একজন কুতুবুজ্জামান-উনার
দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
দীর্ঘ প্রতীক্ষা অবসানে বাইয়াত মুবারক হবার শুভ মুহুর্ত-
প্রাণের আকাঁ মুর্শিদ
হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও এমন একজন মুরীদেরই অপেক্ষায় ছিলেন, যাঁকে তিনি উনার জীবনের লব্ধ পরম নিয়ামত প্রদানে সমৃদ্ধ করে
তুলবেন। আল্লাহ্ পাক-উনার উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় নিগূঢ় নৈকট্যদানে কামিয়াবীর শীর্ষ মঞ্জিলের
পর্যায়ক্রমিক সোপানগুলো যাঁকে তিনি অবলীলাক্রয় অতিক্রমে করাবেন। আল্লাহ্ পাক-উনার মাহবুব
ওলীগণ উনাদের লব্ধ নিয়ামত, যোগ্য কারো কাছে
সোপর্দ করে দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান করে থাকেন। প্রক্রিয়াগত সোপর্দের পূর্ব পর্যন্ত
জীবন সায়াহ্নে এসে এই নিয়ামত বহন করা যেন এক দুঃসহ বেদনাভার। মুহব্বত-মা’রিফাতের উপলব্ধি ও চর্চা সিলসিলাক্রমে এভাবেই পৃথিবীতে বহমান
রেখেছেন আল্লাহ্ পাক। একই কারণে জীবনের সঞ্চিত নিয়ামত, যোগ্য কাউকে দান করার অধীর আগ্রহে দিন কাটছিলো হযরত ছাওয়াল পীর
ক্বিবলাজান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার। মুহব্বত-মা’রিফাত হাছিলের পরিণত ধাপে উপনীত হওয়ার জন্য অনুক্ষণ ব্যাকুল হযরত আল্লামা সাইয়্যিদ
মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে একান্ত নাগালে পেয়েছেন তিনি। প্রথম দর্শনের
গভীর পর্যবেক্ষনেই তিনি বুঝে ফেলেন যে,
এই মুরীদের জন্যই উনার এতোদিনের উন্মুখ প্রতীক্ষা। বাইয়াত হওয়ার
নিবেদন পেশ করা মাত্রই পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি পরম মমতা ও অধীর আগ্রহে
হাত মোবারক প্রসারিত করে দেন। এ যেনো আশেক ও মাশুকের মহা মিলন। যার মাঝে কোন পর্দা
নেই। সময়কাল ১৯৩৫। মুর্শিদ উনার প্রাণের মুরীদকে এক নিমিষেই সোপর্দ করে দিলেন আল্লাহ্
পাক-উনার কাছে। আর মুরীদ হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি
আলাইহি বাইয়াত হবার শুভ মুহুর্তেই অবগাহন করে উঠলেন আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত মা’রিফাতের অথৈ সাগরে। খানকা শরীফে উপস্থিত সকলেই প্রত্যক্ষ করলেন, মুর্শিদ ও মুরীদ যেনো কত দিনের চেনা, কত কালের পরিচিত।
বাইয়াতের পর ভাবান্তরিত মননে অভিনিবেশ
হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি একজন কামিল ওলী আল্লাহ্। আল্লাহ্
পাক-উনার মতে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পথে জীবন-যাপনে
যিনি পরিপূর্ণরূপে অভ্যস্ত একজন কামিল পুরুষ। তিনি যে কাজে ব্যাপৃত, তাহলো- মানুষকে দুনিয়ার মোহ থেকে বিরাগ করে আখিরাতের প্রতি ঝুঁকিয়ে
দেয়া, সুন্নত পালনসহ ইবাদত-বন্দেগী
ও যিকির-ফিকিরে মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলা এবং জাহান্নামের পথযাত্রীকে জান্নাতী করে দেয়া। উনার
এ যোগ্যতা মহান আল্লাহ্ পাক-উনারই দান। কার সাধ্য যে, উনার মোবারক ছোহবতে গিয়ে লক্ষ্যবিচ্যুত হয়? বিশেষতঃ মাদারজাদ ওলী,
হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি
আলাইহি, আল্লাহ্ পাক-উনার
পূর্ব নিধারিত ব্যবস্থায় উনার ভেতর প্রচ্ছন্ন রয়েছে কামিয়াবীর সকল গুণাবলী, প্রত্যাশিত মুর্শিদের সন্নিধাণে মঞ্জিলে মাকসুদের চুড়ান্ত ধাপে
উপনীত হওয়া ছাড়া উনার গত্যন্তর কোথায়?
আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি হাছিলের পরিণত গন্তব্যে পৌঁছা উনার
আবাল্য অভিপ্রায়, সুলুকের কোন মাকামেই
তাঁঁর থেমে থাকবার অবকাশ নেই। অসীমের আকর্ষনে শিশুকাল থেকেই অন্তরের গভীরে মিশে থাকা
মধুর যন্ত্রনা, কাতরতা এবং অতঃপর
দুর্নিবার মানসিক অস্থিরতাই তাঁকে মুর্শিদের ছোহবতে নিয়ে আসে। বাইয়াতের পর উনার মাঝে
ঘটে যায় এক অনুপম ভাবান্তর। লক্ষ্য অর্জনে এ ভাবান্তর তাঁকে দান করে নিগূঢ় মননে গভীর
অভিনিবেশ। এটি এক নতুন অনুভূতি। এমন অনির্বচনীয় অনুভূতি, ধ্যান, খেয়াল ও অনাবিল
মনোবৃত্তির জন্যই ছিল উনার এতোদিনের উদ্বেগাকুল প্রতীক্ষা।
প্রাণের আঁকা মুর্শিদ
হযরত ছাওয়াল পীর সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার মোবারক সান্নিধ্যে উনার দিনগুলো
কাটতে থাকে। ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির ও মুরাকাবা-মুশাহিদায়
জীবনের মূল্যবান সময়গুলো তিনি অবিরাম ব্যয় করেন,
মহামূল্যবান নিয়ামত সঞ্চয়ের প্রত্যাশায়। মুর্শিদ সান্নিধ্যে
উনার সূক্ষ্ম সমঝ ও উপলব্ধির দ্বার এখন অবারিত। এখন উনার নিরন্তর প্রাপ্তিযোগের পরিবর্ধন।
অর্থাৎ প্রতিনিয়ত বর্তমান অবস্থান থেকে পরবর্তী উন্নত অবস্থানে উনার অনিঃশেষ উত্তরণ।
মুর্শিদ ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার নেক দৃষ্টি ও ফয়েজে পরিপুষ্ট যোগ্য মুরীদ, হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি
আলাইহি-উনার এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাবার পালা। অজানা-অচেনা চিন্তা ও ধারণার অনুষঙ্গরা
উনার আনন্দ-বেদনা ভারাক্রান্ত মানস সরোবরে। এখন কেবলই ফুটছে মুহব্বত ও মা’রিফাতের নিত্য-নতুন পথকলি। (অসমাপ্ত)
আবা-৭৪
0 Comments:
Post a Comment