ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ দা’ওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইসমে আ’যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নওেয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা
আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে-
একজন
কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
কারামত মুবারক
এরূপ গর্হিত প্রত্যাশা
বেলায়েতের ভিত্কে উৎখাত করে দেয়। বেলায়েত খাছ হলে কামালতও খাছ হয়। প্রথম শ্রেণীর
বেলায়েত (আম বেলায়েত) কেবল ঈমান গ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই সকল মুসলমানই আমভাবে
আল্লাহ পাক-উনার ওলী (বন্ধু)। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ
الله ولى الذين امنوا
يخرجهم من الظلمت الى النور.
অর্থঃ “আল্লাহ
পাক মু’মিনদের অভিভাবক। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোয়, অর্থাৎ গোমরাহী থেকে হিদায়েতের
পথে নিয়ে আসেন।”
(সূরা বাক্বারা-২৫৭)
ফিরাউন দুনিয়ায় চারশ’ বছর
বেঁচে ছিলো। এ দীর্ঘ সময়ে সে কোন দিন একটু অসুস্থও হয়নি। পানির উচুঁ ঢেউ তার পেছনে
পেছনে চলতো। চলার পথে তার পেছনে ধাবমান পানির উচুঁ স্তরও অবিরাম চলতে থাকতো। সে
থামলে চলমান পানিও থেমে যেতো। কিন্তু এসবে কোন প্রজ্ঞাবান মানুষের মন সন্দেহপ্রবণ
হয় না। কেউ বিভ্রান্তও হয় না। কারণ, সে খোদায়ী দাবী করেছিলো, একথা
সকলেরই জানা। কাজেই তার এ কাজ কারামত ছিলো না। ধোঁকাবাজ ও প্রতারকদের
ভেল্কিবাজীতে আল্লাহ পাক অবকাশ দিতে থাকেন। পরিণতিতে সমূলে তাদের বিনাশ সাধিত হয়।
ফিরাউনের অবস্থাও তাই হয়েছিলো। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আখিরী
যামানায় দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে খোদায়ী দাবী করবে। তার ডানে ও বামে দু’টি আয়নার
পাহাড় থাকবে। ডান দিকের পাহাড় হবে নিয়ামতে পরিপূর্ণ এবং বাম দিকেরটি হবে শাস্তির
স্থান। সে ডান দিকের পাহাড়কে বলবে এটি বেহেশ্ত এবং বাম দিকেরটি দোযখ। সে বলবে, যে আমার
উপর ঈমান আনবে আমি তাকে বেহেশ্তে স্থান দেব। আর যে ঈমান আনবে না আমি তাকে দোযখে
নিক্ষেপ করবো। আল্লাহ পাক তাকে (দাজ্জালকে) এমন শক্তিও দান করবেন যে, সে তার
ইচ্ছেমতো মানুষকে জীবিত করতে এবং তাদের প্রাণ হরণ করতে সক্ষম হবে।” দাজ্জালের
এ অলৌকিক কাজগুলোও কারামত নয়। কারণ, সেও খোদায়ী দাবী করবে। সুলতানুল
আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী আলাইহিস সালামএকদিন নদী পার হতে গিয়ে দেখলেন, ঘাটে
নৌকা নেই। এ বিষয়ে তিনি তীরে বসে ভাবছিলেন। এমন সময় দেখা গেলো, নদীর
পানি দু’ভাগ হয়ে প্রশস্ত রাস্তা বের হয়েছে। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকলেন, “ধোঁকা, ধোঁকা, সবই
ধোঁকা।” অথৈ নদী পার হওয়ার প্রশস্ত পথ প্রস্তুত পেয়েও তিনি ফিরে এলেন। কারণ, এমন
নিম্ন মানের বিষয়কে তিনি উনার কামিয়াবীর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ “কারামত” বলে গণ্য
করতে পারেননি। না পারাটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। তা এজন্য যে, কারামততো
হলো আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য নৈকট্য-সংযোগ, সুন্নতের
ইত্তিবায় অধিষ্টিত হওয়া এবং তাতে ইস্তিক্বামাত থাকা। সাধারণ মানুষ কারামতকে
কামালতের অনুষঙ্গ না ভেবে অলৌকিক বিষয় হিসাবে একে মূল কামালত হিসাবে ভাবতে
অভ্যস্ত। কামিয়াবীর স্তর ভেদে কারামতও শতধা বিভক্ত। আম মানুষ এসবে বেখবর। প্রকৃত প্রস্তাবে কামালতই (পরিপূর্ণতা) যে
কারামত (প্রকৃত সম্মান) সে সম্পর্কে তারা অজ্ঞ। এমন সূক্ষ্ম কারামত এবং উনার
তাৎপর্য তাদের উপলব্ধির কাছাকাছি নয়। মূল কথা হলো, বন্ধুকে (আল্লাহ পাককে) অবজ্ঞা
করে অন্য কিছুর প্রতি মনোযোগী হলে বেলায়েত স্থির থাকে না। এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
ولا بقاء للولاية مع الاعراض عن الجيب
والاقبال الى غير الجيب
আর বেলায়েতের অবস্থানে
নড়চড় হলে কারামতের প্রশ্ন অবান্তর হয়ে দাঁড়ায়। যে ব্যক্তি কারামতের উপর নির্ভরশীল
হয়, আল্লাহ পাক থেকে সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সমঝদারদেরতো অজানা নয় যে, মুহব্বতের
প্রথমে কারামত, মধ্য সোপানে অনুসন্ধিৎসা, পূর্ণতায় লজ্জা এবং পরিণতিতে নির্বাক হয়ে যাওয়া। এ
নির্বাকের অর্থ অবধারিতভাবে কথা না বলা নয়। উনার তাৎপর্য হলো খোদায়ী দান- উনার কোন
বিষয়েই চু-চেরা ও আপত্তি-বিপত্তি উত্থাপনে বিমুখ বেদনা-বিমুগ্ধ মানসিকতা অর্জন।
আনুগত্যের এমন শীর্ষ
সোপানে পাওয়ার আনন্দ ও না পাওয়ার বেদনা অবলীলায় অন্তর্লীন হওয়ার মধ্যে “কারামত”-উনার
পৃথক কোন অর্থ তালাশের প্রয়োজন আর থাকেনা। (অসমাপ্ত)
আবা-১৪৮
0 Comments:
Post a Comment