একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-৯১

 

ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত, আফযালুল ইবাদ, ছহিবে কাশ্ফ ওয়া কারামত, ফখরুল আউলিয়া, ছুফীয়ে বাতিন, ছহিবে ইস্মে আযম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম-উনার স্মরণে-

একজন কুতুবুয্ যামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

কারামত মুবারক-

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মুজিযা এবং ওলীআল্লাহগণের কারামতের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যই হলো মহান আল্লাহ পাক-উনার কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি ঈমান গ্রহণ করে ক্রমান্বয়ে আল্লাহ পাক-উনার সঙ্গে নিগূঢ় নৈকট্য স্থাপনে মানুষকে অগ্রগামী করে তোলাই ওলীআল্লাহগণের কারামত প্রকাশের কারণ। দুনিয়ার আসক্তিতে মনগড়া উপলক্ষ এবং মানুষের বানানো কৌশল নয়, আল্লাহ পাক-উনার কুদরতের দিকে অনুক্ষণ ধাবমান থাকাই কারামতের মূল লক্ষ্য। স্বাধিকার পরিত্যক্ত আল্লাহ পাক-উনার আশিকগণ হিম্মতহীন। উনার অর্থ এ নয় যে, উনারা (ওলীগণ) নিষ্ক্রিয়, অলস অথবা ভয়াতুর।

 দুর্দমনীয় নফসের বিচিত্র অভিলাষের সমূল বিনাশসাধনে একজন বান্দা যখন একান্তভাবেই আল্লাহ পাক-উনার প্রতি সমর্পিত হন, তখন তিনি ওলীআল্লাহ অভিধায় অভিষিক্ত হয়ে থাকেন। নফসের ইচ্ছের মরণ হওয়ায় তিনি অনুক্ষণ আল্লাহ পাক-উনার নূর-উনার মধ্যে নিমজ্জিত থাকেন। তখন সবকিছুই উনার কাছে প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।

  রহস্যের পর্দা ক্রমান্বয়ে উনার নিকট থেকে অপসৃত হতে থাকে। প্রশান্তি, প্রশস্তি, আত্মবিস্তৃতি, ইলম, হিকমত, সমঝ ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে আলোকিত অন্তরে তখন কেবলই উনার আল্লাহ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাতের অথৈ পারাবারে নিমজ্জন এবং কামিয়াবীর পথে নিরন্তর উত্তরণ।  এ মর্মে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

افمن شرح الله صدره للا سلام فهو على نورمن ربه.

অর্থঃ- আল্লাহ পাক যার অন্তর ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে আপন প্রতিপালকের নূরের মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে।” (সূরা যুমার-২২) এমন পরিণত স্তরের নৈকট্য সোপানে উপনীত ওলীআল্লাহর কামিয়াবী সম্পর্কে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, মাশুকে মাওলা, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

لا يزال العبد يتقرب الى با لنوافل حتى احبه فاذا احببته كنت سمعه الذى يسمع به كنت بصره الذى يبصر به كنت يده التى يبطش بها كنت ر جله التى يمشى بهاوان سالنى لاعطيته ولئن استعاذبى لاعيذنه.

অর্থঃ- বান্দা নফল ইবাদত করতে করতে (কামিয়াবীর শীর্ষ ধাপে অধিষ্ঠিত বান্দা) আমার এতোটুকু নৈকট্য হাছিল করে, আমি তাকে মুহব্বত করতে থাকি। মুহব্বতের পর্যায়ে আমি তার কান হয়ে যাই, যে কানে সে শোনে। আমি তার চোখ হই, সে আমার চোখে দেখে। আমি তার হাত হই, যে হাতে সে ধরে। আমি তার পা হই, আমার পায়ে সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, আমি তা দান করি। আমার কাছে সে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, আমি তাকে আশ্রয় দান করে থাকি।” (হাদীছে কুদসীঃ বুখারী শরীফ) পরিপূর্ণরূপে অনুগত এমন বান্দাকে আল্লাহ পাক আপন বন্ধুরূপে গ্রহণ করেন এবং সর্বক্ষণের জন্য সে বান্দা আল্লাহ পাক-উনার লক্ষ্যস্থল হয়ে পড়েন।

 আনুগত্য সোপানের শীর্ষ পর্যায়ে মহান আল্লাহ পাক-উনার গুণাবলী (ছিফত) অবলীলায় উনার মধ্যে পরিব্যাপ্তি লাভ করে এবং উনার আচরণ, বিচরণ ও সকল কর্মানুষ্ঠানে তা অভিব্যাক্ত হয়। আল্লাহ পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় ওলীগণের মাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিকশিত এসব গুণাবলীরই নাম কারামত।অন্ত:দৃষ্টি না থাকায় সাধারণ মানুষের কাছে ওলীআল্লাহগণের মুবারক স্বভাবসঞ্জাত ধ্যানে, জ্ঞানে, মনোযোগে ও কর্মে অনুক্ষণ প্রকাশিত এসব গুণ-বৈশিষ্ট্য কখনো অবোধ্য এবং কখনো দুর্বোধ্য। মহান আল্লাহ পাক-উনার মাহবুব ওলীগণের মাধ্যমে প্রকাশিত এমন দুর্বোধ্য অথবা অবোধ্য বিষয়গুলোই সামগ্রিকভাবে কারামতনামে অভিহিত। (অসমাপ্ত)

আবা-১৫১

0 Comments: