আমাদের সম্মানিত দাদা
হুজুর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে একজন
কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
অবশেষে বাইয়াত মুবারক হবার শুভক্ষণ-
হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন
ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তীক্ষ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন উনার
সামনে বসা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে।
সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় জীবনের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে বার্ধক্যে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এখন
জীবন সায়াহ্ন। পরপারের ডাক এলেই হাজিরা দেবার পালা। লব্ধ নিয়ামত সোপর্দ করার জন্য
যোগ্য পাত্র দরকার। হৃদয়ের গভীর মমতামাখা দীর্ঘ অপেক্ষায় তিনি আবিষ্কার করেছেন
একজন যোগ্যপাত্রকে। কিছুদিনের যাতায়াত এবং আন্তরিক আলাপচারিতায় আগে থেকেই চেনা
মানুষ তিনি। তবু বাইয়াতের পূর্ব মূহুর্তে আবারো উনাকে নতুন করে চিনে নেয়া।
সোপর্দিত নিয়ামত ধারণ ও বহন করার যোগ্যতা আছে কিনা, তাই পরখ করে দেখা। সাধারন নিয়মে
বাইয়াত করে মানুষকে দ্বীনের সহীহ্ পথে পরিচালনা করাই একজন শায়খের মুল কাজ। এ
ক্ষেত্রেও তাই হবার কথা। কিন্তু হলো না। তা’ এজন্য যে, জীবনব্যাপী
তিনি এমন একজনকে খুঁজে ফিরছিলেন, যাঁকে সঞ্চিত সবটুকু নিয়ামতের নির্যাস বিনা দ্বিধায় দান করা
যায়। একান্ত নাগালে পাওয়া সেই কাঙ্খিত মানুষটিকে তিনি উনার জীবনের লালিত স্বপে¦র সঙ্গে আগ্রহভরে মিলিয়ে দেখছেন।
আর সে কঠিন পরীক্ষার সামনে বসে আছেন হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর
রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি। এখন উনার কোন ভাবনা নেই। কোন উদ্বেগও নেই। প্রত্যাশা
পূরণের পরম ক্ষণে অবস্থা এরূপই হয়ে থাকে। কেবল অনিমেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছেন
প্রাণের আঁকা মুর্শিদের চেহারা মোবারকের দিকে। মুর্শিদ ক্বিবলার মোবারক চোখের
তারায় নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। বাকরুদ্ধ অনুভবে মুর্শিদ ও মুরীদের ভাষাহীন ভাব
বিনিময়ের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য দরবার শরীফে উপস্থিত কারো উপলব্ধিতে নেই। প্রত্যক
মানুষই নিজ নিজ অবস্থানে তার মন ও মননের
ব্যাপ্তি ও গভীরতা দিয়ে মুহব্বত- মা’রিফাত বুঝে থাকে। অন্তরে লালিত
বিরহ যাতনা নিবৃত্তির লক্ষ্যে মানব জীবনে অনিবার্য ভাব ও ভালবাসার সংজ্ঞা কাউকে
শিখানো গেলেও তার প্রকৃতি,
পরিধি ও পরিণাম শিখানো যায় না। কারণ মুহব্বত-মা’রিফাতের
সান্ত¡না ও
যাতনা সামষ্টিক নয়,
একান্তই ব্যক্তিক।
অবশেষে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
আনুষ্ঠানিক বাইয়াত হবার জন্য সবিনয় নিবেদন পেশ করা মাত্রই হযরত শেখ ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি
আলাইহি হাত মোবারক প্রসারিত করে দিলেন। এক নিমিষেই শায়খ উনার মুরীদকে আল্লাহ্ পাক-উনার
কাছে সোপর্দ করে দিলেন। উপস্থিত সবার অলক্ষ্যে তিনি আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত-মা’রিফাতের
অথৈ সাগরে অবগাহন করে উঠলেন। এমন অব্যক্ত অনুভূতি ও অনুপম অর্জন উনার অচেনা নয়।
অভ্যস্ত অনুভব ও প্রাপ্তির এরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি বিগত দিনেও অনেকবার হয়েছেন
তিনি। কিন্তু আজকের অর্জন অনন্য। উনার স্বাদ অতুলনীয়।
আল্লাহ্ পাক-উনার নিগূঢ় নৈকট্য হাছিলে মুরীদের জন্য মুর্শিদ এক অনিবার্য
মাধ্যম। মুর্শিদ সন্নিধানে আত্ম-উপলব্ধির উন্মেষে মুহব্বত-মা’রিফাতের
রুদ্ধ দরজা নিরন্তর অবারিত হতে থাকে। অবধারিত সত্য যে, একমাত্র
মুর্শিদের মোবারক সোহ্বতের পরশেই কামিয়াবীর পর্যায়ক্রমিক সোপানগুলো অতিক্রমণে
উন্মুখ অন্তরের আকুতি নিবৃত্ত হয়। উপলব্ধি যতো গভীর হয় এবং নিয়ামত যতো বৃদ্ধি পায়, ততোই
হৃদয়ের সান্ত¡না ও
যাতনার যুগপৎ পরিবৃদ্ধি ঘটে। এমন মধুর আনন্দ-বেদনায় সালিকের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত
হয়। সমঝদার মুরীদের সঙ্গে ভাব বিনিময় ও
আলাপচারিতায় প্রাপ্তিযোগের নিরিখে অনাবিল স্বস্তিতে নিত্যদিন মুর্শিদও নিজেকে
আবিষ্কার করতে থাকেন উত্তরণের নবতর মাত্রায়। কারণ পীর-মুর্শিদ উভয়েরই লক্ষ্য
আল্লাহ্ পাক। তবে তাঁদের মাত্রাগত বৈষম্যের পারস্পরিক অগ্রযাত্রায় মুরীদের
প্রাপ্তিযোগই মূখ্য এবং মুর্শিদ অনুক্ষণ অগ্রগামী। সংগত কারণেই হযরতুল আল্লামা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার সান্ত¡না ও স্বস্তি অপার। অপরদিকে
অনুভূতির তীব্রতায় এবং নিয়ামতের ক্রমবর্ধনে উনার অন্তরের ব্যাথাও প্রগাঢ়। যাঁর
প্রাপ্তি বেশী, উনার বেদনাভারও অপার।
আনুষ্ঠানিক বাইয়াত হবার পর হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি
আলাইহি-উনার অশান্ত মনের এক অভাবনীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একজন যোগ্য মুর্শিদের
সোহ্বত লাভের দীর্ঘ অভিপ্রায় পূরণ হয়েছে। প্রাণের আকাঁ মুর্শিদ হযরত শেখ
বোরহানুদ্দীন ফরাজীকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে কেন্দ্র করেই সময়গুলো কেটে যায়।
অবিরাম যিকির-ফিকির এবং ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকেন তিনি। কিন্তু আশৈশব মনের
গভীরে ঠাঁই পাওয়া বিচ্ছেদ যাতনায় কাতর এবং আল্লাহ্ পাক-উনার প্রেমানলে দগ্ধ এই
মাদারজাত ওলীর শান্তি ও স্বস্তি কোথায়? হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি
আলাইহি-উনার নিকট পূর্বেও তিনি বাইয়াত হয়েছিলেন। সকল নিয়ম-পদ্ধতি উনার আগে থেকেই
জানা। পরওয়ারদিগার-উনার আরো অধিক নৈকট্য হাছিলের জন্য অন্তরের আকর্ষণ কতো তীব্র!
কোন বাধাই আর উনার অভিযাত্রাকে এখন ব্যাহত করতে পারে না। কামিয়াবীর অভীষ্ট লক্ষ্যে
এখন শুধুই সামনে এগিয়ে চলা। (অসমাপ্ত)
আবা-৮১
0 Comments:
Post a Comment