আমাদের সম্মানিত দাদা
হুজুর ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার স্মরণে একজন
কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-
ألا إن أولياء الله لا خوف عليهم ولا هم يحزنون
অর্থঃ- “সতর্ক
থেকো, নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ পাক-উনার বন্ধু তাদের কোন আশংকা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে
না।”
জন্মলগ্ন থেকেই ওলী আল্লাহ্গণ বেপরোয়া। যন্ত্রণা কাতরতা উনাদের সঙ্গী। আল্লাহ্
পাক-উনার মুহব্বত-মারিফাতের তুলনায় অনিশ্চিত জীবনের পরিসর একান্তই নগণ্য। বিবাগী
মনের আর্তি কতটুকু কবুল হচ্ছে, সে এক ভাবনা। মৃত্যুর ওপারে দীদার নসীব হবার বিষয় জীবদ্দশায়
না জানার বিড়ম্বনা। দুনিয়ায় বসবাস এবং সেখানের অধিবাসীদের সাথে সমন্বয়ের
প্রাণান্তকর প্রয়াসের ধকল। সব মিলিয়ে অনুভূতির গভীরে মিশে থাকা অব্যক্ত বিচ্ছেদ
যাতনা আল্লাহ্ প্রেমিকগণকে আমৃত্যু অস্থির
করে ছাড়ে। জনকোলাহলে সবার অলক্ষ্যে উনাদের দিন কাটে একাকীত্বের বন্দীদশায়
এবং আপন ঘরেও পরবাসে। নিয়মের বিদ্যমানতায় জীবন-যাপনের পরিবৃত্তে নিঠুর দহনে
ক্লীষ্ট থেকেও মধুর মুহব্বত আস্বাদনে উনার প্রশান্ত। দুঃখের অথৈ পারাবারে অবগাহন
করেও উনার আনন্দিত। নিত্যদিন নিরানন্দ থেকেও পরওয়ারদিগার-উনার আকর্ষণে বেদনামধূর
মানসিকতায় উনার থাকেন এতমিনান। বিচ্ছেদ যাতনায় অনুক্ষণ জর্জরিত থাকা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-উনার সুন্নত। যে ওলী আল্লাহ্ এ
যাতনা বহনে বেশী অভ্যস্ত,
তিনি ততো বড়। আল্লাহ্ পাক-উনার “জাত” ও “ছিফত” উপলব্ধির
সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম মাকামে নিরন্তর অধিষ্ঠিত থেকে এবং পরমতম দীদারলাভ করেও
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বিরহ বেদনায় দগ্ধ হয়েছেন আজীবন। স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আনন্দ-বেদনা, মিলন-বিরহ, আগ্রহ-আকুতির
নিদারুণ নিষ্পেষনে তিনি আক্রান্ত থেকেছেন। চিন্তা ও বিষন্নতাই ছিলো উনার মুবারক
জীবনের চির সঙ্গী। এটি এমন এক অনির্বচনীয় অবস্থা, যেখানে পেলে আরো না পাবার দুঃখ, না পেলে
আবারো পাবার প্রত্যাশার স্বস্তি এবং নিগূঢ় নৈকট্য ও মিলন-বিরহের দুঃসহ সংকটে
উদ্বেলিত মনন।
ওলী আল্লাহ্গণও ওয়ারিশসূত্রে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার
সুন্নত অনুসরণে জীবন যাপনের বাহ্যিক আচরণে সন্তুষ্ট থেকেও অন্তর্গতভাবে
চিন্তাযুক্ত ও নিরানন্দ থাকেন। নিয়ম তো এটাই যে, যিনি যত বেশী নিষ্পাপ উনার
আল্লাহ্ ভীতি, চিন্তা, মনোবেদনা ও যন্ত্রণাকাতরতা ততো ব্যাপক। বদনসীব আনন্দ মূখরিত থাকে, কখনই
নিরানন্দ হবার অবকাশ পায় না। তাদের জীবন আচ্ছন্ন থাকে দূর্গতির অমানিশায়। আল্লাহ্
পাক-উনার একি সদয় মর্জি! প্রিয়জনদের কলিজা তিনি ইশ্কের আগুনে কাবাব বানিয়ে ছাড়েন।
একই কারণে মাদারজাদ ওলী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ও বিরহ যাতনা,
চিন্তার নিবিষ্টতা, নিগূঢ় মনন ও গভীর অনুসন্ধিৎসায়
জীবনব্যাপী আন্দোলিত হয়েছেন। জামাল ও জালালের অভাবিত সমন্বয়, কোলাহলমূখর
জনবসতিতে একাকীত্বের ভিত্ নির্মাণ, আপন ঘরে পরবাসের বিশিষ্টতা, মিলন-বিরহের
দুঃসহ সংকটের মাঝে আল্লাহ্ পাক উনাকে দান করেছেন আনন্দ-বেদনা বিমুগ্ধ অতুলনীয় এক
মনন। অতি শৈশবেই আম্মাকে হারিয়ে এক বেদনাবিধূর পরিবেশ-প্রতিবেশে প্রত্যয়ী মনের
অধিকারী হয়েছেন তিনি। জীবনের সকল যুদ্ধেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন। লাভ করেছেন আল্লাহ্
পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার অপরিমেয় সন্তুষ্টি। কিন্তু
বিরহ জ্বালায় দগ্ধ অন্তর্বেদনা কত যে দূর্বিষহ! বিবাগী মনের অতলান্ত বেদনা থেকে
মুক্তি উনার কাম্য নয়। এমন অবস্থা অর্জনের জন্যেইতো আল্লাহ্ প্রেমিকগণের ব্যাকুল
অপেক্ষা। উৎকক্তাভরে এমন যন্ত্রণাকাতরতা আস্বাদনের জন্যেইতো নিজেকে সযতে¦ গুছিয়ে তোলা। যাঁর যে দুঃখ, সে দুঃখ উনারই। তবে আহলে দিল কারো
কাছে হৃদয়ের লালিত দুঃখ জানাতে পারায় ক্ষণিকের জন্যে হৃদয় হালকা হলেও মূলতঃ সে
দুঃখের অভিঘাত আরো গভীর হয়। তখন সে যন্ত্রণা হয় মধুর। এতে পরওয়ারদিগার-উনার নৈকট্য
হাছিলের সোপানগুলো ক্রমান্বয়ে অতিক্রান্ত হয়। আকর্ষণকারী আল্লাহ্ পাক এবং আকর্ষিত
ব্যক্তির মাঝে রচিত হয় প্রেমময় সেতুবন্ধন। আল্লাহ্ পাক-উনার প্রেম দিওয়ানা হযরতুল
আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কাঙ্খিত
মুর্শিদ হযরত শেখ বোরহানুদ্দিন ফরাজী কান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার সন্নিধানে
হাজির হয়েছেন বাইয়াত হবার মানসে। পূর্বে কতবার দেখেছেন মুর্শিদকে। কিন্তু আজই যেন
নতুন দেখা। যেন প্রথম চেনা। আল্লাহ্ পাক-উনার পরিপূর্ণ মুহব্বত ও মারিফাত হাছিলের
অনুধ্যানে বিভোর এবং অনুক্ষণ অভ্যস্ত বেদনার বিষন্নতায় প্রাণের আকাঁ মুর্শিদকে
প্রত্যক্ষ করে আজকের এই শুভ মুহুর্তে যেন নিজেকে নতুন করে আবিস্কারের পালা। পর্দার
নিরাবরণে উভয়ই একান্ত কাছাকাছি, মুখোমুখি। তৃষিত অন্তরে প্রেমের ফল্গুধারা। পারস্পরিক
জানাজানির ঘনিষ্টতম সান্নিধ্যের মুবারক মৌন মুহুর্তে এখন দু’জনেই
মগ্ন। (অসমাপ্ত)
আবা-৮০
0 Comments:
Post a Comment