একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
মুর্শিদের কাছে
বায়াত হওয়ার অদম্য ইচ্ছে উনার মন ও মননে ঠাঁই পেয়েছে শিশুকালেই। সে ইচ্ছে বাস্তবায়নের
লক্ষ্যেই একজন যোগ্য মুর্শিদ তালাশে এখন উনার নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ ও উদ্বেলিত প্রয়াস।
পূর্ব আলোচনায় জানা গেছে, হযরতুল আল্লামা
সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রথম জীবনে কিছুদিন সরকারী চাকুরী
করেছেন। কর্মস্থল ছিল দার্জিলিং, আসাম, কলকাতা, রাজশাহী, বগুড়া ও ঢাকায়। কর্তৃপক্ষ ও সহকর্মীদের অনৈতিক এবং আখিরাত পরিপন্থী
কাজকর্ম ও আচরণে সকল কর্মস্থলেই তিনি দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ থেকেছেন। অবশেষে নাতিদীর্ঘ কর্মজীবনের অবসানে চাকুরীতে
ইস্তফা দিয়ে অবাঞ্ছিত পরিবেশ-প্রতিবেশ থেকে নিজেকে মুক্ত করেন তিনি। চাকুরীতে প্রবেশের
কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৩৬ সালে উনার শাদী মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। বায়াত হওয়ার অপার আগ্রহে
উনার মানস তৈরী হয়েছে বহু পূর্বেই। মহান আল্লাহ্ পাক উনার মনোনীত বান্দাগণকে সময়োচিত
নিয়ামত সম্ভারে পূর্ণতা দানে কামিয়াবীর শীর্ষ ধাপে এগিয়ে নিয়ে যান। বান্দার আয়াসসাধ্য
তদ্বীর (কোশেশ) যখন নির্ধারিত তক্দীরের সাথে মিলে যায় তখনই নিয়ামত প্রাপ্তির দ্বার
অবারিত হয়।
মূলতঃ আসমানেই সবকিছুর ফায়সালা হয়। জমীনে হয় তার বাস্তবায়ন। আসমানী ফায়সালার অনুকূলে অথবা প্রতিকূলে বান্দার প্রানান্তকর কোশেশের পরিবৃদ্ধি অথবা পরিসমাপ্তি ঘটে থাকে। বান্দার জানাই নেই কখন, কোন নিয়ামত তার জন্য অপেক্ষা করছে এবং কোন বিষয়ে আল্লাহ্ পাক উনাকে যোগ্যতা দান করেছেন। তাই নৈকট্যলাভে বান্দার অবিরাম কোশেশকে আল্লাহ্ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাধ্যতামূলক করেছেন। পাক কুরআনে উনারশাদ হয়েছে, “যারা আমাকে পেতে কোশেশে আত্মনিয়োগ করে, আমি (আল্লাহ্ পাক) অবশ্যই তাদেরকে আমার সুপথসমূহ প্রদর্শন করব।” (সূরা আনকাবুত/৬৯)
আল্লাহ্ পাক-উনার
নির্ধারিত ব্যবস্থায় হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি
আলাইহি-উনার প্রত্যাশা পূরণ হয়। তিনি উনার কাঙ্খিত মুর্শিদের সন্ধান পেয়ে যান। বুযুর্গী
ও কামিয়াবীর জন্য মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিতি সে মুর্শিদের। আল্লাহ্ প্রেমে বিভোর, দুনিয়া বিরাগ এক মহান আধ্যাত্ম পুরুষ তিনি। পরিপূর্ণরূপে সুন্নতের
পাবন্দ এই মহান ওলী দুনিয়ামুখী আসক্ত মানুষকে আখিরাতমুখী করে দেয়ার যোগ্য কারিগর। উনার
সোহ্বতে গিয়ে মানুষ পায় অনাবিল প্রশান্তি। উনার নাম মোবারক হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা
রহমাতুল্লাহি আলাইহি। প্রখ্যাত এই ওলীআল্লাহ্-উনার সন্ধান পেয়ে হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ
মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সান্নিধ্যে যান। অন্তরে লালিত অদম্য
বাসনা পূরণে যে মুর্শিদের কাছে তিনি বায়াত হবেন,
তিনি কেমন তা জেনে নেয়া জরুরী। বিশেষতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নির্দেশমতে শায়খকে
পরখ করে নেয়া অত্যাবশ্যক। তীক্ষ্ম মেধা ও মননের অধিকারী মাদারজাদ ওলী হযরত সাইয়্যিদ
মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুর্শিদের সান্নিধানে গিয়ে উপলব্ধি করেন যে,
আল্লাহ্ পাক-উনার নৈকট্য লাভের অনিবার্য প্রয়োজনে যাঁর কাছে
বায়াত হওয়ার জন্য তিনি জীবনের এতোগুলো দিন সযতে¦
গুছিয়ে তুলেছেন,
ইনি সেই মহান মুর্শিদ। প্রথম দর্শনেই দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে যে, এই মুর্শিদেরই ব্যকুল প্রত্যাশায় তিনি জীবনের অস্থির সময়গুলো
অতিবাহিত করেছেন। মুর্শিদের সাথে বাস্তব সাক্ষাত পূর্বে কোন দিনও হয়নি। কাছে গিয়ে প্রত্যাশিত
মুর্শিদকে তিনি প্রাণ ভরে দেখেন। দৃষ্টি ফেরানো যায় না। এমন মোবারক মুহুর্তে তিনি বায়াত
হবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। (চলবে)
আবা-৭৩
0 Comments:
Post a Comment