একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-২০

 


আমাদের সম্মানিত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার স্মরণে একজন কুতুবুজ্জামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-

 নতুন মুর্শিদের পরিচয় এবং উনার সান্নিধ্যলাভ-

 হযরত শেখ বুরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল এক মহান ব্যক্তিত্ব। বুযুর্গীর জন্য দেশ জুড়ে উনার খ্যাতি। আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি হাছিলের অনিবার্য মাধ্যম তাসাউফ উপলব্ধি ও অনুশীলনে মানুষকে উজ্জ্বীবিত করার প্রাণপুরুষ তিনি। ইল্ম, আমল ও সুন্নত অনুসরণের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনে তার জনপদে মোহময় এক আবহ সৃষ্টি করেছেন তিনি। উনার কাছে গিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট মানুষ দ্বীন খুঁজে পায়। পাপাসক্ত ব্যক্তিরা তাদের ঈমান নবায়নের মাধ্যমে নেক কাজে মনোযোগী হবার সুযোগ লাভ করে। চাঁদপুর জিলার মতলব থানাধীন ফরাজীকান্দি গ্রামের মানুষ তিনি। সেখানেই উনার জন্ম। ওয়াইসিয়াসিলসিলার একজন কামিলে মুকাম্মিল পীর ক্বিবলা সাহেব ছিলেন তিনি। পুরনো ঢাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শেখ বুরহানুদ্দিন কলেজউনারই মুবারক নামে প্রসিদ্ধিলাভ করেছে। দীর্ঘকাল আগে উনার প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি দেশকে অনেক বরেণ্য সন্তান উপহার দিয়েছে। এছাড়া নিজ জন্মভূমি ফরাজীকান্দিতে তিনি স্থাপন করেছেন সুবিশাল এক ইসলামী বিদ্যাপিঠ। তারনাম আল ওয়াইসিয়া ফরাজীকান্দি আলিয়া মাদ্রাসা।ইসলামী ইল্ম-উনার বহুমুখী শাখায় বিভাজিত এ মাদ্রাসায় অধ্যায়ণ করে অসংখ্য মানুষ আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হয়েছেন। তারা নিজেরা আল্লাহ্ ওয়ালা হয়ে অন্যকে আলোকিত করেছেন। বৃহত্তর সরিসরে মাদ্রাসাটি এখনো চালু আছে।

 আমাদের দেশে মূলতঃ দুধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান। মাদ্রাসা-মক্তবসহ অন্যান্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এবং সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ দুটো ধারা পরস্পর বিরোধী ও বিপরীত ধর্মী। এ বৈপরীত্য দীর্ঘকালের। আধুনিকীকরণের নামে মাদ্রাসাগুলোতে যেসব বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে, তাতে দ্বীনি শিক্ষা ও সমঝ পূর্ণতা পাচ্ছেনা। এতে মানুষ না শিখছে দ্বীন, না শিখছে দুনিয়া। বিষয় বিন্যাসের অসংগতি, শিক্ষক, ছাত্র ও কর্তৃপক্ষের অমনোযোগিতা, পাঠ্যসূচীতে তাসাউফ-উনার অনুপস্থিতি এবং পরিবেশগত ত্রুটির কারণে দ্বীনের সহীহ্ সমঝ অর্জনে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা অপূর্ণ ও অন্তরায়। প্রচলিত এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রকৃত ইল্ম ও সহীহ্ সমঝ অর্জনের সুযোগ না থাকায় আলিম নামধারী মানুষগুলোর মধ্যে ইসলামী আক্বীদাভিত্তিক ব্যক্তিত্ব ও আত¦মর্যাদাবোধের সমন্বয় ও সমাবেশ ঘটছেনা। ফলে তাদের অনেকেই তিমিরে থেকে যাচ্ছেন। অপরদিকে মাদ্রাসা-মক্তব বিমূখ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোয় নিরেট দুনিয়া-সম্পৃক্ত এমন সব বিষয়ের সমাবেশ, সেখানে প্রকৃত দ্বীন অনুপস্থিত। প্রেক্ষিত কারণে মাদ্রাসা-মক্তব এবং বিপরীত-মুখী অন্য সকল বিদ্যাপিঠে শিক্ষিত মানুষের মন ও মননের দ্বন্দ্ব-সংঘাত উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। উভয়ের আদর্শিক ব্যবধানও দুস্তর। সমাজ, মানুষ তথা ইসলাম ধর্মের ক্ষতিসাধনকারী সর্বাধিক গুরুত্ববহ এ বিষয়টির উপর নজরদারীর অভাবে বর্তমান পরিস্থিতি জটিলতর। ব্যক্তি, ব্যস্টি ও সমষ্টির মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বর্তমান দুর্গতি উত্তরণে খালিছ ইসলামী শিক্ষায় উজ্জ্বীবিত হওয়া জরুরী। একথা সুবিদিত যে, অর্থহীন দুনিয়ার বিষয়কর্ম ও নশ্বর জীবনের অসারতা যিনি সম্যক উপলব্ধি করবেন, তার পক্ষেই আল্লাহ্ পাক-উনার প্রতি পূর্ণ অনুগত হওয়া সম্ভব। খালিছ ইসলাম নির্ভর ইল্ম অর্জনের সাথে জাগতিক বিষয়কর্ম সম্পর্কিত জ্ঞানেও সাধ্যমতো ব্যুৎপত্তি লাভ করা প্রয়োজন। কারণ উভয় শিক্ষার সংমিশ্রণ মানুষের গভীর উপলব্ধি ও পূর্ণ আনুগত্যের সহায়ক হয়। সম্ভবতঃ এ উপলব্ধি থেকেই হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি অনেক মসজিদ মাদ্রাসার পাশাপাশি স্কুল কলেজও প্রতিষ্ঠা করেছেন।

 হযরত শেখ বুরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্যপ্রাপ্ত মহান ওলী। হৃদয়ের পরম মমতায় মানুষকে আপন করেন তিনি। ইল্ম, আমল, সমঝ ও ইখলাস-উনার সমন্বয়ে আল্লাহ্ পাক উনাকে দান করেছেন এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। উনার সান্নিধ্যে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়। দুনিয়া আসক্ত মানুষ উনার মুবারক সোহ্বতে গিয়ে আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হয় এবং অবিরাম সুন্নত পালনের অভ্যস্ততায় ক্রমান্বয়ে ওলী আল্লাহ্ হয়ে উঠে। এমন একজন ওলী আল্লাহ্-উনার সোহ্বত-উনার অপেক্ষায়ই নিরন্তর ব্যাপৃত আছেন হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি।  উনার হৃদয়ে কতো অব্যক্ত বেদনা! কতো না বলা কথা! একান্ত কাছে থেকে তিনি প্রাণের আঁকা মুর্শিদ হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে দেখেছেন। প্রত্যক্ষ করেছেন উনার আমল, আখলাক, বুযুর্গী ও কারামত। অল্প কিছু দিনের সাক্ষাৎ ও পরস্পর আলাপচারিতার পর্যায়ে উভয়ের জানাজানি হয়েছে গভীরতর। পর্যবেক্ষণের কোন এক দূর্লভ মুহুর্তে মুর্শিদের প্রতি মনঃসংযোগ হয়েছে নিজের অজান্তেই। এমন মুর্শিদের কাছে নিজেকে সঁপে দিতে আর কোন বাধা নেই। এখন শুধু বাইয়াত হবার আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষামাত্র। (অসমাপ্ত)

আবা-৭৯

 

0 Comments: