হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৪৮১-৫৮৪) (গ)


আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে কাফির মুশরিকরা যেসব মু’জিযা ও নিদর্শন প্রদর্শনের দাবি জানিয়েছিলো
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবীইয়িন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন কালিমা শরীফ-এর দাওয়াত দিচ্ছিলেন তখন কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাছারা তথা বিধর্মীরা সকলেই উনাকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়া থেকে শুরু করে লক্ষ-কোটি ধরনের ষড়যন্ত্র উনার বিরুদ্ধে করতে থাকে। বিভিন্নভাবে হয়রান-পেরেশান, বকাবকি, গালি-গালাজ ইত্যাদি করে। তার পাশাপাশি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার লক্ষ্যে মু’জিজা শরীফ, নিদর্শনাবলী তথা অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনের দাবি জানায়। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের হিদায়েত দানের উদ্দেশ্যে একের পর এক মু’জিজা শরীফ, দেখাতে থাকেন। একদিকে যারা মু’মিন মুত্তাক্বী তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঈমান আনাসহ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী মা’রিফত ও মুহব্বত হাছিল করেন। অন্যদিকে কাফির মুশরিক তাবৎ বিধর্মীরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান তথা মু’জিজা শরীফ দর্শন করে ঈর্ষান্বিত হয়ে ক্রমে ক্রমে কুফরী অবাধ্যতা ও নাফরমানীর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পরিশেষে কঠিন আযাব-গযবে নিপতিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
উল্লেখ্য যে, মক্কার কাফির, মুশরিক, ইহুদী-নাছারা তাদের দাবি ছিলো সত্যদ্রোহিতামূলক। হিদায়েত কামনা ও সৎপথ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে নয়। এ জন্যেই তাদের অধিকাংশ আবদারই পুরণ করা হয়নি। কারণ মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা নিশ্চিত জানেন যে, কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাছারা, বেদ্বীন, বদদ্বীন তাদের পেশকৃত দাবি ও ঘটনাগুলো স্বচক্ষে দেখা সত্ত্বেও তারা সত্যদ্রোহিতায় অন্ধ হয়ে থাকবে এবং তারা গুমরাহীর অন্ধকারে আবর্তিত হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وَأَقْسَمُواْ بِاللّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَئِن جَاءتْهُمْ آيَةٌ لَّيُؤْمِنُنَّ بِهَا قُلْ إِنَّمَا الآيَاتُ عِندَ اللّهِ وَمَا يُشْعِرُكُمْ أَنَّهَا إِذَا جَاءتْ لاَ يُؤْمِنُونَ  -وَنُقَلِّبُ أَفْئِدَتَهُمْ وَأَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُواْ بِهِ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَنَذَرُهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ-  وَلَوْ أَنَّنَا نَزَّلْنَا إِلَيْهِمُ الْمَلآئِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتَى وَحَشَرْنَا عَلَيْهِمْ كُلَّ شَيْءٍ قُبُلاً مَّا كَانُواْ لِيُؤْمِنُواْ إِلاَّ أَن يَشَاء اللّهُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُونَ
অর্থ: “তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকে কঠিন শপথ করে বলে, তাদের নিকট যদি কোনো নিদর্শন আসতো, তবে অবশ্যই তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করতো। আপনি বলুন! নিদর্শন তো মহান আল্লাহ পাক উনার ইখতিয়ারভুক্ত। তাদের নিকট নিদর্শন আসলেও তারা যে ঈমান আনবে না, তা কিভাবে তোমাদের বোধগম্য করা যাবে? তারা যখন প্রথমবার তাদের (কুফরীতে নিমজ্জিত থাকার কারণে) ঈমান বা বিশ্বাস রাখেনি, তেমনি আমিও তাদের অন্তরে ও নয়নে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবো এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে দেবো। আমি তাদের নিকট ফেরেশতা প্রেরণ করলেও এবং মৃতেরা তাদের সাথে কথা বললেও এবং সকল বস্তুকে তাদের সম্মুখে হাজির করলেও যদি না মহান আল্লাহ পাক তিনি ইচ্ছা করেন, তারা ঈমান আনবে না। কিন্তু তাদের অধিকাংশ অজ্ঞ। (সূরা আনয়াম : আয়াত শরীফ ১০৯-১১১)
অর্থাৎ মু’জিজা বা অলৌকিক নিদর্শন প্রদর্শন সম্পূর্ণভাবেই মহান আল্লাহ পাক উনার অভিপ্রায় নির্ভর।
প্রথম আয়াত শরীফ-এর অর্থ হলো- মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এর ক্বসম করে কাফির, মুশরিক তথা বিধর্মীরা বলে, নিদর্শন বা মু’জিযা প্রত্যক্ষ করতে পারলে আমরা ঈমানদার হয়ে যাবো। মহান আল্লাহ পাক তিনি এর জাওয়াবে বললেন, ‘হে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাম! আপনি তাদেরকে সুস্পষ্টরূপে একথা জানিয়ে দিন যে, নিদর্শন সম্পূর্ণভাবেই মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় নির্ভর। আর আমি কোনো নিদর্শনের অধিকারী নই। অর্থাৎ আমি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।’ এরপর বলা হয়েছে তাদের নিকট নিদর্শন এলেও তারা যে ঈমান আনয়ন করবে না, এটা কিভাবে তোমাদের বিশ্বাস করানো যাবে। অত্র আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে, তারা তথা কাফির-মুশরিকরা কখনও ঈমান আনবে না।
এখানে *** তারা বুঝবে না। এবাক্যটির ‘মা’ শব্দটি হচ্ছে নেতিবাচক অর্থ প্রকাশক অথবা ‘মা’ শব্দটি এখানে একটি অস্বীকৃতসূচক প্রশ্ন। আলোচ্য বাক্যে কারণের কারণকে অস্বীকার করা হয়েছে। অর্থাৎ ঈমান এখানে কারণ। এবং মু’জিযা শরীফ হচ্ছে কারণের কারণ। আর কারণের কারণ মু’জিযা বা নিদর্শনকে অস্বীকার করার মাধ্যমে মূল কারণ বা ঈমানকে অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নিদর্শন দেখলেও তারা ঈমান আনবে না। কারণ তারা চির পথভ্রষ্ট।
আরো বলা হয়েছে, মানুষের মূল সম্পদ ঈমান। মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা ব্যতিরেকে এ ঈমান কেউ লাভ করতে পারে না। অসংখ্য অলৌকিক নিদর্শন দেখলেও না। অর্থাৎ এরা এতো পরিমাণ গুনাহ করেছে যে, তারা রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছে ইবলিশের মতো। কাজেই রহমতে খাছ ব্যতিত ঈমান আনতে পারবে না। আর এরা রহমতে খাছ-এর উপযুক্ত নয় ইবলিশের মতো।
আলোচ্য আয়াত শরীফ-এ সে কথাটিই বলে দেয়া হয়েছে এভাবে- মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের নিকট ফেরেশতা প্রেরণ করলেও এবং মৃত ব্যক্তি তাদের সঙ্গে কথা বললেও এবং সকল বস্তুকে তাদের সম্মুখে হাজির করলেও যদি না মহান আল্লাহ পাক উনার অন্যরকম ইচ্ছা করেন তবুও তারা ঈমান আনবে না। এখানে মৃতেরা কথা বলার অর্থ যদি মৃত ব্যক্তিরা পুনর্জীবিত হয়ে রিসালতের সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করে। (তাফসীরে মাযহারী)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ  -وَلَوْ جَاءتْهُمْ كُلُّ آيَةٍ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الأَلِيمَ
অর্থ: “যাদের বিরুদ্ধে আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার কথা মুবারক সাব্যস্ত হয়েছে তারা ঈমান আনবে না, এমনকি ওদের নিকট প্রত্যেকটি নিদর্শন (মু’জিজা) আসলেও যতক্ষন না তারা কঠিন আযাব-গযব প্রত্যক্ষ করবে।” (সূরা ইউনূস : আয়াত শরীফ ৯৬, ৯৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,
وَمَا مَنَعَنَا أَن نُّرْسِلَ بِالآيَاتِ إِلاَّ أَن كَذَّبَ بِهَا الأَوَّلُونَ وَآتَيْنَا ثَمُودَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُواْ بِهَا وَمَا نُرْسِلُ بِالآيَاتِ إِلاَّ تَخْوِيفًا
অর্থ: “পূর্ববর্তীদেররা নিদর্শন অস্বীকার করায় আমাকে নিদর্শন প্রেরণ করা থেকে বিরত রাখে। আমি শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ ছামূদ জাতিকে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম। অতঃপর তারা উহার প্রতি যুলুম করেছিলো। আমি ভীতি প্রদর্শনের জন্যেই নিদর্শন প্রেরণ করি।” (সূরা বনী ইসরাইল : আয়াত শরীফ ৫৯)
অত্র আয়াত শরীফ-এর প্রথমে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ঘোষণা করেছেন পূর্ববর্তীদের কর্তৃক নিদর্শন অস্বীকার করায় আমাকে মু’জিযা বা নিদর্শন প্রেরণ করা থেকে বিরত রাখে। একথার অর্থ হচ্ছে, মক্কার কাফির মুশরিকরা পূর্ববর্তী যুগের কাফির, মুশরিক ইহুদী নাছারাদের ন্যায় অবিমৃশ্য, উন্নাসিক ও গোঁয়ার। তাদের পূর্বসূরীরা তাদের নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিকট বিভিন্ন মু’জিযা দেখতে চেয়েছিলো। এরাও সেরকম চায়। তাদের পূর্বসূরীরা মু’জিজা দেখেও ঈমান আনেনি। তাই তাদেরকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। এখন যদি আমি মু’জিযা প্রকাশ ঘটাই তবে এরাও মু’জিযার অবমাননা করবে। ফলে পূর্ববর্তীদের মতোই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন, আমার যিনি হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতকে ধ্বংস করা আমার অভিপ্রায় নয়। তাই তাদেরকে অপঅভিলাষ পূরণ করা থেকে আমি বিরত রইলাম।
এরপর বলা হয়েছে, আমি স্পষ্ট নিদর্শন ছামূদ জাতির নিকট উষ্ট্রী পাঠিয়েছিলাম, অতঃপর তারা তার উপর যুলুম করলো। এ কথার অর্থ ছামূদ সম্প্রদায় তাদের নবী হযরত ছালেহ আলাইহিস সালাম উনার নিকটে চেয়েছিলো প্রস্তরাগত অলৌকিক উষ্ট্রী। আমি সে উষ্ট্রী তাদেরকে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সে উষ্ট্রীকে হত্যা করে ফেলেছিলো। এভাবে হয়েছিলো অত্যাচারের অপরাধে অপরাধী। যথাপযুক্ত শাস্তিও তারা পেয়েছিলো এ জন্যে।
এরপর বলা হয়েছে, আমি ভয় প্রদর্শনের জন্যই নিদর্শন প্রেরণ করি। একথার অর্থ- মু’জিযা বা নিদর্শন হচ্ছে ভয় প্রদর্শন করা। অর্থাৎ অলৌকিকত্ব দর্শনে ভীত হয়ে মানুষ যেনো সত্য দ্বীনে ফিরে আসে। আমি মু’জিযার প্রকাশ ঘটাই সে উদ্দেশ্যেই। এরপরেও ভীত না হলে সমূলে বিনাশ করি তাদেরকে। (তাফসীরে মাযহারী)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,
وَقَالُواْ لَن نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّى تَفْجُرَ لَنَا مِنَ الأَرْضِ يَنبُوعًا  -أَوْ تَكُونَ لَكَ جَنَّةٌ مِّن نَّخِيلٍ وَعِنَبٍ فَتُفَجِّرَ الأَنْهَارَ خِلالَهَا تَفْجِيرًا  -أَوْ تُسْقِطَ السَّمَاء كَمَا زَعَمْتَ عَلَيْنَا كِسَفًا أَوْ تَأْتِيَ بِاللّهِ وَالْمَلآئِكَةِ قَبِيلاً - أَوْ يَكُونَ لَكَ بَيْتٌ مِّن زُخْرُفٍ أَوْ تَرْقَى فِي السَّمَاء وَلَن نُّؤْمِنَ لِرُقِيِّكَ حَتَّى تُنَزِّلَ عَلَيْنَا كِتَابًا نَّقْرَؤُهُ قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَرًا رَّسُولاً
অর্থ: “এবং তারা বলে কখনো আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনবো না, যতক্ষণ না আপনি আমাদের জন্যে ভূমি হতে প্র¯্রবণ উৎসারিত করবেন। অথবা আপনার খেজুরের ও আঙ্গুরের এক বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে আপনি অজ¯্র ধারায় প্রবাহিত করে দিবেন নদী-নালা। অথবা আপনি যেমন বলে থাকেন তদনুযায়ী আকাশকে খ--বিখ- করে আমাদের উপর ফেলবেন অথবা মহান আল্লাহ পাক তিনি ও ফেরেশতাগণ উনাদেরকে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করবেন। অথবা একটি স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে, অথবা আপনি আকাশে আরোহণ করবেন; কিন্তু আপনার আকাশে আরোহণে আমরা কখনো ঈমান আনবো না, যতক্ষণ না আপনি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ করবেন; যা আমরা পাঠ করবো। বলুন, পূতঃপবিত্র আমার মহান আল্লাহ পাক; আর আমি হলাম একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাশারী সূরতে।” (সূরা বনী ইসরাইল : আয়াত শরীফ ৯০-৯৩)
উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহ তখনই নাযিল হয়েছে যখন কাফির, মুশরিকরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে নিদর্শন, মু’জিযা ও অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শন করতে বলেছে। আসলে এরূপ মু’জিযা দেখতে চাওয়া তাদের ছিলো সত্যদ্রোহিতামূলক। হিদায়েত কামনা ও সৎপথ প্রাপ্তি উদ্দেশ্যে নয়।
সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال اجتمع عليه من أشراف قريش- وعدد أسماءهم بعد غروب الشمس عند ظهر الكعبة، فقال بعضهم لبعض ابعثوا إلى حضرت محمد صلى الله عليه وسلم فكلموه، وخاصموه حتى تعذروا فيه، فبعثوا اليه إن أشراف قومك قد اجتمعوا لك ليكلموك، فجاءهم رسول الله صلى الله عليه وسلم سريعا وهو يظن أنه قد بدالهم فى أمره بدء، وكان حريصا يحب رشدهم ويعز عليه عنتهم، حتى جلس اليهم. فقالوا يا محمد صلى الله عليه وسلم إنا قد بعثنا اليك لنعذر فيك، وإنا والله لا نعلم رجلا من العرب أدخل على قومه ما أدخلت على قومك، لقد شتمت الا باء، وعبت الدين، وسفهت الاحلام، وشتمت الالهم وفرقت الجماعة، وما بقى من قبيح إلا وقدجئته فيما بيننا وبينك.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সূর্যাস্তের পর কুরাইশ বংশের কাফিরদের মধ্যে যারা শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি তারা কা’বা শরীফ-এর নিকট সমবেত হয়। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উপস্থিত লোকদের নাম উল্লেখ করেছেন। তারা একে অন্যকে বললো যে, তোমরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট প্রতিনিধি প্রেরণ করো এবং উনার নিকট যুক্তিতর্ক পেশ করো যাতে শেষপর্যন্ত এ বিষয়ে উনার কোনো ওযর-আপত্তি না থাকে। এরপর তারা উনার নিকট এই বলে লোক পাঠায় যে, আপনার সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ সমবেত হয়েছে, তারা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় এটাই কামনা করতেন তারা যেনো সৎপথে আসে। তাদের সত্য প্রত্যাখানে তিনি দুঃখ কষ্ট পেতেন। তাদের উপস্থিতির কথা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মনে করলেন যে, হয়তো ঈমান আনায়নের ব্যাপারে তাদের মনে কোনো নতুন অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই তিনি সংবাদ শুনে দ্রুত তাদের নিকট উপস্থিত হন এবং তাদের নিকট গিয়ে আসনে বসেন।
তারা বললো, হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা আপনার নিকট সংবাদ পাঠিয়েছি এজন্যে যে, এ বিষয়ে আমরা আপনার ওযর-আপত্তির পথ বন্ধ করে দিতে চাই। আপনি আপনার সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন কোনো মানুষ তার নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে তেমন কিছু করেছে বলে আমাদের জানা নেই। আপনি আমাদের পূর্বপুরুষদের দুর্নাম করেছেন। আমাদের ধর্মের দোষত্রুটি বর্ণনা ও সমালোচনা করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! আমাদের জ্ঞানী-গুণী লোকদেরকে আপনি মূর্খ বলছেন। আমাদের উপাস্যগুলোকে আপনি গালমন্দ করছেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধ সম্প্রদায়কে আপনি বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত করে দিয়েছেন। এমন কোনো মন্দ কাজ ও মন্দ আচরণ নেই, যা আপনি আমাদের সাথে করেননি। নাঊযুবিল্লাহ!
فان كنت إنما جئت بهذا الحديث تطلب مالا جمعنا لك من أموالنا حتى تكون أكثرنا مالا، وإن كنت إنما تطلب الشرف فينا سودناك علينا، وإن كنت تريد ملكا ملكناك علينا، وإن كان هذا الذى يأتيك بما يأتيك رئيا تراه قد غلب عليك- وكان يسمون التابع من الجن الرئى- فريما كان ذلك؛ بذلنا أموالنا فى طلب الطب حتى نبرئك منه أونعذر فيك؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم مابى ما تقولون، ماجئتكم بماجئتكم به أطلب أموالكم، ولا الشرف فيكم، ولا الملك عليكم، ولكن الله بعثنى اليكم رسولا، وانزل على كتابا، وأمرنى أن أكون لكم بشيرا ونذيرا، فبلغتكم رسالة ربى ونصحت لكم، فان تقبلوا منى ماجئتكم به فهو حظكم من الدنيا والا خرة، وإن تردوه على أصبر لامر الله حتى يحكم الله بينى وبينكم-
আপনার এরূপ প্রচারের দ্বারা ধন-সম্পদ সংগ্রহ করাই যদি উদ্দিষ্ট হয়, তবে আমাদের সকলের ধন-সম্পদ থেকে কিছু কিছু আমরা আপনাকে দিয়ে দিবো যার ফলে আপনি আমাদের সকলের চাইতে অধিক সম্পদশালী হয়ে যাবেন। সম্মান ও মর্যাদাই যদি আপনার কাম্য হয়, তবে আমরা আপনাকে আমাদের সকলের সরদার রূপে বরণ করে নিবো। আপনি যদি রাজা হতে চান আপনাকে আমাদের রাজারূপে গ্রহণ করবো। আর আপনার নিকট এ সকল বিষয়ে সংবাদ নিয়ে যে আসেন, তিনি যদি জিন হয়ে থাকেন যাঁকে আপনি দেখতে পান এবং যে আপনাকে কাবু করছেন তার হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করার জন্যে চিকিৎসা খাতে যত অর্থ-কড়ি লাগে আমরা তা ব্যয় করে আপনাকে সুস্থ করে তুলবো। নাঊযুবিল্লাহ! এর কোনোটিই যদি আপনি গ্রহণ না করেন, তবে আপনার কোনো ওযর-আপত্তি আমরা মেনে নিবো না।
জাওয়াবে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরা যা বললে, তার কোনোটিই আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি যে বিষয়টি নিয়ে এসেছি তা দ্বারা তোমাদের ধন-সম্পদ হস্তগত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তোমাদের মাঝে সম্মানজনক স্থান লাভ করাও আমার উদ্দেশ্য নয়। রাজত্বও আমি চাই না। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করেছেন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রূপে। সুবহানাল্লাহ! তিনি আমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন এবং আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেনো তোমাদেরকে পুরস্কারের সুসংবাদ এবং শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করি। আমি আমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া রিসালাতের কালাম বা বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিলাম এবং তোমাদের খায়ের বরকত ও কল্যাণ কামনা করছি। আমি যা এনেছি তোমরা যদি তা গ্রহণ করো তবে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ লাভ করবে। আর যদি তা প্রত্যাখ্যান করো তবে আমি ধৈর্য ধারণ করবো, যতক্ষণ না মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের ও আমার ব্যাপারে কোনো ফায়ছালা আসে।
أوكما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- فقالوا يا محمد فان كنت غير قابل منا ما عرضنا عليك فقد علمت أنه ليس أحد من الناس أضيق بلادا، ولا اكل مالا، ولا أشد عيشا منا. فسل لنا ربك الذى بعثك بما بعثك به فليسير عنا هذه الجبال التى قد ضيقت علينا، وليبسط لنا بلادتنا، وليجر فيها أنهارا كأنهار الشام والعراق، وليبعث لنا من مضى من ابائنا، وليكن فيما يبعث لنا منهم قصى بن كلاب فانه كان شيخا صدوقا فنسألهم عما تقول أحق هو أم باطل؟ فان فعلت ما سألناك وصدقوك صدقناك وعرفنا به منزلتك عند الله وأنه بعثك رسولا كما تقول. فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم ما بهذا بعثت إنما جئتكم من عند الله بما بعثنى به فقد بلغتكم ما أرسلت به اليكم، فان تقبلوه فهو حظكم فى الدنيا والاخرة، وإن تردوا على أصبر لامر الله حتى يحكم الله بينى وبينكم.
এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুরূপভাবে বলেন যে, এরপর কুরাইশরা বললো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা আপনাকে যে সব প্রস্তাব দিয়েছি তার কোনোটিই যদি আপনি গ্রহণ না করেন তবে অন্য একটি কাজ করতে পারেন। আপনি তো জানেন আমাদের দেশ আয়তনে ছোট, আমাদের ধন সম্পদ কম এবং আমরা খুব দুঃখ-কষ্টে জীবন-যাপন করি। আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আপনাকে রিসালত সহকারে পাঠিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি উনার নিকট আর্জি পেশ করুন- তিনি যেনো আমাদের এলাকাকে সঙ্কুচিত করে রাখা এই পাহাড়টি দূরে সরিয়ে দেন এবং আমাদের দেশের আয়তন বাড়িয়ে দেন। আরো নিবেদন পেশ করুন তিনি যেনো আমাদের দেশে সিরিয়া ও ইরাকের ন্যায় নদ-নদী প্রবাহিত করে দেন। আমাদের মৃত পূর্বপুরুষগণকে পুনর্জ্জীবিত করে দেন। পুনর্জ্জীবিত লোকদের মধ্যে যেন হযরত কুসাই ইবনে কিলাব আলাইহিস সালাম তিনিও থাকেন। কারণ তিনি একজন সত্যবাদী ও শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি পুনরুজ্জীবিত হয়ে এলে আপনি যা বললেন তা সত্য কি মিথ্যা আমরা উনাকে জিজ্ঞাসা করবো। আমরা আপনাকে যা বললাম, আপনি যদি করে দেখাতে পারেন এবং পূর্বপুরুষগণ যদি আপনাকে সত্যবাদী বলে প্রত্যায়ন করেন, তবে আমরা আপনাকে সত্যবাদী বলে মেনে নিবো। আমরা তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনার বেমেছাল বিশেষ মর্যাদা-মর্তবা রয়েছে বলে বুঝতে পারবো এবং এও বুঝতে পারবো যে, আপনি যেমন বলেছেন ঠিকই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে হাবীবুল্লাহ ও রসূলুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রূপে প্রেরণ করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে বললেন, ওইসব কাজ করার জন্যে তো আমাকে প্রেরণ করা হয়নি। আমি তো তোমাদের নিকট এসেছি সে সব বিষয় নিয়ে যেগুলো সহকারে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন। যে সব বিষয়সহ আমি তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি সেগুলো আমি তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তোমরা যদি সেগুলো গ্রহণ করো তবে ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী হাছিল করবে। আর যদি সেগুলো প্রত্যাখ্যান করো তবে আমি ধৈর্যধারণ করবো এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবো যতক্ষণ না মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার ও তোমাদের মাঝে ফায়ছালা করে দেন।
قالوا فان لم تفعل لنا هذا فخذ لنفسك فسل ربك أن يبعث لنا ملكا يصدقك بما تقول، ويراجعنا عنك، وتسأله فيجعل لنا جنانا وكنوزا وقصورا من ذهب وفضة، ويغنيك عما نراك تبتغى فانك تقوم فى الاسواق وتلتمس المعايش كما نلتمسه حتى نعرف فضل منزلتك من ربك إن كنت رسولا كما تزعم، فقال لهم. ما أنا بفاعل، ما أنا بالذى يسأل ربه هذا، وما بعثت اليكم بهذا ولكن الله بعثنى بشيرا ونذيرا فان تقبلوا ما جئتكم به فهو حظكم فى الدنيا والاخرة، وإن تردوه على أصبر لامر الله حتى يحكم الله بينى وبينك.
তারা বললো, আমরা যা চেয়েছি, আপনি যদি না করেন তবে আপনি এ কাজটি করুন যে, আপনি আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে বলুন, তিনি যেন আমাদের নিকট একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে দেন, যে আপনার কথা মুবারকগুলো সত্য বলে প্রত্যায়ন করবেন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের অভিযোগগুলো খ-ন করবেন। আর আপনি আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নিবেদন পেশ করুন তিনি যেন আমাদের জন্যে বাগ-বাগিচা, সম্পদরাশি এবং স্বর্ণ-রৌপ্যের প্রাসাদরাজির ব্যবস্থা করে দেন। আপনার জীবিকা অন্বেষণের ঝামেলা থেকে যেন তিনি আপনাকে মুক্ত করে দেন। আমরাতো আপনাকে দেখছি যে, জীবিকার তাকীদে আপনি হাটে-বাজারে যাচ্ছেন এবং জীবিকা অন্বেষণ করছেন, যেমনটি আমরা করছি। যদি এটুকু করতে পারেন তবে আপনার মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনার মর্যাদা ও গুরুত্ব কতটুকু তা আমরা বুঝতে পারবো। আপনি যেমন নিজেকে রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে প্রকাশ করেছেন তা যদি সঠিক হয়েই থাকে, তবে একাজগুলো আপনি করুন।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে বললেন, আমি এসব কিছু করবো না, আমি আমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এ জাতীয় কোনো আবেদন করবো না। এ সকল কাজ করার জন্যে আমাকে তোমাদের প্রতি প্রেরণ করা হয়নি। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আমি যা এনেছি তোমরা যদি তা গ্রহণ করো, তবে তাতে তোমাদের ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ হবে। আর যদি তা প্রত্যাখ্যান করো তবে আমি ধৈর্যধারণ করবো মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশের জন্যে যতক্ষণ না মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের ও তোমাদের মাঝে ফায়ছালা করে দেন।
قالوا فاسقط السماء كما زعمت أن ربك إن شاء فعل، فانا لن نؤمن لك إلا أن تفعل فقال ذلك إلى الله إن شاء فعل بكم ذلك فقالوا يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم ما علم ربك أنا سنجلس معك ونسألك عم سألناك عنه، ونطلب منك ما نطلب، فيتقدم اليك ويعلمك ما تراجعنا به، ويخبرك ما هو صانع فى ذلك بنا إذا لم نقبل منك ماجئتنا به؟ فقد بلغنا أنه إنما يعلمك هذا رجل باليمامة يقال له الرحمن، وإنا والله لا نؤمن بالرحمن أبدا فقد أعذرنا اليك يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم، أما والله لا نتركك وما فعلت بناحتى نهلكك أوتهلكنا.
এরপর তারা বললো, আপনি তো বলে থাকেন যে, আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান তা করেন, তাহলে উনাকে বলে আকাশকে ভূপাতিত করে দিন। এরূপ না করলে আমরা কখনো আপনার প্রতি ঈমান আনবো না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এটা মহান আল্লাহ পাক উনার ইখতিয়ারাধীনই তিনি চাইলে তোমাদের জন্যে তা ঘটাবেন। এরপর তারা বললো, হে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা যে আপনার সাথে বৈঠকে বসবো, আপনার নিকট এসব সুওয়াল করবো এবং আপনার নিকট যা দাবি করলাম এগুলো দাবি করবো এসব বিষয় কি পূর্ব থেকেই আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার জানা ছিলো না? যদি জানা থাকে তবে তিনি তো আগে-ভাগে আপনাকে তা জানিয়ে দিতে পারতেন এবং এমন জাওয়াব শিখিয়ে দিতে পারতেন যা দ্বারা আপনি আমাদের যুক্তি খ-ন করতে পারেন। আপনার আনীত বিষয়াদি যদি আমরা গ্রহণ না করি, তবে তিনি আমাদের ব্যাপারে কি করবেন তা তো আপনাকে জানিয়ে দিতে পারতেন। আমরা সংবাদ পেয়েছি যে, ইয়ামামা অঞ্চলের অধিবাসী ‘রাহমান’ নামের এক ব্যক্তি আপনাকে এসব শিখিয়ে দেয়। নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা কখনোই ওই ‘রাহমানের’ প্রতি ঈমান আনবো না। হে সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ সকল বক্তব্য দ্বারা আমরা আপনাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের শেষ সুযোগ দিয়েছি। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি আমাদের ব্যাপারে যা করে যাচ্ছেন বিনা বাধায় তা করে যাওয়ার জন্যে আমরা আপনাকে সুযোগ দিবো না। বরং তা প্রতিরোধ করতে গিয়ে হয়ত আমরা আপনাকে ধ্বংস করে দিবো নতুবা আপনি আমাদের ধ্বংস করে দিবেন।
وقال قائلهم نحن نعبد الملائكة وهى بنات الله، وقال قائلهم لن نؤمن لك حتى تأتينا بالله والملائكة قبيلا. فلما قالوا ذلك قام رسول الله صلى الله عليه وسلم عنهم وقام معه عبد الله بن أبى أمية بن المغيرة بن عبد الله بن عمر بن مخزوم- وهو ابن عمته عاتكة بنت حضرت عبد المطلب عليه السلام - فقال يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم عرض عليك قومك ما عرضوا فلم تقبله. ثم سألوك لانفسهم أمورا ليعرفوا بها منزلتك من الله فلم تفعل، ثم سألوك أن تعجل ما تخوفهم به من العذاب،
কাফির, মুশরিকরা কেউ কেউ বলছিলো যে, আমরা তো ফেরেশতাদের উপাসনা করি। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কন্যা। নাঊযুবিল্লাহ! ওদের কেউ কেউ বলেছিলো, আমরা কখনোই আপনার প্রতি ঈমান আনবো না, যতক্ষণ না আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করেন। অতঃপর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওখান থেকে চলে যান। উনার সঙ্গে উঠে এলো আব্দুল্লাহ ইবনে আবী উমাইয়া ইবনে মুগীরা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে মাখযুম। সে ছিলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফুফু আতিকা বিনতে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার কন্যা আতিকার পুত্র। সে বললো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সম্প্রদায় আপনার নিকট এ প্রস্তাবগুলো পেশ করেছে আর আপনি এর কোনোটিই গ্রহণ করলেন না এরপর তারা নিজেদের কল্যাণের জন্যে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করলো যার দ্বারা তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনার প্রকৃত মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হতে পারতো, তাও আপনি করলেন না। এরপর তারা তাৎক্ষণিক ও শীঘ্র শাস্তি আনয়নের দাবি জানালো, যে শাস্তির ব্যাপারে আপনি তাদেরকে সতর্ক করেছিলেন।
فوالله لا أومن لك أبدا حتى تتخذ إلى السماء سلما ثم ترقى منه وأنا أنظر حتى تأتيها وتأتى معك بنسخة منشورة ومعك أربعة من الملائكة يشهدون لك أنك كما تقول. وأيم الله لو فعلت ذلك لظننت أنى لاأصدقك. ثم انصرف عن رسول الله صلى الله عليه وسلم وانصرف رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى أهله حزينا أسفا لما فاته بما طمع فيه من قومه حين دعوه، ولما رأى من مباعدتهم إياه. وهذا المجلس الذى اجتمع عليه هؤلاء الملأ مجلس ظلم وعدوان وعناد، ولهذا اقتضت الحكمة الالهية، والرحمة الربانية، الا يجابوا إلى ما سألوا لأن الله علم أنهم لا يؤمنون بذلك فيعاجلهم بالعذاب.
মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি আপনার প্রতি কখনই ঈমান আনবো না, যতক্ষণ না আপনি আকাশের সাথে সিঁড়ি স্থাপন করেন এবং আমাদের সম্মুখে ওই সিঁড়ি বেয়ে আকাশে আরোহন করেন। এরপর সাথে করে একটি উম্মুক্ত কিতাব নিয়ে আসেন আর আপনার সাথে থাকবেন চারজন ফেরেশতা যারা সাক্ষ্য দিবেন যে, আপনি যা বলছেন তা যথার্থ। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি যদি এটুকু করতে পারেন, তবে আমার ধারণা যে, আপনাকে সত্যবাদী বলে মেনে নিতে পারবো। এরপর সে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে চলে যায়। ভারাক্রান্ত হৃদয় মুবারক-এ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সুমহান আহাল-ইয়াল বা পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে আসেন। কাফির, মুশরিকরা যখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডেকেছিলো তখন যে বিরাট আশা নিয়ে তিনি ওদের নিকট গিয়েছিলেন, সে আশা ভঙ্গ হওয়ায় তিনি খুবই মর্মাহত হন। যখন দেখা গেলো যে, তারা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে দূরে সরে থাকতে চায় এবং তাদের সম্মিলিত সমাবেশে ছিলো অবিচার, সীমালঙ্ঘন ও সত্যদ্রোহিতার মজলিস। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হিকমত ও উনার রহমতের দাবি ছিলো যে, ওদের আহ্বানে সাড়া দেয়া যাবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার সম্যক জানা ছিলো যে, তাতেও ওরা ঈমান আনয়ন করবে না। ফলশ্রুতিতে বরং তাদের শাস্তিই ত্বরান্বিত হবে।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৫০, ৫১ ও ৫২ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه. قال قالت قريش للنبى صلى الله عليه وسلم ادع لنا ربك يجعل لنا الصفا ذهبا ونؤمن بك، قال وتفعلوا؟ قالوا نعم قال فدعا فاتاه حضرت جبريل عليه السلام فقال إن ربك يقرأ عليك السلام ويقول لك إن شئت أصبح الصفا لهم ذهبا. فمن كفر منهم بعد ذلك أعذبه عذابا لا أعذبه أحدا من العالمين، وإن شئت فتحت لهم باب الرحمة والتوبة، و هذان اسنادان مرسلا- منهم حضرت سعيد بن جبير رحمة الله عليه و حضرت قتادة رحمة الله عليه و حضرت ابن جريج رحمة الله عليه-
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরাইশ বংশের কতিপয় লোকজন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেছিলো, আপনি আমাদের জন্যে আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করুন যাতে তিনি সাফা পাহাড়কে আমাদের জন্য স্বর্ণে পরিণত করে দেন তাহলে আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনবো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরা কি সত্যি ঈমান আনবে? তারা বললো, হ্যাঁ আমরা আপনার উপর ঈমান আনবো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের জন্যে দোয়া করলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন। তিনি এসে বললেন, হে সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং একথা বলেছেন যে, যদি আপনি চান তবে সাফা পাহাড় স্বর্ণে পরিণত হবেই হবে। কিন্তু এরপর যদি ওদের কেউ কুফরী করে, তবে আমি এমন শাস্তি তাদেরকে দিবো যা কায়িনাতের মধ্যে কাউকেই এমন শাস্তি দেইনি। আর আপনি যদি চান তবে আমি তাদের জন্যে রহমত ও তওবার দরজা খুলো দিবো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে রহমত ও তাওবার দরজা বরং খুলে দিন। বেশ কিছু ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে এ হাদীছ শরীফখানা মুরসাল পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে। উনারা হলেন, সায়ীদ ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইবনে জুরায়জ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখ। (নাসায়ী শরীফ, আহমদ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৫২ পৃষ্ঠা)

আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه. قال بعثت قريش النضر بن الحارث وعقبة بن أبى معيط إلى أحبار يهود بالمدينة، فقالوا لهما سلوهم عن حضرت محمد صلى الله عليه وسلم وصفالهم صفته وأخبراهم بقوله فانهم أهل الكتاب الاول، وعندهم علم ما ليس عندنا من علم الانبياء عليهم السلام. فخرجا حتى قدما المدينة فسألا احبار يهود عن رسول الله صلى الله عليه وسلم ووصفا لهم أمره بعض قوله، وقالا إنكم أهل اتوراة وقدجئنا كم لتخبرونا عن صاحبنا هذا. قال فقالت لهم أحبار يهود سلوه عن ثلاث نأمركم بهن فان أخبركم بهن فهونبى مرسل، وإن لم يفعل فهو رجل متقول فروا فيه رأيكم، سلوه عن فتية ذهبوا فى الدهر

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরাইশ বংশের লোকেরা নাযর ইবনে হারিছ এবং উকবা ইবনে আবী মুয়ীতকে মদীনা শরীফ-এ ইহুদীদের নিকট প্রেরণ করেছিলো। তারা তাদেরকে বলেছিলো তোমরা দু’জন গিয়ে ইয়াহুদী যাজকদের নিকট আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিচয় দিবে এবং উনার আলোচনা সম্পর্কে জ্ঞাত করবে এবং উনার সত্যাসত্য সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে। কারণ তারা প্রথম আসমানী কিতাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়। হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে জ্ঞান তাদের আছে যা আমাদের নেই। ওরা দু’জন যাত্রা করে এবং মদীনা শরীফ-এ গিয়ে পৌঁছে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিচয়, কার্যকলাপ ও উনার আলোচনা মুবারক উল্লেখ করে ইহুদী যাজকদেরকে উনার সত্যাসত্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তারা দু’জনে বলেছিলো তোমরা তাওরাত শরীফ কিতাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়। আমরা তোমাদের নিকট এসেছি এ উদ্দেশ্যে যে, আমাদের ওই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা আমাদেরকে প্রকৃত তথ্য জানাবে। ইহুদী যাজকরা তাদেরকে বললো, আমরা তোমাদেরকে তিনটি প্রশ্ন শিখিয়ে দিচ্ছি। তোমরা উনাকে ওই বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। তিনি যদি এগুলো প্রশ্নের ঠিক ঠিক জাওয়াব দিতে পারেন, তবে তিনি নিশ্চয়ই রিসালতপ্রাপ্ত আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর জাওয়াব না দিতে পারলে নিশ্চয়ই তিনি মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। এরপর উনার সম্পর্কে তোমরাই তোমাদের সিদ্ধান্ত নিবে।
الاول ما كان من أمرهم؟ فانه قد كان لهم حديث عجيب، وسلوه عن رجل طواف طاف مشارق الارض ومغاربها ما كان (نبؤه)، وسلوه عن الروح ماهى؟ فان أخبركم بذلك فهوحضرت نبى صلى الله عليه وسلم فاتبعوه، وإن لم يخبر كم فانه رجل متقول فاصنعوا فى أمره ما بدا لكم. فاقبل النضر وعقبة حتى قدما على قريش فقالا يامعشر قريش قد جئنا كم بفصل ما بينكم وبين حضرت محمد صلى الله عليه وسلم، قد أمرنا أحبار يهود أن نسأله عن أمور فاخبراهم بها، فجاؤا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالوا يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم أخبرنا فاسألوه عما أمر وهم به. فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم أخبر كم غدا بما سألتم عنه ولم يستثن. فانصرفوا عنه ومكث رسول الله صلى الله عليه وسلم خمس عشرة ليلة لا يحدث له فى ذلك وحيا، ولا يأتيه حضرت جبريل عليه السلام

প্রথমতঃ তোমরা উনাকে জিজ্ঞেস করবে সেই একদল যুবক সম্পর্কে যাঁরা প্রথম যুগে হারিয়ে গিয়েছিলেন উনাদের পরিণতি কি হয়েছিলো? কারণ উনাদেরকে কেন্দ্র করে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছিলো। দ্বিতীয়তঃ উনাকে জিজ্ঞেস করবে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে যিনি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত সফর করেছিলেন উনার বৃত্তান্ত কি? তৃতীয়তঃ উনাকে জিজ্ঞেস করবে রূহ সম্পর্কে। রূহ কি? তিনি যদি এসব বিষয়ে সঠিক জাওয়াব তোমাদেরকে জানাতে পারেন, তবে তিনি নিশ্চয়ই নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তোমরা উনার অনুসরণ করবে। অন্যথায় তিনি একজন মিথ্যাবাদী। উনার সম্পর্কে তোমরা যা করতে চাও করবে। নাদ্বর ও উকবা ফিরে এলো কুরাইশ সম্প্রদায়ের নিকট। তারা বললো, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আমরা এমন বিষয় নিয়ে এসেছি যা তোমাদের মাঝে এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে স্পষ্ট মীমাংসা করে দিবে। ইহুদী যাজকরা আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছে উনাকে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে। উক্ত বিষয়গুলো তারা তাদেরকে জানায়। তখন কুরাইশের লোকেরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসে এবং বলে, হে সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদেরকে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করুন দেখি; ইহুদীদের নির্দেশিত বিষয়গুলো তারা উনাকে জিজ্ঞেস করে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমরা যা জিজ্ঞেস করছো, সে সম্পর্কে আমি আগামীকাল তোমাদেরকে জানাবো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেননি কারণ উনাকে ওহী করা হয়নি। তারা প্রস্থান করলো। এদিকে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একে একে পনেরো দিন অপেক্ষা করলেন কিন্তু ওই সম্পর্কে কোনো ওহী নাযিল হলো না। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনিও আসলেন না।
حتى أرجف أهل مكة وقالوا وعدنا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم غدا واليوم خمس عشرة ليلة قد أصبحنا فيها لايخبرنا بشئ مما سألناه عنه، وحتى أحزن رسول الله صلى الله عليه وسلم مكث الوحى عنه وشق عليه ما يتكلم به أهل مكة، ثم جاءه حضرت جبريل عليه السلام من الله عزوجل بسورة الكهف فيها معاتبته إياه على حزنه عليهم (وخبر) ما سألوه عنه من أمر الفتية والرجل الطواف، وقال الله تعالى (ويسألونك عن الروح قل الروح من أمر ربى وما أوتيتم من العلم إلا قليلا). ونزل قوله (أم حسبت أن أصحاب الكهف والرقيم كانوا من اياتنا عجبا) ثم شرع فى تفصيل أمرهم
মক্কা শরীফ-এর কাফির মুশরিকরা খুশিতে বাগবাগ। তারা বলছিলো আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের পরের দিন জাওয়াব দেয়ার কথা বলেছেন অথচ পনেরো দিনের মাথায়ও তিনি আমাদের প্রশ্নগুলোর সম্পর্কে কোনো জাওয়াব দিচ্ছেন না। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিন্তিত ছিলেন।
মক্কা শরীফ-এর কাফির মুশরিকদের অব্যাহত কটূক্তি ও তিরস্কার আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিচ্ছেলো। অবশেষে সূরা কাহফ নিয়ে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি কাফির মুশরিকদের অধৈর্য এবং কাফির মুশরিকদের আচরণে অসন্তুষ্ট এতে তাদের প্রশ্নকৃত যুবকগণের তথ্য এবং পৃথিবী প্রদিক্ষণকারী ব্যক্তির বর্ণনা রয়েছে, রূহ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ويسألونك عن الروح قل الروح من أمر ربى وما أوتيتم من العلم إلا قليلا
অর্থ: “ওরা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বলুন রূহ আমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে ঘটিত এবং তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।” (সূরা কাহাফ : আয়াত শরীফ ৮৫)
কাফির, মুশরিকদের প্রশ্ন উপলক্ষে আরো নাযিল হয়েছে,
أم حسبت أن أصحاب الكهف والرقيم كانوا من اياتنا عجبا
অর্থ: “আপনি কি মনে করেন, যে গুহার অধিবাসীগণ এবং ফলক আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর।” (সূরা কাহাফ : আয়াত শরীফ ৯)
এরপর তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করেছেন।
فى قوله (ويسألونك عن ذى القرنين قل سأتلو عليكم منه ذكرا) ثم شرح أمره وحكى خبره. وقال فى سورة سبحان (ويسألونك عن الروح قل الروح من أمر ربى) أى خلق عجيب من خلقه، وأمر من أمره، قال لها كونى فكانت. وليس لكم الاطلاع على كل ما خلقه، وتصوير حقيقته فى نفس الأمر يصعب عليكم بالنسبة إلى قدرة الله تعالى وحكمتة، ولهذا قال (وما أوتيتم من العلم الا قليلا)

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ويسألونك عن ذى القرنين قل سأتلو عليكم منه ذكرا
অর্থ: “তারা আপনাকে হযরত যুলকারনাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলুন, আমি তোমাদের নিকট উনার সম্পর্কে বর্ণনা করবো। (সূরা কাহাফ : আয়াত শরীফ ৮৩)
অতঃপর মহান আল্লাহ পাক হযরত যুলকারনাইন আলাইহিস সালাম উনার বিষয়াদি ও ঘটনাবলী বিবৃত করেছেন। অতঃপর সূরা বনী ইসরাইল-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ويسألونك عن الروح قل الروح من أمر ربى
অর্থ: “ওরা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, রূহ আমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ অর্থাৎ সেটি মহান আল্লাহ পাক উনার এক আশ্চর্য বিস্ময়কর সৃষ্টি এবং এক বিশেষ হুকুম।”
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কুদরত ও হিকমত পূর্ণ বিশেষ সৃষ্টির তত্ত্ব ও রহস্য অনুধাবন করা তোমাদের সাধ্যাতীত ব্যাপার। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وما اوتيتم من العلم الا قليلا
অর্থ: “তোমাদেরকে সামান্য ইলম ব্যতিত দেয়া হয়নি। অর্থাৎ তোমাদেরকে অল্প ইলম দেয়া হয়েছে।”
ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে, ইহুদিরা মদীনা শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রশ্ন করেছিলো এবং তখন তিনি এ আয়াত শরীফখানা পাঠ করে শুনিয়েছেন। তাহলে এটা বলতে হয় যে, তখন এ আয়াত শরীফখানা পুনরায় নাযিল হয়েছিলো। অথবা প্রশ্নের উত্তর হিসেবে তিনি এ আয়াত শরীফ পাঠ করেছিলেন। মূলত, আয়াত শরীফ পূর্বেই নাযিল হয়েছিলো। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৫২ ও ৫৩ পৃষ্ঠা)

0 Comments: