পঞ্চদশ
হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদুর রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-উনার সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস
সালাম উনার মহা সম্মানিতা আম্মা আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদাতুনা আমাদের-
হযরত
দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম
উনার সীমাহীন ফাদ্বায়িল-ফদ্বীলত, বুযূর্গী-সম্মান, মান-শান, বৈশিষ্ট্য এবং উনার অনুপম মাক্বাম সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোকপাত
সাইয়্যিদাতুনা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক বিলাদত
শরীফ
বুযুর্গ নানা-নানী আলাইহিমাস সালাম
উনাদের মুবারক তত্ত্বাবধানে ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত সাইয়্যিদাহ দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি দ্বীনের আনুষ্ঠানিক ছবকলাভ
করেন। মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তা’য়ালা
তিনি উনার মনোনীত ওলীগণ উনাদেরকে কামিয়াবীর সকল পথ সুগম করে দিয়ে নৈকট্যসুধায় ধন্য
করে থাকেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা
আলাইহাস সালাম তিনি গন্তব্য সোপানে উপনীত হতে অবিরাম অবারিত পথ চলায় ছিলেন
ক্লান্তি ও ক্লেশহীনা। কোলাহল ও হলাহলপূর্ণ দুনিয়ায় বাস করেও
তিনি ছিলেন দুনিয়ার প্রতি নির্লিপ্ত। তাই উনার যাপিত
জীবন ছিলো “আপন ঘরে পরবাস।” হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে: “দুনিয়াতো
মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকেও দিয়ে থাকেন, যাকে তিনি মুহব্বত করেন না। কিন্তু ঈমান, মুহব্বত, মা’রিফাত
কেবল উনাকেই দান করেন, যাঁকে তিনি মুহব্বত করেন।” সুবহানাল্লাহ!
তাছাউফসহ সার্বিক
ইলমে শিক্ষা ও দীক্ষালাভ
মুহব্বত-মা’রিফাত
হাছিলের জন্য উন্মুখ অন্তর, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং আকর্ষণীয়
ব্যক্তিত্বের অধিকারী মাহবূব ওলীআল্লাহগণ উনারা অবিচলভাবে বর্তমানকে পেছনে ফেলে
কেবলই কাঙ্খিত মঞ্জিলের দিকে এগিয়ে যান। মহান
আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরিপূর্ণ মুহব্বত-মা’রিফাত
হাছিলের উপযোগী বেনাদকাতর হৃদয়, নিবিষ্ট ফিকির, অনুসন্ধিৎসু
মনন, জাগ্রত বিবেক, শানিত অনুভূতি উনাদের মাঝে নবতর সূক্ষ্ম
উপলব্ধির উন্মেষ ঘটায়। উনাদের সকল বিষয়-কর্মই, অর্থাৎ
উনাদের পুরো জীবন মুবারকই সুন্নতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে যায়। বাধ্যতামূলক এ সঙ্গতিবিধানের অনিবার্য
প্রয়োজনে আপন শায়খের মাধ্যমে বার বার উনাদেরকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আবেহায়াতের কাছেই ফিরে যেতে
হয়।
এসব গুণ-বৈশিষ্ট অর্জনের ক্ষেত্রে ছহীহ
সমঝ, মজবুত ঈমান, ও বিশুদ্ধ আক্বীদা অবধারিত প্রাথমিক
সোপান। এখান থেকেই শুরু হয় একজন মু’মিন
বান্দার অভিযাত্রা। তবে প্রজ্ঞা (ইলম) ও সমঝ (সূক্ষ্ম
উপলব্ধি)- ঈমান ও আক্বীদার সহযোগী না হলে গন্তব্যে পৌঁছা যায় না। ঈমান, আক্বীদা, আমল ও সমঝ ছহীহ না হলে জীবনব্যাপী
আয়াসসাধ্য আয়োজন এবং নিরলস আমলও পরিণতিতে মানুষকে জাহান্নামী করে দেয়। আপন শায়খের মাধ্যমে ইলম, সমঝ ও
কামিয়াবীদানের মুবারক নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের মালিক নূরে মুজাসসাম, মাশুকে
মাওলা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন: “আল্লাহ
পাক তিনি যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনি সমঝ দান করে থাকেন এবং
আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (ওই হাদিয়া) বণ্টনকারী।” তিনি আরো ইরশাদ করেন: “প্রত্যেক
নর-নারীর জন্য ইলম অর্জন করা ফরয।” মুবারক বিলাদত শরীফ সূত্রেই ওলীআল্লাহগণ
উনাদের মাঝে ইলম ও সমঝ সম্পৃক্ত থাকা সত্ত্বেও মুবারক শৈশব থেকেই ইলম ও সমঝ লাভের
জন্য উনারা উন্মুখ থাকেন। আর এ ইলম হাছিলের জন্য আনুষ্ঠানিকতারও
আবশ্যকতা দেখা দেয়।
প্রশান্ত ও প্রসারিত অন্তকরণের আয়োজনে
চিন্তা ও অন্বেষার ব্যাপ্তি এবং বেদনার গভীরতা না থাকলে প্রার্থীত প্রয়োজন পূরণ হয়
না। মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামত কেবল যোগ্য
অন্তরেই ঠাঁইলাভ করে থাকে। এ পরম নিয়ামত পেলেই
বান্দা মর্যাদাবান হয়। এ মর্মে বিদগ্ধ কবি তাঁর মরমী কাছীদায়
বলেন: “নাজ-নিয়ামত কোন যোগ্যতার মুখাপেক্ষী নয়। ছাহিবে নিয়ামত মহান আল্লাহ পাক এবং উনার
প্রিয়তম হাবীব, রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর
রহীম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা অপার করুণায়
নিয়ামতদান করলেই বান্দা যোগ্যতার আসনে অধিষ্টিত হয়।” সুবহানাল্লাহ!
সত্য যে, আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত-মারিফাত, তায়াল্লুক-নিছবত
ও সন্তুষ্টিলাভের জন্য ওলীআল্লাহগণ উনাদের উন্মুখ অন্তরে প্রচ্ছন্নভাবে মিশে থাকা
আগ্রহ ও উদ্বেলতাই নিয়ামত আকর্ষণ করে থাকে। তাই
প্রসারিত ও অনাবিল হৃদয়ে যাঁর আকাঙ্খা ও আকুতি যতো বেশি, তাঁর
প্রাপ্তিযোগও ততো বেশি। ওলীআল্লাহগণ উনাদের বেদনা-বিমুগ্ধ মননে
অনুক্ষণ এ আকঙ্খা ও আকুতির নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ সাধিত থাকে। (চলবে)
আবা-২১৫
0 Comments:
Post a Comment