হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৫৮৫-৭৫০) (ঙ)












সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ত্বায়িফ-এ ছফর

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার চাচা আবূ ত্বালিব উনার ও উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর মক্কা শরীফ-এর কাফির, মুশরিকরা বিভিন্ন রকম দুঃখ-কষ্ট দিতে লাগলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা জীবিত থাকাকালীন ওই সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দিতে কাফির, মুশরিকরা সাহস পায়নি। অন্যদিকে উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল খিদমতের আঞ্জাম দেয়া, যা বলার অপেক্ষাই রাখে না। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ-এর দশম বৎসর শাওয়াল মাসের শেষের ভাগে ত্বায়িফ ছফর করেন। হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছফর সঙ্গী।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ১৩৫, ১৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه فلما هلك أبو طالب نالت قريش من رسول الله عليه صلى الله عليه من الاذى مالم تكن تالته منه فى حياة عمه أبى طالب، فخرج رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى الطائف يلتمس من ثقيف النصرة والمنعة بهم من قومه. ورجا أن يقبلوا منه ماجاءهم به من الله تعالى، فخرج اليهم وحده.
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “আবূ ত্বালিব উনার ইন্তিকালের পর কুরাইশরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি কঠিন অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। অথচ উনার চাচা আবূ ত্বালিব উনার জীবদ্দশায় যা তারা করতে পারতো না। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ত্বায়িফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। তিনি চিন্তা করেছেন যে, ত্বায়িফের অধিবাসীরা যদি উনার খিদমত করে এবং উনার আপন সম্প্রাদায়ের যুলুম-অত্যাচারের ব্যাপারে তারা উনার খিদমতের আঞ্জাম দেয়। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এও চিন্তা করেছিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা তারা গ্রহণ করে তাহলে তারা ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী হাছিল করতে পারবে। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাই ত্বায়িফের উদ্দেশ্যে একাকি যাত্রা করেন।
فحدثنى حضرت يزيد بن أبى زياد رحمة الله عليه عن حضرت محمد بن كعب القرظى رحمة الله عليه. قال انتهى رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى الطائف وعمد إلى نفر من ثقيف هم سادة ثقيف وأشرافهم وهم أخوة ثلاثة. عبد ياليل، ومسعود، وحبيب بنو عمرو ابن عمير بن عوف بن عقدة بن غيرة بن عوف بن ثقيف. وعند أحدهم امرأة من قريش من بنى جمح، فجلس اليهم فدعاهم إلى الله وكلهم لما جاءهم له من نصرته على الاسلام والقيام معه على من خالفه من قومه، فقال أحدهم هو يمرط ثياب الكعبة إن كان الله أرسلك. وقال الا خر أما وجد الله أحدا أرسله غيرك؟ وقال الثالث والله لا أكلمك أبدا لئن كنت رسولا من الله كما تقول لانت أعظم خطرا من أن أرد عليك الكلام ولئن كنت تكذب على الله ما ينبغى لى أن أكلمك.
বর্ণনাকারী হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবূ যিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে কা’বা কুরাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ত্বায়িফে পৌঁছে ছাক্বীফ গোত্রের কয়েকজন লোকের সাথে সাক্ষাৎ হলো। যারা ছাক্বীফ গোত্রের নেতৃস্থানীয় ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলো। তারা ছিলো তিন ভাই। আব দাইয়ালীন, মাসউদ ও হাবীব। তাদের পিতা হলো আমর ইবনে উমাইর ইবনে আওফ ইবনে উকদা ইবনে গায়রা ইবনে আওফ ইবনে ছাক্বীফ। তাদের একজনের স্ত্রী ছিলো কুরাইশের বনু জুমাহ গোত্রের জনৈক মহিলা। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের নিকট বসলেন। তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে আসার আহ্বান জানালেন এবং নিজ সম্প্রদায়ের বিরোধী পক্ষদের মুকাবিলায় ইসলাম রক্ষায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত করার জন্যে আবেদন জানালেন। তাদের মধ্যে একজন বললো, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আপনাকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামরূপে প্রেরণ করে থাকেন, তবে তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ-এর গিলাফ ছেঁড়ার ব্যবস্থা করেছেন। দ্বিতীয় জন বললো, মহান আল্লাহ পাক তিনি রসূলরূপে প্রেরণ করার জন্যে আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বুঝি পাননি? নাঊযুবিল্লাহ! তৃতীয়জন বললো, আমি আপনার সঙ্গে কোনো কথাই বলবো না। কারণ, আপনি যদি প্রকৃতই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়ে থাকেন; তবে আপনার কথা মুবারকের প্রতিবাদ বা বিরোধিতা করা হবে চরম বিপজ্জনক। আর যদি আপনি এর বিপরীত জন হন তবে আপনার সাথে কথা বলা আমি উচিত বলে মনে করি না।
فقام رسول الله صلى الله عليه وسلم من عندهم وقد يئس من خير ثقيف، وقد قال لهم - فيما ذكرلى - إن فعلتم ما فعلتم فاكتموا على وكره رسول الله صلى الله عليه أن يبلغ قومه عنه فيذئرهم ذلك عليه. فلم يفعلوا وأغروا به سفهاءهم وعبيدهم يسبونه ويصيحون به حتى اجتمع عليه الناس وألجؤه إلى حائط لعتبة ابن ربيعة وشيبة بن ربيعة وهما فيه، ورجع عنه من سفهاء ثقيف من كان يتبعه. فعمد الى ظل حبلة من عنب فجلس فيه وابنا ربيعة ينظران اليه ويريان ما يلقى من سفهاء أهل الطائف، وقد لقى رسول الله صلى الله عليه وسلم - فيما ذكرلى - المرأة التى من بنى جمح، فقال لها ماذا لقينا من أحمائك. فلما اطمأن
এরপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছাক্বীফ গোত্র থেকে দুঃখ-কষ্টে ফিরে আসার জন্যে আসন মুবারক থেকে উঠে দাঁড়ালেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা যে আচরণ করেছ তা তো করেছই তবে সেটি গোপন রাখবে। তিনি চেয়েছেন উনার সম্প্রদায়ের লোকজন যেনো এ ঘটনাটা জানতে না পারে। অন্যথায় তারা এটি নিয়ে উনাকে আরো ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করবে। ওই ব্যক্তিরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক কথাকে রক্ষা করেনি। তারা নিজেদের গু-া-বদমাশ ও দাস-দাসীদেরকে উনার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিলো। ওরা উনাকে গালি-গালাজ দিতে ও উনাকে নিয়ে হৈ চৈ করতে শুরু করে দেয়। ফলে বহু লোক জমায়েত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি বাগানে তাশরীফ নেন। বাগানের মালিক ছিলো রাবীয়ার দু’পুত্র উতবা এবং শায়বা। তারা তখন উভয়ে বাগানের মধ্যে ছিলো। ছাক্বীফ গোত্রের নির্বোধ দুর্বৃত্তরা তখন ফিরে আসে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি আঙ্গুর বাগানের ছায়ায় গিয়ে বসে পড়লেন।
ত্বায়িফের দুর্বৃত্ত দুষ্ট লোকেরা উনার সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করছিলো উতবা এবং শায়বা তা প্রত্যক্ষ করছিলো। জুমাহ গোত্রের উল্লেখিত মহিলাটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো। তিনি উনাকে বলেছিলেন, তোমার শ্বশুর পক্ষ থেকে আমি কি ব্যবহারই না পেলাম! আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইতমিনান হলেন।
قال - فيما ذكر - اللهم اليك أشكو ضعف قوتى وهو انى على الناس يا أرحم الراحمين، أنت رب المستضعفين، وأنت ربى الى من تكلنى، الى بعيد يتجهمنى أم الى عدو ملكته أمرى. إن لم يكن بك غضب على فلا أبالى ولكن عافيتك هى أوسع لى، أعوذ بنور وجهك الذى أشرقت له الظلمات، وصلح عليه أمر الدنيا والاخرة من أن تنزل بى غضبك أو تحل على سخطك لك العتبى حتى ترضى لا حول ولا قوة الا بك. قال فلما راه ابنا ربيعة عتبة وشيبة وما لقى تحركت له رحمهما فدعوا غلاما لهما نصرانيا يقال له عداس (وقالا له) خذ قطفا من هذا العنب فضعه فى هذا الطبق ثم اذهب به الى ذلك الرجل فقل له يأ كل منه.
“নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আমি আমার, উপায় হীনতা এবং লোকচক্ষে অকিঞ্চিৎকরতা সম্পর্কে আপনার দরবারেই ফরিয়াদ করছি। হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াময় মহান আল্লাহ পাক! আপনিই অবসাদগ্রস্ত, অক্ষম ও দুর্বলদের মালিক। আমার মালিকও আপনিই। আপনি ছাড়া আমার তো আর কেউ নেই। আপনি কি আমাকে এমন দুরবর্তীদের নিকট সমর্পণ করবেন যারা রুক্ষ্ম, কর্কশ ভাষায় আমাকে জর্জরিত করবে, নাকি এমন শত্রুর নিকট সমর্পণ করবেন। যারা আমার কাজকে বিপর্যস্ত করতে চায়। আমার প্রতি আপনার সন্তুষ্টি থাকার কারণে আমি এসব কিছুর কোনো পরোয়া করি না। আপনার রহমতই আমার জন্যে প্রশস্ততম সম্বল। আপনার যে নূর মুবারকের প্রভাবে সকল অন্ধকার বিদূরিত হয় আমি সেই নূর মুবারকের আশ্রয় কামনা করছি। যা উম্মতের জন্য প্রযোজ্য আমার ইহকালীন, পরকালীন কাজকর্ম সুবিন্যস্ত করে দিন। আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্টি দায়েমীভাবে জারী রাখুন। আপনি শক্তি দান না করলে সৎকাজ করার এবং পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার কোনো ক্ষমতা করো নেই।
বর্ণনাকারী বলেন, রাবীয়ার পুত্র উতবা এবং শায়বা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ অবস্থা দেখলো। তখন উনার প্রতি তাদের রক্তের টান মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো।
আদ্দাস নামের তাদের এক খ্রিস্টান ক্রীতদাসকে ডেকে তারা বললো, এখান থেকে এক থোকা আঙ্গুর নিয়ে এই পাত্রে করে ওই ব্যক্তির নিকট নিয়ে যাও এবং উনাকে এসব আঙ্গুর ফল থেকে খেতে বলো।
ففعل عداس ثم ذهب به حتى وضعه بين يدى رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم قال له كل، فلما وضع رسول الله صلى الله عليه وسلم يده فيه قال بسم الله ثم أكل، ثم نظر عداس فى وجهه ثم قال والله ان هذا الكلام ما يقوله أهل هذه البلاد. فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم ومن أهل أى بلاد أنت ياعداس وما دينك؟ قال نصرانى وأنا رجل من أهل نينوى. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قرية الرجل الصالح حضرت يونس بن متى عليه السلام. فقال له عداس وما يدريك ما حضرت يونس بن متى عليه السلام ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ذلك اخى كان نبيا وأنا نبى. فاكب عداس على رسول الله صلى الله عيه وسلم يقبل رأسه ويديه وقدميه.
আদ্দাস তাই করলো। আঙ্গুরের পাত্র নিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে রেখে তা থেকে খেতে বললো। পাত্রে হাত দিয়ে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিসমিল্লাহ বললেন এবং খেতে শুরু করলেন। আদ্দাস উনার চেহারা মুবারকের দিকে তাকিয়ে বললো, এ অঞ্চলের লোকেরা তো এরূপ বাক্য উচ্চারণ করে না। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বললেন, তোমার দেশ কোথায়? তোমার ধর্ম কি? সে বললো, আমি খ্রিস্টান, আমার দেশ নিনোভা। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তুমি পূণ্যবান হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তা আলাইহিস সালাম উনার দেশের লোক? আদ্দাস বললো, হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তা আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে আপনি কি করে জানলেন? তিনি উত্তর দিলেন, উনি তো আমার ভাই, উনি নবী ছিলেন আর আমিও নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আদ্দাস মাথা ঝুঁকিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারক, হাত মুবারক ও পা মুবারক চুম্বন করতে লাগলো।
قال يقول أبناء ربيعة احدهما لصاحبه اما غلامك فقد افسده عليك. فلما جاء عداس قالا له ويلك يا عداس مالك تقبل رأس هذا الرجل ويديه وقدميه؟ قال ياسيدى ما فى الارض شئ خير من هذا لقد اخبرنى بأمر ما يعلمه الا نبى. قالا له ويحك ياعداس لا يصرفنك عن دينك فان دينك خير من دينه.
وقد ذكر حضرت موسى بن عقبة رحمة الله عليه نحوا من هذا السياق الا انه لم يذكر الدعاء وزاد؛ وقعد له اهل الطائف صفين على طريقه، فلمامر جعلوا لا يرفع رجليه ولا يضعهما الا رضخوهما بالحجارة حتى ادموه فخلص منهم وهما يسيلان الدماء فعمد إلى ظل تخلة وهو مكروب وفى ذلك الحائط عتبة وشيبة ابنا ربيعة، فكره مكانهما لعداوتهما الله ورسوله. ثم ذكر قصة عداس النصرانى كنحو ماتقدم.
এদিকে উতবা ও শায়বা একে অন্যকে বলছিলো, তোমার ক্রীতদাসটিকে তো তিনি আসক্ত করে নিয়েছেন। আদ্দাস ফিরে এলো। তারা তাকে বললো, হতভাগা, তোমার কি হলো, তুমি ওই ব্যক্তির মাথা মুবারক, হাত মুবারক ও পা মুবারক চুমু খেলে? সে বললো, হে আমার সরদার দুনিয়াতে উনার চেয়ে উত্তম লোক অন্য কেউ নেই। উনি আমাকে এমন একটি কথা বলেছেন যা নবী ছাড়া অন্য কেউ জানেন না। তারা বললো, আদ্দাস খবরদার! তিনি যেনো তোমাকে তোমার ধর্ম থেকে ফিরিয়ে নিতে না পারেন। কারণ উনার ধর্ম অপেক্ষা তোমার ধর্মই উত্তম। নাঊযুবিল্লাহ! মূসা ইবনে উকবাও প্রায় এ রকম বর্ণনা করেছেন।
তবে দোয়ার কথাটি তিনি উল্লেখ করেননি। তিনি এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, ত্বায়িফের অধিবাসীরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাত্রা পথে দু’সারিতে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেয়। পথ অতিক্রমের সময় উনার পা মুবারক রাখা ও পা মুবারক তোলার সাথে সাথে প্রচ- পাথর নিক্ষেপে তারা উনার পদদ্বয় মুবারক রক্তে রঞ্জিত করে দিয়েছিলো। তিনি তাদেরকে অতিক্রম করে এগিয়ে গেলেন। তখন উনার পদদ্বয় মুবারক থেকে রক্ত মুবারক গড়িয়ে পড়ছিলো। একটি খেঁজুর বাগানের ছায়ায় তিনি তাশরীফ নিলেন। তখন ব্যথা বেদনায় তিনি জর্জরিত। ওই বাগানের মালিক ছিলো রাবীয়ার দুই পুত্র উতবা ও শায়বা। ওরা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শত্রু ছিলো বলে সেখানে তাদের উপস্থিতি তিনি পছন্দ করলেন না।
ছহীহ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ-এ উল্লেখ রয়েছে,
عن حضرت عائشة عليها السلام حدثته أنها قالت لرسول الله صلى الله عيه وسلم هل أتى عليك يوم كان أشد عليك من يوم أحد؟ قال ما لقيت من قومك كان أشد منه يوم العقبة، إذ عرضت نفسى على ابن عبد ياليل بن عبد كلال فلم يحببنى إلى ما أردت، فانطلقت وأنا مهموم على وجهى فلم استفق إلا وأنا بقرن الثعالب، فرفعت رأسى فاذا أنا بسحابة قد أظلتنى، فنظرت فاذا فيها حضرت جبريل عليه السلام فنادانى فقال إن الله قد سمع قول قومك لك وما ردوا عليك، وقد بعث لك ملك الجبال، لتأمره بما شئت فيهم. ثم نادانى ملك الجبال فسلم على ثم قال يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم قد بعثنى الله إن الله قد سمع قول قومك لك وأنا ملك الجبال قد بعثنى اليك ربك لتأمرنى ما شئت إن شئت تطبق عليهم الاخشبين؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم أرجو أن يخرج الله من أصلابهم من يعبد الله لا يشرك به شيئا.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, উহুদ দিবস অপেক্ষা কি অধিক কঠিন কোনো দিবস আপনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে এসেছে? জবাবে তিনি বললেন, আপনার সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আমি যে যুলুম-নির্যাতন ভোগ করেছি তার চেয়েও কঠিন নির্যাতন ভোগ করেছি আকাবা দিবসে। সে দিন আমি নুবুওওয়াত ও রিসালতের বিষয় অর্থাৎ ঈমান আনার বিষয় আবদ ইয়ালীল ইবনে আবদ বিলালের পুত্রদের নিকট পেশ করেছিলাম।
আমি যা করতে বলেছিলাম সে মতে তারা সাড়া দেয়নি। তখন আমি ফিরে আসলাম। আমি তখন দুঃখ ব্যথায় জর্জরিত। ক্লান্ত, শ্রান্ত। কারণ আল ছায়াবিল নামক স্থানে এসে আমি হুঁশ ফিরে পাই। আমি আমার মাথা মুবারক উঠিয়ে দেখলাম একখানা মেঘখ- আমাকে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। তাকিয়ে দেখি সেখানে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে বিনয়ের সাথে ডেকে বলছেন, আপনার সম্প্রদায় আপনাকে কি বলেছে এবং প্রত্যুত্তর দিয়েছে তা মহান আল্লাহ পাক তিনি শ্রবণ করেছেন। তিনি আপনার খিদমতে পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠিয়েছেন। ওদেরকে আপনি যে শাস্তি দিতে চান ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে তা করার নির্দেশ দিন। তিনি তা সম্পন্ন করে দিবেন। অতঃপর পাহাড়ের ফেরেশতা আলাইহিস সালাম আমাকে সালাম দিয়ে বিনীতভাবে বললেন, ইয়া হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন। আপনার গোত্রের লোকগণ আপনাকে কি উত্তর দিয়েছেন তা তিনি শুনেছেন। আমি পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে আপনার নিকট প্রেরণ করেছেন। আপনি ওদেরকে যে শাস্তি দিতে চান, সে মতে আপনি আমাকে নির্দেশ দিন। আপনি যদি চান তবে এই দু’পাহাড় দিয়ে তাদেরকে চাপা দেয়া হোক। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না, তা নয়। আমি বরং আশা প্রকাশ করেছি যে, তাদের বংশে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন এক সুমহান ব্যক্তিত্বকে দিবেন, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত বন্দেগী করবে উনার সাথে কাউকে শরীক করবে না। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ১৩৭)
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাফির, মুশরিকরা ত্বায়িফে এতো কষ্ট দিয়েছিলো যে, সেটা বলার বর্ণনার ভাষা নেই। ওই যালিমরা এতো পাথর নিক্ষেপ করেছিলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আহত ও রক্তাক্ত হয়ে যান। আঘাতের যন্ত্রণায় তিনি বসে পড়েন। কাফির নাদান, হতভাগারা উনার বাহু মুবারক ধরে আবার উনাকে দাঁড় করিয়ে দিতো পাথর মারার জন্য এবং হাসাহাসি করতো। নাঊযুবিল্লাহ!
হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি উনার সঙ্গী ছিলেন। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিফাযত করতে তিনি সর্বোচ্চ কোশেশ করেছিলেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবর্তে নিজের গায়ে পাথরের আঘাত লাগুক। ফলে হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমস্ত মাথা আঘাতে জর্জরিত হয়েছিলো। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক এমন ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল যে, উনার পা মুবারক থেকে রক্ত মুবারক গড়াচ্ছিলো। উনার না’লাইন শরীফ রক্ত মুবারক ঝরার কারণে পা মুবারকে লেগে গিয়েছিলো। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)


0 Comments: