাতুল মুস্তাকীম খুঁজে পায়। মানুষের হিদায়েত লাভের পথ সুগম হয়। এতে মানুষের ঈমান
ও আক্বীদা নবায়ন হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিধর্মীরাও ঈমান গ্রহণ করে আল্লাহওয়ালা হয়ে
যায়। কারামতের প্রকৃত অর্থ বুযূর্গী, অর্থাৎ সম্মান। হাদীছে কুদসীতে
আল্লাহ পাক বলেন:
من عاد لى وليا فقد اذنته بالحرب
অর্থঃ- “আমার
মাহবুব ওলীগণের সঙ্গে যারা বিরোধিতা করে, আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
করে থাকি।” এমন মাহাত্ম্যপূর্ণ ও মর্যাদাবান ওলীগণের অন্তর্গূঢ় যা রহস্য, তা’ হলো
আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন,
মাশুকে মাওলা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-উনার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য নৈকট্য সংযোগ।
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম আলাইহিস সালামমগণের মূল কারামত হলো, আল্লাহ
পাক-উনার মতে একমত হয়ে তাঁর প্রিয়তম হাবীব, মাশুকে মাওলা, খাজিনার্তু
রহমত, নূরে মুজাস্সাম,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পথে
পরিপূর্ণরূপে অধিষ্ঠিত হওয়া এবং সূক্ষ্মতিসূক্ষ্মভাবে সুন্নতের ইত্তিবায়
দায়িমীভাবে অভ্যস্ত হওয়া ও তাতে ইস্তিকামত (অবিচল) থাকা। মাকামতের প্রবৃদ্ধি এবং
লব্ধ কামালত অটুট থাকায় ইস্তিকামতই হলো মূল কারামত। ওলীআল্লাহগণের অতল-গভীর এই
কারামতের প্রকৃতি সাধারণ মানুষের কারো কাছে দুর্বোধ্য এবং কারো কাছে অবোধ্য।
(অসমাপ্ত)
আবা-১৪৭
0 Comments:
Post a Comment