হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৩৭৮-৪৮০) (খ)


হযরত আমর ইবনে আল জুহানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘটনা

(৫) قال حضرت الطبرانى رحمة الله عليه حضرت ياسربن سويد رحمة الله عليه حدثه عن حضرت عمروبن مرة الجهنى رضى الله تعالى عنه قال خرجت حاجا فى جماعة من قومى فى الجاهلية، فرأيت فى نومى وأنا بمكة، نورا ساطعا من الكعبة حتى وصل الى جبل يثرب. واشعر جهينة. فسمعت صونا بين النور وهو يقول انقشعت الظلماء، وسطع الضياء، وبعث خاتم الأنبياء. ثم اضاء اضاءة أخرى، حتى نظرت الى قصور الحيرة وأبيض المدائن، وسمعت صوتا من النور وهو يقول ظهر الاسلام، وكسرت الاصنام، ووصلت الارحام، فانتبهت فزعا فقلت لقومى والله ليحدثن لهذا الحى من قريش حدث- واخبرتهم بما رأيت فلما انهينا الى بلادنا جاءنى رجل يقال له حضرت أحمد صلى الله عليه وسلم قد بعث فاتيته فاخبرته بما رأيت. فقال يا  حضرت عمرو بن مرة رضى الله تعالى عنه أنا النبى صلى الله عليه وسلم المرسل الى العباد كافة. أدعوهم الى الاسلام، وامرهم بحقن الدماء وصلة الأرحام، وعبادة الله. ورفض الأصنام، وحج البيت وصيام شهر رمصان من اثنى عشر شهرا. فمن اجاب فله الجنة، ومن عصى فله النار.
          হযরত তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইয়াসির ইবনে সুওওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বরাতে বলেছেন যে, হযরত জুহানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি জাহিলিয়া যুগে আমার সম্প্রদায়ের একদল লোকের সঙ্গে হজ্জ করতে যাই। পবিত্র মক্কা শরীফ-এ অবস্থানকালে একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম, এক খ- নূর মুবারক পবিত্র কা’বা শরীফ থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে ইয়াসরিব (মদীনা শরীফ)-এর পর্বত পর্যন্ত আলোকিত হয়ে গেছে। আমি শুনতে পেলাম যে, সেই নূর বা আলোক খ- মুবারক-এর মধ্য থেকে যেন বলছেন, অন্ধকার বিদূরিত হয়েছে, নূর বা আলো বিচ্ছুরিত হয়েছে, আখিরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রেরিত হয়েছেন। এরপর সেই নূর বা আলোক খ- মুবারক আরো উজ্জ্বল হয়ে যায়। আমি হীরার রাজপ্রাসাদ ও মাদায়েনের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। সেই নূর বা আলোর মধ্য থেকে পুনরায় একটি শব্দ শুনতে পেলাম যে, কে যেন বলছেন, ইসলাম প্রকাশ লাভ করেছে, মূর্তি-প্রতিমাসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক অটুট হয়েছে। এসব দেখে আমি ভীত অবস্থায় জেগে উঠলাম। জেগে উঠে আমার সম্প্রদায়ের লোকদের বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! কুরাইশদের মধ্যে একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। আমি তাদেরকে আমার স্বপ্নের কথা বললাম। হজ্জ সম্পাদন করে যখন আমরা দেশে ফিরে এলাম তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামে এক সুমহান ব্যক্তি উনার সাথে আমার সাক্ষাত হয়। আমি উনাকে আমার স্বপ্নের কথা বলি। তিনি বললেন, হে আমর ইবনে মুররা! আমিই সকল মানুষ তথা কায়িনাতের সকলের প্রতি প্রেরিত নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি মানুষকে ইসলামের প্রতি আহবান করি এবং তাদেরকে মারামারি, রক্তপাত বন্ধ করার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার, মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করার, মূর্তিপূজা ও প্রতিমাসমূহ বর্জন করার, বাইতুল্লাহ শরীফ-এ হজ্জ করার এবং বারো মাসের একমাস রমাদ্বান শরীফ-এর রোযা রাখার আদেশ করি। যে ব্যক্তি আমার এ আহবানে সাড়া দিবে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। আর যে তা অমান্য করবে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।
فامن يا عمرو يؤمنك الله من هول جهنم فقلت اشهد ان لا إله الا الله وانك رسول الله صلى الله عليه وسلم امنت بما جئت من حلال وحرام، وان رغم ذلك كثيرا من الأ قوام. ثم أنشدته أبيانا قلها حين سمعت به. وكان لناصنم. وكان أبى سادناله فقمت اليه فسكسرته. ثم لحقت بالنبى صلى الله عليه وسلم وانا أقول-
شهدت بأن الله حق وانى- لا لهة الأحجار أول تارك
وشمرت عن ساق الازار مهاجرا- اليك أجوب القفر بعد الد كادك
لاصحب خير الناس نفسا ووالدا- رسول مليك الناس فوق الجبائك
فقال النبى صلى الله عليه وسلم مرحبا بك يا حضرت عمروبن مرة رضى الله تعالى عنه - فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ابعشى الى قومى. لعل الله يمن عليهم بى كما من على بك. فبعثى اليهم. وقال عليك بالرفق والقول السديد. ولاتكن فظأ. ولا متكبرا ولا حسودا
সুতরাং হে আমির! তুমি ঈমান আনো, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে জাহান্নামের বিভীষিকা থেকে রক্ষা করবেন।
জবাবে আমি বললাম,
اشهد ان لا اله الا الله وانك رسول الله صلى الله عليه وسلم امنت بما جئت من حلال
وحرام وان رغم ذالك كثيرا من الاقوام.

অর্থাৎ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনি যে হালাল ও হারাম বিষয়ের কথা বলেছেন আমি তার প্রতি ঈমান আনলাম। যদিও এই মুবারক ঘোষণা বহু লোককে ক্ষেপিয়ে তুলবে।”
তারপর আমি কয়েকটি পংক্তি আবৃত্তি করলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে প্রথম যখন শুনতে পেয়েছিলাম তখন আমি সেই পংক্তিগুলো আবৃত্তি করেছিলাম। আর আমাদের একটি প্রতিমা ছিলো। আমার আব্বা তার দেখাশুনা করতেন। আমি উঠে গিয়ে সেটি ভেঙে ফেললাম। তারপর আমি আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যাই। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে উপস্থিত হয়ে আমি এই পংক্তিগুলো আবৃত্তি করলাম, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হক্ব বা সত্য এবং পাথরের দেবতাসমূহকে আমিই প্রথম বর্জনকারী। আমি আমার কাপড় শক্ত করে গুটিয়ে পাথুরে প্রান্তর অতিক্রম করে আপনার নিকট হিজরত করে এসেছি। আমার উদ্দেশ্য হলো বংশ মর্যাদা এবং মজলিসে যিনি শ্রেষ্ঠ উনার ছোহবত বা সাহচর্য লাভ করা। তিনি মানুষ এবং আসমানী রাস্তাসমূহের সাইয়্যিদ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
এসব শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, মারহাবা হে আমর ইবনে মুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! তারপর আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। দয়া করে আপনি আমাকে আমার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করুন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার দ্বারা তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন যেমন আপনার মুবারক দয়া, উসীলায় তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে আমার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করলেন এবং বলে দিলেন
عليك بالرفق والقول السديد ولاتكن فظا ولا متكبرا ولاحسودا.
কোমলতা ও সত্য কথা অবলম্বন করবে। কখনও কঠোর, অহঙ্কার ও হিংসুক হবে না।”
فذكرانه أنى قومه، فدعاهم الى ما دعاء اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم فاسلموا كلهم. الا رجلا واحدا منهم، وانه وفد بهم الى رسول الله عليه وسلم. فرحب بهم وحياهم. وكتب لهم كتابا هذه نسخته بسم الله الرحمن الرحيم. هذا كتاب من الله على لسان رسول الله صلى الله عليه وسلم، بكتاب صادق، وحق ناطق مع حضرت  عمرو بن مرة الجهنى رضى الله تعالى عنه لجهينة بن زيد ان لكم بطون الأرض وسهولها، وتلاع الأودية وظهورها، تزرعون نباته وتشربون صافيه، على ان تقروا بالخمس، وتصلوا صلاة الخمس، وفى التبيعة والصريمة ان اجتمعتا وان تفرقتا شاة شاة، ليس على أهل الميرة صدقة، ليس الوردة اللبقة. وشهد على نبينا صلى الله عليه وسلم من حضر من المسلمين بكتاب قيس بن شماس. وذكرشعرا قاله حضرت عمرو بن مرة رضى الله تعالى عنه فى ذلك كما هو مبسوط فى المسند الكبير وبالله الثقة وعليه التكلان.
          হযরত আমর ইবনে মুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জানান যে, তিনি উনার সম্প্রদায়ের নিকট আসেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে বিষয়ের প্রতি আহবান করেছিলেন তিনি স্বীয় ক্বওম বা সম্প্রদায়ের লোকদেরকে সে বিষয়ের প্রতি আহবান জানান। উনার আহ্বানে একজন ব্যতীত সকলেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর হযরত আমর ইবনে মুররা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার ক্বওমের একদল লোক সঙ্গে নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপস্থিত হন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের স্বাগত জানান এবং উনাদেরকে একটি পত্র লিখে দেন। তাতে লিখা ছিলো “মহান আল্লাহ পাক যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময় উনার নাম মুবারক-এ শুরু করছি।”
ইহা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যবান মুবারক-এ হযরত আমর ইবনে মুররা জুহানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে জুহাইনা ইবনে যায়িদের প্রতি লিখিত পত্র। এ পত্রের মর্ম সম্পূর্ণরূপে সত্য ও সঠিক। তোমরা মাটির গর্ভ ও উপরিভাগ এবং তোমাদের উপত্যকার উঁচু ও সমতল ভূমি ব্যবহারের অধিকারী। তাতে তোমরা ফসল উৎপন্ন করো এবং তার পরিচ্ছন্ন পানি পান করো। তোমাদের দায়িত্ব শুধু, তোমরা পাঁচটি বিষয়ের প্রতি ঈমান রাখবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে এবং পশু ও মাল সম্পদের যাকাত দিবে। এক বছরের ছাগলের বাচ্চা বা মুখ বাঁধা বাচ্চা একত্রিত হোক বা বিচ্ছিন্ন থাক একটি করে বকরী যাকাত দিতে হবে। যার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ নেই তথা যে মালিকে নিসাব নয়, তার জন্য যাকাত সদকা দিতে হবে না। যাকাত আদায় করতে হবে উত্তম ও পছন্দনীয় মাল থেকে।
বর্ণনাকারী বলেন, কায়েস ইবনে শামমা লিখিত এ পত্রে উপস্থিত সকল মুসলমান আমাদের নবী ও রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে সাক্ষী থাকেন। (আল বিদায় ওয়ান নিহায়া ২য় জিলদ ৩১৯ ও ৩২০ পৃষ্ঠা, মাবসূত ফি আল মুসনাদুল কাবীর)

 ছাহিবুল কুরআন ওয়াল হাদীছ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহী নাযিলের পদ্ধতি বা স্তর বিন্যাস

মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোনো কথা বলেন না।” (সূরা নজম : আয়াত শরীফ ৩, ৪)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিটি কথা, কাজ ও সমর্থন ইত্যাদি সবই হচ্ছে ওহীর অন্তর্ভুক্ত।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহী নাযিল হতো বিভিন্নভাবে বা বিভিন্ন পদ্ধতিতে।
হাদীছ শরীফ-এ এসেছে-
عن ام المؤمنين سيدتنا حضرت عائشة عليها السلام ان الحارث بن هشام رضى الله تعالى عنه سال رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف يأتيك الوحى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احيانا ياتينى مثل صلصلة الجرس وهو اشد على فيفصم عنى وقد وعيت عنه ما قال واحيانا يتمثل لى الملك رجلا فيكلمنى فاعى ما يقول قالت حضرت عائشة عليها السلام ولقد رايته ينزل عليه الوحى فى اليوم الشديد البرد فيفصم عنه وان جبينه ليتفصد عرقا-
অর্থ : উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই একদা হযরত হারিছ ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার নিকট ওহী কিভাবে আসে? আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ওহী আমার নিকট কোনো সময় ঘণ্টার আওয়াজের ন্যায় আসে, আর উহাই আমার নিকট সর্বাপেক্ষা কঠিন প্রকৃতির ওহী। তবে এই অবস্থায় হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা যা বলেন উহা শেষ হতে না হতেই তা কুদরতিভাবে আমার আয়ত্তে এসে যায়।
আবার কোনো কোনো সময় হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার খিদমতে মানুষের আকৃতিতে এসে আমার সঙ্গে কথা বলতেন, তিনি যা বলতেন তা আপসেআপ অর্থাৎ কুদরতিভাবে আমার আয়ত্তে এসে যায়। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মূলত আমি প্রচ- শীতের দিনেও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ওহী নাযিল হতে দেখেছি। যখন ওহী নাযিল শেষ হতো তখন উনার কপাল মুবারক হতে ঘাম মুবারক ঝরে পড়তো। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
 আল্লামা হযরত সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহী বিভিন্ন প্রকারে নাযিল হতো- ১. স্বপ্নযোগে, ২. উনার অন্তর মুবারকের মধ্যে ফুঁক দেয়ার মাধ্যমে, ৩. ঘণ্টার ধ্বনির ন্যায় আওয়াজ করে যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কঠিন মনে হতো, ৪. হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম মানুষের আকৃতিতে এসে ওহী নাযিল করে যেতেন, ৫. হযরত জিবরীল আলাইহিমুস সালাম উনার আসল আকৃতিতে এসে ওহী নাযিল করতেন, ৬. মহান আল্লাহ পাক তিনি পর্দার আড়াল থেকে কথা বলার মাধ্যমে ওহী নাযিল করতেন, ৭. মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি দীদার বা মুবারক সাক্ষাৎ দিয়ে ওহী নাযিল করেন, যা মি’রাজ শরীফ-এ ঘটেছিলো।
যুগে যুগে মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষ ও জিন জাতির প্রতি যে আদেশ-নির্দেশ বা হুকুম-আহকাম তথা শরীয়ত জারি করেছেন, তা সম-সাময়িক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ওহীর মাধ্যমেই সুসম্পন্ন হয়েছে। আর এ ওহী আনার ক্ষেত্রে যিনি খাছভাবে আঞ্জাম দিয়েছেন তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের তেইশ বছরের জীবন মুবারকে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি চব্বিশ হাজার বার সাক্ষাৎ করেন। যা অন্য কোনো নবী এবং রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ক্ষেত্রে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এতো অধিক সংখ্যকবার ওহী নিয়ে আসেননি। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই কোনো প্রয়োজন অনুভব করেছেন তখনই ওহী নাযিল হয়েছে।       এ ক্ষেত্রে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে, উনার প্রতি গতানুগতিক ধারার ব্যতিক্রম পন্থায়ও ওহী নাযিল হতো। আর হক্কানী-রব্বানী উলামায়ে কিরাম তা মোটামুটি আটটি পদ্ধতি বা স্তরে বিন্যস্ত করেছেন যা নিম্নরূপ-
প্রথম পদ্ধতি:- উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে প্রাথমিকভাবে সত্য স্বপ্নের বিকাশ ঘটতো। এক বর্ণনায় রয়েছে, সে সময় আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন তাই দিবালোকের ন্যায় স্পষ্টরূপে সত্যে পরিণত হতো। উনার প্রতি ওহীর এ ধারা ছয় মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সুবহানাল্লাহ!
দ্বিতীয় পদ্ধতি:- হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি কখনো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বলব মুবারকে ইলক্বা (প্রেক্ষেপণ) করতেন। এ সময় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি দৃষ্টির অগোচরে থাকতেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার অন্তরের মধ্যে রূহুল কুদুস (হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম) ফেরেশতা এ মর্মে ইলকা ও ইলহাম করেছেন যে, কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত ইন্তিকাল করবে না, যতক্ষণ না সে তার রিযিক পূর্ণ (শেষ) করে। (হাকিম শরীফ)
তৃতীয় পদ্ধতি : আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মানবাকৃতিতে বিশেষত : বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছূরত মুবারক-এ এসে ওহী পৌঁছে দিতেন।
চতুর্থ পদ্ধতি : সালসালাতুল জারাস অর্থাৎ ঘণ্টা ধ্বনির ন্যায়। এ আওয়াজ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত অন্য কেউ শুনতে পেতেন না। এ পদ্ধতির ওহী নাযিল ছিল সর্বাধিক কঠিন। এ অবস্থায় প্রচ- শীতের মধ্যেও উনার ললাট মুবারক থেকে ঘামবিন্দু মুবারক নির্গত হতো। উটে আরোহণরত অবস্থায় এ পন্থায় ওহী নাযিল হলে ওহীর গুরুভারে উট মাটিতে বসে পড়তো।
পঞ্চম পদ্ধতি : কখনো কখনো হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আসল আকৃতিতে ওহী নিয়ে আসতেন।
ষষ্ঠ পদ্ধতি : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মি’রাজ শরীফ-এর রজনীতে উপরে থাকা অবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ওহী নাযিল করেছেন। যেমন মি’রাজ শরীফ-এর রজনীতে নামাযের ব্যাপারে ওহীপ্রাপ্ত হওয়া এ পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।
সপ্তম পদ্ধতি : মহান আল্লাহ পাক জাল্লা জালালুহূ ও  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে সরাসরি কথোপকথন।
অষ্টম পদ্ধতি : অন্তরাল বিহীন আলাপন। মাওয়াহেব রচয়িতা হালীমীর বরাতে উল্লেখ করেন, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, উনার নিকট ৪৬ প্রকারে ওহী প্রেরণ করা হয়েছে। আর তার সবগুলোই তিনি বর্ণনা করেছেন। ফতহুল বারীতে বর্ণিত হয়েছে, এ ৪৬ প্রকার ওহী মূলত উক্ত ৮ প্রকারেরই অন্তর্ভুক্ত।
          মূলকথা হলো, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকলেই পরিপূণরূপে ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উনারা ওহী ব্যতীত কোনো কথা বলেননি এবং কোনো কাজও করেননি।
আর বিশেষ করে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব। মহান আল্লাহ পাক তিনি যা কিছু নাযিল বা ওহী করেছেন সে মুতাবিক তিনি চলা-ফেরা, উঠা-বসা ও কাজ-কর্ম ইত্যাদি সবকিছুই করেছেন। অর্থাৎ তিনি পরিপূর্ণভাবে ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, ওহী দু’প্রকার। যথা- ১. ওহীয়ে মাতলূ (যা হুবহু তিলাওয়াত করতে হয়); অর্থাৎ কুরআন শরীফ।
২. ওহীয়ে গইরে মাতলূ (যা তিলাওয়াত করতে হয় না); অর্থাৎ হাদীছ শরীফ।
মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ অনন্তকাল পর্যন্তই তিনি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। তবে কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে দুনিয়াবী জিন্দেগীর ৬৩ বছরের মধ্যে শেষ ২৩ বছরে- যা আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশ-এর পরবর্তী সময় বছর বলে উল্লেখ করা হয়।
কাজেই, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমা উনার প্রতিটি কথা, কাজ ও সমর্থন করার নামই হচ্ছে ওহী। অর্থাৎ তিনি ওহীর বাইরে বিন্দু থেকে বিন্দু মাত্র কোনো কাজ করেননি বা কোনো কথা বলেননি। সুবহানাল্লাহ! (ইনশাআল্লাহ চলবে)

সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
والسبقون الاولون من المهجرين .....الخ
অর্থ : “হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে যাঁরা (ইসলাম গ্রহণে) সর্বপ্রথম অগ্রগামী।” (সূরা তাওবা : আয়াত শরীফ ১০০)
বিশ্ববিখ্যাত গ্রহণযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, “হযরত বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা ও প্রথমা আহলিয়া বা সহধর্মিণী, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি। এটা সর্বসম্মত মত।
উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ২৪ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ রয়েছে-
وقال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه وكانت حضرت خديجة عليها السلام أول من امن بالله ورسوله، وصدق بما جاء به. ثم ان حضرت جبريل عليه السلام أنى رسول الله صلى الله عليه وسلم حين افترضت عليه الصلاة فهمزله بعقبه فى ناحية الوادى فانفجرت له عين من ماء زمزم، فتوضأ  حضرت جبريل عليه السلام و حضرت محمد عليهما السلام، ثم صلى ركعتين وسجد أربع سجدات، ثم رجع النبى صلى الله عليه وسلم وقد أقر الله عينه، وطابت نفسه، وجاءه ما يحب من الله تعالى، فأخذ يد حضرت خديجة عليها السلام حتى أنى بها الى العين، فتوضأ كما توضأ حضرت جبريل عليه السلام، ثم ركع ركعتين وأربع سجدات، ثم كان هو وحضرت خديجة عليها السلام يصليان سرا.
অর্থ : “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান এনেছেন। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা হক্ব বা সত্য বলে গ্রহণ করেন।
নামায ফরয হওয়ার পরের একদিনের ঘটনা। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে এলেন। অতঃপর নিজের পায়ের গোড়ালির দ্বারা তিনি মাঠের এক প্রান্তে মাটিতে আঘাত করলেন। যার ফলে মুবারক যমযম কূপের সাথে সংযোগ সম্পন্ন একটি ঝরনার সৃষ্টি হলো। আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনারা উভয়ে ওই পানি মুবারক দ্বারা ওযূ করলেন। তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি চার সিজদায় দু’রাকায়াত নামায আদায় করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ-এ ফিরে এলেন। উনার চক্ষু মুবারক জুড়ালো ও অন্তর মুবারক প্রশান্ত হলো। মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট থেকে তাই নাযিল হলো যা উনার পছন্দ ছিল। ঘরে ফিরে তিনি উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে উনাকে নিয়ে ওই ঝরনা ধারার নিকট আসলেন। তারপর মহান আল্লাহ পাক তিনি যেভাবে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে ওযূ করার জন্য ওহী করেছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেভাবে ওযূ করলেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যেভাবে ওহী করেছেন ওযূ করার জন্য সেভাবেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওযূ করলেন। অতঃপর চার সিজদাসহ দু’রাকায়াত নামায আদায় করলেন। এরপর থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনারা উভয়ে অপ্রকাশ্যভাবে নামায আদায় করতেন।”

আরো বর্ণিত রয়েছে-
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه ثم إن حضرت على بن ابى طالب رضى الله تعالى عنه جاء بعد ذلك بيوم وهما يصليان. فقال حضرت على رضى الله تعالى عنه يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم ما هذا؟ قال دين الله الذى اصطفى لنفسه، وبعث به رسله، فادعوك إلى الله تعالى وحده لا شريك له، وإلى عبادته. وأن تكفر باللات والعزى. فقال حضرت على رضى الله تعالى عنه هذا أمر لم أسمع به قبل اليوم، فلست بقاض أمرا حتى أحدث به أبا طالب. فكره رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يفشى عليه سره قبل ان يستعلن امره. فقال له يا حضرت على رضى الله تعالى عنه إذ لم تسلم. فاكتم. فمكث حضرت على رضى الله تعالى عنه تلك الليلة،
অর্থ: “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ওই ঘটনার একদিন পর হযরত আলী ইবনে আবূ ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি উনাদের নিকট আসেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনারা নামায আদায় করছিলেন। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনারা এসব কি করছেন? আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এটি মহান আল্লাহ পাক উনার দ্বীন ইসলাম, যাতে তিনি উনার সন্তুষ্টি দিয়ে মনোনীত করেছেন। এবং এ দ্বীন ইসলাম দিয়ে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করেছেন। আমি আপনাকে এক আল্লাহ পাক ও লা-শরীক তায়ালা উনার দিকে এবং ইবাদত-বন্দেগীর দিকে আহ্বান করছি। আমি আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি লাত ও উযযা প্রতিমা পরিত্যাগ করতে। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এটিতো এমন একটি বিষয়, যা ইতঃপূর্বে কখনো শুনিনি।
আমার পিতা আবূ ত্বালিব উনার সঙ্গে আলোচনা না করে আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। পুরো বিষয়টা প্রকাশ্যে ঘোষিত হওয়ার পূর্বে আবূ ত্বালিব উনার নিকট এ গোপনীয় বিষয়টি প্রকাশিত হোক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা সমীচীন মনে করলেন না। তাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, হে আলী আলাইহিস সালাম! আপনি যদি এখনই ইসলাম গ্রহণ না করেন তবে আপাততঃ বিষয়টি গোপন রাখুন, অন্য কাউকে বলবেন না। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ওই রাত্রি অপেক্ষা করলেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অন্তরে ইসলাম গ্রহণের আগ্রহ সৃষ্টি করে দিলেন।

ثم إن الله تعالى اوقع فى قلب على الاسلام، فاصبح غاديا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى جاءه فقال ماذا عرضت حضرت على عليه السلام يا حضرت محمد صلى الله عليه وسلم؟ فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم تشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وتكفر باللات والعزى، وتبرأ من الانداد. ففعل حضرت على عليه السلام واسلم، ومكث يأتيه حضرت على عليه السلام خوف من ابى طالب وكتم على اسلامه ولم يظهره، وأسلم حضرت ابن حارثة رضى الله تعالى عنه- يعنى زيدا- فمكثا قريبا من شهر يختلف حضرت على رضى الله تعالى عنه إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكان مما أنعم الله به على حضرت على عليه السلام أنه كان فى حجر رسول الله صلى الله عليه وسلم قبل الاسلام.

পরের দিন ভোর বেলা তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলেন এবং বললেন, আপনি আমার নিকট কি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন  বিষয়টি এই যে-
تشهد ان لا اله الا الله وحده لاشريك له وتكفر بالات والعزى وتبرأ من الانداد
অর্থ : “আপনি সাক্ষী দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, উনার কোনো শরীক নেই। আর আপনি লাত ও উযযা প্রতিমাকে পরিত্যাগ করবেন এবং সকল প্রকার শিরক বা অংশীবাদিতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবেন।”
হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি তাই করলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন। তবে উনার পিতা আবূ ত্বালিব উনার ভয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যাতায়াত কম করতেন। উনার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি তিনি গোপন রাখলেন। ইতোমধ্যে হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। উনারা এভাবে একমাস কাটালেন। মাঝে মাঝে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ আসতেন। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ রহম করম হচ্ছে এই যে, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সাল্লাম উনার তত্ত্বাবধান বা খিদমত শরীফ-এ অবস্থান করছিলেন।” (আল বিদয়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ২৪ ও ২৫ পৃষ্ঠা)

হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ আছে-
قال حضرت ابن اسحاق رحمة الله عليه حدثنى حضرت ابن أبى نجيح رحمة الله عليه عن حضرت مجاهد رحمة الله عليه. قال وكان مما أنعم الله به على حضرت على رضى الله تعالى عنه أن قريشا أصابتهم أزمة شديدة، وكان أبو طالب ذا عيال كثيرة، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمه العباس رضى الله تعالى عنه - وكان من أيسر بنى هاشم- يا حضرت عباس رضى الله تعالى عنه إن أخاك أبا طالب كثيرة العيال، وقد أصاب الناس ما ترى من هذه الازمة، فانطلق حتى نخفف عنه من عياله. فاخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم عليا فضمه اليه، فلم يزل مع رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى بعثه الله نبيا، فاتبعه حضرت على رضى الله تعالى عنه وامن به وصدقة-

অর্থ : “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করেছেন হযরত ইবনে আবী নাজীহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। আবার তিনি হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার এক বিশেষ রহম করম এই যে, একবার কুরাইশ সম্প্রদায় খুবই দুর্ভিক্ষের মধ্যে পতিত হলেন। আর আবূ ত্বালিব উনার পরিবার বা আহল-ইয়ালের সংখ্যা ছিলেন অনেক। তখন হাশিম গোত্রে অপেক্ষাকৃত ধনী লোক ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত চাচা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, চাচাজান! আপনার ভাই আবূ ত্বালিব উনার আহল বা পরিবারের লোক সংখ্যাতো অনেক। মানুষ যে দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে তাও তো আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আপনি উনার নিকট যান এবং উনাদের জন্য এমন ব্যবস্থা করুন যাতে উনার আহল বা পরিবারের ভরণ-পোষণের উপায় সহজ হয়। এ সূত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার নিকট নিয়ে আসেন এবং নিজের কাছেই রেখে দেন। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত উনার ছোহবত শরীফ-এ কাটিয়ে দেন। হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ-অনুকরণ করেন। উনার প্রতি ঈমান আনেন এবং উনার আলোচনার সত্যতা স্বীকার করে নেন।”

عن حضرت يونس بن بكير رحمة الله عليه عن حضرت عفيف رضى الله تعالى عنه - قال كنت امرءا تاجرا فقدمت منى أيام الحج، وكان حضرت العباس بن عبد المطلب رضى الله تعالى عنه امرءا تاجرا، فاتيته ابتاع منه وابيعه، قال فبينا نحن إذ خرج رجل من خباء فقام يصلى تجاه الكعبة ثم خرجت امرأة فقامت تصلى، وخرج غلام فقام يصلى معه. فقلت يا حضرت عباس رضى الله تعالى عنه ما هذا الدين؟ إن هذا الدين ما ندرى ما هو فقال هذا حضرت محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم يزعم أن الله أرسله، وأن كنوز كسرى وقيصر ستفتح عليه، وهذه امرأته حضرت خديجة بنت خويلد عليها السلام امنت به، وهذا الغلام ابن عمه حضرت على بن أبى طالب رضى الله تعالى عنه امن به. قال حضرت عفيف عليه السلام فيلتنى كنت امنت يومئذ فكنت أكون ثانيا.
হযরত ইউনুস ইবনে বুকাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আফীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, আমি ছিলাম একজন ব্যবসায়ী। একদা আমি হজ্জের মাসে মীনাতে উপস্থিত হই। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত সন্তান সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। ক্রয়-বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে আমি উনার নিকট উপস্থিত হই। আমরা সেখানে থাকা  অবস্থায় হঠাৎ দেখি একটি তাঁবু থেকে একজন নূরানী সম্মানিত ব্যক্তি বের হলেন এবং কা’বা শরীফমুখী হয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর একজন সম্মানিতা মহিলা তিনি এসে উনার সঙ্গে নামাযে যোগ দিলেন। এরপর একজন বালকও এসে উনার সাথে নামাযে শরীক হলেন। আমি বললাম, হে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এটি আবার কেমন ধর্ম? এটি কোন প্রকারের ধর্ম তার কিছুইতো আমি বুঝতে পারছি না। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, উনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার বক্তব্য হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূলরূপে প্রেরণ করেছেন। পারস্য ও রোম স¤্রাট তথা কায়িনাতের সকল ধন-সম্পদ উনার হস্তগত রয়েছে এবং হবে। আর ওই সম্মানিতা মহিলা হচ্ছেন উনার সহধর্মিণী বা আহলিয়া। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম। তিনি খুয়াইলিদ উনার কন্যা। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনেছেন। আর বালকটি হচ্ছেন উনার চাচাতো ভাই অর্থাৎ আবূ ত্বলিব উনার পুত্র হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। তিনিও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনেছেন। পরবর্তীতে হযরত আফীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আফসুস করে বলেন, হায়! আমি যদি সেদিন ঈমান আনতাম, তাহলে আমি পুরুষ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে দ্বিতীয় ঈমান আনয়নকারী হতে পারতাম।”

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে-
قال حضرت ابن جرير رحمة الله عليه حضرت يحى بن عفيف رضى الله تعالى عنه. قال جئت زمن الجاهلية إلى مكة، فنزلت على حضرت العباس بن عبد المطلب رضى الله تعالى عنه، فلما طلعت الشمس وحلقت فى السماء وأنا أنظر إلى الكعبة، أقبل شاب فرمى ببصره إلى السماء، ثم استقبل الكعبة فقام مستقبلها فلم يلبث حتى جاء غلام فقام عن يمينه، فلم يلبث حتى جاءت امرأة فقامت خلفهما، فركع الشاب فركع الغلام والمرأة؛ فرفع الشاب فرفع الغلام والمرأة فخر الشاب ساجدا فسجدا معه، فقلت يا حضرت عباس رضى الله تعالى عنه أمر عظيم! فقال أمر عظيم. فقال أتدرى من هذا؟ فقلت لا، فقال هذا حضرت محمد بن عبد الله بن عبد المطلب صلى الله عليه وسلم ابن أخى، أتدرى من الغلام؟ قلت لا. قال هذا حضرت على ابن أبى طالب رضى الله  تعالى عنه- أتدرى من هذه المرأة التى خلفهما؟ قلت لا، قال هذه حضرت خديجة بنت خويلد عليها السلام زوجة ابن أخى. وهذا حدثنى أن ربك رب السماء والارض أمره بهذا الذى تراهم عليه، وايم الله ما أعلم على ظهر الارض كلما أحدا على هذا الدين غير هؤلاء الثلاثة.
অর্থ : “হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আফীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, জাহিলিয়া যুগে আমি মক্কা শরীফ-এ এসেছিলাম। সেখানে আমি অবস্থান করছিলাম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট। সূর্য যখন পূর্ব দিকে উদিত হলো এবং আকাশের অনেক উপর উঠলো তখন আমি পবিত্র কা’বা শরীফ-এর দিকে তাকিয়েছিলাম। আমি দেখতে পেলাম একজন নূরানী যুবক তিনি সেখানে এসে আসমানের দিকে তাকালেন। অতঃপর পবিত্র কা’বা শরীফ-এর সম্মুখে এসে সেটিকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। অবিলম্বে সেখানে উপস্থিত হলেন একজন বালক এবং তিনি উনার ডান পার্শ্বে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর একজন মহিলা এলেন তিনি এসে উনাদের উভয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। নূরানী ব্যক্তি তিনি রুকুতে গেলেন। সাথে সাথে বালক ও মহিলা দু’জন উনারাও রুকুতে গেলেন। নূরানী ব্যক্তি তিনি রুকূ থেকে মাথা মুবারক উঠালেন। বালক ও মহিলা দু’জন উনারাও রুকু থেকে মাথা মুবারক উঠালেন। তারপর নূরানী ব্যক্তি তিনি সিজদায় গেলেন। উনারা দু’জনও সিজদায় গেলেন। আমি বললাম, হে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এতো আশ্চর্যজনক ব্যাপার। তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইহা আশ্চর্যজনক। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, নূরানী ব্যক্তি উনার পরিচয় আপনি কি জানেন? আমি বললাম না, জানি না। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তিনি হলেন আমার সম্মানিত ভাতিজা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বালকটি উনার পরিচয় আপনার জানা আছে কি? আমি বললাম, না। আমার জানা নেই। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তিনি হলেন আবূ ত্বালিব উনার সম্মানিত ছেলে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। উনাদের পিছনে মহিলাটি উনাকে চিনেন কি? আমি বললাম না, চিনি না। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জবাব দিলেন, তিনি হলেন আমার সম্মানিত ভাতিজা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া বা সহধর্মিণী। খুওয়াইলিদ উনার সম্মানিতা মেয়ে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম। আমার সম্মানিত ভাতিজা আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বলেছেন, আপনার রব হলেন আসমান ও যমীন তথা সারা আলমের রব বা প্রতিপালক। উনার আমল ইহাই যা তুমি দেখেছ। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! পৃথিবীতে এই দ্বীনের অনুসারী এই তিনজন ব্যতীত অন্য কেউ আছে বলে আমার জানা নেই।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় জিলদ ২৫ পৃষ্ঠা)
আরো উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুহম্মদ ইবনে মুনকাদির, রবিয়া ইবনে আবী আব্দুর রহমান, হযরত হাযিম রহমতুল্লাহি ও হযরত কালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেছেন যে, সর্বপ্রথম যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন তিনি হচ্ছেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম। হযরত কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার ৯ বছর বয়স মুবারক-এ ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, পুরুষদের মধ্যে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি প্রথম ঈমান গ্রহণ করেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায আদায় করেন এবং উনাকে হক্ব বা সত্য বলে গ্রহণ করেন। তখন উনার বয়স মুবারক ছিলো ১০ বছর। আর ইসলাম গ্রহণের পূর্বেও তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহল বা পরিবারভুক্ত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও বলেন, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ১০ বছর বয়স মুবারক-এ ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
হযরত ওয়াকিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন-
واجمع أصحابنا على أن حضرت عليا رضى الله  تعالى عنه أسلم بعد ما تنبأ رسول الله صلى الله عليه وسلم بسنة.
অর্থ: আমাদের সম্মানিত ইমামগণ উনারা এ বিষয়ে একমত যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত শরীফ প্রকাশের এক বছর পর হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।”


0 Comments: