হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৩৭৮-৪৮০) (ছ)


হযরত জাফর ইবনে আবু ত্বলিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইসলাম গ্রহণ :
একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল ছিলেন। হযরত আলী ইবনে আবু ত্বলিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ডান পার্শ্ব মুবারকে ছিলেন। ঘটনাক্রমে আবু ত্বলিব তিনি ওই দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও উনার পিতার সঙ্গে ছিলেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যখন আবূ ত্বলিব তিনি নামাযরত অবস্থায় দেখলেন। তখন হযরত জাফর ইবনে আবূ ত্বলিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে আমার প্রিয় পুত্র! আপনিও আপনার ভাই হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় আপনার সম্মানিত চাচাতো ভাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনে উনার শক্তিশালী বাহুতে পরিণত হয়ে যান। আর উনার বাম পার্শ্ব মুবারকে দাঁড়িয়ে উনার সাথে নামাযে শরীক হয়ে যান। (উসদুল গাবা ১ম খ- ২৮৭ পৃষ্ঠা)
হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রথম যুগে ইসলাম গ্রহণকারীগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং পঁচিশ অথবা একত্রিশজন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পর ইসলাম গ্রহণে ধন্য হন। (ইসাবা ১ম খ- ২৩৭ পৃষ্ঠা, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ম খ- ১৫৩ পৃষ্ঠা)


হযরত আফীফ কিন্দী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইসলাম গ্রহণ :

হযরত আফীফ কিন্দী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার বন্ধু ছিলেন। তিনি আতরের ব্যবসা করতেন। আফীফ প্রকৃতপক্ষে উনার লক্বব মুবারক। হযরত হাফিয আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আফীফ কিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রকৃত নাম শারাহীল। নিষ্পাপ ও পবিত্রতার দরুন আফীফ লক্বব মুবারকে ভূষিত হন।
হযরত আফীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবিতা সমূহের মধ্যে একটি পংক্তি এরূপ যে,
وقالت لى حلم التصابى قلت عففت عما تعلمينا
সে আমাকে খেল তামাশার দিকে আহ্বান করে, আমি বললাম, আপনি তো আমার পরহেযগারী ও পবিত্রতা সম্বন্ধে জানেন। (ইসাবা ২য় খন্ড ৪৮৭ পৃষ্ঠা)
হযরত আফীফ কিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আতরের ব্যবসায়ি বলে ইয়ামেনে যাতায়াত ছিলো। হযরত আফীফ কিন্দী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার আমি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার সাথে মিনায় অবস্থান করছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি এলেন এবং খুবই উত্তমরূপে অযূ করলেন। অতঃপর নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। এবং একজন মহিলা এলেন এবং একইভাবে অযূ করে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। এর পর একজন এগারো বছর বয়সের বালক তিনি এলেন এবং একইভাবে অযূ করে উনার পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটি কোন ধর্ম? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এটি আমার ভ্রাতুস্পুত্র আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ধর্ম। যিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামরূপে যমীনে প্রেরণ করেছেন। আর এই বালক তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম যিনি আমার ভ্রাতুস্পুত্র এবং ওই সঠিক ধর্মের অনুসারী এবং ওই সম্মানিত মহিলা তিনি হচ্ছেন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানীত সহধর্মীনি আলাইহাস সালাম। অতঃপর হযরত আফীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। আর তিনি এরূপ বলতেন, যে আহা! আমি যদি চতুর্থ মুসলমান হতাম। (উয়ূনুল আসার)
হযরত হাফিয ইবনু আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ হাদীছ শরীফখানা উত্তম এবং এটি হাসান হওয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। হযরত হাফিজ আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এ হাদীছ শরীফখানা ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তারিখে বাগবী ও ইবনে মান্দাতেও উল্লেখ করেছেন। এতে আরো উল্লেখ আছে যে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি এটাও বলেছেন, আমার সম্মানিত ভ্রাতুষ্পুত্র। তিনি আরো বলেন যে, রোম ও পারস্যের ধন-ভান্ডার উনার হাত মুবারকে বিজিত হবে।” (ইসাবা ২য় খন্ড ৪৮৭ পৃষ্ঠা, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ম খন্ড ১৫৩ ও ১৫৪ পৃষ্ঠা)
হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইসলাম গ্রহণ :
হযরত ত্বলহা বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক ত্বলহা, কুনিয়াত মুবারক আবু মুহম্মদ কারশী। উনার সম্মানিত পিতার নাম আব্দুল্লাহ। তিনি ছিলেন সম্মানিত কুরাইশ বংশোদ্ভূত। আশারায়ে মুবাশশারাগণ উনাদের অন্যতম। তিনি ইসলামের প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। (আসমাউর রিযাল)
হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে বসরায় গিয়েছিলাম। একদিন আমি বসরার বাজারে অবস্থান করছিলাম। এ সময়ে এক খ্রিস্টান দরবেশ তাদের উপাসনা গৃহ থেকে উচ্চস্বরে বলছিলো এই সমস্ত লোকদের মধ্যে পবিত্র মক্কা শরীফ-এ বসবাসকারীগণের মধ্যে কেউ আছেন কি? হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি পবিত্র মক্কা শরীফ-এ বসবাসকারী। খ্রিস্ট দরবেশ বললো, রসূল আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রকাশিত হয়েছেন কি? আমি বললাম, কোন আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? দরবেশ বললো, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত সন্তান। এ মাস উনার পবিত্র নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের মাস। তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ-এ উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ করবেন এবং একটি প্রস্তরময় খেজুর বাগানবিশিষ্ট স্থানের দিকে হিজরত করবেন। তিনি হচ্ছেন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখুন, আপনি কিন্তু পিছু পড়বেন না।
খ্রিস্ট দরবেশের সাথে এ ধরনের কথোপকথনের দ্বারা আমার অন্তর মুবারকে বিশেষ এক প্রভাব পড়েছিলো। আমি আর দেরি না করে সত্বর পবিত্র মক্কা শরীফ-এর ফিরে এলাম এবং লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম, নতুন কিছু ঘটেছে কি? লোকজন বললো, হ্যাঁ, আল আমিন হযরত মুহম্মদুর রসূলুল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ করেছেন। এবং ইবনে আবূ কুহাফা তথা সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উনার দ্বীন গ্রহণ করেছেন। আমি শীঘ্র সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার নিকট উপস্থিত হলাম। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত শরীফ-এ উপস্থিত হলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত শরীফ-এ হাযির হয়ে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে ওই খ্রিস্ট দরবেশের ঘটনা পুরোপুরি বর্ণনা করলাম। (ইসাব ২ খ- ২২৯ পৃষ্ঠা, হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবন চরিত্র, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১ম খ- ১৫৪ পৃষ্ঠা)
হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াককাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইসলাম গ্রহণ :
হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াককাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের তিন রাত্রি পূর্বে এ স্বপ্ন দেখলাম যে, আমি যেনো ঘুটঘুটে ভীষণ অন্ধকারে আছি। অন্ধকারের কারণে কোন কিছুই আমার নজরে আসছে না। হঠাৎ একটি চন্দ্র উদিত হলো। আমি এর পিছু নিয়ে দেখলাম যে, হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী আলাইহিস সালাম এবং হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ওই নূরের প্রতি আমার চেয়ে আগ্রগামী। আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত শরীফ-এ উপস্থিত হলাম এবং আরয করলাম, আপনি কিসের প্রতি আহ্বান জানান?
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার একত্ববাদ এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা হওয়ার প্রতি সাক্ষ্যদানের জন্য তোমাকে আহ্বান করছি। আমি কালিমা শাহাদাত পাঠ করলাম। (ইবনে আবিদ- দুনিয়া, ইবনে আসাকির ও সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

হযরত খালিদ ইবনে সায়ীদ ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু :
اخرج حضرت ابن سعيد رحمة الله عليه و حضرت البيهقى رحمة الله عليه، عن حضرت محمد بن عبد الله بن عمرو بن عثمان قال: كان اسلام حضرت خالد بن سعيد بن العاص رضى الله تعالى عنه قديما وكان اول اخوته اسلم، وكان بدؤ اسلامه انه رأى فى النوم انه وقف به على شفير النار، فذكر من سعتها ما الله اعلم به، ويرى فى النوم كان اباه يدفعه فيها ويرى رسول الله صلى الله عليه وسلم اخذا يحقويه لا يقع، ففزع من نومه وقال: احلف بالله ان هذه لرؤيا حق،

অর্থ: হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত খালিদ ইবনে সায়ীদ ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। উনার ভাইদের মধ্যে তিনিই ইসলাম গ্রহণ করেন। উনারা ইসলাম গ্রহণের সূচনা এভাবে হয় যে, তিনি স্বপ্নে দেখেন উনাকে দোযখের কিনারায় দাঁড় করানো হয়েছে। এরপর হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দোযখের এতো বিস্তৃতি বর্ণনা করলেন, যা মহান আল্লাহ পাক তিনিই ভালো জানেন। তিনি স্বপ্নে দেখলের উনার পিতা উনাকে দোযখে নিক্ষেপ করছে এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোমর ধরে রেখেছেন। যাতে তিনি দোযখে পড়ে না যান। হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এ স্বপ্ন দেখে ভীত হয়ে পড়লেন এবং বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এ স্বপ্ন সত্য।


হযরত খালিদ ইবনে সায়ীদ ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু :
فاتى حضرت ابا بكر عليه السلام فذكر ذلك له، فقال اريد بك خيرا. هذا رسول الله صلى الله عليه وسلم فاتبعه، فاتاه، فقال يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم الى م تدعو؟ قال: ادعوا الى الله وحده لا شريك له، وان حضرت محمد عبده ورسوله صلى الله عليه وسلم وتخلع ما انت عليه من عبادة حجر لا يسمع ولا يبصر ولا يضر ولا ينفع ولا يدرى من عبده ممن لم يعبده فاسلم خالد وعلم ابوه فارسل فى طلبه فانبه وضربه، وقال: والله لامنعنك القوت، قال: ان منعتنى فان الله يرزقنى ما اعيش به.
অতঃপর তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার কাছে এসে স্বপ্ন বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, আমি আপনার হিত কামনা করছি। ইনি হচ্ছেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনি উনার অনুসরণ করুন। হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কোন বিষয়ের প্রতি আহবান করেন? তিনি বললেন, লা শারীক, এক আল্লাহ পাক উনার প্রতি। হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার বান্দা ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি আরো বললেন, মানুষ পাথরের ইবাদত করে অথচ পাথর না শুনে, না দেখে, না কোনো উপকার ও অপকার করতে পারে। পাথর এটাও জানে না যে, কে তাদের ইবাদত করছে এবং কে করছে না। আপনি তাদের পূজা পরিত্যাগ করুন। হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তৎক্ষণাৎ মুসলমান হয়ে গেলেন। এ সংবাদ পেয়ে উনার পিতা উনাকে ধরে নেয়ার জন্যে লোক পাঠায়, ধমকি দিলো, প্রহার করলো এবং বললো আমি আপনার রুজি বন্ধ করে দিবো। হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি রুজি বন্ধ করে দিলে কোনো ক্ষতি নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে যে রুজি দিবেন তা দিয়ে আমি আমার জীবন নির্বাহ করে নিবো। সুবহানাল্লাহ!
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
اخرج حضرت ابن سعد رحمة الله عليه، عن حضرت صالح بن كيسان رحمة الله عليه ان حضرت خالد بن سعيد رضى الله تعالى عنه قال: رايت فى المنام قبل مبعث النبى صلى الله عليه وسلم ظلمة غشيت مكة، حتى ما ارى جبلا ولا سهلا، ثم رايت نورا خرج من زمزم مثل ضوء المصباح كلما ارتفع عظم وسطع، حتى ارتفع فاضاء لى اول اضاء البيت، ثم عظم الضوء حتى ما بقى من سهل ولا جبل، الا وانا اراه، ثم سطع فى السماء ثم انحدر حتى اضاء لى نخل يثرب فيها البسر، وسمعت قائلا يقول فى الضوء سبحانه سبحانه تمت الكلمة وهلك ابن مارد بهضبة الحصا بين ادرج والاكمة، سعدت هذه الامة جاء نبى الاميين، وبلغ الكتاب اجله كذبته هذه القرية تعذب مرتين تتوب فى الثالثة، ثلاثا بقيت، ثنتان بالمشرق وواحدة بالمغرب، فقصها حضرت خالد بن سعيد رضى الله تعالى عنه على اخيه عمرو بن سعيد رضى الله تعالى عنه، فقال: رايت عجبا وانى لارى هذا امرا يكون فى بنى عبد المطلب، اذ رايت النور خرج من زمزم،
অর্থ : হযরত ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ছলেহ ইবনে কাইসান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই হযরত খালিদ ইবনে সায়ীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবির্ভাবের পূর্বে আমি স্বপ্নে একটি ঘন অন্ধকার ছায়া দেখলাম, যা সমগ্র মক্কা নগরীকে ঘিরে রেখেছিলো। এ অন্ধকারে না কোনো পাহাড় দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না কোনো নরম মাটি। এরপর আমি একটি নূর মুবারক দেখলাম, যা প্রদীপের মতো। উহা যমযম কূপ থেকে বের হলেন। নূর মুবারকখানা যতই উপরে যাচ্ছিলেন, ততই বড় হচ্ছিলেন এবং চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছিলেন। অবশেষে নূর মুবারকখানা অনেক উঁচুতে পৌঁছে গেলেন। সর্বপ্রথম আমি যে বস্তুটি নূরোজ্জ্বল দেখলাম, সেটি ছিলো বাইতুল্লাহ শরীফ।
অতঃপর নূর মুবারকখানা এত বিশাল আকার ধারণ করলো যে, প্রত্যেক নরম মাটি ও পাহাড় তাতে দৃষ্টিগোচর হতে লাগলো। অতঃপর সেই নূর মুবারক আকাশে উত্থিত হলো, অতঃপর মাটিতে অবতরণ করলেন। ফলে মদীনা শরীফ-এর খর্জূর বাগান আমার দৃষ্টিতে আলোকময় হয়ে গেলো। এ সময় খর্জূর বৃক্ষে অর্ধপক্ক খেজুর ছিলো। এ নূরের মধ্যে আমি কাউকে বলতে শুনলাম পবিত্র কালিমা শরীফ পূর্ণ হয়েছে। এ উম্মত সৌভাগ্যশালী হয়েছে। উম্মীগণের নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে আগমন করেছেন এবং কিতাব মেয়াদ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এ জনপদবাসীরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মিথ্যারোপ করেছে। তাদের দু’বার আযাব দেয়া হবে। তৃতীয়বার তারা তওবা করে নিবে। তিনটি আযাব বাকি রয়ে গেছে। দু’টি পূর্বে এবং একটি পশ্চিমে। হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স্বপ্নের এ ঘটনা আপন ভ্রাতা আমর ইবনে সায়ীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, আপনি বিস্ময়কর স্বপ্ন দেখেছেন। আমার মনে হয় এটা বনী আব্দুল মুত্তালিব থেকে প্রকাশ পাবে। কেননা আপনি নূর মুবারকখানা যমযম থেকে প্রকাশ হতে দেখেছেন।
واخرجه الدار قطنى فى (الا فراد) و حضرت ابن عساكر رحمة الله عليه من طريق حضرت الواقدى رحمة الله عليه، حدثنى حضرت اسماعيل بن ابراهيم بن عقبة رحمة الله عليه، عن عمه حضرت موسى بن عقبة رحمة الله عليه سمعت ام خالد بنت خالد بن سعيد بن العاص رضى الله تعالى عنها تقول فذكره، وفى اخره قال خالد رضى الله تعالى عنه: فانه لمما هدانى الله به للاسلام، قالت حضرت ام خالد رضى الله تعالى عنها، فاول من اسلم ابى، وذلك انه ذكر رؤياه لرسول الله صلى الله عليه وسلم فقال يا حضرت خالد رضى الله تعالى عنه انا والله ذلك النور وانا رسول الله فاسلم.
উক্ত হাদীছ শরীফখানা ‘দারে কুতনী (আলে আমসাদ)’ গ্রন্থের উদ্ধৃত করেছেন। হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুসা ইবনে উকবা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত উম্মে খালিদ বিনতে সায়ীদ ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। এর শেষ ভাগে আরো বলা হয়েছে, হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এটা সেই বিষয় যে কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে হিদায়েত করেছেন। হযরত উম্মে খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বর্ণনা করেন, সর্বপ্রথম আমার পিতা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কেননা, তিনি আপন স্বপ্ন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হে হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ উনার ক্বসম আমিই সেই নূর মুবারক এবং আমি মহান আল্লাহ পাক উনার উনার রসূল, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! এ কথা শুনে হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুসলমান হয়ে গেলেন। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ২০৪ ও ২০৫ পৃষ্ঠায়, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণ :
খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ২১৮ ও ২১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اخرج حضرت ابن عساكر عليه السلام ، عن حضرت عثمان بن عفان عليه السلام قال كنت رجلا مستهترا بالنساء- فإنى ذات ليلة بفناء الكعبة قاعد فى رهط من قريش، إذ اتينا فقيل لنا- إن حضرت محمدا صلى الله عليه و سلم قد انكح عتبة بن أبى لهب من رقية ابنته، وكانت رقية ذات جمال رائع، فد خلتنى الحسرة لما لا أكون سبقت إلى ذلك، فلم ألبث ان انصرفت إلى منزلى، فأصبت خالة لى قاعدة وكانت قد تكهنت عند قومها فلما رأتنى قالت:
ابشر وحييت ثلاثا تترا- ثم ثلاثا أخرى
ثم بأخرى كى تتم عشرا- أتاك خير ووقيت شرا
انكحت والله حصانا زهرا- وأنت بكر ولقيت بكرا
وافيتها بنت عظيم قدرا
অর্থ: হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের পূর্বকালে নিকাহ করার লক্ষ্যে নারীদের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট ছিলাম। একদিন রাতের বেলায় কুরাইশদের একটি দলের সাথে কা’বা শরীফ প্রাঙ্গনে উপবিষ্ট ছিলাম। হঠাৎ কেউ বললেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার স্বীয় মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার নিকাহ মুবারক উতবা ইবনে আবী লাহাবের সাথে ঠিক করেছেন।
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি এমন বেমেছাল খুবছুরত, সুন্দরতম ও ছানা-ছিফতের অধিকারী ছিলেন যে, যে কেউ উনার নূরানীময় চেহারা মুবারক দেখলেই আশ্চার্যান্বিত হয়ে যেতো। এ খবর শুনে আমার খুব পরিতাপ হলো যে, আমি এ ব্যাপারে অগ্রগামী হলাম না কেন! কিছুক্ষণ পরেই আমি ঘরে পৌঁছে আমার খালার নিকট গেলাম। তিনি অতীন্দ্রিয়বাদী বা গনক ছিলেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণীও করতেন। আমাকে দেখা মাত্র বলতে লাগলেন, হে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম আপনার জন্য সুসংবাদ ও নিরাপত্তা, তিনবার এবং তিনবার এবং তিনবার।
আরো একবার যাতে দশ পূর্ণ হয়ে যায়, আপনি কল্যাণের সাথে মিলিত হয়েছেন এবং অকল্যাণ থেকে নিরাপদ হয়েছেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এক সুমহান পবিত্রা সুন্দরী নারীর সঙ্গে আপনার নিকাহ মুবারক হবে। আপনি কুমার এবং আপনি এক সুমহান কুমারী সঙ্গিনী পাবেন। আপনি এক মহীয়ান ব্যক্তিত্বের কন্যাকে পেয়েছেন।
قال حضرت عثمان عليه السلام فعجبت من قولها وقلت يا خالة- ما تقولين؟ فقالت عثمان لك الجمال ولك اللسان، هذا نبى صلى الله عليه و سلم معه البرهان، أرسله بحقه الديان، وجاءه التنزيل والفرقان، فاتبعه لا تغتالك الأوثان، قلت يا خالة- إنك لتذكرين شيئا ما وقع ذكره ببلدنا فأبينيه لى، فقالت حضرت محمد بن عبد الله صلى الله عليه و سلم ، رسول من عند الله، جاء بتنزيل الله، يدعو به إلى ربه، ثم قالت مصباحه مصباح، ودينه فلاح، وأمره نجاح، وقرنه نطاح، ذلت له البطاح، ما ينفع الصياح، لو وقع الذباح، وسلت الصفاح، ومدت الرماح، قال ثم انصرفت ووقع كلامها فى قلبى وجعلت أفكر فيه،

হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইহা শুনে আমি খুবই আশ্চার্যান্বিত হলাম এবং বললাম, খালা আপনি কি বলছেন? খালা বললেন, হে হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম আপনি খুবই সুন্দর সুশ্রী ও সুভাষী। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনার সঙ্গে আপনার বেমেছাল সম্পর্ক রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনাকে হক্ব বা সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। উনার নিকট নাযিল হয়েছে কিতাব ও কুরআন শরীফ। আপনি উনাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করুন। এই তথাকথিত প্রতিমাগুলো যেনো প্রতারণা করে আপনাকে ধ্বংস করে না ফেলে। আমি বললাম, হে আমার খালা! আপনি এমন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করছেন, আমাদের শহরে যাঁর সম্পর্কে আলোচনা হয়নি। অর্থাৎ উনার ছানা-ছিফত করা কাফির, মুশরিকরা অপরাধ বলে মনে করে। নাঊযুবিল্লাহ! আপনি এ সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করুন। খালা বললেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কিতাব নিয়ে এসেছেন। এর মাধ্যমে জিন-ইনসানকে তাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে আহ্বান করেন। অতঃপর তিনি বললেন, উনার নূর মুবারকই হচ্ছে প্রকৃত নূর মুবারক। উনার দ্বীন-ই সাফল্যময়। উনার আদেশ নির্দেশই নাজাত। সমগ্র কায়িনাত উনার অনুগত। যুদ্ধে কাফির মুশরিকরা নিহত হলে, তরবারী উত্তোলিত হলে এবং বর্শা বিক্ষিপ্ত হলে হৈ হুল্লোড় করা ছাড়া তাদের কোনো উপকার হবে না।
হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি একথাগুলো শুনে ফিরে আসলাম। এ কথা-বার্তা আমার অন্তরে প্রভাব বিস্তার করলো এবং আমি এ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলাম।
وكان لى مجلس عند حضرت أبى بكر عليه السلام، فأتيته فأخبرته بما سمعت من خالتى، فقال ويحك يا حضرت عثمان عليه السلام، إنك رجل حازم ما يخفى عليك الحق من الباطل ما هذه الأوثان يعبدها قومنا أليست من حجارة صم لا تسمع ولا تبصر ولا تضر ولا تنفع؟ قلت بلى والله إنها كذلك قال فقد والله صدقتك خالتك. هذا رسول الله صلى الله عليه وسلم حضرت محمد بن عبد الله صلى الله عليه و سلم قد بعثه الله تعالى برسالته إلى خلقه، قال فو الله ما تمالكت حين سمعت قوله أن أسلمت ثم لم ألبث ان تزوجت رقية، فكان يقال أحسن زوج رقية و حضرت عثمان عليه السلام.
আমি সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার কাছে পূর্ব থেকেই যাওয়া-আসা করতাম। আমি উনার নিকট এলাম এবং আমার খালার কাছে যা শুনেছিলাম সে সম্পর্কে উনাকে অবহিত করলাম। সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম! আপনার মঙ্গল হোক। আপনি খুবই সতর্ক, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী ব্যক্তি। হক্ব ও নাহক্ব বা সত্য ও মিথ্যা আপনার জানা থাকার কথা। আপনার মতো ব্যক্তির অন্তরে হক্ব ও বাতিলের ব্যাপারে সংশয় থাকতে পারে না। ওই মূর্তিগুলো কি বস্তু যার পূজায় আমাদের সম্প্রদায় নিমগ্ন? ওই মূর্তিগুলো কি অন্ধ ও বধির নয়? যারা শুনতে পায় না, দেখতেও পায় না; আর না কারো ক্ষতি করতে পারে, না উপকার।
হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এই প্রতিমাদের অবস্থা তাই। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম আপনার খালা আপনাকে নির্ভুল কথা বলেছেন। তিনি হচ্ছেন হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, (হাবীব) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রসূল হিসেবে সৃষ্টি করে কায়িনাতবাসীর জন্য প্রেরণ করেছেন। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে উনার পবিত্র খিদমত শরীফ-এ উপস্থিত হয়ে উনার কথা মুবারক আপনি কি শুনতে চান? আমি বললাম হ্যাঁ, অবশ্যই। অতঃপর আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদম শরীফ-এ উপস্থিত হলাম। তিনি বললেন, হে হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক আপনাকে জান্নাতের দিকে ডাকেন। আপনি ইসলাম কবুল করুন। আমি হচ্ছি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল (হাবীব) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে আপনার এবং আপন সৃষ্টির হিদায়েতের জন্য প্রেরণ করেছেন।
হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক শুনে খুশি হয়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম। কিছুদিন অতিবাহিত হতেই আমি সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ মুবারক করলাম। এরপর লোকজন বলতেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম ও হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনারা উভয়ে খুবই উত্তম ও পূতঃপবিত্র। সুবহানাল্লাহ!
সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ গ্রন্থে ১ম খ- ১৫৯ ও ১৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত উসমান ইবনে আফফান আলাইহি সালাম তিনি বলেন,
فو الله ما تمالكت حين سمعت قوله ان اسلمت و اشهدت ان لا اله الا الله وحده لا شريك له وان حضرت محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه و سلم
মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার কথা মুবারক শুনামাত্র অজ্ঞাতসারে ও অবলীলায় দ্রুত আমার অন্তরে ইসলাম এসে গেলো, আর মুখে এ কালিমা শরীফ জারি হয়ে গেলো”
اشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له وان حضرت محمدا عبده و رسوله صلى الله عليه و سلم
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি এক উনার কোনো শরীক নেই এবং হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার বান্দা ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
در دل هر امتى كز حق مزه است +
روئ واواز پبمبر معحزه است
প্রত্যেক জাতির অন্তরে হক্ব বা সত্যের স্বাদ আছে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের চেহারা মুবারক ও আওয়াজ মুবারকও এক মু’জিযা শরীফ।”
এর অল্প কিছুদিন পরেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় শাহযাদী সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে আমার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। সকলেই এ নিকাহ মুবারকে স্বাগতম ও আহলান সাহলান জানান। আর আমার খালা সু’দা তিনি এ কবিতা পাঠ করলেন,
هدى الله عثمان الصفى بقوله +
فار شده و الله يهدى الى الحق
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বান্দা হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনাকে হিদায়েত দিয়েছেন, আর মহান আল্লাহ পাক তিনিই সত্যের পথ প্রদর্শন করেন।”
فتابع بالر ائ السديد محمدا +
وكان ابن اروى لايصد عن الحق
অতঃপর হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় সঠিক সিদ্ধান্তে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করলেন। আরওয়ার পূত্র তিনি চিন্তা ফিকির এবং বুদ্ধিদ্বারা কাজ করলেন।” অর্থাৎ তিনি হক্বকে অস্বীকার করলেন না। (আরওয়া বিনতে কারীয হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার মায়ের নাম।)
و انكحه المبعوث احدى بناته +
فكان كبدر مازج الشمس فى الافق
এবং ওই সত্য রসূল আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের এক নূরী কন্যাকে উনার সাথে নিকাহ মুবারক পড়িয়ে দিলেন। সত্য সত্যই তা এমন জুটি যেনো পূর্ণিমার চাঁদ সূর্যের সাথে একত্রিত হয়েছে।”
فدى لك ياابن الهاشميين مهجتى فانت امين الله ارسلت للخلق
হে হাশিমের পূত্র হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার জীবন আপনার প্রতি উৎসর্গিত হোক, আপনি তো মহান আল্লাহ পাক উনার আমীন এবং সৃষ্টির হিদায়েতের জন্য প্রেরিত।” (আল ইসাবা ১ম খ- ৩২৭ পৃষ্ঠা)

0 Comments: