৩৬০ নং- সুওয়াল - বংশ মর্যাদা নিয়ে গৌরব অর্জন করা কি? মানুষের নামের আগে-পরে সাইয়্যিদ, খন্দকার, খান, পাঠান ইত্যাদির ব্যবহার করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত জানতে চাই?

সুওয়াল - বংশ মর্যাদা নিয়ে গৌরব অর্জন করা কি? মানুষের নামের আগে-পরে সাইয়্যিদ, খন্দকার, খান, পাঠান ইত্যাদির ব্যবহার করা কতটুকু শরীয়ত সম্মত জানতে চাই?

জাওয়াব - আমরা সকলেই হযরত আদম আলাহিস সালাম উনার সন্তান, আর আদম সন্তান হিসেবে আমরা আশরাফুল মাখলুকাত হয়েছি। যা  কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
لقد كرمنابنى ادم.
অর্থ- “আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি।” 
এর বিপরীতে ইরশাদ হয়েছে- 
ثم رددناه اسفل سافلين.
অর্থ- “আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নিচ থেকেও নিচে।” 
অর্থাৎ মানুষ বদ আমলের কারণে জাহান্নামের অতল তলে পৌঁছে যাবে। তবে নেক আমল ও খোদা ভীতির মাধ্যমে মানুষ একে অপরের থেকে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার হতে পারে। যেটা মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে উল্লেখ করেছেন,
ان اكر مكم عند الله اتقاكم.
 অর্থ- “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক সম্মানিত, যে বেশী তাকওয়াধারী, পরহেযগার।” কাজেই বংশ-গোত্র, ভাষা-জাতি, ধন-সম্পদ, রং-রূপ, আকার-আকৃতি প্রভৃতির কারণে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে পারে না। শ্রেষ্ঠত্বের বা মর্যাদার সঠিক মাপকাঠি হলো তাক্ওয়া বা খোদাভীতি। এজন্য বলা হয়-
ঊদূ লেখা ঢুকবে............................

অর্থ- যদি আকৃতির দ্বারা মানুষ মনুষত্ব হাসিল করতে পারতো, তাহলে হাবীবু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু জাহেল এক হয়ে যেতেন। প্রকাশ্যে (সূরতে) যা দেখা যায়, তা মনুষত্বের বিপরীত, (এ সূরত) মনুষত্ব নয়, বরং মনুষত্বের গিলাফ বা আবরণ।” 
হাদীছ  শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
من تواضح رفعه الله.
অর্থ- “যে বিনয় প্রকাশ করে, আল্লাহ্ পাক তাঁকে মর্যাদা দান করেন।” 
অতএব কোন মানুষের জন্য শুধু বংশ মর্যাদা নিয়ে নয়, যে কোন বিষয়েই গৌরব-অহংকার করা শরীয়তের খেলাফ, তথা নাজায়েয। কারণ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, 
ان الله لا يحب من كان مختلا فخورا.
অর্থ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা দাম্ভিক, ফখরকারীকে পছন্দ করেন না। 
এবং হাদীছে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে,
لكبرياء ردائى والعظمة ازارى فمن نزغ فى شيئ منهما ادختله النار ولا ابالى.
অর্থ- “অহংকার আমার চাদর এবং বড়ত্ব আমার লুঙ্গি, যে এ’দুটি নিয়ে টানাটানি করবে, আমি তাকে জাহান্নামে দাখিল করবো। এতে আমার কোন পরওয়া নেই।”
আর মানুষের নামের আগে-পরে যে সাইয়্যিদ, খান, পাঠান ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে, তা তার বংশ পরিচয়ের জন্য। যেমন মহান আল্লাহ পাক কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
انا خلقناكم من ذكرو انشى وجعلناكم شعوبا وقبائل لتعارقوا- ان اكر مكم عند الله اتقاكم.
অর্থ- “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা থেকে সৃষ্টি করেছি এবং আমি তোমাদেরকে বিভিন্ন গোত্র ও শাখায় বিভক্ত করেছি পরস্পর পরিচয় লাভের জন্য। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট ঐ ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক পরহেযগার।”
মূলতঃ নামের আগে বা পরে বংশ পরিচয়, উল্লেখ করা স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। কারণ বংশ পরিচয় বা লক্বব উল্লেখের মাধ্যমে মানুষের আমল-আখলাক এবং তার প্রকৃত পরিচয় জানা সম্ভব হয়। যেমন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ইমাম হাসান আলাইহাস সালাম ও হযরত ইমাম হুসাইন  আলাইহিস সালাম উনাদেরকে সাইয়্যিদ, হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে ফারূক উপাধি দিয়েছেন এবং স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনাকে সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত করেন।
আবা-২৪

0 Comments: