একজন কুতুবুজ্জামান-উনার
দিদারে মাওলা উনার দিকে প্রস্থান-
একজন ওলী আল্লাহ্-উনার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি আল্লাহ্ পাক-উনার বন্ধু। অর্থাৎ তিনি দুনিয়া বিমুখ এবং ঘনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্ পাক-উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তিনি আল্লাহ্ পাক কর্তৃক হিফাযতকৃত এবং নিরাপত্তাপ্রাপ্ত। বিশিষ্ট বান্দা হিসেবে আল্লাহ্ পাক-উনার সাথে গভীর জানাজানি ও নিবিড় সম্পর্কের বিষয় এবং উনার মাকাম (অবস্থান) ও সম্মান সাধারণ মানুষের অবোধ্য। নৈকট্য প্রাপ্তগণের অনেকেই যখন আপন উত্তরণ ও অবস্থান সম্পর্কে অনবহিত, সেখানে অন্যের পক্ষে ওলী আল্লাহ্গণের বুযুর্গী ও সম্মান উপলব্ধির প্রশ্ন অবান্তর। মূলতঃ বিষয়টি সাধারণ্যে অজ্ঞাত ও দুর্বোধ্য। ওলী আল্লাহ্গণের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহ্পাক হওয়ায় উনাদের প্রজ্ঞা, অন্তরস্থ অনুভব ও জীবনের আয়োজন ব্যাপকতর। অজ্ঞ ও অতি সাধারণ মুসলমান বান্দারা আল্লাহ্ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উদিষ্ট গুণাবলীতে বিভূষিত না থাকায় খাছ (বিশেষ) মাহবুবিয়াতের দরজায় উপনীত হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা। কাজেই তারা ওলী আল্লাহ্গণের অবস্থা জানবে কি করে? মাটির পৃথিবীতে বাস করেও যে সবার লক্ষ্যগোচর সীমানা ও অনুমেয় গন্তব্য পেরিয়ে বিশিষ্ট বান্দাগণ নিগূঢ় নৈকট্য লাভ করে থাকেন, তা তাদের অজানা। তাই বদ্নসীব ও মূর্খরা স্বভাবদোষে ওলী আল্লাহ্গণের ওলীত্বকে অস্বীকার করে বসে। অজ্ঞতা, মূর্খতা ও নেতিবাচক মনোবৃত্তির কারণে তারা আল্লাহ্ পাক-উনার কোপানলে পড়ে যায়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে কূদসীতে বলেছেন, আল্লাহ্ পাক বলেন, “যারা আমার ওলীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আমি তাদের বিরূদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে থাকি।” (নাউযুবিল্লাহ্)
যেসব রীতিনীতি ও
আচার-আচরণ ধারণ, বহন ও অনুশীলনে
একজন ওলী, আল্লাহ্ পাক-উনার
সীমাহীন মুহব্বত ও মারিফাতের কাঙ্খিত মঞ্জিলের দিক নিরন্তর এগুতে থাকেন, তা উনাদের বৈশিষ্ট্যগুণ নামে অভিহিত। স্বভাব-সম্পৃক্ত গুণাবলীসূচক
এসব বৈশিষ্ট্যের মানদন্ডে আল্লাহ্ পাক উনার একজন মাহবুব ওলীকে যতটুকু কামিয়াবী ও সম্মান
দান করেন, ততটুকুই উনার বুযুর্গী।
বুযুর্গী অর্থ-সম্মান, মর্যাদা, কামিয়াবীর সোপান। এ সম্মান,
মর্যাদা ও কামিয়াবীর পরিমাণ ও পরিধি সাধারণ মানুষের অনুমান এবং
অনুভূতি নির্ভর হয়ে থাকে। কারণ বুযুর্গীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কখনোই দৃষ্টিগ্রাহ্য
নয়। মূলকথা, প্রাপ্ত ও প্রাপ্তব্য
নিয়ামত সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-উনার হিকমতপূর্ণ অভিপ্রায় অনুপুঙ্খ জানা না থাকায় ওলীগণ
নিজেরাও উনাদের বুযুর্গীর অবস্থান,
পরিণত স্তর ও স্থায়ীত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকেননা। ওলী আল্লাহ্গণের
অবয়ব ও বাহ্যিক আচরণ প্রত্যক্ষ করেই মানুষ তাদেরকে বুযুর্গ অভিধায় সম্মান করে থাকে।
ওলী আল্লাহ্গণের মর্যাদা নিরূপণ এবং উনাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এটাই প্রচলিত পদ্ধতি।
অবশ্য ওলীগণকে সম্মান করার জন্য সংশ্লিষ্ট জনপদের মানুষ ও বিশ্ববাসীকে আল্লাহ্ পাক
বাধ্য করে থাকেন। আল্লাহ্ পাক উনার মাহবুব ওলীগণের প্রতি সামষ্টিক অসম্মান কখনই বরদাশত্
করেননা।
হযরত ছাওয়াল পীর
সাহেব ক্বিবলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-উনার মনোনীত মাহবুব ওলী। উনার মুবারক
বৈশিষ্ট্য ও বুযুর্গী ছিল অতুলনীয়। কিন্তু তা আলোচনায় তুলে ধরা আয়াসসাধ্য নয়, অসাধ্য। তিনি ছিলেন আল্লাহ্ পাক ও হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-উনার পরিপূর্ণ ফর্মাবরদার। সুন্নতের পাবন্দ্ এবং সুন্নত যিন্দাকারী। বিবেক
ও প্রজ্ঞার উন্মেষ ঘটিয়ে মানুষকে সুন্নত পালনে অভ্যস্ত করে তোলা, দুনিয়া আসক্ত মানুষকে আখিরাতের প্রতি ঝুঁকিয়ে দেয়াই ছিল উনার
মহান ব্রত। উনার মুবারক মধ্যস্থতায় আল্লাহ্ পাক অনেক জাহান্নামী মানুষকে করেছেন জান্নাতী।
উনার ছিল অগণিত কারামত। (অসমাপ্ত)
আবা-৭৫
0 Comments:
Post a Comment