হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৪৮১-৫৮৪) (ক)


(৪৮১-৫৮৪)
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার প্রসার:
হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ রয়েছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما فى قصة جلة جرت بين مشركى وبين رسول الله صلى الله عليه وسلم فلما قام رسول الله صلى الله عليه وسلم قال أبوجهل بن هشام يامعشر قريش إن حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم قد أبى إلا ما ترون من عيب ديننا، وشتم ابائنا وتسفيه أحلامنا، وسب الهتنا وانى أعاهد الله لأجلس له غدا بحجر فاذا سجد فى صلاته فضحت به رأسه فليصنع بعد ذلك بنوعبد مناف ما بدا لهم، فلما أصبح أبوجهل لعنه الله أخذ حجرا ثم جلس لرسول الله صلى الله عليه وسلم ينتظره، وغدا رسول الله صلى الله عليه وسلم كما كان يغدو، وكان قبلته الشام. فكان إذا صلى صلى بين الركنين الأسود اليمانى، وجعل الكعبة بينه وبين الشام.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও মক্কা শরীফ-এর মুশরিকদের মাঝে অনুষ্ঠিত বিতর্ক বিষয়ক একটি লম্বা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মানুষকে হিদায়েতের দিকে আহ্বান শুরু করলেন তখন আবু জাহিল ইবনে হিশাম বললো, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি কাজ করে যাচ্ছেন তা কি তোমরা লক্ষ্য করেছো? তিনি আমাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করছেন, আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে গালমন্দ করছেন, আমাদের জ্ঞানী বা বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মূর্খতার অপবাদ দিচ্ছেন এবং আমাদের উপাস্যদেরকে গালমন্দ করছেন। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নামে ক্বসম করে বলছি যে, আগামী কাল ভোরে আমি পাথর নিয়ে বসে থাকবো। তিনি যখন সিজদায় যাবেন তখন আমি পাথর মেরে উনার মাথা মুবারক ফেটে দিবো। নাঊযুবিল্লাহ! এরপর আবদে মানাফ গোত্রের লোকগণ আমাকে যা করতে পারেন করবেন। পরের দিন ছুবহে ছাদিক তথা প্রত্যুষে আবূ জাহিল সে সত্যি সত্যি একটি পাথর হাতে নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের অপেক্ষায় ওঁৎপেতে বসে থাকে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যথারীতি ফজরের নামায আদায়ের জন্যে হুজরা শরীফ থেকে বেরিয়ে এলেন। তখন উনার ক্বিবলা ছিলো সিরিয়া অর্থাৎ বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর দিকে। ফলে তিনি যখন হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতেন তখন উনার মাঝে এবং উনার ক্বিবলার স্থান সিরিয়ার মাঝে থাকতো পবিত্র কা’বা শরীফ।
 فقام رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى، وقد غدت قريش فجلسوا فى أنديتهم ينتظرون، فلما سجد رسول الله صلى الله عليه وسلم احتمل أبوجهل الحجر ثم أقبل نحوه حتى اذا دنا منه رجع منبهتا ممتقعا لونه مرعوبا قد يبست يداه على حجره، حتى قذف الحجر من يده، وقامت اليه رجال من قريش فقالوا له ما بك يا أبا الحكم؟ فقال قمت اليه لافعل ما قلت لكم البارحة فلما دنوت منه عرض لى دونه فحل من الابل والله ما رأيت مثل هامته، ولا قصرته، ولا أنيابه لفحل قط فهم أن يأ كلنى.
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه فذكرلى أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ذلك حضرت جبريل عليه السلام، ولو دنا منه لأخذه.
প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামাযের জন্য দাঁড়ালেন। কুরাইশের লোকজন সেদিন সকাল সকাল পবিত্র কা’বা শরীফ-এ এসে নিজ নিজ স্থানে আসন গ্রহণ করে। আবূ জাহিলের নিকৃষ্টতম কার্যকলাপ দেখার জন্য তারা অপেক্ষা করছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদায় গেলেন। পাপিষ্ট কাট্টা মুশরিক আবূ জাহিল তখনই পাথরটি তুলে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অগ্রসর হয়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুবই কাছাকাছি সে পৌঁছে যায়। এরপর হঠাৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এবং চেহারার ফ্যাকাশে রং নিয়ে সে পিছনে সরে আসে। পাথরের উপর তার হাত দুটো নিস্তেজ হয়ে যায় এবং হাত থেকে পাথর পড়ে যায়। তার এ শোচনীয় অবস্থা দেখে কুরাইশের লোকজন তার নিকট ছুটে আসে। তারা বললো, হে আবূ জাহিল! তোমার কি হয়েছে? সে বললো, গত রাতে আমি তোমাদেরকে যা বলেছিলাম তা কার্যকর করার জন্য আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অগ্রসর হয়েছিলাম। আমি উনার কাছাকাছি পৌঁছতেই উনার পিছনে আমার সম্মুখে দেখতে পাই এক বিরাট উট। ওই উটের মাথা, ঘাড় ও দাঁত এতো বিশাল ও ভয়ঙ্কর যে, কোনো উটের মধ্যে আমি তেমনটি দেখিনি। ওই উট আমাকে খেয়ে ফেলতে উদ্যত হয়েছিলো।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছিলেন, “ওই উট মূলত হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ছিলেন। আবূ জাহিল যদি ওই উটের কাছে যেতো, তবে নিশ্চয়ই তিনি তাকে আক্রমণ করতেন।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৪২ ও ৪৩ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت عباس بن عبد المطلب عليه السلام. قال كنت يوما فى المسجد فاقبل أبو جهل- لعنه الله فقال إن لله على إن رأيت حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم ساجدا أن أطأ على رقبته، فحرجت على رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى دخلت عليه فاخبرته بقول أبى جهل، فخرج غضابانا حتى جاء المسجد فعجل أن يدخل من الباب فاقتحم الحائط. فقلت هذا يوم شر، فاتزرت ثم اتبعته فدخل رسول الله صلى الله عليه وسلم فقرأ (اقرأ باسم ربك الذى خلق خلق الانسان من علق) فلما بلغ شأن أبى جهل (كلا إن الانسان ليطغى أن راه استغنى) فقال إنسان لابى جهل يا أبا الحكم هذا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم ؟ فقال أبوجهل ألا ترون ما أرى؟ والله لقد سد أفق السماء على فلما بلغ رسول الله صلى الله عليه وسلم اخر السورة سجد.
অর্থ : “সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি বাইতুল্লাহ শরীফ-এ অবস্থান করছিলাম। সেখানে অভিশপ্ত, পাপিষ্ঠ আবূ জাহিল এলো। সে বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম করে বলছি, আমি যদি সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সিজদারত অবস্থায় দেখি তবে আমি উনার ঘাড় মুবারক পদদলিত করবো। নাঊযুবিল্লাহ! এ কথা শুনে আমি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলাম এবং আবূ জাহিলের উক্তি সম্পর্কে উনাকে অবগত করলাম। এদিকে আবূ জাহিল ক্রুদ্ধ অবস্থায় বাইতুল্লাহ শরীফ-এর দিকে রওয়ানা করে। দরজা মুবারক দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রাচীরের সাথে জোরে ঠোকর খায়।  আমি মনে মনে বললাম, আজ এর বরাতে দুর্গতি আছে। আমি পোশাক-পরিচ্ছদ পরে তার পিছনে পিছনে যাত্রা করি। ইতোমধ্যে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কা’বা শরীফ তথা মসজিদে প্রবেশ করেন এবং
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ- خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ
তিলাওয়াত করতে থাকেন। তিলাওয়াত করতে করতে তিনি যখন আবূ জাহল সম্পর্কিত আয়াত শরীফ
كَلَّا إِنَّ الْإِنسَانَ لَيَطْغَى- أَن رَّآهُ اسْتَغْنَى
মানুষতো সীমা লঙ্ঘন করেই থাকে। কারণ সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।’ (সূরা আলাক : আয়াত শরীফ ৬ ও ৭) পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন এক ব্যক্তি আবূ জাহিলকে সম্বোধন করে বললো, হে আবূ জাহিল! ইনি তো সাইয়্যিদুনা আল আমীন হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি এসব কথা মুবারক বলছেন। আবূ জাহিল বললো, আমি যা দেখছি তা কি তোমরা দেখছো না? মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমার সম্মুখে তো আদিগন্ত প্রাচীর সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্পূর্ণ সূরা তেলাওয়াত করে সিজদা করলেন।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৪৩ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت الامام احمد رحمة الله عليه حدثنا حضرت عبد الرزاق رحمة الله عليه أخبرنا حضرت معمر رحمة الله عليه عن حضرت عبد الكريم رحمة الله عليه عن حضرت عكرمة رضى الله تعالى عنه قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال أبوجهل لئن رأيت حضرت محمدا صلى الله عليه وسلم يصلى عند الكعبة لأطأن على عنقه، فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال لو فعل لأخذته الملائكة عيانا. ورواه البخارى عن حضرت يحي رحمة الله عليه عن حضرت عبد الر زاق رحمة الله عليه به.
অর্থ: “হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুর রাযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেন, আমার নিকট সংবাদ দিয়েছেন হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি হযরত আব্দুল কারীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- আবূ জাহিল বলেছিলো, আমি যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কা’বা শরীফ-এ নামায আদায় করতে দেখি, তবে আমি উনার ঘাড় মুবারক পায়ে চেপে দলিত মথিত করে দেবো। নাঊযুবিল্লাহ! এ কথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কান মুবারকে গেলো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সে যদি তা করতে চায় তবে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে পাকড়াও করবেন। এ হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইয়াহইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে এবং তিনি হযরত আব্দুর রাযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৪৩ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت داود بن أبى هند رحمة الله عليه عن حضرت عكرمة رضى الله تعالى عنه عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه. قال، مر أبو جهل بالنبى صلى الله عليه وسلم وهو يصلى. فقال ألم أنهك أن تصلى يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم؟ لقد علمت ما بها أحد أكثر ناديا منى، فانتهره النبى صلى الله عليه وسلم. فقال حضرت جبريل علية السلام (فليدع ناديه سندع الزبانية) والله لو دعا ناديه لأخذته زبانية العذاب. رواه احمد والترمذى

অর্থ: “হযরত দাঊদ ইবনে আবী হিন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায আদায় করছিলেন। আবূ জাহিল সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলো। সে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি আপনাকে নামায আদায় করতে নিষেধ করেনি? আপনিতো জানেন এই পবিত্র মক্কা ভূমিতে আমার চেয়ে অধিক জনবল সম্পন্ন আর কেউ নেই। এ প্রেক্ষিতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে ধমক দিলেন। তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি নি¤œাক্ত আয়াত শরীফ নিয়ে এলেন।
فَلْيَدْعُ نَادِيَه - سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَ
সে তার সঙ্গি-সাথীদেরকে ডাকুক, আমরাও ডাকবো আযাবের ফেরেশতাদেরকে।” (সূরা আলাক্ব : আয়াত শরীফ ১৭ ও ১৮)
মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম সে যদি তার সঙ্গী-সাথীদেরকে ডাকতো তবে আযাব প্রদানে নিয়োজিত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে অবশ্যই পাকড়াও করতেন। হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৪৩ পৃষ্ঠা)
হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অনুরূপ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন।
অন্য বর্ণনায় আরো উল্লেখ রয়েছে,
 عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه. قال قال أبو جهل لئن عاد حضرت محمد صلى الله عليه وسلم يصلى عند المقام لأقتلنه، فانزل الله تعالى (اقرأباسم ربك الذى خلق) حتى بلغ من الاية (لنسفعا بالناصية ناصية كاذبة خاطئة فليدع ناديه سندع الزبانية). فجاء النبى صلى الله عليه وسلم يصلى فقيل ما يمنعك؟ قال قد اسود ما بينى وبينه من الكتائب. قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه والله لو تحرك لاخذته الملائكة والناس ينظرون اليه.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবূ জাহিল বলেছিলো, সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি পুনরায় ‘মাক্বামে ইবরাহীম’-এর নিকট নামায আদায় করেন, তবে আমি অবশ্যই উনাকে খুন করবো। নাঊযুবিল্লাহ! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করলেন,
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ - خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ - اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ - الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ - عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ -كَلَّا إِنَّ الْإِنسَانَ لَيَطْغَى - أَن رَّآهُ اسْتَغْنَى - إِنَّ إِلَى رَبِّكَ الرُّجْعَى - أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهَى - عَبْدًا إِذَا صَلَّى - أَرَأَيْتَ إِن كَانَ عَلَى الْهُدَى - أَوْ أَمَرَ بِالتَّقْوَى - أَرَأَيْتَ إِن كَذَّبَ وَتَوَلَّى - أَلَمْ يَعْلَمْ بِأَنَّ اللَّهَ يَرَى - كَلَّا لَئِن لَّمْ يَنتَهِ لَنَسْفَعًا بِالنَّاصِيَةِ - نَاصِيَةٍ كَاذِبَةٍ خَاطِئَةٍ - فَلْيَدْعُ نَادِيَه - سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَ
অর্থ: “আপনি পাঠ করুন আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে যিনি (কুল কায়িনাতের সব কিছুই) সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক্ব থেকে। পাঠ করুন আপনার মহা মহিমান্বিত রব আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন যা সে জানতো না। বস্তুত মানুষতো সীমালঙ্ঘন করে থাকে। কারণ সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত। আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে বাধা দেয় একজন বান্দাকে তথা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যখন তিনি ছলাত বা নামায আদায় করেন। আপনি লক্ষ্য করেছেন কি? তিনি তো সৎ পথে থাকেন অথবা তাক্বওয়া হাছিলের নির্দেশ দেন। আপনি লক্ষ্য করেছেন কি?  যদি সে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে সে কি জানে না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখেন। সাবধান! সে যদি বিরত না হয় তবে আমি তাকে অবশ্যই হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাবো মস্তকের সম্মুখভাগের কেশগুচ্ছ ধরে ও যা মিথ্যাবাদী, পাপিষ্ঠের কেশগুচ্ছ। অতএব, সে তার পরিবারবর্গকে আহ্বান করুক। আমি আহ্বান করবো জাহান্নামের প্রহরীদেরকে ।” (সূরা আলাক : আয়াত শরীফ ১-১৮)
উক্ত আয়াত শরীফগুলো তিলাওয়াত করে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছলাত বা নামায আদায় করলেন। আবূ জাহিল উনার কোনো ক্ষতি করতে পারছিলো না। তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, কি তোমাকে বাধা দিচ্ছে? সে বললো, বিরাট সৈন্য সমাবেশের কারণে আমার আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে কালো প্রাচীর তৈরি হয়ে গেছে। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! সে যদি নড়াচড়া করতো এবং সম্মুখে অগ্রসর হতো তবে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে পাকড়াও করতেন। লোকজন তা প্রকাশ্যে দেখতে পেতো। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৪৪ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت أبى هريرة رضى الله تعالى عنه. قال قال أبوجهل هل يعفر حضرت محمد صلى الله عليه وسلم وجهه بين أظهركم؟ قالوا نعم! قال فقال واللات والعزى لئن رأيته يصلى كذلك لأطأن على رقبته، ولأ عفرن وجهه بالتراب. فأتى رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو يصلى ليطأ على رقبته. ولأ عفرن وجهه بالتراب. فأتى رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو يصلى ليطأ على رقبته. قال فما فجئهم منه إلا وهو ينكص على عقبيه، ويتقى بيديه، قال فقيل له مالك؟ قال ان بينى وبينه خندقا من نار وهولا وأجنحة. قال فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم. لودنا منى لا ختطفته الملائكة عصوا عضوا.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ জাহিল বলেছিলো, সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি তোমাদের সম্মুখে যমীনে সিজদা করেন? তারা বললো, হ্যাঁ, তাই তো! তখন আবূ জাহিল বললো, লাত ও উযযার ক্বসম! আমি যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এভাবে নামায আদায় তথা সিজদা করতে দেখি। তবে উনার ঘাড় মুবারক পায়ে মাড়িয়ে দিবো এবং মুখে মাটি মেখে দিবো। নাঊযুবিল্লাহ! এরপর দেখা গেলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায আদায় করছিলেন। এমন সময় আবূ জাহিল সে উনার নিকট এলো উনার ঘাড় মুবারক পদদলিত করার জন্যে। নাঊযুবিল্লাহ! কিন্তু লোকজন আশ্চর্য হয়ে দেখতে পেলো যে, সে আবূ জাহিল পিছনের দিকে সরে আসছে এবং দু’হাতে যেনো নিজেকে রক্ষা করছে। লোকজন তাকে বললো, ব্যাপার কি? সে বললো, আমি দেখলাম, আমার এবং উনার মাঝে আগুনের একটি গহ্বর এবং দেখলাম বস্তু ও কতগুলো ডানা বিশিষ্ট জীব। এ প্রেক্ষিতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যদি সে (আবূ জাহিল) আমার নিকটে ঘেঁষতো তবে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তার একটি করে অঙ্গ ছোঁ মেরে নিয়ে যেতেন।
قال وأنزل الله تعالى (كلا ان الانسان ليطغى أن راه استغنى) الى اخر السورة-
 এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করলেন,
كَلَّا إِنَّ الْإِنسَانَ لَيَطْغَى - أَن رَّآهُ اسْتَغْنَى - إِنَّ إِلَى رَبِّكَ الرُّجْعَى - أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهَى - عَبْدًا إِذَا صَلَّى - أَرَأَيْتَ إِن كَانَ عَلَى الْهُدَى - أَوْ أَمَرَ بِالتَّقْوَى - أَرَأَيْتَ إِن كَذَّبَ وَتَوَلَّى - أَلَمْ يَعْلَمْ بِأَنَّ اللَّهَ يَرَى - كَلَّا لَئِن لَّمْ يَنتَهِ لَنَسْفَعًا بِالنَّاصِيَةِ - نَاصِيَةٍ كَاذِبَةٍ خَاطِئَةٍ - فَلْيَدْعُ نَادِيَه - سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَ - كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ
অর্থ: “বস্তুত মানুষ তো সীমালঙ্ঘন করেই থাকে। কারণ সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। আপনার রব উনার নিকট প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত। আপনি কি তাকে দেখেছেন যে বাধা দেয় এক বান্দা তথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যখন তিনি নামায আদায় করেন? আপনি লক্ষ্য করেছেন কি? যদি তিনি সৎ পথে থাকেন অথবা তাক্বওয়ার নির্দেশ দেন। আপনি লক্ষ্য করেছেন কি? যদি সে মিথ্যা আরোপ করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে সে কি জানে না যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখেন? সাবধান! সে যদি বিরত না হয়, তবে আমি তাকে অবশ্যই হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাবো মস্তকের সম্মুখ ভাগের কেশগুচ্ছ ধরে। মিথ্যাচারী পাপিষ্ঠের কেশগুচ্ছ। অতএব, সে তার পার্শ্বচরদেরকে আহ্বান করুক আমিও আহ্বান করবো জাহান্নামের প্রহরীদেরকে। সাবধান! আপনি ওর অনুসরণ করবেন  না। আপনি সিজদা করুন এবং আমার নিকটবর্তী হোন। (সূরা আলাক : আয়াত শরীফ ৬-১৯)
(মুসলিম শরীফ, আহমদ নাসায়ী ইবনে আবী হাতীম, বায়হাকী ও আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৪৪ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
وقال حضرت الامام احمد رحمة الله عليه حدينا حضرت وهب بن جرير رحمة الله عليه حدينا حضرت شعبة رحمة الله عليه عن حضرت أبى اسحاق رحمة الله عليه عن حضرت عمرو بن ميمون رحمة الله عليه عن حضرت عبد الله رضى الله تعالى عنه. قال ما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم دعا على قريش غير يوم واحد، فانه كان يصلى ورهط من قريش جلوس، وسلا جزور قريب منه. فقالوا من يأخذ هذا السلا فيلقيه على ظهره؟ فقال عقبة ابن أبى معيط أنا، فاخذه فالقاه على ظهره. فلم يزل ساجدا حتى جاءت حضرت فاطمة عليها السلام فاخذته عن ظهره.
অর্থ: “হযরত আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত ওয়াহহাব ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত উরওয়া ইবনে মায়মুন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মাত্র একদিন ব্যতীত অন্য কোনো দিন আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কুরাঈশ কাফিরদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করতে দেখিনি। যে দিন বদদোয়া করেছিলেন সেদিনের ঘটনা: আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায আদায় করছিলেন। পাশে বসা ছিলো কুরাঈশদের কতক লোকজন। নিকটে ছিলো উটের নাড়িভুঁড়ি। তারা বললো, ওই নাড়িভুঁড়ি নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিঠ মুবারকে চাপিয়ে আসতে পারবে কে? উকবা ইবনে আবী মুআয়াত বললো, আমি পারবো। এরপর ওই নাড়িভুঁড়ি নিয়ে সে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিঠ মুবারকে ফেলে আসে। নাঊযুবিল্লাহ! নাড়িভুঁড়ির চাপের কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদা মুবারকেই ছিলেন উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি এসে সেটি উনার সম্মানিত পিতা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিঠ মুবারক থেকে সরিয়ে ফেলা পর্যন্ত।

فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اللهم عليك بهذا الملأ من قريش، اللهم عليك بعتبة بن ربيعة، اللهم عليك بشيبة بن ربيعة، اللهم عليك بابى جهل بن هشام، اللهم عليك بعقبة بن أبى معيط، اللهم عليك بابى بن خلف- أوأمية بن خلف- قال حضرت شعبة رحمة الله عليه الشاك قال حضرت عبد الله رضى الله تعالى عنه فلقد رأيتهم قتلوا يوم بدر جميعا، ثم سحبوا إلى القليب غير أبى- أوأمية بن خلف- فانه كان رجلا ضخما فتقطع.
তখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ বলে তাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক! কুরাঈশদের নেতৃস্থানীয় কাফির ওই লোকগুলোকে আপনি শাস্তি দিন। হে মহান আল্লাহ পাক! উতবা ইবনে রাবীয়াকে শাস্তি দিন। হে মহান আল্লাহ পাক! শায়বা ইবনে রাবীয়াকে শাস্তি দিন। হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি আবূ জাহিল ইবনে হিশামকে শাস্তি দিন। হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি উকবা ইবনে আবী মুয়াইতকে শাস্তি দিন। হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি উবাই ইবনে খালফকে শাস্তি দিন। বর্ণনাকারী হযরত শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উবাই ইবনে খালফের জন্যে বদদোয়া করেছেন নাকি উমাইয়া ইবনে খালফের কথা বলেছেন- এ ব্যাপারে রাবীদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি বদর জিহাদে দেখেছি যে ওই সমস্ত কাফিরেরা সবাই বদর জিহাদের দিন নিহত হয়েছে। এরপর উবাই ইবনে খালফ মতান্তরে উমাইয়া ইবনে খালফ ব্যতীত অন্য সবাইকে টেনে নিয়ে কুয়োর মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিলো। উবাই ইবনে খালফ সে মোটা-সোটা লোক ছিলো। তাই তাকে কেটে কেটে খ- খ- করা হয়।
قد رواه البخارى فى مواضع متعددة من صحيحه ومسلم من طرق عن حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه به. والصواب أمية بن خلف فانه الذى قتل يوم بدر، وأخوه أبى إنما قتل يوم أحد وفيه أن حضرت فاطمة عليها السلام لما القته عنه أقبلت عليهم فسبتهم، وأنه صلى الله عليه وسلم لما فرغ من صلاته رفع يديه يدعو عليهم، فلما رأوا ذلك سكن عنهم الضحك، وخافوا دعوته، وأنه صلى الله عليه وسلم دعا على الملأ منهم جملة وعين فى دعائه سبعة. وقع فى أكثر الروايات تسمية ستة منهم وهم عتبة، وأخوه شيبة أبنا ربيعة، والوليد بن عتبة، وأبو جهل بن هشام، وعقبة بن أبى معيط، وأمية بن خلف.
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ونسيت السابع. قلت وهو عمارة بن الوليد وقع تسميته فى صحيح البخارى.

হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছহীহ গ্রন্থের একাধিক স্থানে এবং হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে একাধিক স্থানে হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে উক্ত হাদীছ শরীফ-এ বর্ণনা করেছেন। বর্ণনায় উমাইয়া ইবনে খালফ হওয়াটাই বিশুদ্ধ কারণ বদর জিহাদে সেই নিহত হয়েছিলো। তার ভাই উবাই ইবনে খালফ নিহত হয়েছে উহুদ দিবস।”
উক্ত বর্ণনায় আরো এসেছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর নাড়িভুঁড়ি রেখে দিলে হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি তাদের নিকটে গেলেন এবং তাদেরকে বদ দোয়া করলেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায শেষ করে দু’হাত মুবারক তুলে কাফিরদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করলেন। তা দেখে তাদের হাসি থেমে যায় এবং উনার বদদোয়ার প্রেক্ষিতে তারা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তিনি সামগ্রিকভাবে তাদের সবার জন্যে এবং নির্দিষ্টভাবে সাত জনের নাম উল্লেখ করে বদদোয়া করেছিলেন। অধিকাংশের বর্ণনায় ওই সাত জনের মধ্যে ছয় জনের নাম পাওয়া যায়। তারা বললো, উতবা ইবনে রবীয়া, শায়রা ইবনে রবীয়া, ওলীদ ইবনে উতবা, আবু জাহিল ইবনে হিশাম, উকবা ইবনে আবী মুআয়ত এবং উমাইয়া ইবনে খলফ।
ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সপ্তম ব্যক্তির নাম আমি ভুলে গেছি। আমি বলি, ওই সপ্তম ব্যক্তি হলো আম্মার ইবনে ওয়ালীদ সহীহ বুখারী শরীফ-এ তার নাম উল্লেখিত রয়েছে।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৪৪ ও ৪৫ পৃষ্ঠা)

0 Comments: