হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৩৭৮-৪৮০) (গ)

হাদীছ শরীফ-এ এসেছে-
 وقال حضرت محمد بن كعب رضى الله  تعالى عنه أول من أسلم من هذه الامة حضرت خديجة عليها السلام وأول رجلين اسلما حضرت أبوبكر رضى الله  تعالى عنه و حضرت على رضى الله  تعالى عنه، وأسلم حضرت على رضى الله  تعالى عنه قبل حضرت أبى بكر رضى الله  تعالى عنه، وكان حضرت على رضى الله  تعالى عنه يكتم إيمانه خوفا من أبيه، حتى لقيه أبوه قال أسلمت؟ قال نعمقال وازر ابن عمك وانصرهقال وكان حضرت أبوبكر الصديق رضى الله  تعالى عنه أول من أظهر الاسلام.
অর্থ : হযরত মুহম্মদ ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেনএই উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি এবং পুরুষদের মধ্যে প্রথম ঈমান আনয়নকারী দু’জন হলেন আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমান আনয়নের পূর্বে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ঈমান আনয়ন করেন। উনার পিতার কারণে হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি উনার ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রেখেছিলেন। একদিন উনার পিতা আবু ত্বালিব উনার মুখোমুখি হলে উনার পিতা বললেনআপনি কি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেনতিনি বললেনহ্যাঁ। পিতা বললেনতবে আপনার সম্মানিত চাচাতো ভাই উনার খিদমতের আঞ্জাম দিবেন উনার সহযোগিতা করবেন অবশ্যই। তিনি বলেনসর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি।”
উল্লেখ্য যেমহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম। তিনি সকল মহিলা থেকে এ ব্যাপারে সবার অগ্রবর্তী। তথা নারী-পুরুষ সকলের চেয়েও তিনি অগ্রবর্তী। পরাধীন উনাদের  মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। বালকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হযরত আলী ইবনে আবী ত্বালিব আলাইহিস সালাম। তবে ইসলাম গ্রহণের সময় তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন। স্বাধীন এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণ ছিলো অধিকতর কল্যাণকর ও তাৎপর্যবহ। কারণ তিনি ছিলেন আরবের কুরাইশ বংশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ও সম্পদশালী ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রতি আহ্বানকারী। মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ইত্তিবাআনুগত্যের মাধ্যমে এবং উনাদের সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে ধনসম্পদ ব্যয় করে মুহব্বতের পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ২৬ পৃষ্ঠা)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে
قال حضرت يونس رحمة الله عليه عن حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ثم إن حضرت أبابكر الصديق عليه السلام لقى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال أحق ما تقول قريش يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم؟ من تركك الهتنا، وتسفيهك عقولنا، وتكفيرك ابائنا؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم بلى إنى رسول الله ونبيه، بعثنى لا بلغ رسالته وأدعوك إلى الله بالحق فوالله إنه للحق، أدعوك يا حضرت أبا بكر عليه السلام إلى الله وحده لا شريك له، ولا تعبد غيره والموالاة على طاعته وقرأ عليه القران، فلم يقر ولم ينكرفاسلم وكفر بالاصنام، وخلع الانداد وأقر بحق الاسلام، ورجع حضرت أبو بكر عليه السلام وهو مؤمن مصدق.
অর্থ: “হযরত ইউনূস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। একদা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি আখিরী রসূলহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত শরীফ-এ গিয়ে বললেনইয়া হাবীবাল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সম্পর্কে কুরাইশগণ যা বলছে তা কি সত্যতারা বলছে যেআপনি আমাদের বুদ্ধিমান লোকদের মূর্খ বানিয়েছেনএবং আমাদের পূর্বপুরুষ তথা বাপ-দাদাদের মধ্যে কতককে কাফির সাব্যস্ত করেছেন। আখিরী রসূলহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেনহ্যাঁতাই। নিশ্চয়ই আমিতো মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ও নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন উনার রিসালত প্রচার করার জন্য এবং তোমাদেরকে হক্ব বা সত্য পথে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও উনার হাবীব হুযূর পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে আহবান করার জন্য। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এটিই হচ্ছে হক্ব বা সত্য পথ ও মত। হে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম আমি আপনাকে একক লা-শারীক মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে আহবান জানাচ্ছি। আপনি মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত-বন্দেগী করবেন না। উনার ইতায়াত বা আনুগত্যের ব্যাপারে সহযোগিতা করুন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করে শুনালেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তা গ্রহণ বা বর্জন কিছু করলেন না। অতঃপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং মূর্তিপূজাকে অস্বীকার করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার শরীক তথাকথিত অংশীদারগুলোকে বর্জন করলেন এবং ইসলামের সত্যতা স্বীকার করে নিলেন। তিনি খালিছ মু’মিন ও ছিদ্দীক্বে আকবর হিসেবে বাড়িতে ফিরলেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ২৬ ও ২৭ পৃষ্ঠা)

আরো বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه حدثنى حضرت محمد بن عبد الرحمن بن عبد الله بن الحصين التميمى رحمة الله عليه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما دعوت أحدا إلى الاسلام إلا كانت عنده كبوة وتردد ونظر، إلا حضرت أبا بكر رضى الله تعالى عنه ماعنكم عنه حين ذكرته، ولا تردد فيه تكمأى تلبث-
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেনআমার নিকট বর্ণনা করেছেন মুহম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আল হুসাইন আত তামীমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। তিনি বলেননিশ্চয়ই আখিরী রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেনআমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি সেই প্রথমে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেছেইতস্তত করেছেচু-চেরা করেছে এবং চিন্তা-ভাবনা করেছেকিন্তু হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ব্যাপারটি ব্যতিক্রম। সুবহানাল্লাহ! আমি উনার নিকট ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব দেয়ার পর তিনি কোনোরূপ দ্বিধা করেননিকোনো প্রকারের ইতস্তত ভাবও প্রকাশ করেননি। দেরিও করেননি। সুবাহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ২৭ পৃষ্ঠা)
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় আরো উল্লেখ রয়েছে যেহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সমর্থন করেননিবর্জনও করেননি। উক্ত বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে এটিই। কারণ হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও অন্যান্যগণও উল্লেখ করেছেন যেসাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের পূর্বে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত শরীফ-এ থাকতেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সত্যবাদিতাবিশ্বস্ততা বেমেছাল আমানতদারছানা-ছিফতসর্বোত্তম আখলাক্ব বা পূতঃপবিত্র চরিত্র মুবারক সর্ম্পকে তিনি পূর্ব থেকেই অবগত ছিলেন। এ সমস্ত বেমেছাল আখলাক্ব ও ছিফত মুবারক উনাকে সৃষ্টি জগতের সাথে মিথ্যাচার থেকে বিরত রাখেতাহলে তিনি কীভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করতে পারেনকস্মিনকালে সেটা সম্ভব নয়। আর এজন্যই তো উনাকে নবী-রসূলহাবীবুল্লাহ হিসেবে যমীনে পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দাওয়াত দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন। কোনো প্রকার বিলম্ব ও দোদুল্যমনতা উনার মধ্যে ছিলো না।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
عن حضرت الحارث رضى الله تعالى عنه قال سمعت حضرت عليا عليه اللسلام يقول أول من أسلم من الرجال حضرت أبو بكر الصديق عليه اللسلام، وأول من صلى مع النبى صلى الله عليه وسلم من الرجال حضرت على بن أبى طالب عليه اللسلام.
অর্থ: হযরত হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার থেকে শ্রবণ করেছি। তিনি বলেনপুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হলেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম। আর নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সর্বপ্রথম নামায আদায়কারী পুরুষ হলেন হযরত আলী ইবনে আরবী ত্বলিব আলাইহিস সালাম। (আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া ৩য় জিলদ ২৭ পৃষ্ঠা)
আরো উল্লেখ রয়েছে,
وروى حضرت الواقدى رحمة الله عليه باسانيده عن حضرت أبى أروى الدوسى رحمة الله عليه و حضرت أبى مسلم بن عبد الرحمن رحمة الله عليه فى جماعة من السلف أول من أسلم حضرت أبوبكر الصديق عليه اللسلامعن حضرت يعقوب بن سفيان رحمة الله عليه سئل حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه من أول من ام؟ فقال حضرت أبو بكر الصديق عليه اللسلام ، أما سمعت قول حضرت حسان رضى الله تعالى عنه:
إذا تذ كرت شجوا من أخى ثقة - فاذ كر أخاك أبا بكر بما فعلا
خير البرية أوفاها وأعدلها - بعد النبى وأولاها بما حملا
والتالى الثانى المحمود مشهده - وأول الناس منهم صدق الرسلا
عاش حميدا لأمر لله متبعا - بأمر صاحبه الماضى وما انتقلا
অর্থ: হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় সনদে হযরত আবী আরওয়া দাউসী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আবু মুসলিম ইবনে আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ একদল পূর্ববর্তী বর্ণনাকারী উনাদের সনদের থেকে বর্ণনা করেছেন যেসর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি। হযরত ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যেসর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেছেন কেউত্তরে তিনি বললেনহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম। আপনি কি হযরত হাসসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এই বক্তব্য শুনেননি।
إذا تذ كرت شجوا من أخى ثقة - فاذ كر أخاك أبا بكر بما فعلا
যদি কোনো আস্থাভাজন দ্বীনি ভাইয়ের ব্যথা বেদনা ও দুঃখ কষ্টের কথা উল্লেখ করতে হয় তবে আপনার ভাই হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার ভোগ করা দুঃখ-বেদনার কথা উল্লেখ করুন। দ্বীনের উন্নয়নে ও প্রসারে তিনি যে ত্যাগ ও কুরবানী করেছেন তা উল্লেখ করুন।
خير البرية أوفاها وأعدلها - بعد النبى وأولاها بما حملا
নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরই তিনি সারা আলমের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবিশ্বস্ততম ও শ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারক। তিনি কষ্ট সহ্য করেছেন তার বদৌলতে তিনি সর্বোত্তম পুরস্কারও পেয়েছেন।
والتالى الثانى المحمود مشهده - وأول الناس منهم صدق الرسلا
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অব্যবহিত পরেই উনার স্থান। তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকারী এবং উনার অবস্থান প্রশংসাযোগ্য। মানুষের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যক্তিযিনি রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনাকে সত্য বলে গ্রহণ করেছেন।
عاش حميدا لأمر لله متبعا - بأمر صاحبه الماضى وما انتقلا
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মান্য করে এবং উনার দীর্ঘদিনের ছহিব বা খাদিম। নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি প্রশংসনীয় জীবনযাপন করেছেন। ওই পথ থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি।
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণীত রয়েছে
عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال أول من أظهر الاسلام سبعة رسول الله صلى الله عليه وسلم، و حضرت أبو بكر رضى الله تعالى عنه، و حضرت عمار رضى الله تعالى عنه، وأمه حضرت سمية رضى الله تعالى عنها، و حضرت صهيب عليه السلام، و حضرت بلال رضى الله تعالى عنه، و حضرت المقداد عليه السلامفاما رسول الله صلى الله عليه وسلم فمنعه الله بعمه، وأما حضرت أبو بكر رضى الله تعالى عنه منعه الله بقومه، واما سائرهم فاخذهم المشركون فالبسوهم أدرع الحديد وصهر وهم فى الشمس فما منهم من أحد إلا وقد واتاهم على ما أرادوا، الا بلالا فانه هانت عليه نفسه فى الله، وهان على قومه، فاخذوه فاعطوه الولدان فجعلوا يطوفون به فى شعاب مكة وهو يقول أحد أحدوهكذا رواه الثورى
অর্থ: হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনপ্রথম ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাতজন। যিনি ইসলামের মূল সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহবানে ঈমান এনেছিলেন (পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম) হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালামহযরত আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুউনার সম্মানিতা মা হযরত সুমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাহযরত ছুহাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মিক্বদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার আপন চাচা উনার মাধ্যমে হিফাযত-এর খিদমত-এর আঞ্জাম দিয়েছেন অর্থাৎ এ ব্যপারে আবূ ত্বলিব তিনি নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাফির মুশরিকদের হাত থেকে হিফাজত করার ব্যপারে মুবারক খিদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন। আর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে উনার সম্প্রদায়দের নির্যাতনের হাত থেকে হিফাযতের ব্যপারে উনার খিদমত করেছেন। অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উনাদের গোত্রের মাধ্যমে মুশরিকরা ধরে নিয়ে যায় এবং লোহার পোশাক পরিয়ে প্রখর রৌদ্রের মধ্যে দগ্ধ করতে থাকে। অবশেষে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যতীত অন্যান্য ছাহাবাই কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মুশরিকরা তাদের ইচ্ছানুযায়ী বক্তব্য দিতে বাধ্য করে। নাউযুবিল্লাহ।
কিন্তু হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজের জীবনকে তুচ্ছ এবং নিজের সম্প্রদায়কে গুরুত্বহীন জ্ঞান করেন। ফলে মুশরিকরা উনাকে নিয়ে দুষ্ট বালকদের হাতে তুলে দেয়। তারা উনাকে রশিতে বেঁধে নিয়ে অত্যাচার করতে করতে মক্কা শরীফ-এর অলিতে-গলিতে ঘুরতে থাকে। তিনি তখনও বলছিলেন ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি একমহান আল্লাহ পাক তিনি একক। হযরত ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে মুরসাল সনদে এ হাদীছ শরীফটি বর্ণিত রয়েছে।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ২৮ পৃষ্ঠা)
আরো উল্লেখ রয়েছে,
قال حضرت ابن جرير رحمة الله عليه وقال اخرون كان أول من أسلم حضرت زيد ابن حارثة رضى الله تعالى عنه، ثم روى من طريق حضرت الواقدى رحمة الله عليه عن حضرت ابن أبى ذئب رحمة الله عليه، سألت حضرت الزهرى رحمة الله عليه من أول من اسلم من النساء؟ قال حضرت خديجة عليها السلامقلت فمن الرجال، قال حضرت زيد بن حارثة رضى الله تعالى عنه.
অর্থ: হযরত জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেনঅন্য একদল আলিম উনারা বলেছেন যেসর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। অন্যদিকে হযরত ইবনে আবী যি’ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে হযরত ওয়াক্বিদী রহমতুল্লহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন যেআমি হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলামমহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্র্রহণ করেছেন কেতিনি বললেনউম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি। আমি বললামপুরুষদের মধ্যে কেতিনি বললেনহযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি।
উপরোক্ত সবগুলো মন্তব্য ও অভিমতের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেনস্বাধীন বয়স্ক পুরুষ উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালামমহিলাদের মধ্যে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম। ক্রীতদাসদের মধ্যে হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বালকদের মধ্যে হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বলিব আলাইহিস সালাম।
আরো বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت محمد بن اسحاق رحمة الله عليه فلما أسلم حضرت أبو بكر رضى الله تعالى عنه وأظهر اسلامه دعا إلى الله عز وجل، وكان حضرت أبو بكر رضى الله تعالى عنه رجلا مألفا لقومه محبا سهلا، وكان أنسب قريش لقريش، وأعلم قريش بما كان فيها من خير وشروكان رجلا تاجرا ذا خلق ومعروف، وكان رجال قومه يأتونه ويألفونه لغير واحد من الأمر، لعلمه وتجارته وحسن مجالستهفجعل يدعو إلى الاسلام من وثق به من قومه ممن يغشاه ويجلس اليه فاسلم على يديه فيما بلغنى الزبير بن العوام، وعثمان بن عفان، وطلحة بن عبيد الله، وسعد بن أبى وقاص وعبد الرحمن بن عوف رضى الله عنهم، فانطلقوا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ومعهم حضرت أبو بكر عليه السلامفعرض عليهم الاسلام وقرأ عليهم القران وأنبأهم بحق الاسلام فامنوا، وكان هؤلاء النفر الثمانية الذين سبقوا فى الاسلام صدقوا رسول الله صلى الله عليه وسلم وامنوا بما جاء من عند الله.
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেনহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণ এবং প্রকাশ করার পর তিনি মানুষদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। নিজ-সম্প্রদায়ের লোকজনের নিকট তিনি ছিলেন অত্যন্ত মুহব্বতের পাত্র ও মিশুকরূপে পরিচিত। কুরাইশ বংশের তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ কুলজী বিশারদ ছিলেন। উক্ত বংশ মুবারকের খাইর বা কল্যাণ অকল্যাণ সম্পর্কে তিনি ছিলেন সর্বাধিক অবগত। ব্যবসায়ীআখলাকবান এবং সর্বজন পরিচিত ব্যক্তি হিসেবে উনার প্রসিদ্ধি ছিলো। উনার ইলমগরিমাব্যবসায়িক সম্পর্ক  এবং সুন্দরতম সাহচর্য লাভের আশায় লোকজন উনার নিকট উপস্থিত হতো। যারা উনার নিকট আসতেনতাদের মধ্যে থেকে যাদেরকে তিনি বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন মনে করতেনতাদেরকে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেনআমার জানা মতেহযরত জুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহযরত উছমান ইবনে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহযরত ত্বলহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াককাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখগণ উনার হাত মুবারক-এ ইসলাম গ্রহণ করেন। উনারা নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ হাজির হন। উনাদের সাথে ছিলেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হাবীব নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সকলের নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পেশ করেন এবং উনাদেরকে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে শুনান এবং উনাদেরকে জানিয়ে দেন যে ইসলামই হচ্ছে হক্ব বা সত্য ও সঠিক দ্বীন। তখন উনারা ঈমান আনয়ন করেন। ইসলাম গ্রহণে অগ্রবর্তী হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আটজন। উনারা নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হক্ব বা সত্য নবী-রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলে স্বীকার করে নেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে উনার নিকট যা কিছু এসেছে তার প্রতি উনারা পূর্ণ ঈমান আনয়ন করেন। সুবাহানাল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ২৯ পৃষ্ঠা)
আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن الواقدى قال حضرت طلحة بن عبيد الله رضى الله تعالى عنه سوق بصرى فاذا راهب فى صومعته يقول سلوا أهل الموسم أفيهم رجل من أهل الحرم؟ قال حضرت طلحة رضى الله تعالى عنه قلت نعم أنا، فقال هل ظهر حضرت احمد صلى الله عليه وسلم بعد؟ قلت ومن  حضرت احمد صلى الله عليه وسلم؟ قال حضرت ابن عبد الله بن عبد المطلب عليه السلام هذا شهره الذى يخرج فيه، وهو اخر الانبياء مخرجه من الحرم، ومهاجره إلى نخل وحرة وسباخ، فاياك أن تسبق اليه.
قال حضرت طلحة رضى الله تعالى عنه فوقع فى قلبى ما قال، فخرجت سريعا حتى قدمت مكة فقلت هل كان من حديث؟ قالوا نعم حضرت محمد بن عبد الله الامين صلى الله عليه وسلم قد تنبأ، وقد اتبعه حضرت أبو بكر بن أبى قحافة عليه اللسلامقال فخرجت حتى قدمت على حضرت أبى بكر عليه السلام، فقلت اتبعت هذا الرجل؟ قال نعم فانطلق اليه فادخل عليه فاتبعه فانه يدعو إلى الحق،
অর্থ: “হযরত ওয়াক্বিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেনহযরত ত্বলহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেনএকদিন আমি বুসরা (সিরিয়ার একটি স্থান)-এর একটি বাজারে উপস্থিত হই। তখন একজন রাহিব বা খ্রিস্টান পাদ্রীকে তার উপাসনালয়ে দেখতে পাই। সে বলছিলো মওসুমী ব্যবসায়ীদেরকে জিজ্ঞাসা করো। উনাদের মধ্যে হারাম শরীফ-এর অধিবাসী কেউ আছে কিহযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেনহ্যাঁআমি আছি। খ্রিস্টান পাদ্রী বললোহযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি ইতোমধ্যে যমীনে আগমন করেছেনআমি জাওয়াবে বললামহযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেসে বললোহযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পুত্র এবং হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার প্রিয় দৌহিত্র হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই মাসই হচ্ছে উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের মাস। তিনি হচ্ছেন সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সর্বশেষ রসূলহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার বিলাদত শরীফ-এর স্থান হচ্ছে পবিত্র মক্কা শরীফ-এর হারাম শরীফ। তিনি হিজরত করবেন খেজুর বৃক্ষশোভিত পাথুরে এবং লবণাক্ত যমীনে। অতএবআপনি সতর্ক থাকুনউনার থেকে খাইরবরকতকল্যাণ লাভে কেউ যেন আপনার চেয়ে অগ্রগামী না হন। বর্ণনাকারী বলেনহযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেনখ্রিস্টান পাদ্রীর কথা আমার অন্তরে দাগ কাটে। আমি দ্রুত ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ি এবং পবিত্র মক্কা শরীফ উপস্থিত হই। এখানে কোনো নতুন ঘটনা ঘটেছে কিনা জানতে চাই। লোকেরা বললোহ্যাঁঘটেছে। হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল আমীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেকে নবী বলে প্রচার করছেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার ছাহাবী বা উনার অনুসরণ-অনুকরণ করছেন। হযরত ত্বলহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেনআমি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার নিকট গেলাম এবং উনাকে বললামআপনি কি উনার অনুসরণ করছেনহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেনহ্যাঁকরছি। আপনিও উনার নিকট যান এবং উনার অনুসরণ করুন। কারণ তিনি হক্ব বা সত্যের দিকে আহ্বান করছেন।
فاخبره حضرت طلحة رضى الله تعالى عنه بما قال الراهبفخرج حضرت أبو بكر عليه السلام بطلحة فدخل به على رسول الله صلى الله عليه وسلم فاسلم حضرت طلحة رضى الله تعالى عنه، وأخبر رسول الله صلى الله عليه وسلم بما قال الراهب فسر بذلكأسلم حضرت أبو بكر عليه السلام و حضرت طلحة رضى الله تعالى عنه أخذهما حضرت نوفل بن خويلد بن العدوية رضى الله تعالى عنه - وكان يدعى أسد قريشفشدهما فى حبل واحد ولم يمنعهما بنو تيم فلذلك سمى حضرت أبو بكر عليه السلام و حضرت طلحة القرينين عليه السلاموقال النبى صلى الله عليه وسلم اللهم اكفنا شرابن العدوية رواه البيهقى.

হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খ্রিস্টান পাদ্রীর বক্তব্য হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে জানালেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে সঙ্গে নিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ উপস্থিত হলেন। অতঃপর হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং পাদ্রীর বক্তব্য নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পেশ করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা শুনে খুশি প্রকাশ করলেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম এবং হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের ইসলাম গ্রহণের পর নাওফিল ইবনে খুওয়াইলিদ ইবনে আদবীয়াহ উনাদের দু’জনকে বেঁধে ফেলে। (নাওফিল ইবনে খুওয়াইলিদ উনাকে কুরাইশ সম্প্রদায়ের সিংহ বলে ডাকা হতো)। নাঊযুবিল্লাহ!
বনূ তায়ম গোত্রের কেউই উনাদেরকে রক্ষা করতে পারলো না। উপরোক্ত কারণে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের ক্বরিনাইন বা দু’সাথী নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ বলে উনাদের জন্য দোয়া করলেন।
اللهم اكفنا شر ابن العدوية
ইয়া বারে ইলাহী! ইবনে আদবীয়া-এর অনিষ্ট থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন।” (বাইহাক্বী শরীফ)
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে,
حضرت الحافظ أبو الحسن خيثمة رحمة الله عليه قالت حضرت عائشة عليها السلام خرج حضرت أبو بكر عليه السلام يريد رسول الله صلى الله عليه وكان له صديقا فى الجاهلية، فلقيه فقال يا حضرت أبا القاسم صلى الله عليه وسلم فقدت من مجالس قومك واتهموك بالعيب لا بائها وأمهاتهافقال رسول الله صلى الله عليه وسلم إنى رسول الله صلى الله عليه وسلم أدعوك إلى الله فلما فرغ كلامه أسلم حضرت أبو بكر رضى الله تعالى عنه فانطلق عنه رسول الله صلى الله عليه وسلم وما بين الاخشبين أحد أكثر سرورا منه باسلام حضرت أبى بكر عليه السلام، ومضى حضرت أبو بكر عليه السلام فراح لعثمان بن عفان رضى الله تعالى عنه و حضرت طلحة ابن عبيد الله عليه السلام و حضرت الزبير بن العوام رضى الله تعالى عنه و حضرت سعد بن أبى وقاص رضى الله تعالى عنه فاسلموا، ثم جاء الغد بعثمان بن مظعون رضى الله تعالى عنه و حضرت أبى عبيدة بن الجراح رضى الله تعالى عنه و حضرت عبد الرحمن بن عوف رضى الله تعالى عنه و حضرت أبى سلمة بن عبد الاسد رضى الله تعالى عنه و حضرت الأرقم بن أبى الارقم رضى الله تعالى عنه فاسلموا.
অর্থ: “হযরত হাফিয আবুল হাসান খায়ছামা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উম্মুল মু’মিনীনসাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনএকদা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বের হলেন নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে। জাহিলী যুগেও উনারা দু’জন অন্তরঙ্গ ছিলেন। নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার সাক্ষাত হলো। হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি বললেনহে সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল ক্বাসিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সম্প্রদায়ের মাজলিসে তো আপনি অনুপস্থিত থাকেন। আর লোকজন সকলেই আপনার সমালোচনা করে এবং আপনাকে তাদের বাপ-দাদার ব্যাপারে অর্থাৎ তাদের ধর্মত্যাগের ব্যাপারে দোষারোপ করে। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেনআমি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ও হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে আহ্বান করছি। উনার কথা শেষ হওয়ার পরপরই হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। উনার কাছ থেকে নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাড়িতে চলে গেলেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এতো বেশি খুশি হয়েছিলেন যেমক্কা শরীফ-এর উপত্যকার অধিবাসীদের মধ্যে কেউই তখন এতো খুশি হননি। তারপর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন এবং হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালামহযরত ত্বলহা ইবনে উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহযরত জুবাইর ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং সা’দা ইবনে আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে গিয়ে সাক্ষাত করলেন। উনারা সকলেই ইসলাম গ্রহণ করলেন। পরদিন তিনি হযরত উছমান ইবনে মাইউন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহযরত আবু উবায়দা ইবনে জাররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহযরত আবু সালামা ইবনে আব্দুল আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আরকাম ইবনে আবুল আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের নিকট গেলেন। উনারা সকলেই ইসলাম গ্রহণ করলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন।”
হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে,
قال حضرت عبد الله بن محمد رحمة الله عليه فحدثنى حضرت أبى محمد بن عمران رحمة الله عليه عن حضرت القاسم بن محمد عليها السلام عن حضرت عائشة عليها السلامقالت لما اجتمع أصحاب النبى صلى الله عليه وسلم وكانوا ثمانية وثلاثين رجلا ألح حضرت أبو بكر عليه السلام على رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الظهور فقال يا حضرت أبا بكر عليه السلام إنا قليل فلم يزل حضرت أبو بكر عليه السلام يلح حتى ظهر رسول الله صلى الله عليه وسلم وتفرق المسلمون فى نواحى المسجد كل رجل فى عشيرته، وقام حضرت أبو بكر عليه السلام فى الناس خطيبا ورسول الله صلى الله عليه وسلم جالس فكان أول خطيب دعا الى الله وإلى رسوله صلى الله عليه وسلم ونار المشركون على حضرت أبى بكر عليه السلام وعلى المسلمين فضربوا فى نواحى المسجد ضربا شديدا

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেনআমার নিকট বর্ণনা করেন হযরত আবূ মুহম্মদ ইবনে ইমরান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ক্বাসিম ইবনে মুহম্মদ আলাইহিস সালাম উনার থেকেতিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনআখিরী রসূলহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যখন একত্রিত হলেন তখন উনারা ছিলেন মোট ৩৮ জন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রকাশ্যে বের হওয়ার জন্য প্রস্তাব পেশ করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেনহে আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম! আমরা বর্তমানে সংখ্যায় কম। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের প্রস্তাব পেশ করতে লাগলেন। অবশেষে (মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে) আখিরী রসূলহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের জন্য বের হলেন। অন্যান্য মুসলমানগণ উনারা মসজিদের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ গোত্রের মধ্যে অবস্থান নেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি জনসমক্ষে খুতবা বা ওয়াজ করতে শুরু করলেন। নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাশে উপবিষ্ট ছিলেন।
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি প্রথম খুতবা দিলেনতিনি প্রকাশ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনার আহ্বান করলেন। অর্থাৎ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনি সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা অতঃপর নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফতমর্যাদা-মর্তবার বিষয় আলোচনা করে কালিমা শরীফ-এর দাওয়াত দিলেন। দেখা গেলো মুশরিকরা উত্তেজিত হয়ে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার উপর এবং অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। মসজিদে অবস্থানরত বিভিন্ন স্থানে থাকা হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে তারা ভীষণ প্রহার করলো।
ووطئ حضرت أبو بكر عليه السلام وضرب ضربا شديدا ودنا منه الفاسق عتبة بن ربيعة فجعل يضربه بنعلين مخصوفتين ويحرفهما لوجهه، ونزا على بطن حضرت أبى بكر عليه السلام حتى ما يعرف وجهه من أنفه وجاء بنوتيم يتعادون فاجلت المشر كين عن حضرت أبى بكر عليه السلام وحملت بنوتيم حضرت أبا بكر عليه السلام فى ثوب حتى أدخلوه منزله ولا يشكون فى موته، ثم رجعت بنوتيم فدخلوا المسجد وقالوا والله لئن مات حضرت أبو بكر عليه السلام لنقتلن عتبة بن ربيعة، فرجعوا إلى حضرت أبى بكر عليه السلام فجعل حضرت أبو قحافة رضى الله تعالى عنه وبنوتيم يكلمون حضرت أبا بكر عليه السلام حتى أجاب، فتكلم اخر النهار فقال ما فعل رسول الله صلى الله عليه وسلم فمسوا منه بالسنتهم وعذلوه، ثم قاموا وقالوا لامه أم الخير أنظرى أن تطعميه شيئا أو تسقيه إياه فلما خلت به الحت عليه وجعل يقول ما فعل رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ فقالت والله مالى علم بصاحبك.

হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে তারা অনেক মারপিট করলো। নাঊযুবিল্লাহ! পাপিষ্ট কাফির উতবা ইবনে রবীয়াহ উনার নিকট আসে এবং পুরানো ভারী দুটো জুতো দিয়ে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে প্রহার করলো এবং সেগুলো দিয়ে উনার চক্ষু মুবারকেমুখ মুবারকে আঘাত করলো এবং উনার পেট মুবারকের উপর উঠে দাঁড়ালো। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে এমন প্রহার করা হলো যেউনার নাক-মুখ মুবারক চিনা যাচ্ছিল না। সংবাদ পেয়ে বানু তায়মের লোকজন দ্রুত সেখানে হাযির হয় এবং মুশরিকদের হাত থেকে উনাকে উদ্ধার করে। একটি কাপড়ে মুড়িয়ে তারা উনাকে তুলে নেয় এবং উনার বাড়িতে নিয়ে পৌঁছায়। উনার শাহাদত যে আসন্ন তাতে তাদের কোনো সন্দেহ ছিলো না।
এরপর বানু তায়ম গোত্রের লোকজন কা’বা শরীফ-এ প্রবেশ করে মুশরিকদের শাসিয়ে দিয়ে বলে যেহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি শহীদ হলে আমরা উতবা ইবনে রবীয়াকে কতল করে তার প্রতিশোধ নিব। এবার তারা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার নিকট ফিরে আসে এবং আবু কুহাফা ও বানু তায়মের লোকেরা উনাকে ডাকতে থাকে। এক সময় তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন। দিনের শেষভাগে তিনি কথা বলতে শুরু করেন এবং সর্বপ্রথম যে কথাটি বললেন তা হলো আখিরী রসূলহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায়তিনি কেমন আছেনএকথা শুনে লোকজন উনাকে ভর্ৎসনা করে এবং উনাকে একা রেখে চলে যায়,। তারা উনার মা হযরত উম্মুল খায়ির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বলে যায় চেষ্টা করে দেখুন উনাকে কিছু খাওয়া-দাওয়া করানো যায় কিনাগোত্রের লোকজন চলে যাওয়ার পর উনার মা উনাকে কিছু খেয়ে নেয়ার জন্য বলাবলি করতে লাগলেনআর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম  তিনি শুধু বলছিলেনআখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেমন আছেনউনার মাতা বললেনমহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনার যিনি রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আমি বেশি কিছু জানি না।
فقال اذهبى إلى أم جميل بنت الخطاب فاسأليها عنه، فخرجت حتى جاءت أم جميل فقالت إن حضرت أبا بكر عليه السلام يسألك عن حضرت محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم؟ فقالت ما أعرف حضرت أبا بكر عليه السلام ولا حضرت محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم وإن كنت نحبين أن أذهب معك إلى ابنك قالت نعمفمضت معها حتى وجدت حضرت أبا عليه السلام صريعا دنفا، فدنت أم جميل وأعلنت بالصياح وقالت والله إن قوما نالوا هذا منك لاهل فسق وكفر، وإنى لأ رجو أن ينتقم الله لك منهمقال فما فعل رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قالت هذه أمك تسمع، قال فلاشئ عليك منها، قالت سالم صالحقال أين هو؟ قالت فى دار ابن الارقم، قال فان لله على أن لا أذوق طعاما ولا أشرب شرابا أو انى رسول الله صلى الله عليه وسلمفامهلتا حتى اذا هدأت الرجل وسكن الناس، خرجتا به يتكئ عليهما حتى أدخلتاه على رسول الله صلى الله عليه وسلم،

হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি উনার আম্মাকে বললেনআপনি খাত্তাবের কন্যা হযরত উম্মু জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার নিকট যান এবং উনার কাছ থেকে জেনে আসুন। তিনি হযরত উম্মু জামীল উনার নিকট গেলেন এবং বললেনহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। হযরত উম্মু জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেনআমি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে চিনি না এবং হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও চিনি না। আপনি যদি ভালো মনে করেন তাহলে আমি আপনার সাথে আপনার ছেলের নিকট যেতে পারি। হযরত উম্মুল খায়ির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বললেনতবে চলুন। হযরত উম্মুল খায়ির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সাথে হযরত উম্মু জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি এলেন। তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি শয্যাশায়ীমুমূর্ষ। হযরত উম্মু জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার নিকটে এলেন এবং এ কঠিন অবস্থা দেখে চিৎকার করে বললেনহায়! কাফির ও পাপিষ্ঠের দল আপনার এ দুরবস্থা করেছে। আমি নিশ্চিত আশা রাখি যেআপনার প্রতি যুলুমের প্রতিশোধ মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের থেকে নিবেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেনআখিরী রসূলহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেমন আছেনহযরত উম্মু জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেনপার্শ্বে তো আপনার মা রয়েছেনতিনি আমাদের কথা-বার্তা শুনছেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেনউনার জন্যে কোনো অসুবিধা হবে না। হযরত উম্মু জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি জানালেননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুস্থ ও ভালো আছেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি জিজ্ঞেস করলেনতিনি এখন কোথায় আছেনহযরত উম্মু জামীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি জানালেন যেনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এখন হযরত ইবনুল আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়িতে আছেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেনমহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আখিরী রসূলহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করা পর্যন্ত আমি খাদ্য পানীয় মুখে তুলব না। উনারা দু’জনে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে অপেক্ষা করতে বললেন। অবশেষে সন্ধ্যাবেলা যখন পথচারীদের আনা-গোনা কমে গেলোলোকজন নিজ নিজ গৃহে চলে গেলোতখন উনাদের দু’জন-এর সহয়তায় তিনি যাত্রা করলেন এবং উনারা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছিয়ে দিলেন।
قال فأ كب عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقبله وأ كب عليه المسلمون، ورق له رسول الله صلى الله عليه وسلم رقة شديدةفقال حضرت أبو بكر عليه السلام بابى وأمى يارسول الله ليس بى بأس إلا ما نال الفاسق من وجهى، وهذه أمى برة بولدها، وأنت مبارك فدعها إلى الله وادع الله لها عسى الله أن يستنقذها بك من النارقال فدعا لها رسول الله صلى الله عليه وسلم ودعاها إلى الله فاسلمت، وأقاموا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فى الدار شهرا وهم تسعة وثلاثون رجلا، وقد كان حضرت حمزة بن عبد المطلب عليه السلام أصلم يوم ضرب حضرت أبوبكر عليه السلام، ودعا رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمربن الخطاب عليه السلامأولأبى جهل بن هشامفاصبح حضرت عمر عليه السلام وكانت الدعوة يوم الاربعاء فاسلم حضرت عمر عليه السلام يوم الخميس، فكبر رسول الله صلى الله عليه وسلم وأهل البيت تكبيرة سمعت باعلامكة،

 মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার উপর ঝুঁকে পড়লেন এবং উনাকে চুম্বন করলেন। অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার প্রতি ঝুঁকে পড়লেন। উনার অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যান্ত দুঃখ প্রকাশ করলেন এবং কষ্ট পেলেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বললেনইয়া রসূল্লাল্লাহইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পাপিষ্ঠনরাধম উতবা আমার মুখ মুবারকে যে আঘাত করেছে তা ব্যতীত অন্যত্র এখন আমার খুব একটা ব্যাথা-বেদনা নেই। এই যে আমার মাতিনি উনার সন্তানের প্রতি খুবই ¯œহশীল। আপনিতো বরকতময় সত্তাউনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে আসার দাওয়াত দিন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করুন আপনার মাধ্যমে যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্য দোয়া করলেন মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে এবং উনাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলেন। তিনি তখনই ইসলাম গ্রহণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
উনারা সকলেই এক মাস নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে ওই হুজরা শরীফ-এ অবস্থান করলেন। তখন উনারা ৩৯ জন মুসলমান ছিলেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন প্রহৃত হলেনসেদিন হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনখতামুন নাবিইয়ীনহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করলেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম অথবা আবূ জাহিল ইবনে হিশাম এ দু’জনের একজন যেনো ইসলাম গ্রহণ করেন। দেখা গেলো হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়া করেছিলেন ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি (বুধবার) আর হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ইয়াওমুল খামীসি (বৃহস্পতিবার)। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণে নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হুজরা শরীফ-এ  অবস্থানকারী সকল মুসলমান ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সমুচ্চ স্বরে তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করেন। মক্কা শরীফ-এর উচ্চভূমি পর্যন্ত ওই ধ্বনি শোনা গিয়েছিলো।
وخرج أبوالارقموهو أعمى كافروهو يقول اللهم اغفر لبنى عبيد الارقم فانه كفر، فقام حضرت عمر عليه السلام فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم على نخفى ديننا ونحن على الحق ويظهر دينهم وهم على الباطل؟ قال يا حضرت عمر عليه السلام إنا قليل قد رأيت مالقينافقال حضرت عمر عليه السلام فوالذى بعثك بالحق لا يبقى مجلس جلست فيه بالكفر إلا أظهرت فيه الايمان، ثم خرج فطاف بالبيت، ثم مر بقريش وهى تنتظره، فقال أبوجهل بن هشاميزعم فلان أنك صبوت؟ فقال حضرت عمر عليه السلام أشهد أن لا إله إلا الله وحده لاشريك له وأن محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه وسلم.
ইতোমধ্যে আবুল আরকাম বেরিয়ে আসে। সে ছিলো অন্ধ কাফির। সে বলছিলো, ‘হে আল্লাহ পাক! আমার পুত্র আরকামকে ক্ষমা করুনসে তো ধর্মত্যাগী হয়েছে। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়ে বললেনইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা আমাদের দ্বীন ও ধর্মমতকে গোপন রাখবো কেনঅথচ আমরা হক্ব বা সত্য অনুসরণকারী। আর ওরা ওদের দ্বীন প্রকাশ করছে যদিও তারা বাতিলের অনুসরণকারী। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেনহে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! আমরা তো আপাতত সংখ্যায় কম। আমরা কেমন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি তা তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বললেনযে মহান রবআল্লাহ পাক আপনাকে সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন উনার ক্বসম করে বলছিকুফরী অবস্থায় আমি যে সকল মজলিসে বসেছিলাম এখন আমি ওই সকল মজলিসে গিয়ে ইসলামের কথা প্রচার করবো। তিনি হুজরা শরীফ থেকে বের হলেন। বাইতুল্লাহ শরীফ-এ তাওয়াফ করলেন। অতঃপর কুরাঈশদের নিকট গেলেনতারা উনার অপেক্ষায় ছিলো। আবূ জাহিল বললোঅমুক বলছে যেআপনি নাকি পিতৃধর্ম ত্যাগ করেছেনহযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
اشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له وان محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه وسلم
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যেমহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেইতিনি একক উনার কোনো শরীক নেই এবং এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যেহযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
فوثب المشركون اليه، ووثب على عتبة فبرك عليه وجعل يضربه، وأدخل اصبعه فى عينيه، فجعل عتبة يصيح فتنحى الناس فقام حضرت عمر عليه السلام، فجعل لا يدنو منه أحد إلا أخذ بشريف ممن دنا منه، حتى أعجز الناسواتبع المجالس التى كان يجالس فيها فيظهر الايمان، ثم انصرف إلى النبى صلى الله عليه وسلم وهو ظاهر عليهمقال ما عليك بابى وأمى والله ما بقى مجلس كنت أجلس فيه بالكفر الا أظهرت فيه الايمان غير هائب ولا خائف، فخرج رسول الله صلى الله عليه وسلم وخرج حضرت عمر عليه السلام أمامه وحضرت حمزة بن عبد المطلب عليه السلام حتى طاف بالبيت وصلى الظهر مؤمنا، ثم انصرف إلى دار الارقم ومعه حضرت عمر عليه السلام، ثم انصرف حضرت عمر عليه السلام وحده، ثم انصرف النبى صلى الله عليه وسلموالصحيح أن حضرت عمر عليه السلام إنما أسلم بعد خروج المها جرين إلى أرض الحبشة وذلك فى السنة السادسة من البعثة.
তৎক্ষণাৎ মুশরিকরা উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। পাল্টা তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন উতবার উপর এবং তাকে হাঁটু দিয়ে চেপে রেখে বেদম প্রহার করতে থাকেন। তিনি উতবার দু’চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলেন। উতবা চিৎকার জুড়ে দেয় এ দৃশ্য দেখে অন্যরা ভয়ে দূরে সরে যায়। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উঠে দাঁড়ালেন। এরপর আক্রমণ করার জন্যে যে উনার নিকটবর্তী হচ্ছিল তাকেই তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করছিলেন। অবশেষে সবাই পরাজিত ও ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে যায়। ইতোপূর্বে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি যে সমস্ত মজলিসে উপস্থিত হতেন তার সবগুলোতেই তিনি গেলেন এবং উনার ঈমান আনয়নের কথা প্রকাশ করলেন। তারপর সবার বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়ে তিনি আখিরী রসূলহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি বললেনইয়া রসূলাল্লাহইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পিতা-মাতা আপনার জন্যে কুরবান হোক। আপনার কোনো অসুবিধা নেই। কুফরী অবস্থায় আমি যত মজলিসে যেতাম তার সব কটিতে গিয়ে আমি আমার ঈমান আনয়নের কথা নির্ভয়ে প্রকাশ করে এসেছি।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তথা সাথীগণ উনাদেরকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেন। উনার সম্মুখে ছিলেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম ও হযরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহি সালাম। তিনি বাইতুল্লাহ শরীফ তথা কা’বা শরীফ তাওয়াফ করলেন এবং যুহরের নামায আদায় করলেন। এরপর তিনি আরকামের বাড়িতে ফিরে গেলেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তখনো তিনি উনার সাথে ছিলেন। এরপর হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি একা বাড়িতে ফিরে গেলেন এবং আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও বাড়িতে চলে গেলেন।
বিশুদ্ধ মতেমুসলমানদের আবিসিনিয়ায় হিজরতের পর হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং এটি আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াতের ৬ষ্ঠ বছরের ঘটনা।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ২৯৩০ ও ৩১ পৃষ্ঠা)

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

0 Comments: