৮০ নং- সুওয়াল: আমরা কেন শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি? অনেকে বলে থাকে যে, “একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মদগণই দাওয়াতি কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এই দাওয়াতি কাজ করার দরুনই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, অন্য কোন কারণে নয়।” এটা সঠিক কিনা তা জানালে বাধিত হবো।


সুওয়াল: আমরা কেন শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি? অনেকে বলে থাকে যে, “একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মদগণই দাওয়াতি কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এই দাওয়াতি কাজ করার দরুনই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, অন্য কোন কারণে নয়।এটা সঠিক কিনা তা জানালে বাধিত হবো।
জাওয়াব: একমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার কারণেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি।
অনেকে বলে থাকেন যে, ‍নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতই শুধুমাত্র দাওয়াতি কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এ কারণেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, এ কথাটা শুদ্ধ নয়। 
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, “সমস্ত নবী আলাইহিস সালামগণ উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু করেছেন। সমস্ত নবী আলাইহিস সালাম উনার দোয়াই মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করেছেন, তবে সরাসরি কবুল করেছেন হযরত ইসা আলাইহিস সালাম উনার দোয়া। অনেকে মনে করে থাকে বা বলে থাকে, একমাত্র হযরত ইসা আলাইহিস সালাম ব্যতীত আর কোন হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনার দোয়াই কবুল হয়নি, এটা সঠিক নয়। কেননা দোয়া কবুল হয় তিন প্রকারে। প্রথম প্রকার- বান্দা যা চায়, আল্লাহ্ পাক তিনি সরাসরি তা দিয়ে দেন। দ্বিতীয় প্রকার- বান্দা যা চায়, তার চেয়ে যা বেশী জরুরী, সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়ে থাকেন, যে জরুরত সম্বন্ধে বান্দা নিজেই জানে না। তৃতীয় প্রকার- বান্দা যা চায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা তাকে না দিয়ে তা কবুল করে তার সওয়াবটুকু পরকালের জন্য জমা করে রাখেন। বান্দা যখন হাশরের ময়দানে উপস্থিত হয়ে তার নেকী কম দেখবে, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “হে বান্দা! তোমার জন্য অমুক স্থানে নেকী রাখা হয়েছে, তখন সেই বান্দা গিয়ে দেখবে যে, তার জন্য পাহাড় পাহাড় নেকী রাখা হয়েছে। সে বলবে, আয় আল্লাহ পাক! আমি তো এত নেক কাজ করিনি, আমার এত নেকী আসলো কোথা থেকে? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “তুমি যে সকল দোয়া দুনিয়াতে করেছিলে, যার বদলা দুনিয়াতে দেয়া হয়নি, সে কারণে তুমি মনে করেছিলে যে, তোমার দোয়া কবুল করা হয়নি, অথচ আমি তা কবুল করেছিলাম এবং তাই পাহাড় পাহাড় নেকী আকারে জমা হয়েছে।তখন বান্দা বলবে, আয় আল্লাহ পাক! দুনিয়াতে আমার সমস্ত দোয়াগুলিরই বদলা না দিয়ে যদি পরকালের জন্য জমা রাখা হতো, তাহলে তা আমার জন্য ফায়দার কারণ হতো।
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে এটাই সাবেত হয়, শুধুমাত্র দাওয়াতের কারণেই যদি উম্মতে হাবীবী উনার শ্রেষ্ঠত্ব হতো, তাহলে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিস সালাম তিনি দাওয়াতের দায়িত্ব পাওয়া সত্ত্বেও  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য দোয়া করতেন না। বরং উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব হলো দাওয়াতের কারণে নয় বরং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার কারণে। আরও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
وكذالك جعلناكم امة وسطا لتكونوا شهداء على الناس وسكون الرسول عليكم شهيدا.
অর্থঃ- এরূপেই আমি তোমাদেরকে উম্মতে ওয়াসাত (শ্রষ্ঠ উম্মত) করেছি। যেন তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও, সমস্ত মানুষের জন্য এবং যাতে রসূল আলাইহিস সালামগণ সাক্ষ্যদাতা হন, তোমাদের জন্য।(পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৩)  
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়, হাশরের ময়দানে যখন সমস্ত হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের গুণাহ্গার উম্মতগণকে জিজ্ঞেস করা হবে, “তোমরা কেন নেক কাজ করনি?” তখন তারা বলবে, দুনিয়াতে আমাদের কাছে কোন আসমানী কিতাবও আসেনি এবং কোন হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনারা আগমন করেনি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী আলাইহিস সালাম গণকে জিজ্ঞেস করবেন, “আপনারা কি তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছাননি?” উনারা বলবেন, “হ্যাঁ, পৌঁছিয়েছি।তখনও অন্য হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনার উম্মতগণ তা অস্বীকার করবে। তখন আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “হে নবী আলাইহিস সালামগণ আপনাদের সাক্ষী কোথায়?” তখন উনারা বলবেন, উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই আমাদের সাক্ষী। তখন উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হলে উনারা বলবে, “হ্যাঁ, সমস্ত হযরত নবী আলাইহিস সালাম উনারা দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন।একথা শুনে অন্যান্য নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের উম্মতগণ বলবে, উম্মতে হাবীবীগণ তো আমাদের থেকে অনেক পরে এসেছে, তারা কিভাবে আমাদের সাক্ষী হয়? তখন আল্লাহ্ পাক উম্মতে হাবীবীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে উনারা বলবেন, “হ্যাঁ, আমরা তাদের থেকে অনেক পরে এসেছি, তবে আমাদের নিকট এসেছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল  মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তিনি আমাদেরকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। আমরা উনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং উনাকে সত্য বলে জেনেছি, তাই আমাদের সাক্ষ্য সত্য। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন এবং  তখন উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমর্থন করে সাক্ষী দেবেন। হ্যাঁ, তারা যা বলেছে সবই সত্য এবং আমিই তাদেরকে এ তথ্য জানিয়েছি, যা আমি  মহান আল্লাহ পাক উনার  তরফ থেকে জেনেছি। (সিহাহ সিত্তাহ্ দ্রষ্টব্য)       
সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আমাদেরকে যে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, তা দাওয়াতী কাজ করার জন্য নয় বরং তা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রকৃত উম্মত হবার কারণে।           পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, আগেকার উম্মতগণ উনাদের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল।
যেমন পবিত্র সূরা ইয়াসীনে উল্লেখ করা হয়েছে, “কোন এক জনপদে হযরত রসূল আলাইহিস সালামগণ উনারা আগমন করলে সেখানকার অধিবাসীগণ তাদের রিসালতকে অস্বীকার করে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলো। তখন শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি, যিনি ঈমান গ্রহণ করেছিলেন, তিনি দৌড়ে এলেন এবং তার সম্প্রদায়কে রসূল আলাইহিস সালামগণকে হত্যা করতে নিষেধ করলেন এবং উনাদের অনুসরণ করার উপদেশ দিলেন।এটা ছাড়া  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার নিকট পবিত্র ওহী মুবারক পাঠালেন, অমুক অমুক শহরের সমগ্র বাসিন্দাসহ উল্টাইয়া দাও।তখন হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি আরজ করলেন, “হে পরওয়ারদেগার! এ শহরে আপনার অমুক বান্দা রয়েছে, যে মুহূর্তকালও আপনার নাফরমানীতে লিপ্ত হয়নি।তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “শহরটিকে ঐ ব্যক্তি এবং সমগ্র বাসিন্দাসহ তাদের উপর উল্টাইয়া দাও, কারণ আমার জন্য ঐ ব্যক্তির চেহারায় এক মুহূর্তের জন্য পরিবর্তন আসেনি। (অর্থাৎ সে আফসোস করেনি।)পূর্ববর্তী উম্মতগণ উনাদের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল, কেননা দায়িত্ব থাকার কারণেই তা পালন না করার জন্য বনী ঈসরাইলেরউল্লেখিত ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে হয়েছে।
সুতরাং উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং তার আনুষাঙ্গিক ঘটনা ব্যতীত আরও অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ  শরীফ এবং ঘটনার মাধ্যমে জানা যায় যে, পূর্ববর্তী উম্মতগণ যে দাওয়াতের কাজ করেছেন, তা তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে আমিনিয়া, তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন ইত্যাদি এবং এটা ব্যতীত বিশুদ্ধ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাব দ্বারাও প্রমাণিত।          মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
كنتم خيرامة خرجت للناس تأمرون بالمعرف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থঃ- তোমরা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছো। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও বদ কাজের নিষেধ করবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবে।
অনেকে পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ’ উনার উপরোল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উল্লেখ করে বলে থাকে যে, আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, কারণ আমরা সৎ কাজের আদেশ করি এবং অসৎ কাজের নিষেধ করি। মূলতঃ তাদের এ ব্যাখ্যা ঠিক নয়, কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল  মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়াটাই হলো আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ। আর এ ছাড়া আমাদের যতগুলো গুণ দেয়া হয়েছে, তাও একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণে। অন্যান্য হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য আরজু করেছেন, তাই বলে কেউ যেন এটা মনে না করে যে, উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের হতে বেশী। বরং শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণে যে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব, তা বুঝানোর জন্যই সমস্ত হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ উনার  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য আরজু করেছেন। 

আবা-১১

0 Comments: