একজন কুতুবুজ্জামান
উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম(
দাদী হুযুর ক্বিবলা ) উনার লালন-পালন ও শিক্ষা লাভ-
পূর্ব বুযুর্গ নানা-নানীর
ঘরে পরিপূর্ণ এক ধর্মীয় পরিবেশে হযরত সাইয়্যিদাতুনা আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম দ্বীনের প্রাথমিক সবক
লাভ করেন। আল্লাহ্ পাক উনার মনোনীত ওলীগণকে কামিয়াবীর সকল পথ সুগম করে দিয়ে থাকেন।
গন্তব্য সোপানে উপনীত হতে অবিরাম অবারিত পথ চলায় তাঁরা ক্লান্তি ও ক্লেশহীন। উন্মুখ
অন্তর, চারিত্রিক দৃঢ়তা
ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ওলীআল্লাহ্গণ বর্তমানকে পিছনে ফেলে কেবলই কাঙ্খিত
মাকামের দিকে এগিয়ে যান।
আল্লাহ্ পাক উনার মুহব্বত-মারিফত হাছিলের উপযোগী
বেদনাহত হৃদয়, নিবিষ্ট চিন্তা, অনুসন্ধিৎচ্ছু মনন,
জাগ্রত বিবেক,
শানিত অনুভূতি অনুক্ষণ তাঁদের মাঝে নবতর উপলব্ধির উন্মেষ ঘটায়।
উনাদের সকল বিষয় কর্মই সুন্নাতের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়ে যায়। বাধ্যতামূলক এ সংগতি বিধানের
অনিবার্য প্রয়োজনে বার বার উনাদেরকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবেহায়াতের কাছেই
ফিরে যেতে হয়। উল্লিখিত গুণাবলী অর্জনের ক্ষেত্রে মজবুত ঈমান ও বিশুদ্ধ আক্বীদা অবধারিত
প্রাথমিক সোপান। এখান থেকেই শুরু হয় মু’মিন বান্দার অভিযাত্রা। তবে প্রজ্ঞা (ইল্ম) ও সমঝ (সূক্ষ্ম উপলব্ধি), ঈমান ও আক্বীদার সহযোগী না হলে গন্তব্যে পৌঁছা যায়না। ঈমান, আক্বীদা, ইল্ম ও সমঝ সহীহ্
না হলে জীবনব্যাপী আয়াসসাধ্য আয়োজন ও নিরবচ্ছিন্ন কঠোর আমল ও পরিণতিতে মানুষকে জাহান্নামী
করে দেয়। ইল্ম ও সমঝদানের মোবারক মাধ্যম সাইয়্যিদুল বাশার, শাফিউল মুজনিবীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
মুবারক করেন “প্রত্যেক নর-নারী উনাদের জন্য জ্ঞান (ইল্ম)
অর্জন করা ফরজ।” তিনি আরো ইরশাদ
মুবারক করেন, “আল্লাহ্ পাক যাঁর
মঙ্গল চান, তাঁকে দ্বীনি সমঝ
দান করে থাকেন।”
ইল্ম ও সমঝের জন্য
জন্মলগ্ন থেকেই ওলীআল্লাহ্গণের মন ও মনন উন্মুখ থাকে। আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দায়েমী মুহব্বত ও হুজুরীতে বিভোর এসব ওলীগণ আবাল্য স্বাধীন।
কোলাহল ও হলাহলপূর্ণ দুনিয়ায় বাস করেও উনারা জগৎ সংসারের প্রতি নির্লিপ্ত। এযেনো আপন
ঘরে পরবাস। এ মর্মে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
“দুনিয়াতো আল্লাহ্ পাক তাকেও দেন, যাঁকে মুহব্বত করেন। আর তাকেও দেন, যাকে মুহব্বত করেননা। কিন্তু ঈমান কেবলমাত্র তাঁকেই দান করেন, যাঁকে মুহব্বত করেন।”
এই মুহব্বতের কারণেই আল্লাহ্ পাক উনার মনোনীত ওলীগণকে সুগভীর
প্রজ্ঞা ও নিগূঢ় সমঝদানে সমৃদ্ধ করে থাকেন। কারণ ইল্ম, সমঝ ও ইখলাস হলো আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার নৈকট্য লাভের সহায়ক মাধ্যম। এসব অনুপম বৈশিষ্ট্য গুণগুলোই বিশুদ্ধ
আমলের সূত্রপাত ঘটিয়ে মানুষকে মঞ্জিলে মাকসুদের চূড়ান্ত ধাপে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আল্লাহ্ পাক উনার
পূর্ব নির্ধারিত ব্যবস্থায় মাদারজাদ ওলী,
আওলাদে রাসূল,
হযরত সাইয়্যিদাতুনা
আহমদ জাহানারা বেগম আলাইহাস সালাম উনার মাঝে উনার জন্মলগ্নেই উপরোক্ত সকল গুণাবলীর
সমাবেশ ঘটিয়েছেন। অন্তরের ব্যাকুলতায় সূক্ষ্ম ইল্ম ও সমঝ হাছিলের প্রতি তাঁর অনুরক্ত
হওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিলনা। এ সবের প্রথম পাঠ শুরু হয় বুযুর্গ নানা-নানীর মুবারক সান্নিধ্যে।
বয়স মুবারক বাড়তে থাকে। মাঝে-মধ্যে পিতৃ নিবাস “বাড়ী মজলিশ” গ্রামে আসেন এবং
অবস্থান করেন।
সেখানে উনাকে সার্বিক ইল্ম-এর তা’লীম এবং তাসাউফের দীক্ষা দান করেন বুযুর্গ পিতা, হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুস সবুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি। পূর্বোক্ত
বুযুর্গ পুরুষ হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও সাইয়্যিদ মুহম্মদ
সালাহউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে ছিলেন সহোদর ভাই। পথভ্রষ্ট ও গোমরাহীতে নিমজ্জিত
মানুষকে হিদায়েত দান, বিদ্য়াত অপসারণ
এবং অবলুপ্ত সুন্নাত জিন্দা করার লক্ষ্যে উভয়ের আদর্শ ও আয়োজন ছিল অভিন্ন।উনাদের যুগপৎ
অক্লান্ত প্রয়াসেই প্রত্যক্ষভাবে ঐ জনপদের এবং পরোক্ষভাবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ইসলাম
পালনে আগ্রহী হয়েছে, দ্বীনের সহীহ্ সমঝ
লাভ করেছে, সুন্নত অনুসরণে
অভ্যস্ত হয়েছে এবং বিধর্মীরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে ইবাদত-বন্দেগীতে মনোযোগী হয়েছে।
হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলাউদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালাহ্উদ্দীন
রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক মন,
মনন, আদর্শ ও ঐতিহ্যে
দ্বীন ইসলামের পরিপুষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ আবহে পিতৃনিবাসে বুযুর্গ পিতা-মাতার কাছে ক্রমান্বয়ে
দ্বীন-ইসলামের সকল স্তরের সহীহ্ ইল্ম ও তাসাউফের অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞা এবং অনুশীলনে
বড় হতে থাকেন মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রাসূল, হযরত সাইয়্যিদাতুনা
আহমদ জাহানারা বেগম, আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী,
ওয়াল কুরাঈশী আলাইহাস সালাম। (অসমাপ্ত)
আবা-৬৯
0 Comments:
Post a Comment