হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৩৭৮-৪৮০) (ঘ)


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক (৪১৬)
সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম :
ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ উল্লেখ আছে,
وثبت فى صحيح مسلم من حديث حضرت أبى أمامة رحمة الله عليه عن حضرت عمرو ابن عبسة السلمى رضى الله تعالى عنه قال أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى أول ما بعث وهوبمكة، وهو حينئذ مستخفى، فقلت ما أنت؟ قال أنا نبى صلى الله عليه وسلم، فقلت وما النبى صلى الله عليه وسلم؟ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، قلت الله أرسلك؟ قال نعم قلت بما أرسلك؟ قال بان تعبد الله وحده لاشريك له وتكسر الاصنام، وتوصل الارحام. قال قلت نعم ما أرسلك به فمن تبعك على هذا؟ قال حر وعبد- يعنى حضرت أبابكر عليه السلام وبلالا رضى الله تعالى عنه- قال فكان حضرت عمرو عليه السلام يقول لقد رأيتنى وأنا ربع الاسلام. قال فاسلمت، قلت فاتبعك يارسول الله صلى الله عليه وسلم، قال لا ولكن الحق بقومك، فاذا أخبرت أنى قد خرجت فاتبعنى.
অর্থ: “হযরত উমামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাদীছ শরীফ-এ হযরত আমর ইবনে আবাসা আস সুলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের প্রথম দিকে আমি একদা উনার নিকট উপস্থিত হই। তখন তিনি অবস্থান করছিলেন মক্কা শরীফ-এ। তিনি তখন প্রকাশ্যভাবে ইসলামের দাওয়াত দিতেন না। আমি বললাম আপনি কে? তিনি বললেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি বললাম, আপনি কেমন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? তিনি বললেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল (হাবীব) ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক কী পয়গাম সহকারে আপনাকে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, এ কালাম দিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন যে, তোমরা শুধু একক মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত বন্দেগী করবে, মুর্তি বা প্রতিমাগুলো ভেঙ্গে ফেলবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবে। তিনি বলেন, আমি বললাম, যে পয়গাম নিয়ে আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে তা কতই না উত্তম। এ বিষয় আপনার অনুসরণ করছেন কারা? তিনি বললেন, একজন স্বাধীন ব্যক্তি এবং অন্যজন পরাধীন। অর্থাৎ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত আমর ইবনে আবাসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এরপর আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং আমি হলাম চতুর্থ ইসলাম গ্রহণকারী। তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি আপনার সঙ্গে অবস্থান করবো? তিনি বললেন, না, আপনি বরং আপাততঃ আপনার সম্প্রদায়ের নিকট চলে যান। যখন সংবাদ পাবেন যে, আমি প্রকাশ্যভাবে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি তখন আপনি আমার নিকট এসে আমার সাথে যোগ দিবেন।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৩১ পৃষ্ঠা)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ স্বাধীন ও অধীন শব্দ দুটি জাতিজ্ঞাপক অর্থাৎ “স্বাধীন প্রকৃতির লোকজন এবং পরাধীন প্রকৃতির লোকজন আমার অনুসরণ করছেন।”
উল্লেখ্য যে, হযরত আমর ইবনে আবাসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পূর্বে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাহলে আমর ইবনে আবাসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেকে চতুর্থ ইসলাম গ্রহণকারী মনে করাটা ছিলো উনার অবগতি অনুসারে। অর্থাৎ তিনি মনে করেছিলেন যে, তিনি চতুর্থ ইসলাম গ্রহণকারী। মূলত, তখন মুসলমানগণ উনারা নিজেদের ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখতেন। অনাত্মীয় এবং বেদুঈন তো দূরের কথা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নিকটও উনারা তা প্রকাশ করতেন না।
ছহীহ বুখারী শরীফ-এ উল্লেখ্য রয়েছে,
وفى صحيح البخارى من طريق حضرت أبى أسامة رحمة الله عليه عن هاشم بن هاشم عن حضرت سعيد بن المسيب رحمة الله عليه قال سمعت حضرت سعد بن أبى وقاص رضى الله تعالى عنه يقول ما أسلم أحد فى اليوم الذى أسلمت فيه، ولقد مكثت سبعة أيام وإنى لثك الاسلام. 
অর্থ : “হযরত আবূ উমামা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হিশাম ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়িব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি শ্রবণ করেছি হযরত সায়ীদ ইবনে আবী ওয়াককাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। তিনি বলেন, যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তখনো অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি। সাতদিন পর্যন্ত আমিই ছিলাম তৃতীয় ইসলাম গ্রহণকারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।”  অর্থাৎ তিনি যেদিন ইসলাম গ্রহণ করেছেন সেদিন অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি। আর উনার পূর্বে আরো অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। যেমন- উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম ও হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আর ইসলাম গ্রহণে উনাদের অগ্রগামিতা সম্পর্কে উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হযরত ইবনে আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এরূপ বর্ণনাকারীগণের অন্যতম। হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উল্লেখিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মাদারিজুন নুবুওওয়াত)

খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণ :

ইসলামের প্রথম খলীফা আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, খলীফাতু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক আব্দুল্লাহ। উনার কুনিয়াত মুবারক আবূ বকর, লক্বব মুবারক ছিদ্দীক্ব ও আত্বীক। উনার পিতা- উসমান; কুনিয়াত আবূ কুহাফা। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত মাতা হযরত উম্মুল খায়ির সালামা বিনতে সাখর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। পিতা-মাতা উভয়ে ছিলেন কুরাইশ বংশের তায়ম বিন মুররা পরিবারের। তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ-এর আড়াই বছর পর বিলাদত শরীফ লাভ করেন। (আসমাউর রিজাল)
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের পর নিজ আহাল উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, হযরত যায়িদ বিন হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন তিনি নিজ সাথী ও নিকটবর্তী ব্যক্তিদের ইসলামের দিকে আহবান করেন। সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় নিঃস্বার্থ সুহৃদ, বিশিষ্ট অন্তরঙ্গ, দীর্ঘ দিনের সাথী অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে ঈমান ও ইসলামের দাওয়াত দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি কোনো চিন্তা-ভাবনা, কোনো দ্বিধা সংশয় ছাড়াই প্রথম প্রস্তাবেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাওয়াত কবুল করলেন।
جشم احمد بر ابو بکرے  زدہ. وزیکے تصدیق صدیق امدہ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চক্ষু মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার উপর পড়ে। এক দৃষ্টি মুবারকই উনাকে ছিদ্দীক্বে পরিণত করলো।” সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমি যার নিকটই ইসলামের দাওয়াত পেশ করেছি সেই ইসলামের ব্যাপারে কিছু না কিছু ইতস্ত করেছে। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণে এক মুহূর্ত বিলম্ব করেননি। উনাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইসলাম গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে যখন প্রশ্ন করা হলো যে, সর্বপ্রথম কে মুসলমান হয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন যে, স্বাধীন পুরুষগণ উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, মহিলাদের মধ্যে উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম, গোলামদের মধ্যে হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বালকদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন খুবই বিজ্ঞ আলিম বা জ্ঞানী, হুঁশিয়ার ব্যক্তি ও খুবই সাহসী। যিনি মাখলুকাতের উপকার-ক্ষতি, সৌন্দর্য-কদর্যের মাঝে পার্থক্য করার পরিপূর্ণ ইলম রাখতেন। তিনি ছিলেন পবিত্র মক্কা নগরীর প্রভাবশালী সম্ভ্রান্ত ও প্রতিপত্তিসম্পন্নদের মধ্যে অন্যতম। সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলামের দাওয়াত পাওয়া মাত্র কারো চাপ ছাড়াই ঈমান আনয়ন করেন এবং মানুষের মাঝে তা প্রকাশ করেন। উনার পিতা ও ভাইদের নিকট তিনি নিজের ইসলাম গ্রহণ গোপন রাখেননি। নিজের বিশিষ্ট বন্ধুদের নিকট তিনি বিশেষভাবে স্বীয় ইসলামকে প্রকাশ করেন এবং দ্বীন ইসলামে প্রবেশের আহ্বান জানান। ইসলাম গ্রহণের সময় উনার নিকট ৪০ হাজার দিনার ছিলো; যা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে ব্যয় করেন। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি প্রথম থেকেই ইসলামের দাওয়াত ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শক্তিশালী হাত ও বাহু মুবারকে পরিণত হন। পাশাপাশি নিজের ধন-সম্পদ ও জীবন সবকিছুই তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে বিলিয়ে দেন।
তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর পুরা হায়াত মুবারকটাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে কষ্ট ও বিপদ-আপদে, সুখে-দুঃখে সদাসর্বদাই অবস্থান করেন এবং কঠোরভাবে শত্রুদের প্রতিরোধ করেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলামে প্রবেশ করেই ইসলাম প্রচার শুরু করেন। উনার বিশ্বস্ত বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে যারা উনার নিকট আসতেন কিংবা তিনি যাদের কাছে যেতেন, প্রত্যেককেই তিনি ইসলামের দাওয়াত দিলেন। উনার মাধ্যমে যে সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ইসলামে প্রবেশ করেন, উনাদের নাম মুবারক হচ্ছে- হযরত উসমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম, হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ত্বালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সা’দ ইবনে আবু ওয়াককাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনারা সকলেই ছিলেন কুরাইশ গোত্রের বিশিষ্ট ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি যাঁরা সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি উনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হন এবং পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করেন।
অতঃপর আরো  ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত আবূ উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমির ইবনে জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আরকাম ইবনে আবূল আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, মাযউন ইবনে হাবীবের তিন ছেলে হযরত উছমান ইবনে মাযউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত কুদামা ইবনে মাযউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাযউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উবায়দা ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সায়ীদ ইবনে যায়িদ ইবনে আমর ইবনে লুফায়িল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার স্ত্রী হযরত ফাতিমা বিনতে খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা অর্থাৎ হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম উনার বোন, হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমায়ির ইবনে আবূ ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অর্থাৎ হযরত সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভাই, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মাসউদ ইবনে কারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সলীত ইবনে আমীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আয়াশ ইবনে রবীয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার আহলিয়া হযরত আসমা বিনতে সালামাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত খুবায়িস ইবনে হুযাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আমীর ইবনে রবীয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার ভাই হযরত আবূ আহমদ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাফর ইবনে আবূ ত্বলিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার আহলিয়া হযরত আসমা বিনতে উমায়স রদ্বিয়াল্লাহু আনহা, হযরত হাতিব ইবনে হারিস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনার আহলিয়া হযরত ফাতিমা বিনতে মাজাল্লাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, উনার ভাই হযরত খত্তাব ইবনে হারিস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনার আহলিয়া ফাকিহা বিনতে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। হযরত মামার ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সায়ীদ ইবনে উছমান ইবনে মাযউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত মুত্তালিব ইবনে আযহার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া হযরত রামলা বিনতে আবূ আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত নায়ীম ইবনে আব্দুল্লাহ নুহাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (নুহাম শব্দটি নাহম শব্দ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ আওয়াজ।) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন,
سمعت نحمه فى الجنة
অর্থ: “আমি নায়ীম (ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার আওয়াজ বেহেশতে শুনেছি।” সুবহানাল্লাহ! (সীরতে ইবনে হিশাম ৩য় খ- ৫৬৭ পৃষ্ঠা, তাবাকাত ৪র্থ খ-, প্রথম অধ্যায় ১০২ পৃষ্ঠা)
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার মুক্ত গোলাম আমির ইবনে ফাহায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (যিনি বীরে মাউন-এর জিহাদে শহীদ হন এবং ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা উনার জিসম মুবারক আসমানে উঠিয়ে নেন)। হযরত খালিদ ইবনে সায়ীদ ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনার আহলিয়া হযরত উমায়না বিনতে খালফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত হাতিব ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হুযাইফা ইবনে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত বুকাইর ইবনে আবদ ইয়ালীলের চার ছেলে হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আমীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আকিল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আইয়াশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুদয়ানের আযাদকৃত গোলাম হযরত সুহাইব ইবনে সিনান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
মাদারিজুন নুবুওওয়াত’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি সর্বপ্রথম ঈমান এনেছিলেন। তবে প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত পিতা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার একটি ক্বওল শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি চারটি বিষয়ে আমার থেকে অগ্রগামী। প্রথমতঃ প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করার বিষয়, দ্বিতীয়তঃ হিজরতের সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছহিব বা খাদিম হওয়া, তৃতীয়তঃ ছূর পর্বতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছহিব বা খাদিম থাকা এবং চতুর্থতঃ প্রকাশ্যে নামায আদায়ের ব্যাপারে।”
মূলত, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে এবং পরে সদাসর্বদাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত করেছেন এবং এখন পর্যন্ত তথা আবাদুল আবাদ করতেই থাকবেন। এজন্য উনার লক্বব মুবারক-
افضل الناس بعد الانبياء حضرت ابوبكر صديق و عتيق عليه السلام
অর্থাৎ “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।” সুবহানাল্লাহ! আর তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে বেশি খিদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন এবং সবচেয়ে বেশি ছোহবত ইখতিয়ার করেছেন। সুবহনাল্লাহ!
শাওয়াহেদুন নুবুওওয়াত” গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার ইলহাম-ইলক্বা ছিলো অহীর মতো সত্য ও সন্দেহ মুক্ত। সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের পূর্বে আমি স্বপ্নে দেখলাম একটি উজ্জ্বল ফলের রশ্মী মহান নূর মুবারক আসমান থেকে অবতরণ করে পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছাদ মুবারকে নাযিল হয়েছেন। পবিত্র মক্কা মুয়ায্যামা-এর প্রতিটি গৃহ উক্ত বেমেছাল নূর মুবারকের আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে। সকল স্থানের নূর মুবারক একত্রিত হয়ে এক সুমহান নূর মুবারকে পরিণত হয়েছে। এই নূর মুবারক সর্বপ্রথম আমার গৃহ মুবারকে চলে এলেন এবং আমি আমার দরজা মুবারক বন্ধ করে নিলাম। সকাল বেলায় আমি এই স্বপ্ন মুবারক জনৈক ইহুদী আলিমের নিকট ব্যক্ত করলাম এবং এর ব্যাখ্যাও চাইলাম। সেই ইহুদী আলিম বলল, এই  স্বপ্ন মুবারক সম্পর্কে আমার কোনো ইলমই নেই এবং আমার কাছে এর কোনো মূল্য নেই। নাঊযুবিল্লাহ! কিছুদিন পর আমি খ্রিস্টান আলিম পাদ্রী বুহাইরার বাসস্থান তথা ইবাদতখানায় উপস্থিত হলাম।
আমি পাদ্রী বুহাইরা-এর নিকট আমার স্বপ্ন মুবারক বর্ণনা করে এর ব্যাখ্যা চাইলাম। সেই পাদ্রী বলল, আপনি কে? আমি জাওয়াবে বললাম আমি কুরাইশ গোত্রের একজন ব্যক্তি। সে বলল, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরণ করবেন। আর আপনি হবেন খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস্ সালাম তিনি আরো বলেন, যখন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রেরিত হলেন, তখন তিনি আমাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। আমি বললাম, প্রত্যেক নবী ও রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের নুবুওওয়াতের পক্ষে কোনো না কোনো মু’জিজা শরীফ অবশ্যই রাখেন, আপনার মু’জিজা শরীফ কি? তিনি বললেন, আমার মু’জিজা শরীফ সেই স্বপ্ন মুবারক যা আপনি দেখেছিলেন। এরপর ইহুদী আলিমের একথা বলা যে এ স্বপ্ন মুবারকের কোনো মূল্য নেই এবং বুহাইরা পাদ্রী কর্তৃক স্বপ্ন মুবারকের ব্যাখ্যা প্রদান করা ইত্যাদি। এসব বিষয় হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম তিনি আমাকে বলে দিয়েছেন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহু ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে.
اشهد ان لااله الا الله و اشهد ان محمد عبده و رسوله صلى الله عليه و سلم
অর্থ: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
অর্থাৎ আমি ঈমান আনা ছাড়া আর কোনো কথা বলতে চাই না। অতপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করলেন, “আমি প্রথম প্রথম যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি, সেই অবশ্যই কমবেশি ইতস্ত করেছে। কিন্তু হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি দাওয়াত পাওয়ার পর কোনো দলীল প্রমাণ ও মু’জিজা শরীফ দেখা ছাড়াই তৎক্ষনাৎ আমার প্রতি ঈমান এনেছেন। এবং আমার সত্যায়নকারী হয়েছেন।”

হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস্ সালাম তিনি বলেন, জাহিলিয়াতের যুগে আমি একদিন এক বৃক্ষের নিচে উপবিষ্ট ছিলাম। হঠাৎ বৃক্ষের একটি শাখা বা ডাল আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং আমার মাথা মুবারক পর্যন্ত এসে যায়। আমি তা দেখে মনে মনে বললাম, এখন কি হবে? বৃক্ষ থেকে আমার কান মুবারকে এই আওয়াজ ভেসে এলো যে, অমুক সময় একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রেরিত হবেন। আপনার উচিত খাইর সৌভাগ্য আহরণে আগ্রহী হওয়া। আমি বললাম- একটু খুলে বল সেই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কে এবং উনার নাম মুবারক কি? বৃক্ষ থেকে আওয়াজ এলো তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি বললাম তিনি তো আমার ছহীব ও প্রিয়জন, খুবই অন্তরঙ্গ। আমি বৃক্ষের কাছ থেকে এই মর্মে ওয়াদা বা অঙ্গীকার নিলাম যে, তিনি যখন প্রেরিত হবেন, তখন আমাকে যেনো এর সুসংবাদ প্রদান করেন। সে মতে যখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রেরিত বা প্রকাশ হয়েছেন তখন সেই বৃক্ষ থেকে আওয়াজ এলো হে হযরত ইবনে আবু কুহাফা, সতর্ক হন এবং কোশেশ বা চেষ্টা করুন। উনার আনুষ্ঠানিক নবুওয়াত শরীফ প্রকাশ খুবই সন্নিকটে। হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহান রব উনার ক্বসম! ইসলাম ধর্ম কবুল করার ব্যাপারে কেউ আপনার অগ্রণী হবেন না।
সকাল হলে আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত পৌঁছলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, হে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস্ সালাম! আপনাকে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দাওয়াত দিচ্ছি। আমি তৎক্ষণাৎ এই বলে সাক্ষ্য দিলাম-
اشهد ان لا  اله الا الله و اشهد انك رسول الله صلى الله عليه و سلم بعثك بالحق سراجا منيرا
অর্থাৎ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল বা হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আর তিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন হক্ব বা সত্য আলোকময় প্রদীপ হিসেবে। ‘আমি এই কালিমা শরীফ পাঠ করে উনার উপর ঈমান আনলাম।

হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি আরো বর্ণনা করেন, আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নবুওয়াত শরীফ প্রকাশের পূর্বে একবার ব্যবসার উপলক্ষে সিরিয়ায় গেলাম এবং ইযদ গোত্রের জনৈক সরদারের বাড়িতে অবস্থান করলাম। সে আসমানী কিতাবের আলিম ছিলো। তার বয়স চারশ বছরের কাছাকাছি বর্ণনা করা হতো। সে আমাকে দেখে বলল, মনে হচ্ছে আপনি পবিত্র মক্কা শরীফ-এর হেরেম শরীফ থেকে এসেছেন। আমি বললাম হ্যাঁ। সে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি কুরাইশ গোত্রের লোক? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে জিজ্ঞাসা করলো আপনার সম্পর্ক কি বনী তামীমের সঙ্গে? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, আরোও একটি নিদর্শন বাকি রয়ে গেলো। সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বরক ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, সেটা কি? সে বললো, আপনার পেট মুবারক খুলুন তো দেখি। আমি বললাম, আপনার ইচ্ছা সম্পর্কে আমাকে অবগত না করা পর্যন্ত আমার পেট মুবারক খুলবো না। সে বলল, আসমানী কিতাবসমূহে লিখিত রয়েছে, হেরেম শরীফ-এ একজন রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হবেন। উনার দু’জন ছাহাবী থাকবেন, তন্মধ্যে একজন যুবক ও অন্যজন পৌঢ় ছাহাবী আলাইহিমাস সালাম। প্রথম জনের স্বীয় খুছুছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য এই হবে যে তিনি উনার ধর্মকে সমস্ত কিছু থেকে মুহব্বত করবেন। আর অপরজনের মুখম-ল মুবারক চাঁদের চেয়েও উজ্জ্বল হবে এবং শারীরিক দিক দিয়ে তিনি কৃশ ও সবল হবেন। উনার পেট মুবারকে একটি বিশেষ চিহ্ন মুবারক থাকবে।
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি আমার পেট মুবারক বস্ত্রমুক্ত করলাম। তখন সে দেখলো আমার নাভী মুবারক-এর উপরে কিছু কালো দাগ রয়েছে। সে বললো, পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ক্বসম! নিশ্চয়ই আপনি সেই ব্যক্তি আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! এরপর সে আমাকে কয়েকটি নছীহত করলো এবং বললো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে হিফাযত রাখুন, সুমতি ও হিদায়েতের দিকে ঝুঁকে পড়–ন এবং এর নজিরবিহীন পথে ধাবমান হউন। মহান আল্লাহ পাক আপনার জন্যে সেই বিষয় সহজ করুন, যা আপনাকে দিবেন।
যখন সেখানে আমার সমস্ত কাজকর্ম শেষ হয়ে গেলো, তখন আমি তার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার জন্য গেলাম। সে আমাকে কয়েকটি লাইন কবিতা দিয়ে বললো, অনুগ্রহ করে এই কবিতা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত শরীফ-এ পেশ করবেন।

যখন আমি পবিত্র মক্কা শরীফ-এ পৌঁছলাম, তখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ করেছেন। কুরাইশ সরদার আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে এলো। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা ইতোমধ্যে কোনো বিস্ময়কর বা আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখেছ কি? তারা বললো, এর চেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা আর কি হতে পারে যে, আবূ ত্বালিব উনার ভাতিজা সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশ করেছেন। আমরা আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। এখন এ বিষয়ে ফায়ছালা করুন। আমি তাদেরকে কোনোরূপে এড়িয়ে গেলাম। এরপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খোঁজ নিয়ে জানলাম যে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ অবস্থান করছেন। আমি গিয়ে উনার দরজা মুবারকে কড়া নাড়লাম। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ-এর বাহিরে আসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে স্বীয় হুজরায় পেলাম না। মানুষ বলাবলি করছে যে, আপনি পৈতৃক ধর্ম ছেড়ে দিয়েছেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনার প্রতি ও সমস্ত সৃষ্টির প্রতি আমি প্রেরিত হয়েছি। কাজেই আপনি ঈমান আনুন। আমি বললাম, আপনার এ দাবির প্রমাণ কি? আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, প্রমাণ তাই, যা সিরিয়ার এক বৃদ্ধ আপনাকে বলেছে। আমি আরয করলাম, সিরিয়ার অনেক বৃদ্ধের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। আপনি কোন বৃদ্ধের কথা বললেন, দয়া করে বলবেন কি? মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি তিনি বলন, আমি সেই বৃদ্ধের কথা বলছি, যে আপনাকে কয়েক লাইন কবিতা দিয়েছে। আমি আর্জি করলাম আপনি এই খবর পেলেন কি করে? তিনি বলেন, আমাকে ফেরেশতা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বলে দিয়েছেন। যিনি আমার পূর্বে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট অহী নিয়ে আগমন করতেন। আমি উনার হাত মুবারক ধরে বললাম-
اشهد ان لااله الا الله و اشهد ان محمد عبده و رسوله صلى الله عليه و سلم
অর্থ: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এরপর আমি আমার বাড়িতে ফিরে এলাম। তখন আমার চেয়ে এতো অধিক ইতমিনান ও খুশি কেউ ছিলো না। কেননা, আমার ঈমানের মহামূল্যবান দৌলত নছীব হয়েছে। অর্থাৎ আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী হতে পেরেছি। সুবহানাল্লাহ। (শাওয়াহিদুন নুবুওয়াত)

0 Comments: