একজন কুতুবুজ্জামান- উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান- সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযুর ক্বিবলা সাইয়্যিদ মুখলেছুর রহমান আলাইহিস সালাম উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক-পর্ব-১৩

 


একজন কুতুবুজ্জামান-উনার দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-

আল্লাহ্ পাক-উনার নিগূঢ় নৈকট্যলাভে হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার উদ্বেলিত মনোযোগ ও নিরন্তর প্রয়াস-

 জগৎ-সংসারের কার্যব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, মাখলুকাত সৃষ্টি, পরিচালনা, তাদের নশ্বর স্থিতি এবং মানুষের ঐহিক ও পারলৌকিক জীবন পরিক্রমার প্রতিটি স্তরে আল্লাহ্ পাক-উনার সন্তুষ্টি ও নিয়ামত অনুক্ষণ আপন গতিতে বহ্মান। একইভাবে বান্দার নাফরমানীতে নিজ অভ্যস্ততায় আল্লাহ্ পাক-উনার অসন্তুষ্টি এবং ক্রোধও সমভাবে বিদ্যমান। যে বান্দার অন্তরে আল্লাহ্ পাক নিজ অনুগ্রহে উনার মুহব্বত ও মারিফাতের উপলব্ধি ঠাঁই করে দিয়েছেন, তিনি প্রেমময় বন্ধুত্বের শীর্ষ মঞ্জিলের অভিযাত্রায় অবিরাম এগিয়ে চলেন। নৈকট্য হাছিলের অপার আগ্রহে যে অন্তর যন্ত্রণাকাতর, মারিফাতের অথৈ সাগরের ডুব-সাঁতারে যাঁর প্রগাঢ় আকর্ষণ, বেদনা-বিমুগ্ধ ধ্যান নিমগ্নতায় যাঁর স্বস্তি ও প্রশান্তি, সে বান্দার হৃদয়ই আল্লাহ্ পাক-উনার যোগ্য আসন। বিশ্ব মরমী চিন্তা ও অনুভূতির অন্যতম রূপকার হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, আসমান যমীনে মোর ঠাঁই নাহি হয়, মুমিনের ক্বল্বেতে শুধু ঠাঁই পাই। আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাতের ধারক ও বাহক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূল হাদীস শরীফে বলেছেন, মুমিনের হৃদয় আল্লাহ্ পাক-উনার আরশ।

 মুর্শিদ আলাইহি সালাম উনার সন্ধানে তাহ্ক্বীক্ব

 উদ্দিষ্ট নিয়ামত সম্ভারে আল্লাহ্ পাক উনার প্রিয়তম বান্দা কুতুবুজ্জামান, আরিফবিল্লাহ্, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা, শাহ্ সূফী, আলহাজ্ব সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান, আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাঈশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পরিতুষ্টি দান করবেন এটাইতো স্বাভাবিক। সময়ের দাবী পূরণে উনার মুবারক মধ্যস্থতায় এই জনপদে আল্লাহ্ পাক উনার ইসলাম ধর্ম আবাদ করবেন, মানুষকে তাসাউফে দীক্ষিত করবেন এবং সর্বোপরি উনার এক মুবারক পুত্র সন্তানের উছীলায় পরিপূর্ণ ইসলাম প্রতিপালনে জগৎব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করবেন, এটা আল্লাহ্ পাক-উনার পূর্ব নির্ধারিত সদয় ইচ্ছে। এই লক্ষ্যে মাদারজাদ ওলী হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি-উনার কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে উত্তরণ অপরিহার্য। মহান আল্লাহ্ পাক-উনার ইচ্ছেই এমন যে, তিনি তাঁকে নিগূঢ় নৈকট্য দান করবেন। এ কারণেই একজন আনুষ্ঠানিক মুর্শিদ প্রয়োজন। কিন্তু কোথায় সে কাঙ্খিত মুর্শিদ? কেমন তিনি? কোথায় উনার আবাস? মনের গভীরে লালিত অব্যক্ত নিবেদন, আকুতি ও যন্ত্রণাদগ্ধ তীব্র অনুভূতিরা অনুক্ষণ তাঁকে অস্থির করে রাখে।

 মুর্শিদের সান্নিধ্য ব্যতিরেকে আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাছিলের বিকল্প কোন পথ মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়নি। শায়খ-উনার সোহ্বত ছাড়া আপন কোশেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ছালেকের কিছুটা অগ্রগতি হওয়া বিচিত্র নয় এবং অসম্ভবও নয়। এ ধরণের স্বেচ্ছাচারী প্রয়াসের অগ্রগতিতে ছালেকের মন-মননে অহংকার, মূর্খতা ও অজ্ঞতা বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পেয়ে তার ঈমান হরণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন অনভিপ্রেত অবস্থায় তাগুত (ইবলিশ) মানুষের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আসন গেড়ে বসে। আপন খেয়ালে কামিয়াবী হাছিলের নামে ঈমান বিধ্বংসের এমন ঘটনা জগৎ সংসারে অসংখ্য। মানুষের নশ্বর জীবন সংক্ষিপ্ত। পক্ষান্তরে তাসাউফ বিশাল, সীমাহীন এবং আল্লাহ্ পাক-উনার মুহব্বত ও মারিফাত অসীম, অন্তহীন। আল্লাহ্ প্রেমের আতিশয্যে আত্মনিবেদিত ওলীগণের এমন নিরূপম ও অনির্বচনীয় সময়ও এসে যায়, যখন উনারা একান্তই সংযতবাক, বিমূঢ়, অসহায়, এমনকি আত্মবিস্মৃতও। বেদনাক্লান্ত অনুভূতির এমন নাজুক পটভূমিতেই উনাদের কেউ কেউ সৃষ্টি করেন লায়লা-মজনু, শিরি-ফরহাদ অথবা অন্য কোন প্রেমঘন অমর উপাখ্যান। নিজেদের সৃষ্ট সংলাপ ও ভাবোন্মত্তার কল্পিত মাধ্যমে অসীমকে উপলব্ধির বিকল্প তৃপ্তি ও আস্বাদন খুঁজে নিতে হয়। আল্লাহ্ পাককে উপলব্ধি করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। উপলব্ধির এই প্রক্রিয়া শুরু হয় একান্তভাবেই মুর্শিদের মুবারক সন্নিধানে।

   যোগ্য শিক্ষক (মুর্শিদ)-উনার বর্ণনায় হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যাঁর সন্নিধানে গেলে আল্লাহ্ পাক-উনার খেয়াল মনে জেগে উঠে, যাঁর নসীহত শুনলে দ্বীনী প্রজ্ঞার পরিবৃদ্ধি ঘটে এবং যাঁর আমল দেখলে আখিরাতের আমল করতে ইচ্ছে হয়।

 শিক্ষাগ্রহণের পূর্বে প্রশিক্ষককে পরখ করে নিতে তিনি উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, বাঁকা লাঠির ছায়া বাঁকা হয়। আল্লাহ্ পাক এবং উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদেশের অনুসরণে হযরতুল আল্লামা, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি সেই যোগ্য মুর্শিদ অনুসন্ধানে ব্যাপৃত। কামিয়াবীর শীর্ষধাপে উত্তরণের জন্যই উপযুক্ত মুর্শিদ খুঁজে পাওয়া প্রয়োজন। কাজেই এতো তাহ্ক্বীক্ব। (অসমাপ্ত)

আবা-৭২

0 Comments: