হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৫৮৫-৭৫০) (ঝ)


অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عن حضرت ابى ذر رضى الله تعالى عنه قال سألت حضرت رسول الله صلى الله عليه و سلم هل رأيت ربك قال نورا انى اراه
“হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন যে, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি আপনার রব উনাকে দেখেছেন? তখন তিনি বললেন যে, আমি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে নূর হিসেবে দেখেছি।” (মুসলিম শরীফ)
আরো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
رايت ربى عز وجل فى صورة شاب امرد
“আমি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে দাড়ি-মোছবিহীন বালকের মতো দেখতে পেয়েছি।”
এগুলো হচ্ছে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার মেছালী ছূরত মুবারক। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে মেছালী ছূরতে আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও দেখতে পেয়েছেন উম্মত হিসেবে। যেমন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন যে, আমি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে একশত বার মেছালী ছূরত মুবারকে দেখতে পেয়েছি। এমনিভাবে হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনারা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে মেছালী ছূরত মুবারকে অসংখ্যবার দেখতে পেয়েছেন। যার বর্ণনা উনাদের কিতাবাদি এবং ওয়াজ শরীফসমূহে রয়েছে। কাজেই বান্দা পৃথিবীতে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্বপ্নে, কাশফে, মুরাকাবায় এবং ইবাদতের মাধ্যমে দেখতে পাবে। তবে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারকে দেখা সম্ভব নয়।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মাকতুবাত শরীফ’-এ উল্লেখ করেন, “যদি কেউ খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে কোন ছূরত মুবারকে দেখে এবং তা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী ছূরত মুবারক বলে মনে করে তবে তা কুফরী হবে।”
কিন্তু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি আমার মহান রব উনাকে দেখেছি।” এখন প্রশ্ন হলো তিনি কি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারকে দেখেছেন?
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বলা হয়েছে,
عن حضرت عبد الرحمن بن عائش رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم رأيت ربى عز وجل فى احسن صورة قال فيم يختصم الملا الا على قلت انت اعلم قال فوضع كفه بين كتفى فوجدت بردها بين ثدى فعلمت ما فى السموات والارض-
অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে উত্তম ছূরত মুবারকে দেখেছি। তখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: মালায়ে আলা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কি নিয়ে আলোচনা করছেন? আমি বললাম: আয় খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক! আপনিই ভাল জানেন। তখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতময় হাত মুবারক আমার দুই কাঁধ মুবারক উনাদের মাঝে রাখলেন। তখন আমি উনার শীতলতা অনুভব করলাম। আর আমাকে আসমান এবং যমীনের সবকিছুই অবগত করানো হলো।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা বুঝা যায় যে, স্বয়ং খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মি’রাজ শরীফই হাদিয়া করেননি বরং আসমান যমীনের সব কিছুই অবগত করানোর বিষয়টাও আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করছেন। সুবহানাল্লাহ! তবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত অন্য কোন হযরত নবী বা হযরত রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বী ছূরত মুবারক দেখতে পাননি। হযরত মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি যখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে দেখতে চেয়েছিলেন; তখন খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনাকে জানিয়ে দিলেন যে, لن ترانىহে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম! আপনি আমাকে দেখতে পাবেন না।”
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, পেয়ারা নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দর্শন দেয়ার জন্য উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মি’রাজ শরীফ উনার বরকতময় রজনীতে বেহেশতী রহমতপূর্ণ বাহনের মাধ্যমে উনার শাহী আরশে মুয়াল্লা মুবারক ওখানে ডেকে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ মুবারক হয়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হে আমার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আসমান ও যমীন সৃষ্টির দিন থেকে আমি আপনার ও আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ রাকাত নামায ফরয করেছি। সুতারাং আপনি ও আপনার উম্মতদেরকে এ আদেশ মুবারকের অনুবর্তী করুন। ....... হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম তিনি আমার হাত মুবারক ধরলেন এবং আমি দ্রুতগতিতে সেখান থেকে ফিরে এলাম। সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট আমি ফিরে এলাম কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না। এরপর আমি সাইয়্যিদুনা হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কাছে এলাম। তিনি বললেন, আপনাকে কি বলা হলো ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি বললাম, আমার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার ও আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ রাকআত নামায ফরয করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আপনার উম্মত এই পঞ্চাশ রাকআত নামায আদায় করার শক্তি রাখে না। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পুনরায় ফিরে গিয়ে হালকা করার আবেদন করুন। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছলাম এবং খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরয করলাম, হে আমাদের খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক! আমাদের নামায আরো হালকা করে দিন। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করলেন, আমি ১০ রাকআত নামাযকে হ্রাস করে দিলাম। পুনরায় সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট ফিরে এলাম এবং বললাম, দশ রাকআত হ্রাস করা হয়েছে।
হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দয়া করে আবার ফিরে যান আরো হালকা করার আবেদন করুন। এরপর রাবী শেষ পর্যন্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। অবেশেষে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন,
هن خمس بخمسين
অর্থাৎ “এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায দিলাম যা পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের সমান।”
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে এসে পৌঁছলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আসমানে আমি যার কাছ দিয়ে এসেছি, সেই আমাকে সালাম বা মারহাবা দিয়েছেন এবং আমাকে দেখে হেসেছেন কিন্তু এক ব্যক্তিকে আমি সালাম দিলে সে আমার সালামের জবাব দিয়েছেন এবং আমাকে মারহাবা দিয়েছেন কিন্তু আমাকে দেখে তিনি হাসেননি। ওই ব্যক্তি কে? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, উনি হচ্ছেন দোযখের পাহারাদার বা রক্ষক হযরত মালেক আলাইহিস সালাম। দোযখ সৃষ্টির পর থেকে তিনি কখনও হাসেননি। কাউকে দেখে তিনি হাসলে আপনাকে দেখে অবশ্যই হাসতেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, এরপর আমি ফিরে আসার জন্যে বোরাকে সাওয়ার হলাম। পথিমধ্যে কুরাইশদের একটি উটের কাফেলার কাছ দিয়ে আসা হলো। কাফেলাটি খাদ্যশস্য বহন করছিলো। একটি উটের পিঠে দুটি বস্তা ছিলো, একটি কালো রঙের অপরটি সাদা রঙের। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাফেলার মুখোমুখি হলেন সেই উটটি উত্তেজিত হয়ে পলায়ন করলো। কিছুদূর ছুটে যেতেই হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। ফলে উটের হাত পা ভেঙ্গে গেলো।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখান থেকে চলে এলেন। তিনি সকাল বেলা পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার উক্ত ঘটনা প্রকাশ করলেন। কাফির-মুশরিকরা শুনে তৎক্ষণাত তা সত্যের বিপরীত বলে উড়িয়ে দিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
এ সময় এক কাফির সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার নিকট এসে বললো, আপনারা যাঁকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি আজকে কি বলছেন জানেন? শুনে রাখুন তিনি বলেছেন, গত রাতে নাকি তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ এবং সেখান থেকে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার মুবারক লাভ করে ফিরে এসেছেন। অথচ এখান থেকে পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার দূরত্ব হলো এক মাসের রাস্তা।
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে ব্যক্তি তুমি কি নিজ কানে তা শুনেছো যে, তিনি পবিত্র মিরাজ শরীফ করেছেন? তখন সে বললো, হ্যাঁ! আমি আমার নিজ কানে শুনেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে ব্যক্তি তুমি শুনে রাখো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি সত্যিই একথা বলে থাকেন তাহলে আমি একবার কেনো হাজারবার বিশ্বাস করি। সুবহানাল্লাহ! কারণ উনার যিনি খাদিম হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি চোখের পলকে আসমান তথা সর্বত্রই যাওয়া আসা করেন। তাহলে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোনো পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপস্থিত হলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে ‘ছিদ্দীক্ব’ হিসেবে কবুল করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এরপর দেখা গেলো, মুশরিকরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে প্রশ্ন করলো, আপনি যে বলছেন আপনি মি’রাজ শরীফ করেছেন, তার প্রমাণ কি? আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমাদের একটি কাফেলার কাছ দিয়ে আমি আগমন করেছি। কাফেলাটি অমুক জায়গায় ছিলো। কাফেলার উট আমাদের বোরাক দেখে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। কাফেলার একটি উটের পিছে দুটি বস্তা ছিলো, একটি কালো, অপরটি সাদা। উটটি হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তার হাত পা ভেঙ্গে যায়। অতঃপর কাফেলাটি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার দিকে ফিরলে কাফির, মুশরিকরা জিজ্ঞাসা করলো। জবাবে কাফেলার লোকেরা তাই বললো, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাফির মুশরিকরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আরো প্রশ্ন করলো, যে সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে আপনার সাক্ষাত হয়েছে উনাদের মধ্যে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন কি? আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ ছিলেন। তারা বললো, উনাদের দেহাবয়ব মুবারক সম্পর্কে একটু বর্ণনা করুন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
اما حضرت موسى عليه السلام فرجل ادم كانه من رجال ازد عمان، واما حضرت عيسى عليه السلام فرجل ربعة سبط يعلوه حمرة، كانما يتحادر من لحيته الجمان
অর্থ: হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শরীর মুবারকের রঙ ছিলো গোধুম। মনে হচ্ছিলো যেনো তিনি আযদ গোত্রের একজন ব্যক্তি। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার শরীর মুবারক মাঝারি গড়নের এবং সোজা চুল বিশিষ্ট। উনার গাত্রবর্ণ লালিমার ঝলক আছে। মনে হয় যেনো উনার দাড়ি মুবারক থেকে মতি ঝরে পড়ছে।” সুবহানাল্লাহ! (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ২৫৭ পৃষ্ঠা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
عن حضرت جابر بن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما كذبتنى قريش حين اسرى بى الى بيت المقدس قمت فى الحجر فجلى الله لى بيت المقدس فطفقت اخبرهم عن اياته وانا انظر اليه-
অর্থ: হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কুরাইশরা আমার মি’রাজ শরীফ উনার ঘটনাকে মিথ্যা বলে ঘোষণা করে। আমি কি করে কখন পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ ছফর করলাম ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ওই সময় হাতিমে দাঁড়িয়ে ছিলাম। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনাকে আমার দৃষ্টি মুবারকের সামনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরলেন, আমি দেখে দেখে পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ উনার সমস্ত বর্ণনা কুরাইশদের সামনে বলে দিলাম। (খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ২৬২ পৃষ্ঠা)

খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ২৮০, ২৮১ ও ২৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
اخرج حضرت ابو نعيم رحمه الله عليه، عن حضرت محمد بن كعب القرظى رضى الله تعالى عنه قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم حضرت دحية الكلبى رضى الله تعالى عنه إلى قيصر وكتب اليه معه فلقيه مجمص، فدعا الترجمان فإذا فى الكتاب من محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم الى قيصر صاحب الروم، فغضب اخ له وقال تنطر فى كتاب رجل بدأ بنفسه قبلك وسماك قيصر صاحب الروم، ولم يذكر لك ملكا قال له قيصر إنك والله ما علمت أحمق صغيرا مجنونا كبيرا تريد أن تمزق كتاب رجل قبل ان انظر فيه، فلعمرى لئن كان رسول الله صلى الله عليه وسلم كما يقول فنفسه أحق ان يبدأ بها منى، وإن كان سمانى صاحب الروم لقد صدق.

অর্থ: হযরত আবু নায়ীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে কা’ব আল ক্বুরযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত দিহইয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে একটি পত্রসহ রোম স¤্রাটের কাছে প্রেরণ করেন। হযরত দিইইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি স¤্রাটের সাথে মেছ নামক স্থানে সাক্ষাৎ করলেন। পত্রের সূচনা ছিলো এরূপ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে রোম স¤্রাটের প্রতি। স¤্রাটের ভাই পত্রখানা দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে বললো, দেখুন, দেখুন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার নামের পূর্বে নিজের নাম দিয়ে পত্র শুরু করেছেন এবং আপনাকে কেবল রোম স¤্রাট বলেছেন! আপনার বিশাল রাজত্বের উল্লেখ করেননি। স¤্রাট বললেন, আমি তোমাকে নির্বোধ, কমবয়সী ও উন্মাদ মনে করি। তোমার অভিপ্রায় এ যে কারও পত্র পাঠ করার পূর্বেই তা ছিঁড়ে ফেলতে হবে। আমার জীবনের ক্বসম! তিনি যদি উনার দাবিতে সত্যবাদী হন যে, তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তবে নিজের নাম দিয়ে পত্র শুরু করাই সমীচীন। তিনি আমাকে রোম স¤্রাট লিখেছেন। এটা মূলত মিথ্যা নয়, সত্য।
ما أنا إلا صاحبهم وما أملكهم، ولكن الله سخرهم لى ولو شاء لسلطهم على ثم قرأ قيصر الكتاب وقال يامعشر الروم، إنى لأظن هذا الذى بشر به حضرت عيسى بن مريم عليه السلام، ولو أعلم انه هو مشيت اليه حتى أخدمه بنفسى لا يسقط وضوءه إلا على يدى، قالوا ما كان الله ليجعل ذلك فى الاعراب الاميين ويدعنا ونحن أهل الكتاب. قال فأصل الهدى عندى بينى وبينكم الإنجيل ندعو به فنفتحه، فإن كان هو إياه اتبعناه، وإلا أعدنا عليه خواتمه كما كانت إنما هى خواتم مكان خواتم.
খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি রোমবাসীদেরকে আমার অনুগত করে দিয়েছেন তিনি ইচ্ছা করলে তাদেরকে আমার প্রতি বিরূপও করে দিতে পারেন। এরপর স¤্রাট পাঠ করলেন এবং বললেন, হে রোমবাসীরা! আমি মনে করি তিনি সেই সুমহান ব্যক্তি, যাঁর সুসংবাদ হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি দিয়েছেন। যদি আমি নিশ্চিতরূপে জানতে পারি যে, তিনিই সেই ব্যক্তি, তবে আমি উনার কাছে যাবো এবং স্বয়ং উনার খিদমত করবো। উনার অযুর পানি মুবারক আমার হাত ছাড়া মাটিতে পড়তে দিবো না।
রোমকরা বললো, আমাদের যিনি রব, খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ নন যে, তিনি এমন একজন বেদুঈনকে রিসালত দিয়ে প্রেরণ করবেন যিনি লেখাপড়া জানেন না। নাঊযুবিল্লাহ! আর আপনি আমাদেরকে বাদ দিবেন। অথচ আমরা কিতাবধারী। স¤্রাট তাদের কথা শুনলেন এবং বললেন, আসল হিদায়েত আমার কাছে রয়েছে। আমার ও তোমাদের মধ্যে আসমানী কিতাব ইনযীল শরীফ আছে সেটি এনে খুলে দেখবো। যদি তিনি সেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হন তবে আমরা একান্তভাবে উনার অনুসরণ করবো। নতুবা আমরা পূর্ববৎ ইনযীল শরীফ মহর করে রাখবো। এক মহরের জায়গায় অন্য একটি মহর লেগে যাবে।
قال وعلى الانجيل يومئذ إثنا عشر خاتما من ذهب ختم عليه هرقل، فكان كل ملك يليه بعده ظاهر عليه بخاتم اخر حتى ألفى ملك قيصر وعليه إثنا عشر خاتما يخبر أولهم لاخرهم أنه لا يحل لهم ان يفتحوا الإنجيل فى دينهم وأنه يوم يفتحونه يغير دينهم ويهلك ملكهم، فدعا بالانجيل ففض عنه احد عشر خاتما حتى بقى عليه خاتم واحد قامت إليه الشمامسة والأساقفة والبطارقة، فشقوا ثيابهم وصكوا وجوههم ونتفوا رؤوسهم، قال ملكم؟ قالوا اليوم يهلك ملك بيتك ويتغير دين قومك. قال فأصل الهدى عندى. قالوا لا تعجل حتى تسأل عن هذا وتكاتبه وتنظر فى أمره، قال فمن نسأل عنه؟ قالوا قوما كثيرا بالشام،
রাবী বর্ণনা করেন, সে সময় ইনযীল শরীফ উনার মধ্যে বারটি স্বর্ণের মোহর আঁটা ছিলো। প্রথমে এতে রোম স¤্রাট হিরাক্লিয়াস মোহর লাগিয়েছিলো। এরপর যত স¤্রাট তার স্থলাভিষিক্ত হতো, সে তাতে মহর লাগিয়ে দিতো। প্রত্যেক স¤্রাট তার পরবর্তী স¤্রাটকে এ বিষয় জ্ঞাত করতো যে, আমাদের ধর্মে ইনযীল শরীফ উনাকে খোলা বৈধ নয়। যেদিন ইনযীল শরীফ খোলা হবে সেদিন খ্রিস্টানদের ধর্ম পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং আমাদের বাদশাহী খতম হয়ে যাবে। মোট কথা স¤্রাট ইনযীল শরীফ আনালেন এবং তার এগারোটি মহর ভেঙ্গে ফেললেন। মাত্র একটি মহর বাকি রয়ে গেলো। এমন সময় পাদ্রী তার সহকারীদের নিয়ে সকলেই কান্নাকাটি, আহাজারি করতে করতে স¤্রাটের কাছে এলো। তারা পরনের বস্ত্র ছিন্ন করতে করতে, স্ব স্ব মুখম-ল আঘাত করতে করতে এবং মাথার চুল ছিঁড়তে শুরু করলো। স¤্রাট জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কি হলো? এমন করছো কেনো? তারা বললো: আজ আপনার পরিবারের বাদশাহী বরবাদ হয়ে যাবে এবং আমাদের ধর্ম তথা জাতীয় ধর্ম বদলে যাবে।
¤্রাট বললেন, আসল হিদায়েত আমার নিকট রয়েছে। তারা বললো, তড়িঘড়ি করবেন না। ওই সুমহান ব্যক্তির অবস্থা অনুসন্ধান করুন। উনার সাথে পত্র লেখালেখি করুন এবং উনার সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করুন। স¤্রাট বললেন, এমন কে আছে উনার নিকট আমরা সেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবস্থান জানতে পারবো। পাদ্রীরা বললো, সিরিয়ায় অনেক জাতির লোক রয়েছে।

0 Comments: