হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৩৭৮-৪৮০) (চ)


সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণ :

হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বানু আসলামের একজন প্রখর স্মৃতিধর ব্যক্তি আমাকে তিনি বলেছেন যে, আবূ জাহিল একবার সাফা পাহাড়ের পাদদেশে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলো। এ সময় সে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালি-গালাজ ও ভর্ৎসনা করতে লাগলো এবং উনার আনীত দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় নিন্দা করতে লাগলো এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চাইলো। নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই দুষ্ট কাফিরটাকে কিছুই বললেন না, বরং তিনি ধৈর্য্য ধারণ করলেন। কিন্তু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাদয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আযাদকৃত বাঁদী নিজের ঘরে বসে আবু জাহিলের এসব অশ্লীল কথা শুনছিলো। এরপর আবূ জাহিল সেখান থেকে চলে গিয়ে কা’বা শরীফ-এর নিকট উপবিষ্ট কুরাইশদের একদল সরদারদের কাছে বসলো। কিছুক্ষণ পর সেখানে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ছেলে সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি তীর ধনুক সজ্জিত অবস্থায় শিকার থেকে ফিরছিলেন। কুরাইশ বংশের সবচেয়ে সম্মান ও মর্যাদার দিক দিয়ে অন্যতম, সবচেয়ে সাহসী ও বীর যুবক বলে পরিচিত ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি। উনার আদত বা অভ্যাস ছিলো নিয়মিত শিকারে যাওয়া। শিকার থেকে ফিরার পর কা’বা শরীফ তাওয়াফ না করা পর্যন্ত তিনি বাড়িতে প্রবেশ করতেন না। কা’বা শরীফ তাওয়াফ শেষে কুরাইশ সরদারদের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সেখানে থামতেন, তাদেরকে সালাম করতেন, দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেন। সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি সেই বাঁদীর কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় সে উনাকে বললো, হে হযরত আবূ উমারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এই মাত্র আপনার সম্মানিত ভাতিজা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবুল হাকাম তথা আবূ জাহিল ইবনে হিশামের কাছ থেকে যে ব্যবহার পেলেন, তা যদি আপনি দেখতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এখানে বসা দেখে বিনা কারণে আবূ জাহিল গালা-গালি করলো এবং অত্যন্ত ঘৃণ্য আচরণ করলো, তারপর সে চলে গেলো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিছুই বলেননি। কোনো প্রতিবাদ করেননি।
এদিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনাকে ইসলামের নিয়ামত দ্বারা গৌরবান্বিত করতে চেয়েছিলেন, তাই এ খবর শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি খুবই গোস্বায় অধীর হয়ে তৎক্ষণাৎ ব্যঘ্রভাবে ছুটে চললেন। আবু জাহিলকে খুঁজতে লাগলেন। আবু জাহিল অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই দুশমনকে দেখা পেলেই তাকে তিনি সমুচিত শাস্তি দিবেন। এই উনার পণ। সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি মসজিদুল হারাম শরীফ-এ ঢুকেই দেখেন সেই পাষ- কাফির আবু জাহিল কয়েকজন লোকের সাথে বসে আছে। তিনি তার দিকে এগিয়ে গেলেন। একেবারে কাছে গিয়েই ধনুকটি উঁচু করে তা দিয়ে তাকে আঘাত করে নিদারুনভাবে আহত করলেন। তারপর তিনি বললেন, তুমি কি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিরস্কার করো, উনাকে গালি-গালাজ করো? শুনে রাখ হে আবূ জাহিল! আমি তো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করি। আর তিনি যা বলেন তাই আমি করি। এখন পারলে আমাকে তিরস্কার কর দেখি? এ সময় আবু জাহিলকে সাহায্য করার জন্য বনূ মাখযুমের কিছু লোক তারা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার দিকে ছুটে এলো। আবু জাহিল ভয় পেয়ে তার লোকদের বাঁধা দিলো এবং বললো সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনাকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দাও। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! সত্যিই আমি উনার সম্মানিত ভাতিজা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি খারাপ আচরণ করেছি। অবশেষে সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি পূর্ণভাবে ইসলাম কবুল করেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে থাকেন। (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে, সভায় উপস্থিত কেউ কেউ সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললো, হে হামযা আলাইহিস সালাম! আপনি কি বেদ্বীন হয়ে গেলেন? নাঊযুবিল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মুখ সামলিয়ে কথা বলো, নিশ্চয়ই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ও হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ ব্যাপারে যথার্থতা ও সত্যতা ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি যে হক্ব (সত্য) এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা কিছু বলেন এবং করেন তা সম্পূর্ণ সত্য। আরো শুনে নাও, আমি কখনো আমার ইসলাম গ্রহণ করা থেকে বিরত হব না, তোমাদের যা খুশি করতে পারো। এ কথা বলে সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি ঘরে ফিরে এলেন।
দেখা গেলো কাফির, মুশরিক ও শয়তানরা ওয়াসওয়াসা দিতে লাগলো এ বলে যে, হে কুরাইশদের সরদার হযরত হামযা আলাইহিস সালাম! আপনি বাপ দাদা উনাদের ধর্মকে কিরূপে পরিত্যাগ করলেন? ইত্যাদি ইত্যাদি চু-চেরা কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনরা করতে লাগলো।
সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এই কঠিন মুহূর্তে মহান আল্লাহ পাক উনার নিটক দোয়া করলাম-
اللهم ان كان رشدا فاجعل تصديقة فى قلبى والا فاجعل لى مما وقعت فيه مخرجا.
অর্থ: “হে বারে ইলাহী! যদি এটা হিদায়েত হয়, তবে তার নূর বা সত্যতা আমার অন্তরে দিয়ে দিন অন্যথায় এর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো অবস্থা সৃষ্টি করে দিন।” (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, সমস্ত রাত্রি সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার এই অস্থিরতা ও দুর্ভাবনার মধ্যে কেটে গেলো, এক মুহূর্তেও উনার চোখ মুবারকে ঘুম এলো না। যখন কিছুতেই এই চিন্তা-ভাবনা, মানুষের চু-চেরা, দুর্ভাবনা ও অস্থিরতা দূর হলো না, তখন তিনি হেরেম শরীফ-এ গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং খুবই কাকুতি-মিনতি ও ক্রন্দন সহকারে দোয়া করলেন :
হে মহান আল্লাহ পাক! আমার অন্তর বা ক্বলবকে হক্ব বা সত্যের জন্য বিকশিত করে দিন এবং সর্বপ্রকার কুপরামর্শ ও সন্দেহ সংশয় দূর করে দিন।” তিনি বলেন, আমার দোয়া শেষ হতে না হতেই এ সমস্ত বাতিল চিন্তা-ভাবনা থেকে আমার অন্তর সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে গেলো। আমার অন্তর মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত, আনুগত্য ও নিশ্চিন্ততায় ভরপুর হয়ে গেলো। সকাল হতেই আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমতে উপস্থিত হলাম এবং সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার অবিচলতা ও ইসলামের উপর দৃঢ় ও অটল থাকার জন্য দোয়া করলেন। (মুস্তাদরাকে হাকীম)
মুস্তাদরাকে হাকীম’ গ্রন্থে আরো বর্ণিত রয়েছে : সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি যখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলেন, তখন তিনি বললেন,
اشهد انك لصادق شهادة المصدق والعارف
অর্থ: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি সত্য নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সত্যায়নকারী ও পৌঁছে দেয়ার মতো সাক্ষ্য দিচ্ছি।”
হে আমার সম্মানিত ভ্রাতুষ্পুত্র! আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার দ্বীন ইসলামকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রকাশ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যদি দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু আছে সবই আমি পেয়ে যাই তবুও আপনার দ্বীন ছেড়ে দিয়ে পিতামহ তথা কুফরী শিরকী ধর্ম গ্রহণ করবো না। অতঃপর তিনি এই কবিতা আবৃত্তি করলেন,
حمدت الله حين هدى فوادى
الى الاسلام والدين الحنيف
অর্থ: “আর আমি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রসংশা ও শুকরিয়া করছি যখন তিনি আমার অন্তরে ইসলাম ও দ্বীনে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন।”
لدين جاء من رب عزيز
خبير بالعباد بهم لطيف
অর্থ: “আমাকে তিনি ওই দ্বীন ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন যা এমন পরওয়ারদিগার মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, যিনি উনার সমস্ত বান্দা সম্পর্কে অবহিত এবং তাদের প্রতি দয়াবান।”

اذا تليت رسائله علينا
تحدر دمع ذى اللب الحصيف.
অর্থ: “যখন উনার কালাম আমাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন পূর্ণ জ্ঞানবানদের চোখে অশ্রু প্রবাহিত হয়।”
رسائل جاء احمد صلى الله عليه و سلم من هداها
بايات مبينت الحروف
অর্থ: “ওই কালামুল্লাহ শরীফ যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মানুষকে হিদায়েত করার জন্য নিয়ে এসেছেন, তা পরিষ্কার ও প্রকাশ্য সুনিদর্শন।”
واحمد مصطفى صلى الله عليه وسلم فينا مطاع
فلا تغشوه بالقول العنيف
অর্থ: “আর আহমদ মুজতবা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত। তিনি যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার আনুগত্য করা আমাদের জন্য ফরয ওয়াজিব। একে কঠিন বাক্যের আড়ালে গোপন করবেন না।”

فلا والله نسامه لقوم + ولما نقضى فيهم بالسيوف.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যতক্ষণ আমরা তরবারীর মাধ্যমে ফায়ছালা না করছি ততক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কারো হাতে তুলে দিবো না।” (রাউযুল উনুফ ১ম খ- ১৮৬ পৃষ্ঠা, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণের ফলে কুরাইশরা তথা কাফির মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনরা বুঝে ফেললো যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যুলুম-নির্যাতন করা আর সহজসাধ্য নয়।
ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি নুবুওওয়াতের ৬ষ্ঠ বৎসর ইসলাম গ্রহণ করেন। এটাই প্রসিদ্ধ বর্ণনা। হযরত হাফিয ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘ইছাবায়’ বলেন, সাইয্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের দ্বিতীয় বর্ষে ইসলাম গ্রহণ করেন। (যারকানী ১ম খ- ১৫৬ পৃষ্ঠা)
স্মরণীয় যে, যখন আব্দুল্লাহ ইবনে জুদয়ানের দাসী সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার নিকট আব জাহিল কর্তৃক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রূঢ় ভাষায় গালি-গালাজের ঘটনা বললো, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার শরীর মুবারক শিহরে উঠলো। তিনি কঠিন জযবায় জ্বলে উঠলেন।

সীরাতে ইবনে হিশাম, মুস্তাদরাকে হাকিম এবং উয়নূল আসার’ গ্রন্থসমূহে সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার কঠোর গোস্বার বর্ণনা এভাবে এসেছে,
فاحتمل الغضب اما اراد الله به من كرامته
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে উজ্জীবিত হলেন। যার ফলে মহান আল্লাহ পাক উনাকে বেমেছাল সম্মান ও মর্যাদা দানের ইচ্ছা করলেন অর্থাৎ উনাকে বেশুমার মর্যাদা দান করলেন।” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে খায়র তথা কল্যাণ দিতে ইচ্ছা করেন উনাকে তিনি কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন, বদদ্বীন তথা বিধর্মীদের বিরুদ্ধে ক্রোধ ও ঈর্ষা দিয়ে দেন।
এজন্য হাদীছ শরীফ-এ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
من احب لله و ابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان
অর্থ: “যে ব্যক্তি মুহব্বত করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য বিদ্বেষ পোষণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, আদেশ দান করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, নিষেধ করে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য সে ঈমানে পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত)
কাজেই সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বত ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যে। আর তার বিপরীতে উনার বিদ্বেষও ছিলো মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্যে। এজন্যই তো মহান আল্লাহ পাক উনাকে খাছভাবে কবুল করলেন এবং উনার মর্যাদাকে সমুন্নত করলেন। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ ভাই। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন সাইয়্যিদুনা হযরত সুয়াইবিয়া আলাইহাস সালাম উনার দুধ মুবারক পান করেছেন অনুরূপভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনিও সাইয়্যিদুনা হযরত ছুয়াইবিয়া আলাইহাস সালাম উনার দুধ মুবারক পান করে ধন্য হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার চাচাগণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করতেন হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি। সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আগমনের ২ থেকে ৩ বছর পূর্বে আগমন করেন। দু’জনে একই সঙ্গে সদাসর্বদা চলাফেরা করতেন। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সকল কথা ও কাজ সুনজরে দেখতেন এবং উনার খিদমতের আঞ্জাম দিতেন। সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছোট থেকেই সবচেয়ে বেশি মুহব্বত করতেন। সুবহানাল্লাহ!


হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইসলাম গ্রহণ :
হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক জুনদুব বা বুরায়া। কুনিয়াত আবূ যার। এ নাম মুবারকে তিনি সর্বাধিক পরিচিত। উনার লক্বব মুবারক শায়খুল ইসলাম। তিনি গিফার গোত্রে বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন বলে উনাকে আল গিফারী বলা হয়। উনার পিতার নাম জুনাদ। মাতার নাম রামলা। উনার ঊর্ধ্বতন পঞ্চদশ পুরুষ বনু গিফার ও কুরাইশ বংশ একই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের পর সংবাদ পেয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ-এ চলে যান এবং স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। (আসমাউর রিজাল)
এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-
اخرج حضرت الحافظ البيهقى رحمة الله عليه قال حضرت أبى ذر رضى الله تعالى عنه. كنت ربع الاسلام، أسلم قبلى ثلاثة نفر وأنا الرابع، أتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم فقلت السلام عليك يارسول الله صلى الله عليه وسلم أشهد أن لاإله إلا الله وأن محمدا رسول الله صلى الله عليه وسلم، فرأيت الاستبشار فى وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: হযরত হাফিয বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমার পূর্বে মাত্র তিনজন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আর আমি হচ্ছি চতুর্থ মুসলমান। আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হয়েছিলাম এবং বলেছিলাম ‘আস সালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং বলেছিলাম, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুখম-ল মুবারক-এ তৃপ্তি, খুশি ও আনন্দের চিহ্ন  দেখতে পাই। (আল বিদায়া নিহায়া ৩য় জিলদ ৩৪ পৃষ্ঠা)

قال حضرت البخارى رحمة الله عليه اسلام حضرت أبى ذر رضى الله تعالى عنه حدثنا حضرت عمروبن عباس رحمة الله عليه حدثنا حضرت عبد الرحمن بن مهدى رحمة الله عليه عن حضرت المثنى رحمة الله عليه عن حضرت أبى حمزة رحمة الله عليه عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه. قال لما بلغ حضرت أبا ذر رضى الله تعالى عنه مبعث رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لاخيه اركب إلى هذا الوادى فاعلم لى علم هذا الرجل الذى يزعم أنه نبى صلى الله عليه و سلم يأتيه الخبر من السماء. فاسمع من قوله ثم ائتنى فانطلق الاخر حتى قدمه وسمع من كلامه، ثم رجع إلى حضرت أبى ذر رضيى الله تعالى عنه فقال له رأيته يأمر بمكارم الاخلاق وكلاما ما هو بالشعر. فقال ما شفينتى مما أردت.

অর্থ: “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইসলাম গ্রহণের ঘটনা প্রসঙ্গে হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আমর ইবনে আব্বাস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের নিকট বর্ণনা করেন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের নিকট বর্ণনা করেন। তিনি হযরত মুছান্না রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত আবূ হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের সুসংবাদ শুনে হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ভাইকে বললেন যে, তুমি ওই জনপদ তথা মক্কা শরীফ-এ যাও এবং যিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা যিনি নিজেকে রসূল বলে প্রচার করছেন এবং উনার নিকট আসমান থেকে ওহী আসে বলে প্রকাশ করেন উনার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এসে আমাকে জানাও। তুমি উনার কথা মুবারক শুনে এসে আমাকে অবহিত করো। তখন উনার ভাই রওয়ানা হলেন। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হলেন এবং উনার আলোচনা মুবারক শ্রবণ করলেন। এরপর তিনি হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট ফিরে এসে বললেন যে, আমি উনাকে দেখেছি। তিনি মানুষকে সৎকাজের আদেশ দেন এবং তিনি এমন কালাম বা কথা-বার্তা বলেন যা কবিতা নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, না আমি যেমনটি চেয়েছিলাম, তেমন সন্তোষজনকভাবে জানাতে পারলে না।

فتزود وحمل شنة فيها ماء حتى قدم مكة فاتى المسجد فالتمس رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا يعرفه وكره أن يسأل عنه حتى أدركه بعض الليل اضطجع فراه على فعرف أنه غريب، فلما راه تبعه ولم يسأل واحد منهما صاحبه عن شئ حتى أصبح، ثم احتمل قربته وزاده إلى المسجد وظل ذلك اليوم ولا يراه النبى صلى الله عليه وسلم حتى أمسى، فعاد إلى مضجعه فمربه حضرت على عليه السلام فقال أما ان للرجل يعلم منزله فاقامه فذهب به معه لا يسأل واحد منهما صاحبه عن شئ حتى إذا كان يوم الثالث فعاد على مثل ذلك فاقام معه فقال ألا تحدثنى بالذى أقدمك؟ قال إن أعطيتنى عهدا وميثاقا لترشدنى فعلت ففعل فاخبره. قال فانه حق وأنه رسول الله صلى الله عليه وسلم

এবার প্রয়োজনীয় পাথেয় সংগ্রহ করে এবং পানির মশক সাথে নিয়ে হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজেই পবিত্র মক্কা শরীফ-এ গিয়ে উপস্থিত হলেন। তিনি সেখানে পৌঁছে বাইতুল্লাহ শরীফ-এ প্রবেশ করেন এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খুঁজতে থাকেন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কখনও দেখেননি, তাই চিনতেন না। কাউকে জিজ্ঞেস করাও তিনি সমীচীন মনে করলেন না। এভাবে রাতের কিছু সময় কেটে যাওয়ার পর তিনি সেখানে শুয়ে পড়েন। সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখতে পান এবং তিনি যে একজন বহিরাগত মুসাফির তা বুঝতে পারেন। তাই তিনি উনাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং আতিথ্য দান করলেন। উনাদের কেউই একে অন্যকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না। ভোর হতে না হতেই হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার মালপত্র এবং মশক নিয়ে কা’বা শরীফ-এ এলেন। দিনভর সেখানে অবস্থান করলেন। তখনও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নজরে পড়েননি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে তিনি উনার প্রথম দিনের স্থলে ফিরে এলেন। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে দেখলেন এবং মনে মনে বললেন, হায়! লোকটি মনে হয় উনার উদ্দিষ্টের সন্ধান পাননি। হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে সেদিনও নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন এবং রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করে দিলেন। উনারা কেউ কাউকে সেদিনও কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না।
তৃতীয় দিনেও হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ-এ চলে গেলেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম তিনি আবারও অন্যদিনের ন্যায় উনাকে উনার বাড়িতে নিয়ে গেলেন। এবার হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেসা করলেন, হে আগন্তুক! আপনার আগমনের উদ্দেশ্য আমাকে বলবেন কি? হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি যদি আমাকে কথা দেন যে, আমাকে সঠিক সন্ধান দিবেন, তবে আমার উদ্দেশ্যের কথা আপনাকে বলবো। সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম তিনি কথা দিলেন, ঠিক আছে। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখন উনার আগমনের উদ্দেশ্য উনাকে খুলে বললেন। অর্থাৎ আখিরী রসুল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলেন। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আপনি জানতে চাচ্ছেন তিনি আসলেই হক্ব বা সত্য এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

فاذا أصبحت فاتبعنى فانى إن رأيت شيئا أخاف عليك قمت كأنى أريق الماء، وإن مضيت فاتبعنى حتى تدخل مدخلى، ففعل فانطلق يقفوه حتى دخل على النبى صلى الله عليه وسلم ودخل معه، فسمع من قوله وأسلم مكانه. فقال له النبى صلى الله عليه وسلم ارجع إلى قومك فاخبرهم حتى يأتيك امرى فقال والذى بعثك بالحق لاصرخن بها بين ظهر انيهم فخرج حتى اتى المسجد فنادى باعلا صوته اشهد ان لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله صلى الله عليه وسلم، ثم قام فضر بوه حتى أضجعوه، فاتى حضرت العباس رضى الله تعالى عنه فاكب عليه فقال ويلكم ألستم تعلمون أنه من غفار، وأن طريق تجارتكم إلى الشام. فانقذه منهم. ثم عاد من الغد بمثلها فضر بوه وثاروا اليه فا كب حضرت العباس رضى الله تعالى عنه عليه.
আগামী সকালে আপনি আমার সাথে সাথে যাবেন। আপনার জন্যে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে এমন কোনো পরিস্থিতি দেখলে আমি ইস্তিঞ্জা করতে যাবো। আমি যদি স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকি, তবে আপনি আমার পিছনে পিছনে যাবেন এবং আমি যেখানে প্রবেশ করি আপনিও আমাকে অনুসরণ করে সেখানে প্রবেশ করবেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম তিনি রওয়ানা হলেন। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে অনুসরণ করতে লাগলেন। এভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলেন। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও উনার সঙ্গে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হলেন। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলোচনা মুবারক শুনলেন এবং তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, হে হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি আপনার ক্বওম বা সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে যান এবং তাদেরকে এ বিষয় সম্পর্কে অবহিত করবেন। আমার পক্ষ থেকে অন্য কোনো নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আপনি সেখানেই অবস্থান করবেন। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, যে মহান আল্লাহ পাক আপনাকে হক্ব বা সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন উনার ক্বসম! তাদের মধ্যে আমি উচ্চস্বরে এ দ্বীনের দাওয়াত দিবো। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ থেকে বের হলেন এবং পবিত্র কা’বা শরীফ-এ গিয়ে উচ্চস্বরে ঘোষণা দিলেন-
اشهد ان لا اله الا الله وانك رسول الله صلى الله عليه وسلم
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
এ বলে তিনি সেখানে দাঁড়ালেন। কাফির, মুশরিকরা উনাকে প্রহার করতে শুরু করলো। তাদের যুলম তথা প্রহারে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেখানে আসেন এবং উনার উপর উপুড় হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, দুর্ভোগ তোমাদের জন্যে, তোমরা কি জানো না যে, এ লোকটি গিফার গোত্রের? তোমাদের তো ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যে ওই পথে সিরিয়ায় যাতায়াত করতে হয়। কাফিরদের হাত থেকে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হিফাযত করলেন। পরের দিনও হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অনুরূপ উচ্চস্বরে ঘোষণা দিতে লাগলেন। এবারো কাফির, মুশরিকরা উনার উপর প্রচ- আক্রমণ চালালো। হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে উনাকে হিফাযত করলেন। সুবহানাল্লাহ! (ছহীহ বুখারী শরীফ ও আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
সাহীহ মুসলিম শরীফ ও অন্যান্য হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে-
اخرج الامام احمد رحمة الله عليه قال حضرت أبو ذر خرجنا من قومنا غفار- وكان يحلون الشهر الحرام- أنا وأخى أنيس وأمنا فانطلقنا حتى نزلنا على خال لناذى مال وذى هيئة فأ كرمنا خالنا وأحسن الينا، فحسدنا قومه فقالوا له إنك إذا خرجت عن أهلك خلفك اليهم أنيس. فجاء خالنا فنثى ما قيل له فقلت له أما ما مضى من معروفك فقد كدرته، ولا جماع لنا فيما بعد. قال فقربنا صرمتنا فاحتملنا عليها وتغطى خالنا بثوبه وجعل يبكى قال فانطلقنا حتى نزلنا حضرة مكة، قال فنافر أنيس عن صرمتنا وعن مثلها فاتيا الكاهن فخير أنيسا. فاتانا بصرمتنا ومثلها، وقد صليت يابن أخى قبل أن القى رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاث سنين، قال قلت لمن؟ قال لله، قلت فأين توجه؟ قال حيث وجهنى الله. قال واصلى عشاء حتى إذا كان من اخر الليل الفيت كأنى خفاء حتى تعلو نى الشمس
অর্থ: হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, আমরা আমাদের সম্প্রদায় গিফার গোত্র থেকে মক্কা শরীফ-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। গিফার গোত্রের লোকজন যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাসগুলোতেও যুদ্ধ জিহাদ বৈধ মনে করতো। আমি, আমার ভাই আনীস এবং আমাদের মাতা উনাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এক মামার বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। তিনি অত্যন্ত সম্পদশালী, ধনাঢ্য ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আমাদের অনেক আদর আপ্যায়ন ও মেহমানদারী করলেন।
আমাদের প্রতি মামার এ সম্মান প্রদর্শন দেখে উনার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের প্রতিহিংসা বা ঈর্ষাম্বিত হলো। সমাজে আমাদের বিরুদ্ধে বৈরী করে তোলার জন্য তারা উনাকে বললো যে, আপনি ঘর থেকে বের হওয়ার পর আপনার ভাগীনা আনীসই তো আপনার ঘরের মালিক হয়ে বসে।
মামা ঘরে ফিরে আমাদেরকে তা জানালেন। আমি বললাম, আপনি যে, আমাদেরকে সহানুভূতি বা দেখা-শুনা করেছেন এখন তো সেটি ম্লান করে দিলেন। এরপর তো আপনার বাড়িতে আর অবস্থান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর আমাদের বাহনগুলো নিয়ে সেগুলোর উপর মাল সামানা বোঝাই করে মক্কা শরীফ-এ চলে আসি। আমাদের মামা তখন তিনি একটি কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলেন। এদিকে আমার ভাই আনীস আমাদের উষ্ট্রগুলো এবং তার প্রতিপক্ষ এক লোকের অনুরূপ উষ্ট্রীপাল বন্ধক রেখে সে এবং ঐ মালিকের মধ্যে কে উত্তম সে বিষয় চেলেঞ্জ করে। উভয় পক্ষ একজন গনককে সালিস ও মীমাংসাকারী মেনে নেয়। মীমাংসাকারী জবাব দেয় যে, আনীসই উত্তম। অনন্তর সে আমাদের উষ্ট্রীপাল এবং অপর পক্ষের বন্ধক রাখা অনুরূপ উষ্ট্রীপাল নিয়ে ফিরে আসে। অতঃপর অপর একজন ব্যক্তি যিনি ইতঃপূর্বে মুসলমান হয়েছেন যিনি ছিলেন হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কের দিক থেকে চাচা। তিনি বলেন, হে আমার ভাতিজা! আমি কিন্তু আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে দীদার মুবারকের তিন বছর পূর্বে নামায পড়েছি। আমি বললাম, এই নামায কার উদ্দেশ্যে ছিলো? তিনি বললেন, মহান রব আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে ছিলো। সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, কোন দিকে মুখ করে নামায আদায় করেছেন। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে যে দিকে ফিরিয়েছেন সেদিকে। তিনি বললেন, আমি ইশার নামায আদায় করতাম। শেষ রাতে আমি নিজেকে কাপড়ের মতো হালকা বলে অনুভব করতাম। এভাবে সূর্য উদিত হতো এবং দিনের আলো ছড়িয়ে পড়তো।
قال فقال أنيس إن لى حاجة بمكة فألقنى حتى اتيك قال فانطلق فراث على، ثم أتانى فقلت ما حبسك؟ قال لقيت رجلا يزعم أن الله أرسله على دينك، قال فقلت ما يقول الناس له؟ قال يقولوا إنه شاعر وساحر، وكان أنيس شاعرأ. قال فقال لقد سمعت الكهان فما يقول بقولهم. وقد وضعت قوله على إقراء الشعر فوالله ما يلتئم لسان أحد أنه شعر، ووالله إنه لصادق وإنهم لكاذبون. قال فقلت له هل أنت كافى حتى انطلق؟ قال نعم! وكن من أهل مكة على حذر فانهم قد شنعوا له وتجهموا له. قال فانطلقت حتى قد مت مكة فتضعفت رجلا منهم فقلت أين هذا الرجل الذى يدعونه الصابئ؟ قال فاشار إلى فمال أهل الوادى على بكل مدرة وعظم حتى خررت مغشيا على، ثم ارتفعت حين ارتفعت كأنى نصب احمر، فاتيت زمزم فشربت من مائها وغسلت عنى الدم ودخلت بين الكعبة وأستارها،
হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তখন আমার ভাই আনীস বলেন যে, মক্কা শরীফ-এ আমার কিছু কাজ আছে। সুতারাং আমি ফিরে আসার পর আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে। অতপর তিনি চলে গেলেন। এরপর তিনি আমার নিকট আসতে দেরি করেন। তিনি ফিরে আসলে আমি বললাম, বিলম্বের কারণ কি? তিনি বললেন, সেখানে সেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে আপনাদের ধর্মের উপর প্রাধান্য দিয়ে রসূলরূপে প্রেরণ করেছেন। আমি বললাম, লোকজন উনার সম্পর্কে কি বলে? তিনি বললেন, তারা উনাকে কবি, জাদুকর ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। আমার ভাই আনীস একজন কবি ছিলেন। তিনি বললেন, আমি তো গনকদের কথাবার্তা শুনেছি। তিনি কিন্তু গনকের মতো কথাবার্তা বলেন না। অভিজ্ঞ ও খ্যাতিমান কবিদের নিকট আমি উনার নিকট শ্রুত কথা মুবারক উল্লেখ করেছি কিন্তু তা যে কবিতা এমন কথা কেউ বলেননি। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তিনি কিন্তু নিশ্চয়ই একজন হক্ব বা সত্যবাদী, আর উনার বিরুদ্ধবাদীরা মিথ্যাবাদী।
হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি এখানে আমার কাজগুলো সামাল দিতে পারবেন যাতে করে আমি ওখানে যাওয়ার সুযোগ পাই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পারবো। তবে পবিত্র মক্কাবাসীদের আক্রমণ থেকে আপনি খুবই সতর্ক থাকবেন। কারণ তারা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে  দোষারূপ করে এবং উনার উপর যুলুম-নির্যাতন করে। নাঊযুবিল্লাহ!
হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি রওয়ানা হই এবং পবিত্র মক্কা শরীফ-এ গিয়ে পৌঁছি। সেখানকার  একজন দূর্বল ব্যক্তিকে খুঁজে নিয়ে আমি উনাকে বলি- যে ব্যক্তিকে কুরাইশরা ধর্মত্যাগী বলছে, সেই সম্মানিত ব্যক্তি তিনি কোথায়? লোকটি আমার দিকে ইশারা বা ইঙ্গিত করেন। আর অমনি কাফির মুশরিকের দল ও উপত্যকার অধিবাসীরা ঢিল ও হাড় দিয়ে আমার উপর আক্রমণ শুরু করে। আমি আক্রমণের ফলে অচেতন হয়ে পড়ে থাকি। অবশেষে আমাকে সেখান থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়। আমাকে যখন উঠিয়ে নেয়া হয়, তখন আমি যেনো তীর নিক্ষেপের রক্তিম লক্ষ্যবস্তু। আমি যমযম কূপ মুবারকের নিকট আসি এবং ওই মুবারক পানি পান করি। রক্তগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করি। এরপর আমি পবিত্র কা’বা শরীফ এবং তার গিলাফের মধ্যখানে অবস্থান করতে থাকি।
فلبثت به يابن أخى ثلاثين من يوم وليلة مالى طعام إلا ماء زمزم، فسمنت حتى تكسرت عكن بطنى وما وجدت على كبدى سخفة جوع قال فبينا أهل مكة فى ليلة قمراء أضحيان وضرب الله على أشحمة أهل مكة فما يطوف بالبيت غير امرأتين، فاتتا على وهما يدعوان اساف ونائلة. فقلت انكحوا أحدهما الاخر فما ثناهما ذلك، فقلت وهن مثل الخشبة غير أنى لم أركن. قال فانطلقتا يولولان ويقولان لو كان همنا أحد من أنفارنا، قال فاستقبلهما رسول الله صلى الله عليه وسلم و حضرت أبو بكر عليه السلام وهما هابطان من الجبل فقال مالكما؟ فقالتا الصابئ بين الكعبة واستارها قالا ما قال لكما؟ قالتا قال لنا كلمة تملأ الفم، قال وجاء رسول الله صلى الله عليه وسلم هو وصاحبه حتى استلم الحجر وطاف بالبيت، ثم صلى. قال فاتيته فكنت أول من حياه بتحية أهل الاسلام. فقال عليك السلام ورحمة الله من أنت؟ قال قلت من غفار، قال فهوى بيده فوضعها على جبهته قال فقلت فى نفسى كره أن أنتميت إلى غفار، قال فاردت أن اخذ بيده فقذقنى صاحبه وكان أعلم به منى، قال منى كنت همنا؟
এবার হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে আমার ভাতিজা! আমি দীর্ঘ ৩০ দিন ৩০ রাত ওখানে অবস্থান করি। পবিত্র যমযম কূপের পানি ছাড়া অন্য কোনো খাদ্য আমার ছিলো না। তা খেয়ে আমি এতো স্বাস্থ্যবান ও মোটা হয়ে পড়ি যে, আমার পেটের চামড়ার ভাজ বিলুপ্ত হয়ে সব সমান হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! ক্ষুধাজনিত কোনো দুর্বলতা আমি অনুভব করিনি। এক জোৎ¯œা রাত্রির ঘটনা। মক্কাবাসীরা সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুধু দু’জন মহিলা বাইতুল্লাহ বা কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলো। তারা আসাফ ও নায়িলা প্রতিমার পূজা করছিলো। আমি বললাম, তোমরা আসাফ ও নায়িলা মূর্তির একটিকে অন্যটির সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। আমার বক্তব্য তাদের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলো না। এরপর আমি বললাম, এগুলোতো কাঠের ন্যায় জড়পদার্থ, আমি কিন্তু এগুলোর প্রতি আগ্রহী নই। এরপর তারা দু’জন এ খেদোক্তি করতে করতে ফিরে যাচ্ছিলো যে, এখানে যদি আমাদের কোনো লোকজন থাকতো, তবে মজা দেখাতাম। পথিমধ্যে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাদের সম্মুখে তারা পড়লো। উনারা দু’জনে পাহাড় থেকে নেমে আসছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বললো, কা’বা শরীফ ও তার গিলাফের মাঝে একজন ধর্মত্যাগী ব্যক্তিকে দেখে এসেছি। উনারা বললেন, তিনি তোমাদের কি বলেছেন? তারা বললো, তিনি এমন কথা বলেছেন যা মুখে নেয়া যায় না।
রাবী বলেন, অতপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনারা এসে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং কা’বা শরীফ তাওয়াফ করলেন। অতপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায আদায় করলেন। হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এরপর আমি উনার নিকট আসলাম। সর্বপ্রথম আমি আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইসলামী রীতিতে অভিনন্দন জানালাম। তিনি বললেন,
عليك السلام ورحمة الله
তোমার প্রতিও সালাম এবং রহমত বর্ষিত হোক’। তুমি কে? আমি বললাম, আমি গিফার গোত্রের লোক। তিনি উনার কপাল মুবারকে হাত মুবারক রাখলেন। আমি মনে মনে বললাম, নিশ্চয়ই আমি গিফার গোত্রের লোক শুনে তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে উনার হাত মুবারক ধরতে যাচ্ছিলাম। তখন উনার ছাহিব সাইয়্যিদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে থামিয়ে দিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আমার চেয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বেশি জানতেন।

قال قلت كنت همنا منذ ثلاثين من بين ليلة ويوم. قال فمن كان يطعمك؟ قلت ما كان لى طعام إلا ماء زمزم فسمنت حتى تكسرت عكن بطنى، وما وجدت على كبدى سخفة جوع. قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انها مباركة انها طعام طعم قال فقال أبو بكر ائذن لى يارسول الله فى طعامه الليلة قال ففعل قال فانطلق النبى صلى الله عليه وسلم وأنطلقت معهما حتى فتح حضرت أبو بكر عليه السلام بابا فجعل يقبض لنا من زبيب الطائف، قال فكان ذلك أول طعام أ كلته بها. فلبثت مالبثت. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم إنى قد وجهت إلى ارض ذات تخل ولا أحسبها إلا يثرب، فهل أنت مبلغ عنى قومك لعل الله ينفعهم بك ويأجرك فيهم؟ قال فانطلقت حتى أتيت أخى أنيسا، قال فقال لى ما صنعت؟ قال قلت صنعت أنى أسلمت وصدقت، قال فمابى رغبة عن دينك فانى قد أسلمت وصدقت،

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বললেন, তুমি কবে এখানে আছো? আমি বললাম, ৩০ দিন ৩০ রাত অবধি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করে কে? আমি জবাবে বললাম, যমযম কূপের পানি ব্যতীত অন্য কোনো খাদ্য আমি খাইনি। আমি এও বললাম যে, আমি ওই পানি পান করেই আমার পেটের চামড়ার ভাঁজ সমান হয়ে গিয়েছে আর আমি আমার মধ্যে ক্ষুধাজনিত কোনো দুর্বলতা অনুভব করি না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
انها مبارك انها طعام طعم
নিশ্চয়ই যমযম বরকতময় কূপ এবং ওই পানি খাদ্যগুণ সম্পন্ন।”
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যদি আমাকে অনুমতি দেন তাহলে আমি আজ রাতে উনার মেহমানদারীর ব্যবস্থা করি। তিনি তাই করলেন। অতঃপর উনারা দু’জন যেতে লাগলেন। আমিও উনাদের সঙ্গে পিছু পিছু চলতে লাগলাম। সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি একটি দরজা খুললেন এবং আমাদের জন্য তাইফের আঙ্গুর ফল নিয়ে এলেন। এতদিন পর আমি এই প্রথম খাদ্য গ্রহণ করলাম।
অতঃপর কয়েকদিন আমি সেখানে অবস্থান করি। একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, একটি খেজুর গাছ দ্বারা সুশোভিত অঞ্চলের উদ্দেশ্যে আমি এ স্থান ত্যাগ করবো। আর সেটি হবে ইয়াসরিব তথা মদীনা শরীফ। আপনি আমার পক্ষ থেকে আপনার সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছে দিবেন। তাহলে আপনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের খাইর বা কল্যাণ সাধন করবেন এবং এর বদৌলতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে কামিয়াবী দান করবেন।
হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি তখন মক্কা শরীফ থেকে আমার ভাই আনীসের নিকট আসি। তিনি আমাকে বললেন, আপনি কি করে এলেন? আমি জবাবে বললাম যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী-রসূল বা হক্ব (সত্য) বলে স্বীকার করে নিয়েছি। তখন আনীস বললেন, আপনার ধর্ম মতের উপর আমার কোনো অসুন্তুষ্টি নেই। আমিও ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হক্ব (সত্য) বলে মেনে নিলাম।
ثم أتينا أمنا فقالت مابى رغبة عن دينكما فانى قد اسلمت وصدقت، فتحمانا حتى أتينا قومنا غفار، قال فاسلم بعضهم قبل أن يقدم رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة، وكان يؤمهم خفاف بن إيما بن رخصة الغفارى وكان سيدهم يومئذ.
وقال بقيتهم إذا قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم أسلمنا، قال فقدم رسول الله صلى الله عليه وسلم فاسلم بقيتهم قال وجاءت أسلم فقالوا يا رسول الله اخواننا نسلم على الذى اسلموا عليه، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم غفار غفر الله لها، وأسلم سللها الله. ورواه مسلم

অতঃপর আমরা উপস্থিত হলাম আমাদের মায়ের নিকট। আমাদের মাতা বললেন- আপনাদের ধর্ম মতের উপর আমারও কোনো অসন্তুষ্টি নেই। আমিও ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নবী-রসূল হক্ব (সত্য) বলে স্বীকার করলাম। অতঃপর সাওয়ারীতে আরোহণ করে আমরা আমাদের গিফার গোত্রে ফিরে আসি।
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূর, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফ-এ হিজরতের পূর্বেই আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। খিফাফ ইবনে ঈসাইন ইবনে রখসত গিফারী গিফার গোত্রের ইমাম ছিলেন। তখন তিনি তাদের সরদার ছিলেন। অন্যরা বলেছিলেন যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফ-এ আসার পর আমরা ইসলাম গ্রহণ করবো। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মদীনা শরীফ-এ তাশরীফ নিলেন তখন তারাও ইসলাম গ্রহণ করলেন। উনাদের সহযোগী গোত্র ‘আসলাম গোত্রের’ লোকেরাও আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে এলেন। তারা বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! গিফার গোত্র আমাদের ভ্রাতৃ গোত্র। উনারা যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছেন আমরাও সেভাবে ইসলাম গ্রহণ করতে চাই। তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
غفار غفر الله لها واسلم سالمها الله
হে মহান আল্লাহ পাক! গিফার গোত্রকে আপনি ক্ষমা করুন এবং আসলাম গোত্রকে আপনি নিরাপদ রাখুন।’ (আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া ৩য় খ- ৩৫ ও ৩৬ পৃষ্ঠা)

হযরত দ্বিমাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইসলাম গ্রহণ :
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
اخرج حضرت احمد رحمة الله عليه وحضرت مسلم رحمة الله عليه و حضرت البيهقى رحمة الله عليه، عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال قدم ضماد مكة وهو رجل من أزد شنوءة، وكان يرقى من هذه الرياح، فسمع سفهاء الناس يقولن ان حضرت محمد صلى الله عليه و سلم مجنون، فقال اتى هذا الرجل لعل الله ان يشفيه  على يدى، فلقيت محمدا صلى الله عليه وسلم فقلت انى ارقى من من هذه الرياح، وان الله يشفى على يدى من يشاء فهلم،
অর্থ : “হযরত আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক সময় হযরত দ্বিমাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ-এ উপস্থিত হন। তিনি ছিলেন আযাদ শানুয়া গোত্রের এক সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি জিনগ্রস্ত লোকদের ঝাড়ফুঁক করতেন। মক্কা শরীফ-এর কতক মূর্খ ব্যক্তিকে তিনি বলতে শুনলেন যে, তারা বলছে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাকি জিনগ্রস্ত ব্যক্তি। নাঊযুবিল্লাহ! হযরত দ্বিমাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মনে মনে বললেন, আমি উনার চিকিৎসা করবো। হয়তো মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার মাধ্যমে উনাকে সুস্থতা দান করবেন। হযরত দ্বিমাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত শরীফ-এ হাযির হয়ে আরজ করলাম, আমি তো জিনগ্রস্ত ব্যাক্তিদের ঝাড়ফুঁক করে থাকি। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা করেন আমার হাতে সুস্থ করেন। সুতরাং আমি আপনার খিদমত করতে এসেছি।
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم، ان الحمد لله نحمده ونستعينه ونؤمن به ونتوكل عليه ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادى له واشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له وان حضرت محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه و سلم،
তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রসংশা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। আমি উনার ছানা-ছিফত, প্রশংসা করছি এবং উনার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি। তিনি যাকে হিদায়েত দান করেন, তাকে কেউ গুমরাহ করতে পারে না। আর নাফরমানী করার কারণে যে গুমরাহ হয়, অন্য কেউ তাকে হিদায়েতের পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, উনার কোনো শরীক নেই।”
আরো উল্লেখ রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরূপ কথা মুবারক তিনবার বললেন।
হযরত দ্বিমাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি তো গণকদের কথা শুনেছি, জাদুকরদের কথা শুনেছি এবং কবিদের কবিতাও শুনেছি। কিন্তু এ ধরনের কথাতো কোনো দিন শুনিনি। ইয়া হাবীবাল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার হাত মুবারক বাড়িয়ে দিন আমি ইসলামের বাইয়াত করি। তখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বাইয়াত করে নিলেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনার সম্প্রদায়ের পক্ষেও কি আপনি বাইয়াত গ্রহণ করবেন? তিনি বললেন; হ্যাঁ, আমার সম্প্রদায়ের পক্ষেও আমি বাইয়াত গ্রহণ করছি। এদিকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার একদল মুজাহিদ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জিহাদে প্রেরণ করেছিলেন। উনারা হযরত দ্বিমাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। মুজাহিদ প্রধান উনার লোকজনকে বললেন, আপনারা কি এ সম্প্রদায়ের কোনো কিছু হস্তগত করেছেন? একজন বললেন, হ্যাঁ, আমি তাদের একটি পানিপাত্র নিয়েছি। মুজাহিদ প্রধান বললেন, এটা ফেরত দিয়ে দিন। কারণ তারা হযরত দ্বিমাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্প্রদায়।
অপর এক বর্ণনায় এসেছে আপনার এই বাক্যগুলো আমাকে শুনিয়ে দিন। এসবের প্রভাব তো গভীর সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
(খছায়িছুল কুবরা ১ম জিলদ ২২৪ পৃষ্ঠা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৩৬ পৃষ্ঠা)

0 Comments: