একজন কুতুবুজ্জামান-উনার
দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
আচরণ, বিচরণ ও জীবন যাপনের প্রয়োজনে
দুনিয়ার গুরুত্ব ও বাস্তবতা অনস্বীকার্য। অসার ও নশ্বর দুনিয়ার অবস্থানে বসতি
নির্মাণ, পরিবার-পরিজন প্রতিপালন ও নিজের রুজি- রিযিক তালাশে মানুষের নিত্যদিনের কর্মব্যস্ততা ক্ষণকালের জন্য হলেও তা’ অনিবার্য
ও অবশ্যম্ভাবী। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সকল পাপের মূলে রয়েছে দুনিয়ার
প্রতি আসক্তি।” দুনিয়ার যে সম্পৃক্ততা মানুষকে মন্দ করে ছাড়ে এবং তার আখিরাত সমূলে ধ্বংস করে
দেয়, তার পুরোটাই নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য। প্রকৃত প্রস্তাবে দুনিয়া আদৌ মন্দ নয়।
কারণ, আখিরাতে কামিয়াবী হাছিলের উপাদানসমূহ এবং অনুকূল সকল বিষয়কর্ম আল্লাহ পাক
দুনিয়ার সাথেই সংশ্লিষ্ট করে রেখেছেন। “দুনিয়া আখিরাতের কর্ষণক্ষেত্র”- এ হাদিস
শরীফের মর্মমতে আখিরাতের ফায়দা হাছিলের অন্যকোন বিকল্প ক্ষেত্র নেই। হাঁসের
বাচ্চাকে চৌবাচ্চা,
ডোবা, পুকুর, অথবা নদীতে নামিয়ে দিলে শুধুমাত্র তার বুক নাগাদ পানিতে
ভিজে। সাঁতার শেষে শুকনোয় উঠে ডানা ঝাপটা দিলেই অবাঞ্ছিত পানি গা থেকে ঝরে পড়ে।
ওলী আল্লাহগণও দুনিয়ায় বাস করে অনুক্ষণ আখিরাতের ফসল ঘরে তোলেন। হিজরী দ্বিতীয়
সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ,
আফজালুল আওলিয়া, কাইউমে আউয়াল, খাজিনাতুর
রহমত, শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি দুনিয়া ও আখিরাতের তাৎপর্য
এবং কামিয়াবীর চূড়ান্ত সোপানে উনার দৃঢ় অবস্থান বুঝাতে গিয়ে মাকতুবাত শরীফে
বলেছেনঃ “আল্লাহ পাক আমাকে এমন নিগূঢ় নৈকট্য দান করেছেন, হাজার বছর দুনিয়াতে ডুবিয়ে রাখলেও
আমার মাকামের কোন পরিবর্তন সূচিত হবেনা। (দুনিয়ার তাছির আমাকে পরাভুত করবেনা)।” দুনিয়ার
প্রতি নির্লিপ্ততা সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার
গন্তব্যে দৃঢ় থাকার ব্যাপারে এমন প্রত্যয়ী উচ্চারণ করেছেন দুনিয়ায় অর্জিত সাফল্যের
ভিত্তিতেই। অর্থাৎ মন্জিলে মকসুদে উপনীত হতে দুনিয়া উনাকে সহায়তা করেছেন।, বৈরী হতে
পারেনি।
দুনিয়ার প্রয়োজনীয়তা
সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেছেন,
ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة
অর্থঃ “পরওয়ারদিগার আমাদেরকে দুনিয়ায় পূণ্যদিন এবং আখিরাতেও পূণ্য দিন”(সুরা বাক্বারা)। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এভাবে দু’আ করেছেন- “আল্লাহপাক আমার বিরুদ্ধে আমার শত্রুকে হাসাবেন না, আমাকে কেন্দ্র করে আমার আপনজনের ক্ষতিসাধন করবেন না, ধর্মকাজে আমাকে বিপদ দিবেন না এবং দুনিয়াকে কখনো আমার একমাত্র লক্ষ্যস্থল করবেন না।” লক্ষ্যণীয় যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার দু’আয় দুনিয়াকে অস্বীকার করেননি। বরং কেবলমাত্র দুনিয়ার লোভেই দুনিয়ার প্রতি অনুরক্ত হওয়া থেকে আল্লাহ পাকের কাছে পানাহ্ চেয়েছেন। দুনিয়া সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াত শরীফের মর্মবাণী হলো যে, আল্লাহ্পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-উনার মহব্বত, মারিফাত ও রেজামন্দী হাছিলের ক্ষেত্রে দুনিয়াকে অনুপস্থিত রাখা শর্ত নয়। শর্ত যা’ তা’ হলো, একমাত্র দুনিয়ার লোভেই দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে না পড়া।
ইতোপূর্বে বলা হয়েছে, হযরতুল
আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার প্রাণের আঁকা
মুর্শিদ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। বিরহকাতর অন্তরে এখন অতলান্ত বেদনা। নিঃসীম
বেদনাঘেরা নিথর নীরবতা উনাকে দান করেছে কাঙ্খিত পরম প্রাপ্তি। এমন প্রাপ্তিতে
দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝে এখন আর কোন ভেদ রেখা নেই। সকলের পরিচিত জগৎ-সংসারে উনার
বসবাস, সেখানেই উনার ভাব,
ভালোবাসা ও বিষয়কর্মের প্রাত্যহিক লেনদেন, সেখানেই
ধর্মপালন এবং সে আবহেই উনার ইবাদত-বন্দেগীর নিরবচ্ছিন্ন ব্যস্ততা। অথচ অনেক দিনের
চেনা পৃথিবী যেন কতো অচেনা! মাটির পৃথিবী এখন আর উনাকে আকৃষ্ট করেনা। আনুগত্যপূর্ণ
মন ও মনন নিরন্তর ঝুঁকে থাকে পরওয়ারদিগারের প্রতি। আশেপাশে কতো কোলাহল! কতো বৈচিত্র!
কিন্তু মুর্শিদ বিহনে তিনি বড়ো একা। অশ্রুভেজা চোখে তিনি হতবাক, অসহায়।
যেমন বলা হয়ে থাকেঃ ‘‘আল্লাহ্ পাক-উনার আশেক হিম্মতহীন।’’ এরূপ অবস্থায় না থাকে স্বস্তি, আর না
থাকে বিচ্ছেদ ঘটানোর শক্তি। এমন নির্মম একাকীত্বের অবসান দরকার। তাই সঙ্গী চাই।
নতুন কোন মুর্শিদের সন্নিধানে যাবার প্রয়োজনের ভাবনা এখন হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ
মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার মুবারক তন্ময়তাকে বার বার
আন্দোলিত করে যায়। (অসমাপ্ত)
আবা-৭৭
0 Comments:
Post a Comment