৩৬১ নং- সুওয়াল - কোন জ্ঞানী ব্যক্তি প্রায়ই বলে থাকেন যে, পরকালে রক্ত সম্পর্কের কোন উপকারে আসবেনা। বরং দ্বীনি সম্পর্ক উপকারে আসবে। কিন্তু হাদীছ শরীফে আছে, (রেহেম) রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী যেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো। এখন দুনিয়াতে রক্ত সম্পর্ক এবং পরকালে রক্ত সম্পর্ক কোনটির গুরুত্ব বেশী? জানতে বাসনা রাখি।

সুওয়াল - কোন জ্ঞানী ব্যক্তি প্রায়ই বলে থাকেন যে, পরকালে রক্ত সম্পর্কের কোন উপকারে আসবেনা। বরং দ্বীনি সম্পর্ক উপকারে আসবে। কিন্তু  হাদীছ শরীফে আছে, (রেহেম) রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী যেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো। এখন দুনিয়াতে রক্ত সম্পর্ক এবং পরকালে রক্ত সম্পর্ক কোনটির গুরুত্ব বেশী? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব - হ্যাঁ,  হাদীছ  শরীফে আছে,
لا يد خل الجنة قاطع الرحم.
অর্থঃ- “আত্মীয়তার (রক্ত) সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেস্তে প্রবেশ করবে না।” 
যে সমস্ত আত্মীয়ের সাথে রক্তের সম্পর্ক রক্ষা করলে শরীয়তের কোন ক্রুটি হয়না, অর্থাৎ শরীয়ত পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়না, তাদের সাথে আত্মীয়তা রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং আত্মীয়তার বন্ধনকে ছিন্ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর যে সমস্ত আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে গেলে শরীয়ত পালনে বিঘ¦তা সৃষ্টি হয় অর্থাৎ ঈমান, আমল, ইখলাসে ক্রুটি আসে, তাদের সাথে আত্মীয়তা রক্ষা করা জায়েয নেই। কাজেই যেখানে দুনিয়াতেই সর্বক্ষেত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা শর্ত নয়, সেখানে পরকালে রক্ত বা আত্মীয়তার সম্পর্ক কি কাজে আসতে পারে? কারণ মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফ-এ বলেন,
يوم يفرالمرء من اخيه وامه وابيه وصابته وبنيه.
অর্থঃ- “হাশরের দিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই, মাতা-পিতা, স্ত্রী এবং সন্তান হতে। পরকালে সাধারণভাবে রক্তের সম্পর্ক কাজে আসবে না সত্যই তবে রক্তের ঐ সম্পর্ক কাজে আসবে, যার সাথে দ্বীনি সম্পর্ক জড়িত।” (সূরা আবাছা আয়াত নং-৩৪,৩৫,৩৬) 
এছাড়াও শুধু দ্বীনী সম্পর্কেও উপকারে আসবে। যেমন  হাদীছ  শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
يشفع يوم القيامة ثلاث الانبياء ثم العلماء ثم الشهداء.
অর্থঃ- “ক্বিয়ামতের দিন নবী-রসূল আলাহিস সালামগণ উনারা, আলিমগণ উনারা এবং শহীদগণ উনারা শুপারিশ করবেন।”
  ‘মুসলিম শরীফ’-এর একটি হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, ক্বিয়ামতের দিন সাত প্রকার লোক মহান আল্লাহ পাক উনার আরশের ছায়ার নিচে স্থান পাবেন, তন্মধ্যে এক প্রকার হচ্ছে- যাঁরা পরস্পর মহান আলাহ্ পাক উনার মুহব্বতে একত্রিত হন এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহব্বতে পৃথক হন।
উপরোক্ত  হাদীছ  শরীফদ্বয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়াই একমাত্র দ্বীনি সম্পর্কের দরুন শুপারিশ নসীব হবে। তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ ইত্যাদি হাদীছ  শরীফের কিতাবে হাফেযে কুরআনের ফযীলত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে হাফেয সাহেব বা আমল (আমলকারী) তিনি হাশরের দিন উনার পরিবারের দশ জনকে, যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে, তাদেরকে শুপারিশ করতে পারবেন এবং তাঁর শুপারিশের কারণে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে অবশ্যই এ সমস্ত ব্যক্তিদের ঈমান থাকা শর্ত। কেননা কাফির কখনো বেহেস্তে প্রবেশ করবে না। 
উপরোক্ত  হাদীছ  শরীফ দ্বারা যদিও দেখা যাচ্ছে যে, হাফেয সাহেবের শুপারিশে উনার পরিবারের দশজন রক্ত সম্পর্ক থাকার কারণে নাযাত পাচ্ছে। মূলতঃ রক্ত সম্পর্কের সাথে সাথে ঈমান থাকার কারণে নাযাত পাবে। যেমন হযরত নুহ আলাহিস সালাম উনার ছেলে (কেনান) প্রসঙ্গে ‘সুরা হুদ’-এ ইরশাদ হয়েছে,
انه ليس من اهلك انه عمل غير صالح.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই সে আপনার পরিবারের অন্তর্ভূক্ত নয়, তার আমল ভাল নয় অর্থাৎ সে ঈমানদার নয়।”
এখানে রক্তের সম্পর্ক থাকা সত্বেও দ্বীনি সম্পর্ক না থাকার কারণে কেনান নাযাত পায়নি। কাজেই সর্বাবস্থায় দ্বীনি সম্পর্ককে প্রাধান্য দিতে হবে, অর্থাৎ দ্বীনি সম্পর্কেরই গুরুত্ব বেশী।
আবা-২৪

0 Comments: