হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৪৮১-৫৮৪) (খ)



হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت يونس بن بكير رحمة الله عليه عن حضرت محمد بن اسحاق رحمة الله عليه حدثنا عبد حضرت الملك بن أبى سفيان الثقفى رحمة الله عليه. قدم رجل من إراش بإبل له الى مكة فابتاعها منه أبوجهل بن هشام، فمطله بانمانها. فاقبل الاراشى حتى وقف على نادى قريش ورسول الله صلى الله عليه وسلم جالس فى ناحية المسجد. فقال يامعشر قريش من رجل يعدينى على أبى الحكم بن هشام فانى غريب وابن سبيل، وقد غلبنى على حقى؟ فقال أهل المجلس ترى ذلك- يهزون به إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم لما يعلمون ما بينه وبين أبى جهل من العداوة،
অর্থ: “হযরত ইউনুস ইবনে বুকাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন আব্দুল মালিক ইবনে আবী সুফইয়ান আছ ছাকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেন, বাবেল তথা ব্যাবিলনের ইরাশ অঞ্চলের একজন লোক কতক উট নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ-এ এসেছিলো। আবূ জাহিল ইবনে হিশাম তার নিকট থেকে উটগুলো ক্রয় করে। কিন্তু মূল্য পরিশোধে সে অযথা বিলম্ব করতে থাকে। ইরাশী লোকটি কুরাইশ গোত্রের গণ্যমান্য লোকদের সভায় আসা-যাওয়া করতো। একদা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইতুল্লাহ শরীফ তথা মসজিদের একপাশে বসা ছিলেন এমতাবস্থায় ইরাশী লোকটি বললো, হে কুরাইশ সম্প্রদায়গণ! আমার পক্ষে আপনাদের মধ্য থেকে কে আবূ জাহিল ইবনে হিশামের উপর শক্তি প্রয়োগ করতে পারবেন। সে (আবূ জাহিল) আমার পাওনা পরিশোধ করছে না। আমি একজন ভিন দেশী মুসাফির। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে ইঙ্গিত করে কাফির কুরাইশরা বললো, ওই যে ব্যক্তি উনাকে দেখছেন, আপনি উনার নিকট যান। তিনিই পারবেন আপনার পাওনা বা উসুল পরিশোধ করে দিতে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবূ জাহিলের মধ্যে বিরাজমান বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের কারণে তারা এমনটি বলেছিলো।
اذهب اليه فهو يعديك عليه. فاقبل اللاراشى حتى وقف على رسول الله صلى الله عليه وسلم فذكر ذلك له، فقام معه. فاما رأوه قام معه قالوا لرجل ممن معهم اتبعه فانظر ما يصنع؟ رسول الله صلى الله عليه و سلم حتى جاءه فضرب عليه بابه- فقال من هذا؟ قال حضرت محمد صلى الله عليه و سلم فاخرج: فخرج اليه وما فى وجهه قطرة دم، وقد انتقع لونه. فقال أعط هذا الرجل حقه، قال لا تبرح حتى أعطيه الذى له. قال فدخل فخرج اليه بحقه فدفعه اليه، ثم انصرف رسول الله صلى الله عليه وسلم وقال للاراشى الحق لشأنك. فاقبل الاراشى حتى وقف على ذلك المجلس فقال جزاه الله خيرا، فقد أخذت الذى لى،
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাশে ইরাশী এসে দাঁড়ায়। সে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সে সমস্ত বৃত্তান্ত অবহিত করে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সঙ্গে ইরাশীকে নিয়ে রওয়ানা দেন। লোকজন যখন দেখলো আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ইরাশী আবূ জাহিলের বাড়িতে যাচ্ছেন তখন তারা একজন লোককে বললো, তুমিও উনাদের পিছনে পিছনে যাও এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি করেন তা লক্ষ্য করো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবূ জাহিলের বাড়িতে উপস্থিত হন এবং দরজায় আঘাত করেন। আবূ জাহিল ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় বললো, কে? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তিনি জাওয়াবে বললেন, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হে আবূ জাহিল! তুমি ঘর থেকে বেরিয়ে এসো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, সে বেরিয়ে আসে। তখন তার মুখ ম-ল ছিলো রক্তহীন ফ্যাকাশে। ভয়ে তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এ লোকটির পাওনা চুকিয়ে দাও। সে বললো, ঠিক আছে একটু অপেক্ষা করুন। এখনি আমি তার পাওনা চুকিয়ে দিচ্ছি। সে ঘরে যায় এবং ফিরে এসে ইরাশী লোকটির পাওনা বুঝিয়ে দেয়। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফিরে আসেন এবং লোকটিকে বললেন, এবার তুমি তোমার পথে চলে যেতে পারো। ইরাশী পুনরায় কাফিরদের মজলিসে এসে উপস্থিত হয়। সে বলে ওই ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উত্তম প্রতিদান দিন। আমার পাওনা আমি বুঝে পেয়েছি।
وجاء الرجل الذى بعثوا معه فقالوا ويحك ماذا رأيت؟ قال عجبا من العجب، والله ما هو إلا أن ضرب عليه بابه فخرج وما معه روحه فقال اعط هذا الرجل حقه. فقال نعم! لاتبرح حتى أخرج اليه حقه، فدخل فاخرج اليه حقه فاعطاه. ثم لم يلبث أن جاء أبوجهل فقالوا له ويلك مالك فوالله ما رأينا مثل ما صنعت؟ فقال ويحكم والله ما هو إلا أن ضرب على بابى وسمعت صوته فملئت رعبا، ثم خرجت اليه وإن فوق رأسه لفحلا من الابل ما رأيت مثل هامته، ولا قصرته ولا أنيابه لفحل قط، فوالله لوأبيت لا كلنى.
ওরা যে লোকটিকে পাঠিয়েছিলো সে তাদের নিকট ফিরে আসে। কাফিরেরা তাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কি দেখলে? সে বললো, যা ঘটেছে তা তো এক অতীব আশ্চর্য ঘটনা। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গিয়ে আবূ জাহিলের দরজায় আঘাত করেন। তাতে সে দরজা খুলে দ্রুত বেরিয়ে আসে। যেনো আবূ জাহিলের দেহে প্রাণ ছিলো না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এই লোকটির পাওনা বুঝিয়ে দাও। আবূ জাহিল বললো, হ্যাঁ, তাই হবে, দয়া করে আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি তার পাওনা নিয়ে আসছি। এরপর সে ঘরে প্রবেশ করে এবং তার পাওনা এনে তাকে দিয়ে দেয়। তাদের কথাবার্তা শেষ হওয়ার পর আবূ জাহিল অবিলম্বে সেখানে উপস্থিত হয়। তারা বললো, হায়! হায়! তোমার কি হয়েছে? যে কাজ তুমি করেছো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তোমাকে তো ইতঃপূর্বে কখনো তা হতে দেখিনি। সে বললো, হায়! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! প্রকৃত ঘটনা এই যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন আমার দরজায় আঘাত করেন এবং আমি উনার কণ্ঠ মুবারকের স্বর মুবারক শুনতে পাই। তাতে আমি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। এরপর আমি উনার নিকট বেরিয়ে আসি। তখন আমি উনার মাথা মুবারক-এর উপর দিয়ে একটি বিশালাকার উট দেখতে পাই। ওই উটের মাথা, ঘাড় ও দাঁতের ন্যায় ভয়ঙ্কর ও বিরাট মাথা ঘাড় ও দাঁত আমি কখনো দেখিনি। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! যদি আমি ওই পাওনা দিতে অস্বীকার করতাম, তাহলে ওই উট অবশ্যই আমাকে খেয়ে ফেলতো।” সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় খ- ৪৫ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن حضرت عروة بن الزبير رحمة الله عليه. سألت حضرت ابن العاص رضي الله تعالى عنه فقلت أخيرنى باشد شئ صنعه المشركون برسول الله؟ قال بينها النبى صلى الله عليه وسلم يصلى فى حجر الكعبة، إذ أقبل عليه عقبة ابن أبى معيط فوضع ثوبه على عنقه فخنقة خنقا شديدا، فاقبل حضرت أبوبكر عليه السلام حتى أخذ بمنكبه ودفعه عن النبى صلى الله عليه وسلم وقال (أتقتلون رجلاأن يقول ربى الله وقد جاء كم بالبينات من ربكم....) الاية.
অর্থ: “হযরত উরওয়া ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সুওয়াল করেছিলাম, মুশরিকরা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যুলুম ও কঠোরতম যে আচরণ করেছে তা আমাকে একটু বলুন। তিনি বললেন, একদিন কা’বা শরীফ-এর হাতীম অংশে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায আদায় করছিলেন। তখন উকবা ইবনে আবূ মুআয়াত সেখানে উপস্থিত হয়। সে তার কাপড় দ্বারা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গলা মুবারক পেঁচিয়ে সজোরে টান দেয়। নাঊযুবিল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি সেখানে উপস্থিত হন এবং উকবাকে ঘাড় ধরে সরিয়ে দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত করেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি নি¤œাক্ত আয়াত শরীফ পাঠ করেন।
أَتَقْتُلُونَ رَجُلًا أَن يَقُولَ رَبِّيَ اللَّهُ وَقَدْ جَاءكُم بِالْبَيِّنَاتِ مِن رَّبِّكُمْ وَإِن يَكُ كَاذِبًا فَعَلَيْهِ كَذِبُهُ وَإِن يَكُ صَادِقًا يُصِبْكُم بَعْضُ الَّذِي يَعِدُكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ مُسْرِفٌ كَذَّابٌ
একজন সম্মানিত লোককে তোমরা কি কেবল এ জন্যেই শহীদ করবে যে, তিনি বলেন, আমার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি, অথচ তিনি তোমাদের রব তথা খালিক্ব, মালিক আল্লাহ পাক উনার নিকট থেকে সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণসহ এসেছেন। তিনি যদি সত্যের খিলাফ বলেন তাহলে তার জন্য তিনি দায়ী হবেন। আর যদি তিনি সত্যবাদী হন তাহলে তিনি তোমাদেরকে যে শাস্তির কথা বলছেন তা তোমাদের উপর অবশ্যই আপতিত হবেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীদের সৎপথে পরিচালিত করেন না।” (সূরাতুল মু’মিন : আয়াত শরীফ ২৮)
تابعه وقد روى حضرت البيهقى رحمة الله عليه عن حضرت الحاكم رحمة الله عليه .....حضرت عروة رحمة الله عليه. قال قلت لعبد الله بن حضرت عمرو بن العاص رضى الله تعالى عنه ما أكثر ما رأيت قريشا أصابت من رسول الله صلى الله عليه وسلم فيها كانت تظهره من عداوته؟ فقال لقد رأيتهم وقد اجتمع أشرافهم يوما فى الحجر، فذكروا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالوا ما رأينا مثل ما صبرنا عليه من هذا الرجل قط، سفه أحلامنا وشتم اباءنا، وعاب ديننا، وفرق جماعتنا، وسب الهتنا، وصرنا منه على أمر عظيم أوكما قال-
قال فبينما هم فى ذلك طلع رسول الله صلى الله عليه وسلم فاقبل يمتى أستلم الركن، ثم مربهم طائفا بالبيت فغمزوه ببعض القول، فعرفت ذلك فى وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فمضى فلما مربهم الثانية غمزوه بمثلها فعرقها فى وجهه فمضى فمربهم الثالثة فغمزوه بمثلها. فقال أتسمعون يامعشر قريش؟ أما والذى نفسى بيده لقد جئتكم بالذبح.
এ হাদীছ শরীফ-এর সমর্থনে হযরত আল্লামা বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। ..... হযরত উরওয়া রহমতুল্লাহি তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবুনে আমর ইবনে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি কুরাইশ কাফিরদের শত্রুতার জঘন্যতম প্রকাশরূপে আপনি কোনো ঘটনা দেখেছেন? তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমি যা দেখেছি তা হলো, তাদের বড় বড় সরদাররা একদিন কা’বা শরীফ-এর হাতিম অংশে সমবেত হয়েছিলো। সেখানে তারা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করে। তারা বলে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে আমরা যা ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করছি এরূপ ধৈর্য ধারণ করতে আমরা কখনো কাউকে দেখিনি। তিনি আমাদের ধৈর্যশীল ও জ্ঞানবান লোকদের মূর্খ ঠাওরাচ্ছেন। আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে গালমন্দ করছেন। আমাদের দ্বীন ধর্মের সমালোচনা করছেন। আমাদের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করছেন। আমাদের দেবতা ও উপস্যদেরকে গাল দিচ্ছেন। তার ব্যাপারে আমরা এখন মহাসঙ্কটের সম্মুখীন।
তারা হুবহু এ কথাবার্তা বা এ মর্মের বক্তব্য রেখেছিলো অথবা তারা আলোচনা করছিলো ঠিক ওই সময়ে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে এলেন এবং সোজা এসে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন। এরপর তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে তিনি তাওয়াফ করতে শুরু করলেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে কাফিরেরা বিভিন্ন কটূক্তি করতে থাকে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমা উনার চেহারা মুবারকে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তবুও তিনি তাওয়াফ চালিয়ে যেতে থাকেন। দ্বিতীয় চক্করে যখন তিনি তাদেরকে অতিক্রম করছিলেন তখনও তারা উনাকে লক্ষ্য করে কটূক্তি করে। তৃতীয়বারও যখন তারা এরূপ করলো তখন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! তোমরা কি শুনছো? আমি কিন্তু তোমাদের জন্য এমন বিষয় নিয়ে এসেছি যাতে তোমাদের যবেহ হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
فاخذت القوم كلمته حتى ما منهم من رجل إلا وكأنما على رأسه طائر وقع حتى أن أشدهم فيه وصاة قبل ذلك ليرفؤه حتى إنه ليقول انصرف حضرت أبا القاسم صلى الله عليه و سلم راشدا فما كنت بجهول. فانصرف رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى إذا كان الغد اجتمعوا فى الحجر وأنا معهم، فقال بعضهم لبعض ذكرتم ما بلغ منكم وما بلغكم عنه. حتى إذا بادأ كم بما تكرهون تركتموه. فبينما هم على ذلك طلع رسول الله صلى الله عليه وسلم فوثبوا اليه وثبة رجل واحد فاحاطوا به يقولون أنت الذى تقول كذا وكذا؟ لما كان يبلغهم من عيب الهنهم ودينهم، فيقول رسول الله صلى الله عليه وسلم نعم أنا الذى أقول ذلك. ولقد رأيت رجلا منهم أخذ بمجامع ردائه، وقام حضرت أبوبكر عليه السلام ينكى دونه ويقول ويلكم (أتقتلون رجلا أن يقول ربى الله) ثم انصرفوا عنه. فان ذلك لأ كبر ما رأيت قريشا بلغت منه قط.
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক শুনে তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো। সকলের মধ্যে পিন-পতন নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। সবাই তখন স্থির ও অনড়, যেনো তাদের মাথায় পাখি বসেছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিন্দামুখর ব্যক্তিটি সে কথা মুবারকগুলো গুরুত্ব সহকারে শ্রবণ করে বলে যে, হে আবুল কাসিম! ভালোয় ভালোয় এখান থেকে আপনি চলে যান, আপনি তো সবচেয়ে বড় আলিম ও সবচেয়ে বড় বিজ্ঞ। একটু পরে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখান থেকে চলে এলেন। পরের দিন তারা সকলে পুনরায় হাতীম অংশে সমবেত হয়। আমিও তাদের সাথে ছিলাম। তারা একে অন্যকে বললো তোমরা যা কিছু করো না আর তিনি যা কিছু করেছেন তাতে তোমাদের সবারই সায় আছে। এমনকি যখন তিনি তোমাদের অপছন্দের কথা বলেছেন তবুও তোমরা উনাকে ছেড়ে দিয়েছো।
ইতোমধ্যে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে সেখানে হাযির হন। তারা সবাই একযোগে উনার উপর আক্রমণ চালায়। সকলে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তিনি তাদের বাতিল ধর্ম ও তাদের উপাস্যদের যে দোষত্রুটি অসারতা বর্ণনা ও আলোচনা করেন সেগুলো উল্লেখ করে তারা বলে যে, আপনিই কি এরূপ বলে থাকেন? আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি অবশ্যই এরূপ বলে থাকি। তাদের একজনকে আমি দেখলাম যে, সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাদর মুবারকের উভয় প্রান্ত কষে ধরে উনার গলা মুবারক পেঁচিয়ে সজোরে টানছে। নাঊযুবিল্লাহ! এদিকে উনার পিছনে দাঁড়িয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিবাদ করে বলছিলেন, তোমাদের সর্বনাশ হোক। তোমরা একজন সম্মানিত মানুষকে কি কেবল এ জন্যেই শহীদ করবে যে, তিনি বলেন, আমার রব মহান আল্লাহ পাক! তখন তারা উনাকে ছেড়ে চলে যায়। কুরাইশ কাফিরদের নিষ্ঠুর আচরণসমূহের মধ্যে এটিই আমার দেখা নিষ্ঠুরতম আচরণ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৪৬ পৃষ্ঠা)

0 Comments: