হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৩৭৮-৪৮০) (ঝ)


হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
حضرت رواه من طريق حضرت شعبة رحمة الله عليه عن حضرت الأشعث بن سليم رحمة الله عليه عن رجل من كنانة. قال رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم بسوق ذى المجاز وهو يقول.يا ايها الناس قولوا لا اله الا الله تفلحوا واذا رجل خلفه يسفى عليه التراب، واذ هوا يقولوا- ياأيها الناس لا يغرنكم هذا عن دينكم فانما يريد أن تتر كوا عبادة اللات والعزى كذا قال أبوجهل، والظاهر أنه أبولهب،
হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শু’বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত আশয়াছ ইবনে সালীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি কিনানা বংশের এক ব্যক্তি থেকে, বর্ণনা করেছেন। সেই ব্যক্তি বলেছেন যে, আমি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যুলমাজায় বাজারে দেখেছিলাম। তিনি বলেছিলেন,
يا ايها الناس قولوا لا اله الا الله تفلحوا
হে লোক সকল! তোমরা বলো মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো মা’বুদ নেই, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে।” আমি উনার পিছনে অপর এক দুষ্ট ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম যে, সে উনার প্রতি মাটি নিক্ষেপ করছে। নাঊযুবিল্লাহ! সে ছিলো আবূ জাহল। সে বলছিলো, হে লোকেরা! এ ব্যক্তি যেন তোমাদেরকে তোমাদের ধর্মমতের ব্যাপারে প্রতারিত করতে না পারে। তিনি তো চান যে তোমরা লাত ও উযযার উপসনা ত্যাগ করো।
এ বর্ণনায় লোকটি আবূ জাহিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু স্পষ্টতই বুঝা যায় যে ওই লোকটি ছিলো আবূ লাহাব।”
পক্ষান্তরে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছিলো চাচা আবূ ত্বলিবের পরম ¯œ, মমতা ও মানবিক মুহব্বত ও ভালোবাসা। উনার কাজ-কর্ম, স্বভাব-চরিত্র এবং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ও উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের খিদমত করার জন্যে উনার মরণপণ প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৪২ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
قال يونس بن بكير رحمة الله عليه حضرت عن طلحة بن يحيى رحمة الله عليه عن حضرت عبد الله بن موسى بن طلحة رحمة الله عليه أخبرنى حضرت عقيل بن أبى طالب رضى الله تعالى عنه. قال جئت قريش الى أبى طالب فقالوا إن ابن أخيك هذا قد اذانا فى نادينا ومسجدنا فانهه عنا. فقال يا حضرت عقيل رضى الله تعالى عنه انطلق فأتنى بمحمد، فانطلقت اليه فاستخرجته من كنس- أو قال خنس يقول بيت صغير، فجاء به فى الظهيرة. فى شدة الحر، فلما أتاهم قال إن بنى عمك هؤلاء زعموا أنك تؤذيهم فى ناديهم ومسجدهم، فانته عن أذاهم فحلق رسول الله صلى الله عليه وسلم ببصره إلى السماء. فقال ترون هذه الشمس؟ قالوا نعم قال فما أنا بأقدر أن أدع ذلك منكم على أن تشتعلوا منه بشعلة. فقال أبو طالب والله ما كذب ابن أخى قط فارجعوا. رواه البخارى فى التار يخ عن حضرت يونس بن بكير رحمة الله عليه.
অর্থ: “হযরত ইউনুস ইবনে বুকাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি ... হযরত আকীল ইবনে আবূ ত্বলিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বলেন, কুরাইশের লোকজন আবূ ত্বলিব উনার নিকট এসে বলেছিলো, আপনার এই সম্মানিত ভাতিজা তিনি আমাদের সভা-সমাবেশ, মাহফিল, মজলিস এবং উপাসনালয়ে গিয়ে আমাদেরকে খুবই কষ্ট দিচ্ছেন। আপনি আমাদের নিকট আসা থেকে উনাকে বারণ করে দিন। তখন আবূ ত্বলিব তিনি বললেন, হে আক্বীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  আপনি যান হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডেকে নিয়ে আসুন। আমি উনার নিকট গেলাম এবং একটি হুজরা শরীফ থেকে উনাকে বের করে ভর দুপুরে নিয়ে এলাম। তখন প্রচ- গরম পড়ছিলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের নিকট উপস্থিত হওয়ার পর আবূ ত্বলিব তিনি বললেন, আপনার এই ভাইয়েরা, বলছে যে, আপনি তাদেরকে সভা-সমাবেশে এবং উপাসনালয়ে গিয়ে কষ্ট দিচ্ছেন। তাদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে আপনি বিরত থাকুন।
এ কথা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসমানের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমরা কি ওই সূর্যটা দেখছো? ওরা বললো, হ্যাঁ, দেখছিই তো। তিনি বললেন, তোমরা যদি সূর্যের একটি শিখাও আমার হাতে তুলে দাও তবু ওই দাওয়াতের কাজ থেকে আমি বিরত থাকতে পারব না। আবু ত্বলিব তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমার ভাতিজা কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। তোমরা চলে যাও। (এই হাদীছ শরীফখানা ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তারিখ গ্রন্থে হযরত ইউনুস ইবনে বুকাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণনা করেছেন।) (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ৪২ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
رواه حضرت البيهقى رحمة الله عليه عن حضرت الحاكم رحمة الله عليه عن حضرت الأصم رحمة الله عليه عن حضرت احمد بن عبد الجبار رحمة الله عليه عنه به- وهذا لفظه- ثم روى البيهقى من طريق حضرت المغيرة بن الأخنس رضى الله تعالى عنه أنه حدث. أن قريشا حين قالت لأبى طالب هذه المقالة بعث إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم. فقال له يا ابن أخى إن قومك قد جاءونى وقالوا كذا وكذا، فابق على وعلى نفسك ولا تحملنى من الأمر مالا أطيق أنا ولا أنت. فا كفف عن قومك مايكرهون من قولك. فظن رسول الله صلى الله عليه وسلم أن قد بدا لعمه فيه، وانه خاذله ومسلمه، وضعف عن القيام منه. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا عم لو وضعت الشمس فى يمينى والقمر فى يسارى ما تركت هذا الأمر حتى يظهره الله أو أهلك فى طلبه. ثم استعبر رسول الله صلى الله عليه وسلم فبكى، فلما ولى قال له حين رأى ما بلغ الأمر ي رسول الله صلى الله عليه وسلم يا ابن أخى فاقبل عليه، فقال أمض على أمرك وافعل ما أحببت، فوالله لا أسلمك لشئ أبدا.
অর্থ: “হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত মুগীরা ইবনে আখনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে। তিনি বলেছেন, কুরাইশরা যখন আবূ ত্বলিব উনাকে ওই কথা বললো, তখন তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডেকে এনে বললেন, হে আমার সম্মানিত ভাতিজা! আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমার নিকট এসেছিলো এবং এসব কথা জানিয়ে গেলো। সুতরাং আপনি নিজেও বাঁচুন, আমাকেও বাঁচতে দিন। এমন কোনো সমস্যা আমার উপর চাপিয়ে দিবেন না, যা বহন কারার সামর্থ্য আমার নেই কিন্তু আপনার রয়েছে। সুতরাং আপনার যে কথা মুবারক তারা অপছন্দ করে সে কথা আপনি বলা থেকে বিরত থাকুন। এরূপ শুনে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মনে করলেন যে, উনার সম্পর্কে উনার চাচাজানের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটেছে এবং তিনি উনাকে কাফির মুশরিকদের হাতে সোপর্দ করতে চাচ্ছেন এবং উনাকে হিফাযতে তিনি অক্ষম হয়ে পড়েছেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, চাচা! যদি আমার ডান হাত মুবারকে সূর্য আর বাম হাত মুবারকে চন্দ্র দেয়া হয় তবুও একাজ আমি ত্যাগ করতে পারবো না। এই কাজ আমি অবিরাম চালিয়ে যাবো যতক্ষণ না মহান আল্লাহ পাক উনার দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী না করেন। কিংবা এ দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠায় আমার বিছাল শরীফ হবে। অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’চক্ষু মুবারক দিয়ে অশ্রু মুবারক গড়িয়ে পড়তে থাকে এবং তিনি কেঁদে ফেলেন। এ অবস্থা দেখে আবূ ত্বলিব তিনি বললেন, হে আমার সম্মানিত ভাতিজা! আপনার কাজে আপনি এগিয়ে যান। আপনার কর্মতৎপরতা আপনি চালিয়ে যান এবং আপনি যা ভালো মনে করেন তা করতে থাকুন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! কোনো কিছুর বিনিময়েই আমি আপনাকে তাদের হাতে তুলে দেবো না।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এরপর আবূ ত্বলিব তিনি নিম্নোক্ত কবিতাটি পাঠ করেন,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ثم قال أبو طالب فى ذلك:
والله لن يصلوا اليك بحبمعهم - حتى أوسد فى التراب دفينا
فامضى لأمرك ما عليك غضاضة - أبشر وقر بذلك منك عيونا
ودعوتنى وعلمت أنك ناصحى - فلقد صدقت وكنت قدم أمينا
وعرضت دينا قد عرفت بأنه - من خير أديان البرية دينا
لولا الملامة أو حذارى سبة - لوجدتنى سمحا بذاك ممينا
ثم قال حضرت البيهقى رحمة الله عليه وذكر حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه لأبى طالب فى ذلك أشعارا: وفى ذلك دلالة على أن الله تعالى عصمه بعمه مع خلافه إياه فى دينه، وقد كان يعصمه حيث لا يكون عمه بما شاء لامعقب لحكمه.

১। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কবরস্থিত হয়ে মাটিকে বালিশ বানানোর পূর্ব পর্যন্ত তারা সবাই মিলেও আপনার নিকটে আসতে পারবে না।
২। আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যান। কোনো অপমান, লাঞ্ছনা আপনার প্রতি আসবে না। আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন এবং এতদ্বারা আপনার চোখ মুবারক জুড়ান।
৩। আপনি আমাকে সত্যের দাওয়াত দিয়েছেন আমি নিশ্চিত জানি যে, আপনি আমার কল্যাণকামী। আপনি সবকিছুই সত্য বলেছেন, আপনি তো পূর্ব থেকেই আল আমীন ও চরম বিশ্বাসী বলে খ্যাত।
৪। আপনি আমার নিকট একটি দ্বীন পেশ করেছেন, আমি নিশ্চিত জানি যে, ওই দ্বীন হলো সৃষ্টি জগতের জন্যে শ্রেষ্ঠ দ্বীন। সুবহানাল্লাহ!
৫। যদি সমালোচনার আশঙ্কা এবং আমার যুগ সচেতনতা না থাকতো তবে আপনি আমাকে ওই দ্বীন ইসলামের সুস্পষ্ট অনুসরণকারী ও অনুগামী দেখতে পেতেন।

0 Comments: