আমাদের সম্মানিত দাদা
হুজুর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে একজন
কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করার পর আত্মমগ্নতা-
বাইয়াতের পর হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত-মারিফাতে বিভোর। নবলব্ধ নিয়ামত সম্ভারে তিনি পরিপূর্ণ। নবযাত্রাপথের অর্জন ও বিভিন্ন মাকামের অভিজ্ঞতা উনাকে উদ্বেলিত করে। এসব নিগূঢ় নিয়ামতরাজির বিষয় তিনি প্রাণের আকাঁ মুর্শিদকে অবহিত করেন। মুর্শিদ সন্নিধানে উনার মোবারক সময় কাটে তাৎপর্যপূর্ণ ফিকিরের গভীরতায়। প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ও নিয়ামত সম্পর্কে মুর্শিদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় তাপিত প্রাণ শীতল হয়। আল্লাহ্ পাক-উনার অথৈ প্রেম সাগরে আরো গভীর করে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। মুহব্বত-মারিফাতের তুলনায় জীবনের অন্য সব অর্জন তুচ্ছ মনে হয়। মুর্শিদের সোহ্বতে উনার জীবন ধন্য। হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্যপ্রাপ্ত এক মহান ওলী। তিনি মাদ্রাসা-মক্তবে লেখা পড়া করেননি। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেও যে এতোবড় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ওলী আল্লাহ্ হওয়া যায়, তিনি তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। অনেকেই বলেন এবং বিশ্বাস করেন, মাদ্রাসা-মক্তবে অধ্যয়ন না করে ওলী আল্লাহ্ হওয়া যায়না। এ ধারণা নিতান্তই ভুল। মূলতঃ আল্লাহ্ পাক উনার দিকে যাকে আকৃষ্ট করেন, সকলের অলক্ষ্যে অপরিমেয় যোগ্যতাদানে তিনি উনাকে নৈকট্য দান করে থাকেন। বান্দার যোগ্যতা অর্জনের প্রশ্ন এখানে অবান্তর। যোগ্যতা কখনো অর্জনের বিষয় নয়, আল্লাহ্ পাক কর্তৃক আপন সন্তুষ্টিতে বান্দাকে দান করার বিষয়। আল্লাহ্ পাক কাকে মুহব্বত করলেন এবং কে উনার প্রতি আকর্ষিত হলো, তাই মূখ্য বিষয়। এ মর্মে কালামুল্লাহ্ শরীফে উনারশাদ হয়েছে,
الله يجتبى اليه من يشاء ويهدى اليه من ينيب.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছে মনোনীত
করেন এবং যে উনার অভিমূখী হয়, তাকে হিদায়েত দান করেন।” (সূরা
শুরা/১৩)
হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার বুযুর্গ পিতার
নাম হযরত আলহাজ্ব মাওলানা মুহম্মদ আফাজুদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি। মাতার নাম হযরত
মোসাম্মত উলফাতুন্নেসা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি এ
পাশ করেন। মানুষের প্রতি ছিল উনার গভীর
মমতা, অগাধ ভালবাসা ও অকৃত্রিম সহানুভূতি। এমন একজন ওলীআল্লাহ্-উনার নিবিড় সোহ্বতে
হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি আত্মমগ্ন।
যাঁর মোবারক সংস্পর্শে হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন গুলো অনবরত পল্লবিত হচ্ছে, যাঁর
সান্নিধ্যে কাঙ্খিত দূরের মনজিল একান্ত নাগালে এসেছে, আত্মনিবেদিতভাবে
সে মুর্শিদের কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া ছাড়া গত্যন্তর কোথায়? বিরহ-বিচ্ছেদে
ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের যাতনা মুর্শিদ সন্নিধানে নিবৃত্ত হয়েছে। কিন্তু নবতর তীক্ষ্ম
অনুভব, উদ্বেগ ও উদ্বেলতায় হৃদয়ের সুপ্ত ব্যথাভার আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই এখন
ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনার এক নতুন ভুবনে বিচরণ। নিয়মতো এটাই যে, যেখানে
প্রাপ্তি, সেখানেই বেদনা। আল্লাহ্ প্রেমের অমোঘ বিধানে প্রাপ্ত নিয়ামত ও অন্তরের দহন
অনুক্ষণ সমান্তরাল থাকে। এ দহন উপশম হবার নয়। উপশম কাম্যও নয়। কারণ মন ও মননের
নির্মম যাতনাভরা আগ্রহ ও আকুতিই নিরন্তর আল্লাহ্ পাক-উনার নিকটবর্তী করে দেয়।
প্রাণের আঁকা মুর্শিদ নৈকট্যে আত্মনিমগ্ন হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ
মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি এখন সে নিদারুন ব্যথাভারেই আক্রান্ত।
খিলাফত লাভ-
বাইয়াত হবার পর ইতোমধ্যে অনেকদিন অতিক্রান্ত হয়েছে। সুখে-দুঃখে জীবনের অনেক পথ
পাড়ি দিয়ে প্রাণের আঁকা মুর্শিদ হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি
আলাইহিও এখন বয়ঃবৃদ্ধ। জীবনব্যাপী সাধনায় সকল মুরীদকে তিনি দ্বীনের পথে দায়েম ও
কায়েম করেছেন। এসব দেখে ও ভেবে অন্তরে নেমে আসে এক অনাবিল প্রশান্তি। তবু
প্রত্যাশিত কতো কাজ বাকী রয়ে গেল! আসলে সীমিত জীবনেতো উদ্দিষ্ট সকল কাজ শেষ করা
যায়না। আল্লাহ্ পাক-উনার নির্ধারিত দায়িত্বপালন শেষে জীবনের সকল আয়োজন ও প্রয়োজনের
পরিসমাপ্তি ঘটে। মুরীদগণের অনেককে তিনি খিলাফত দান করেছেন। কাঙ্খিত অনেক কাজই তিনি
সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু একটি মূল বিষয় এখনো বাকি রয়ে গেছে। তাহলো সারা জীবনের
আয়াসসাধ্য প্রয়াসে লব্ধ নিয়ামতের নির্যাস কারো কাছে সোপর্দ করা। আল্লাহ্ পাক ও উনার
হাবীব হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য, অকৃত্রিম
নিবেদন ও অপরিমেয় ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে তিল তিল করে অর্জিত জীবনের সঞ্চিত
অমূল্য এ ধ্যন ধারণ ও বহনের জন্য একজন যোগ্য পাত্র দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কষ্টি
পাথরে যাচাই-বাছাই করে এই নিয়ামতের নির্যাস অকুক্তভাবে দান করার জন্য মনে মনে তিনি
একজনকে নির্ধারিত করেছেন। তিনি হলেন উনার প্রিয়তম মুরীদ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ
মুহম্মদ মুখলেসুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি। আল্লাহ্ পাক-উনার সদয় ইচ্ছায় এখন
শুধু আনুষ্ঠানিক খিলাফত দানের মাধ্যমে সোপর্দিত নিয়ামতের নির্যাসে উনাকে ভরপুর করে
তোলার অপেক্ষা। (অসমাপ্ত)
আবা-৮২
0 Comments:
Post a Comment