হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৫৮৫-৭৫০) (ণ)


হযরত ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, তিনি কুরাইশ সম্প্রদায়কে মুহব্বত করতেন। উনাদের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিলো। আরনাব বিনতে আসাদ ইবনে আব্দুল উযযা ইবনে কুছাই ছিলেন উনার আহলিয়া। নিজের আহলিয়াকে নিয়ে তিনি বহু বছর পবিত্র মক্কা শরীফ বসবাস করেন। কুরাইশরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করছে- এ সংবাদ পেয়ে তিনি হারাম শরীফ উনার মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করেন এবং তাদেরকে সেখানে যুদ্ধ বিগ্রহ সৃষ্টি থেকে বারণ করে একটি ক্বাছীদা রচনা করেন। ওই ক্বাছীদায় তিনি কুরাইশ গোত্রের সম্মান ও বুদ্ধিমত্তার কথা, তাদের উপর প্রেরিত মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বিপদাপদের কথা, উনাদেরকে হস্তী বাহিনী থেকে হিফাযত করার কথা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া ইহসানের কথা ব্যক্ত করেন। তদুপরি এই ক্বাছীদায় তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নির্যাতন থেকে বিরত থাকার জন্যে তাদেরকে পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন,
أيا راكبا إما عرضت فبلغنمغلغلة عنى لؤى بن غالب
 হে সাওয়ারী! তুমি যদি কখনো তার নিকট পৌঁছতে পারো, তবে লুওয়াই ইবনে গালিবের গোত্রকে আমার পক্ষ থেকে একটি চিঠি পৌঁছিয়ে দিও।
رسول امرئ قد راعه ذات بينكمعلى النأى محزون بذلك ناصب
 হে সাওয়ারী! তুমি এমন এক সুমহান ব্যক্তির দূত হিসেবে তাদের নিকট গমন করছো, যিনি ওদের থেকে দূরে অবস্থান করছেন। ওদের পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ উনাকে চিন্তিত করে তুলেছে এবং তাদের এই অবস্থার কারণে তিনি কষ্ট পাচ্ছেন এবং তিনি দুঃখিত।
وقد كان عندى للهموم معرسولم اقض منها حاجتى وماربى
 দুঃখ, ব্যথা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া ও বিশ্রাম নেয়ার স্থান আমার নিকট রয়েছে। অথচ আমি তা থেকে কোনোভাবেই উপকৃত হই না।
نبيتكم شرجين كل قبيلةلهاأزمل من بين مذك وحاطب
 আমি তো তোমাদেরকে রাতের বেলা দেখতে পাচ্ছি যে, তোমরা দু’ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছো। প্রত্যেক গোত্রে রয়েছে আগুন প্রজ্জ্বলনকারী ও কাঠ সংগ্রকারীর হৈ হুল্লোড়।
أعيذكم بالله من شر صنعكموشر تباغيكم ودس العقارب
 আমি তোমাদের জন্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমাদের কর্মের অকল্যাণ থেকে; তোমাদের পরস্পর বিদ্রোহ ও সীমা লঙ্ঘন থেকে এবং বিচ্ছুর দংশন থেকে।
واظهار أخلاق ونجوى سقيمةكوخز الاشافى وقعها حق صائب
 চরিত্রের প্রকাশ ঘটানো থেকে এবং অসুস্থ কানা-কানি ও গোপন পরামর্শ থেকে। সেগুলো তো সুঁচের ফোড়ার মতো, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না।
فذكرهم بالله أول وهلةواحلال احرام الظباء الشوازب
 তুমি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারকের উপদেশ দাও বিপদের সূচনাতেই এবং ক্ষীণকায় শিকার নিষিদ্ধ হরিণীর শিকার বৈধ করা থেকে।
وقل لهم والله يحكم حكمهذرواالحرب تذهب عنكم فى المراحب
 তুমি ওদেরকে বলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়ছালা বাস্তবায়ন করবেনই। তোমরা যুদ্ধ-বিগ্রহ ত্যাগ করো, তাহলে পরাক্রান্ত শত্রুদের থেকে তোমরা রক্ষা পাবে।
متى تبعثوها تبعثوها دميمةهى الغول للأقصين أو للاقارب
 তোমরা যদি জিহাদকে প্ররোচিত ও উত্তেজিত করো, তবে খুব মন্দভাবেই সেটিকে উত্তেজিত করবে। মূলত, জিহাদ হলো ধ্বংস সাধনকারী ঘনিষ্টজনদের জন্যে দূরবর্তীদের জন্যে।
تقطع أرحاما وتهلك أمة وتبرى السديف من سنام وغارب
এই জিহাদ আত্মীয়তা বন্ধনকে ছিন্নভিন্ন করে দেয় এবং জাতিকে ধ্বংস করে দেয়। উটের ঘাড় ও কুঁজ থেকে চর্বিকে আলাদা করে দেয়।
وتتبدلوا بالأتحمية بعدهاشليلا وأصداء ثياب المحارب
এবং জিহাদ তোমাদের ইয়ামনী মূল্যবান মিহি কাপড়ের পরিবর্তে তোমাদেরকে দিবে হাল্কা-পাতলা নি¤œমানের কালো যুদ্ধের পোশাক।
وبالمسك والكافور غبرا سوابغاكأن قتيريها عيون الجنادب
জিহাদে লিপ্ত হলে তোমরা মিশক ও কর্পূরের পরিবর্তে বিশাল আকারের বালিস্তুপ পাবে। ওই বালি প্রবাহ যেনো লবণের ঝর্ণাধারা।
فاياكم والحرب لاتعلقنكموحوضا وخيم الماء مر المشارب
সুতরাং তোমরা জিহাদ থেকে দূরে থাকো। জিহাদ যেনো তোমাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারে। তোমরা দূরে থাকো এমন কুয়া থেকে যার পানি দূষিত, যার পানি তিক্ত।
تزين للأفوام ثم يرونهابعاقبة إذ بيتت أم صاحب
জিহাদে নিজেকে সুসজ্জিত ও অলংকৃত করে লোকজনের নিকট। শেষ পর্যন্ত রাত্রি যাপনকালে তারা সেটিকে নিজের মায়ের ন্যায় দেখতে পায় অর্থাৎ হারাম ও নিষিদ্ধ বলে দেখতে পায়।
تحرق لا تشوى ضعيفا وتنتحىذوى العز منكم بالحتوف الصوائب
এই জিহাদ দুর্বলদেরকে ভাজা করে ছেড়ে দেয় না, বরং পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। আর মর্যাদাবান ও শক্তিশালীদেরকে গলা টিপে হত্যা করে।
ألم تعلموا ما كان فى حرب داحسفتعتبر وا أو كان فى حرب حاطب
দাহিস জিহাদে কি ভয়ানক বিপর্যয় ঘটেছে তা কি তোমাদের জানা নেই? তা থেকে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো। হাতিব যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের কথাটাও বিবেচনা করো।
وكم ذا أصابت من شريف مسود طويل العماد ضيفه غير خائب
কত অসংখ্য শরীফ ও সম্মানিত ব্যক্তিগণ এই যুদ্ধের বলি হয়েছে। যারা ছিলো সমাজের উচ্চস্তরের সরদার, যারা ছিলো অতিথি পরায়ণ। যাদের দরজা থেকে মেহমান, মুসাফির কখনো নিরাশ হয়ে ফিরে যায়নি।
عظيم رماد النار يحمد أمرهوذى شيمة محض كريم المضارب
এই যুদ্ধের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে এমন সব লোককে যাদের ছাইয়ের স্তুত অনেক বড় বড়। যাদের কাজ-কর্ম সদা প্রশংসাযোগ্য। তারা চরিত্রবান ও প্রচুর দানশীল।
وماء هريق فى الضلال كاتماأذاعت به ريح الصبا والجنائب
 যুদ্ধে বিনষ্ট হয়েছে বহু পানির কুয়া। ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে ওই পানি লক্ষ্যহীনভাবে। উত্তরা ও দক্ষিণী হাওয়া যেনো ওই পানিকে উড়িয়ে নিয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে।
يخبركم عنها امرؤ حق عالمبايامها والعلم علم التجارب
যুদ্ধ সম্পর্কে, যুদ্ধের অবস্থা সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভকারী একজন ব্যক্তি তোমাদেরকে যুদ্ধ সম্পর্কে অবগত করাচ্ছেন। বস্তুত অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান।
فبيعوا الحراب ملمحارب واذكرواحسابكم والله خير محاسب
সুতরাং তোমাদের যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করে দাও অন্যান্য যুদ্ধবাজ লোকদের নিকট। আর নিজেদের হিসাব দেয়ার কথা স্মরণ করো। মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বোত্তম হিসাবে গ্রহণকারী।
ولى امرئ فاختار دينا فلايكنعليكم رقيب غير رب الثواقب
মহান আল্লাহ পাক তিনি হলেন মানুষের সাহায্যকারী। তিনি একটি দ্বীন বা ধর্ম মনোনীত করেছেন। সে দ্বীন গ্রহণ করলে নক্ষত্ররাজির মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো রব থাকবে না।
أقيموا لنادينا حنيفا فانتموالنا غاية قد يهتدى بالذوائب
আপনারা আমাদের জন্যে একটি দ্বীন-ই হানীফা ও সরল দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে যান এবং আমাদের এমন চূড়ান্ত অগ্রগতির সাথে সম্পৃক্ত করে যান, যা শুধুমাত্র নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ পেয়ে থাকেন।
وأنتم لهذا الناس نور وعصمةتؤمون والاحلام غير عوازب
আপনারা তো এই জনসাধারণের জন্যে নূর বা আলো ও প্রতিরক্ষাকারী। নেতৃস্থানীয় এবং ধৈর্যশীল ব্যক্তিবর্গ কখনো লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় না।
وأنتم إذا ما حصل الناس جوهرلكم سرة البطحاء شم الارانب
মানুষের কৃতিত্ব যখন হিসাব করা হয়, তখন আপনারা তাদের মধ্যমণি মুক্তা বলে গণ্য হন। আরবের নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব আপনাদের জন্যেই সংরক্ষিত।
تصونون أنسابا كراما عتيقةمهذبة الانساب غير أشائب
মর্যাদাবান, সুপ্রাচীনকাল থেকে আভিজাত্যপূর্ণ ও কুলীন বংশ-মর্যাদা আপনারা রক্ষা করে চলছেন। আপনাদের বংশ সম্ভ্রান্ত ভদ্র এবং নির্ভেজাল। কোনো প্রকারের অভদ্র মিশ্রণ আপনাদের বংশে নেই।
يرى طالب الحاجات نحو بيوتكمعصائب هلكى تهتدى بعصائب
অভাবী ও সাহায্যপ্রার্থী লোকজন দেখতে পায় যে, অসহায় ও দুর্বল লোকজন সাহায্যের আশায় আপনাদের বাসস্থানের প্রতি অগ্রসর হচ্ছে। তাদেরকে দেখে অন্যান্য সাহায্যপ্রার্থীরা ও আপনাদের বাড়ির পথ খুঁজে পায়।
لقد علم الاقوام أن سراتكمعلى كل حال خير أهل الجباجب
সব লোক জানে যে, আপনাদের গোত্রগুলো সর্বাবস্থায় সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ।
وأفضله رأيا وأعلاء سنةوأقوله للحق وسط المواكب
আপনাদের লোকজন সর্বোত্তম রায় প্রদানকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ রীতিনীতির অনসারী, সর্বাধিক সত্য বক্তব্য প্রদানকারী এবং মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী।
فقوموا فصلوا ربكم وتمسحواباركان هذا البيت بين الاخاشب
সুতরাং আপনারা উঠুন, আপনাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করুন এবং পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে পর্বতদ্বয়ের মাঝে অবস্থিত এই গ্রহের স্তম্ভগুলো চুম্বন করুন, স্পর্শ করুন।
فعندكم منه بلاء ومصدقغداة أبى يكسوم هادى الكتائب
মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি নিয়ামত ও অনুগ্রহ রয়েছে। আপনাদের প্রতি বিপদ নেমে এসেছে। বিশেষত সেদিন, যেদিন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করে সেনাপতি আবু ইয়াকসূম আপনাদের উপর আক্রমণ করেছিলো।
كتيبته بالسهل تمشى ورجلهعلى القاذفات فى رءوس المناقب
তার সাধারণ সেনাবাহিনী সমতল ভূমি অতিক্রম করছিলো। আর তার পদাতিক বাহিনী ছিলো পর্বতের চূড়ায় পাহাড়ি পথে।
فلما أتا كم نصر ذى العرش ردهمجنود المليك بين ساف وحاصب
যখন আপনাদের নিকট আরশের মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য এলো, তখন মহান মালিকের সেনাবাহিনী আবূ ইয়াকসুমের অনুসারীদের পরাজিত করে দিলো। ফলে ওদের কতক ধ্বংস হলো আর কতক দ্রুত পালিয়ে গেলো।
فولوا سراعا هار بين ولم يؤبإلى أهله ملحبش غير عصائب
ওরা সকলে দ্রুত পলায়ন করে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলো। মাত্র কয়েকজন ছাড়া ওই হাবশী লোকদের কেউই নিজ পরিবার পরিজনের নিকট ফিরে আসতে পারেনি।
فان تهلكوا نهلك وتهلك مواسميعاش بها قول امرئ غير كاذب.
এখন নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ করে যদি আপনারা ধ্বংস হয়ে যান, তবে আমরাও ধ্বংস হয়ে যাবো এবং মক্কা শরীফ উনার অনুষ্ঠিত পবিত্র হজ্জ মুবারক উনার সমাবেশ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলো ল-ভ- হয়ে যাবে। এসব হলো একজন সত্যবাদী লোকের কথা। যে মিথ্যাবাদী নয়।
وحرب داس الذى ذكرها أبو قيس فى شعره كانت فى زمن الجاهلية مشهورة، وكان سببها فيها ذكره أبو عبيد معمر بن المثنى وغيره أن فرسا يقال له داحس كانت لقيس بن زهير بن جذيمة ابن رواحة الغطفانى، أجراه مع فرس لحذيفة بن بدر بن عمرو بن جؤبة الغطفانى أيضا يقال لها الغبراء، فجاءت داحس سابقا فامر حذيفة من ضرب وجهه فوثب مالك بن زهير فلطم وجه الغبراء، فقال حمل بن بدر فلطم مالكا، ثم إن أبا جنيدب العبسى لقى عوف بن حذيفة فقتله، ثم لقى رجل من بنى فزارة مالكا فقتله، فشبت الحرب بين بنى عبس وفزارة فقتل حذيفة بن بدر وأخوه حمل ابن بدر وجماعات اخرون، وقالوا فى ذلك أشعارا كثيرة.
আবূ কায়স তার কবিতায় যে দাহিস যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন, সেটি জাহিলী যুগের একটি প্রসিদ্ধ যুদ্ধ। আবূ উবায়দ মা’মার ইবনে মুছান্না ও অন্যান্যদের বর্ণনা অনুযায়ী সেটির কারণ এই কায়স ইবনে যুহায়র ইবনে জুযায়মা ইবনে রাওয়াহা গাতফানীর একটি ঘোড়া ছিলো। সেটির নাম ছিলো দাহিস। অপরদিকে হুযায়ফা ইবনে বদর ইবনে আমর ইবনে জুবা গাতফানীর একটি ঘোড়া ছিলো। সেটির নাম ছিলো গাবরা। একদিন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় দাহিস। ক্ষোভে, দুঃখে হুযায়ফা তার প্রতিপক্ষ ঘোড়া দাহিসকে থাপ্পর মারার জন্য নির্দেশ দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মালিক ইবনে যুহায়র উঠে হুযায়ফার ঘোড়া ‘গাবরার’ মুখে চপেটাঘাত করে। হুযায়ফার ভাই হামল ইবনে বদর এসে মালিকের মুখে চপেটাঘাত করে। পরে এক সময় আবু জুনদুব আবাসী হুযায়ফার পুত্র আওফকে বাগে পেয়ে খুন করে। বনু ফাযারা গোত্রের এক লোক কায়সের ভাই মালিককে কতল করে। এরপর বনু আবস ও বনু ফাযারা গোত্রের মধ্যে নিয়মিত যুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধে হুযায়ফা ইবনে বদর তার ভাই হামল ইবনে বদরসহ বহু লোক নিহত হয়। এ যুদ্ধ নিয়ে তারা বহু কবিতা রচনা করেছে।
قال حضرت ابن هشام رحمة الله عليه وأرسل قيس داحسا والغبراء وأرسل حذيفة الخطار والحنفاء، والاول أصح. قال وأما حرب حاطب بن الحارث بن قيس بن هيشة بن الحارث بن أمية بن معاوية بن مالك بن عوف بن عمرو بن عوف بن مالك بن الاوس. كان قتل يهوديا جارا للخزرج، فخرج اليه زيد بن الحارث بن قيس بن مالك بن أحمر بن حارثة بن ثعلبة بن كعب بن مالك بن كعب بن الخزرج ابن الحارث بن الخزرج وهو الذى يقال له ابن قسحم فى نفر من بنى الحارث بن الخزرج فقتلوه فوقعت الحرب بين الاوس والخزرج فاقتتلوا قتالا شديدا وكان الظفرللخزرج، وقتل يومئذ الأسود بن الصامت الاوسى. قتله المجذر بن ذياد حليف بنى عوف بن الخزرج، ثم كانت بينهم حروب يطول ذكرها أيضا. والمقصود أن أبا قيس بن الا سلت مع علمه وفهمه لم ينتفع يذلك حين قدم مصعب بن عمير المدينة ودعا أهلها إلى الاسلام، فاسلم من أهلها بشر كثير ولم يبق دار- أى محلةمن دور المدينة إلا وفيها ومسلمات غير دار بنى واقف قبيلة أبى قيس ثبطهم عن الاسلام وهو القائل أيضا :

হাতিবের যুদ্ধ সম্পর্কে ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হাতিব ইবনে হারিছ ইবনে কায়স ইবনে হায়শা ইবনে হারিছ ইবনে উমাইয়া ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে মালিক ইবনে আওস ইবনে আমর ইবনে আওফ ইবনে মালিক ইবনে আওফ একদিন এক ইহুদীকে হত্যা করেছিলো। ওই ইহুদী ছিলো খাযরাজ গোত্রের প্রতিবেশী। হত্যাকারী হাতিবকে খুন করার জন্যে খাযরাজ গোত্রের একদল লোক নিয়ে পথে বের হয়। যায়দ ইবনে হারিছ ইবনে কায়স ইবনে মালিক ইবনে আহমার ইবনে হারিছ ইবনে ছা’লাবা ইবনে কা’ব ইবনে মালিক ইবনে কা’ব ইবনে মালিক ইবনে কা’ব ইবনে খাযরাজ ইবনে হারিছ ইবনে খাযরাজ। যায়দ ইবনে হারিছের ডাক নাম ছিলো ইবনে কাসহাম। নিজ দলের লোকদেরকে নিয়ে সে হাতিবকে হত্যা করে ফলে আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়। উভয় গোত্রের মধ্যে প্রচ- যুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত খাযরাজগণ বিজয়ী হন। এই যুদ্ধে আসওয়াদ ইবনে সামিত আওসী মৃত্যুবরণ করে। তাকে হত্যা করে বনু আওফ ইবনে খাযরাজ গোত্রের মুজাযযর ইবনে যিয়াদ। এরপর দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের মধ্যে যুদ্ধ চলছিলো। মোট কথা প্রচুর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তা দ্বারা আবু কায়স ইবনে আসলাত নিজে উপকৃত হতে পারেনি। সে নিজে ঈমান আনয়ন করেনি। হযরত মুসয়াব ইবনে উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে এলেন এবং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন, তখন বহু লোকজন পবিত্র ইসলাম গ্রহণ করেন। এমন কোনো পাড়া ও মহল্লা ছিলো না যেখানে অন্তত দু’চারজন মুসলমান নারী-পুরুষ ছিলেন না। কিন্তু আবূ কায়সের গোত্র বনু ওয়াকিফের মহল্লা ছিলো এর ব্যতিক্রম। সে তার মহল্লার লোকদেরকে পবিত্র ইসলাম উনাকে গ্রহণ থেকে বিরত রেখেছিলো।
সে বলেছিলো-
أرب الناس أشياء ألمتيلف الصعب منها بالذلول
হে মানবজাতির রব! একি ঘটনা ঘটলো? এমন কিছু বিষয় নেমে এলো যেখানে কঠোরতা আর কোমলতা একাকার হয়ে যায়।
أرب الناس إما أن ضللنافيسرنا لمعروف السبيل
হে মানবজাতির রব! আমরা যদি পথভ্রষ্ট হয়ে থাকি, তবে আমাদের জন্যে সুপথ সুগম করে দিন।
فلولا ربنا كنا يهوداوما دين اليهود بذى شكول
আমাদের রব না থাকলে আমরা ইহুদী হয়ে যেতাম; ইহুদী ধর্ম বহুরূপী ও জগাখিচুরী নয়।
ولولا ربنا كنا نصارىمع الرهبان فى جبل الجليل
আমাদের রব না থাকলে আমরা খ্রিস্টান হয়ে যেতাম; আর অরণ্যচারী হয়ে যাজকদের সাথে পাহাড়ে-পর্বতে ঘুরে বেড়াতাম।
ولكنا خلقنا إذ خلقناحنيفا ديننا عن كل جيل
তবে আমাদের যখন সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন সত্যপন্থী ও সরলপন্থীরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের দ্বীন ধর্ম সর্বপ্রকারের বক্রতা ও ভেজাল থেকে মুক্ত।
نسوق الهدى ترسف مذعناتمكشفة المناكب فى الجلول
আমরা মিনাতে যবেহ করার জন্যে পশু নিয়ে যাই। সেগুলো অনুগতভাবে এগিয়ে যায় দুর্গম পথেও সেগুলো ঘাড় উঁচু করে চলতে থাকে।
وحاصل مايقول أنه حائر فيما وقع من الأمر الذى قد سمعه من بعثة رسول الله صلى الله عليه فتوقف الواقفى فى ذلك مع علمه ومعرفته. وكان الذى ثبطه عن الاسلام أولا بن أبى بن سلول بعد ما أخبره أبو قيس أنه الذى بشر يهود فمنعه عن الاسلام.
তার বক্তব্যের মূল কথা হলো- আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে তাশরীফ নেয়ার সংবাদ শুনে সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলো। তাই নিজের জাহিরী জ্ঞান ও বুদ্ধি থাকার পরও সে ইসলাম থেকে বিরত থাকে। প্রথমতঃ মুনাফিক সরদার ইবনে উবাই বিন সুলুল তাকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণে বাধা দেয়। আবূ কায়স নিজে মুনাফিক সরদার ইবনে উবাইকে বলেছিলো যে, ওই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো সেই রসূল, ইহুদীরা উনার আগমনের সুসংবাদ দিতো। ইবনে উবাই কৌশল করে তাকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত রাখে।
তবে ইবনুল আছীর উনার ‘উসদুল গাবা’ কিতাবে এবং হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণনা করেন, যে আবূ কায়স তিনি পরবর্তীতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ১৫৬ পৃষ্ঠা)


0 Comments: