জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া - ৯

জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়  সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ      
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদয়াতের মূলোৎপাঁনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।      তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মাকছূদও ঠিক তাই। কেননা কিছু লোক ক্বিল্লতে ইলম ও ক্বিল্লতে ফাহম”- অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, “জানাযার পর দোয়া করা বিদয়াত ও নাজায়িয।”         তাদের উক্ত বক্তব্য একদিক থেকে যেরূপ ঈমান বা আক্বীদার ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ, অপর দিক থেকে আমলের ক্ষেত্রেও তদ্রুপ ক্ষতির কারণ।      প্রথমতঃ ঈমানের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ এ জন্য যে, আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো কোন জায়িয আমলকে নাজায়িয বলা কুফরী। অর্থাৎ ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দিগী বা নেক আমল কবূল হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবূল হওয়ার পূর্ব শর্ত।         
দ্বিতীয়তঃ আমলের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ এ জন্য যে, তাদের উক্ত অশুদ্ধ বক্তব্যের কারণে যেরূপ মাইয়্যিতজীবিতদের দোয়া থেকে বঞ্চিত হবে তদ্রুপ জীবিতরা বঞ্চিত হবে হাদীস শরীফের উপর আমল করা থেকে। কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, আশিকে উম্মত, নূরে মুজাসসাম, ফখরে দুআলম, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাইয়্যিতেরজন্য অধিক মাত্রায় এবং ইখলাছের সাথে দোয়া করতে বলেছেন বলে ছহীহ হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে। শুধু তাই নয় স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেরূপ জানাযার নামাযে মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করেছেন অনুরূপ জানাযার বাইরেও মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করেছেন। সুতরাং মাইয়্যিতের জন্য জানাযার নামাযে দোয়া করা যেরূপ সুন্নত, তদ্রুপ জানাযার বাইরেও সুন্নত। তা জানাযার আগেই হোক বা পরে হোক। সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, তাদের বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষ একটি সুন্নত পালনের ফযীলত থেকে মাহরূম হবে নিঃসন্দেহে।         মূলকথা হলো, সকল মুসলমান যেন জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা রাখতে পারে এবং সুন্নত মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারে এ মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বহুল প্রচারিত মাসিক আল বাইয়্যিনাতে জানাযার পর দোয়া ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।            মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর পূর্ববর্তী সংখ্যাগুলোতে প্রদত্ত জানাযাসম্পর্কিত আলোচনা দ্বারা যা ছাবিত হয়েছে তার সার সংক্ষেপ হলো- মানুষ মাত্রই মৃত্যু বরণ করবে, মানুষের মৃত্যুর পর শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা এবং মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্যে মৃত ব্যক্তির উপর ছলাতুল জানাযাবা জানাযা নামায আদায় করা। শুধু তাই নয় জীবিত ব্যক্তিদের উপর দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের জন্যে অধিক পরিমাণে দোয়া বা মুনাজাত করা। তাই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
فاخلضوا له الدعاء اكثر والدعاء.
অর্থঃ- ইখলাছের সাথে ও অধিক পরিমাণে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে দোয়া-মুনাজাত কর।এখন প্রশ্ন হলো- মৃত ব্যক্তির জন্যে কখন দোয়া বা মুনাজাত করবে? অর্থাৎ শরীয়তে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করার নির্দিষ্ট কোন সময় বর্ণিত আছে কি?             মূলতঃ শরীয়ত মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করার ব্যাপারে কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেয়নি যে, অমুক সময় দোয়া করতে হবে, আর অমুক সময় দোয়া করা যাবেনা। বরং শরীয়তে মৃত ব্যক্তির জন্য যে কোন সময় দোয়া করার বিধান রয়েছে। যেমন ইন্তিকালের পর জানাযার পূর্বে, জানাযার নামাযের মধ্যে, জানাযার পর দাফনের পূর্বে এবং দাফনের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে কোন সময় মৃত ব্যক্তির জন্যে হাত তুলে ও সম্মিলিতভাবে দোয়া করা জায়িয ও সুন্নত। নাজায়িয বা বিদয়াত মোটেও নয়। এ সম্পর্কিত বহু দলীল-আদিল্লাহ কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, শরাহ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহ থেকে পূর্ববর্তী সংখ্যাগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানাযা নামাযের পর হাত তুলে, সম্মিলিতভাবে দোয়া-মুনাজাত করাকে বিদয়াত ও মাকরূহ বলে প্রচারকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্যসমূহের  খন্ডনমূলক জাওয়াব-      
বাতিলের আতঙ্ক, দ্বীনে হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতেপ্রদত্ত জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উল্লিখিত দলীল-আদিল্লাহর দ্বারা অকা্যঁভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু জানাযার পূর্বে ও দাফনের পরেই নয় বরং জানাযার পর দাফনের পূর্বেও মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা জায়িয ও সুন্নত।যার স্বপক্ষে প্রায় ২১১টি দলীল মওজুদ রয়েছে যা আল বাইয়্যিনাতের ১০৭ ও ১০৮তম সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের অভিমতও এটাই। অথচ কিছু সংখ্যক দেওবন্দী ও ওহাবী মৌলভী কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ স্বল্প বিদ্যা ও অল্প বুঝের কারণে এবং ফিক্বাহর কিতাবের কোন কোন ইবারতের সঠিক মর্ম অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে প্রচার করে থাকে যে, জানাযার পর দাফনের পূর্বে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া-মুনাজাত করা বিদয়াত ও মাকরূহ। আর এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন দলীল-প্রমাণ না পেয়ে মনগড়া কিছু যুক্তি ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য পেশ করে থাকে।
জানাযার পর দাফনের পূর্বে দোয়া-মুনাজাত করাকে বিদয়াত ও মাকরূহ প্রমাণ করার জন্যে তারা যে সকল মনগড়া যুক্তি ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করে থাকে, নিম্নে পর্যায়ক্রমে নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে তা খন্ডন করা হলো-
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
জানাযার পর মুনাজাত বিরোধীদের মনগড়া যুক্তি ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য  এবং তার খন্ডনমূলক জাওয়াব-২
জানাযার পর মুনাজাতকে বিদয়াত বলে প্রচারকারীরা আরো বলে থাকে যে, “জানাযার পর মুনাজাতকে জায়িয বলে ফতওয়া প্রদানকারীগণ যে সকল দলীলসমূহ উল্লেখ করে থাকেন তা হচ্ছে আমবা মতলকদলীল। অথচ আমদলীল দিয়ে খাছবিষয় প্রমাণিত হয়না।”      মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত জিহালতপূর্ণ বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “আমদলীল দিয়ে খাছ বিষয় প্রমাণিত হয়নামুনাজাত বিরোধীদের এ বক্তব্য চরম জিহালতপূর্ণ ও কুরআন-সুন্নাহর সম্পূর্ণ খিলাফ। মুনাজাত বিরোধীরা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে কুরআন-সুন্নাহ থেকে একটি দলীলও কি দেখাতে পারবে? মূলতঃ কস্মিনকালেও তারা তা পারবেনা। কেননা, কুরআন-সুন্নাহর কোথাও একথা উল্লেখ নেই যে, ‘আমদলীল দ্বারা খাছবিষয় প্রমাণিত হয়না। সুতরাং মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত বক্তব্য মনগড়া, দলীলবিহীন ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী বিধায় তা সম্পূর্ণরূপেই পরিত্যাজ্য।           দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, মুনাজাত বিরোধীরা যে অপপ্রচার করে, “জানাযার পর মুনাজাতকে জায়িয বলে ফতওয়া দানকারীগণ যে সকল দলীলসমূহ উল্লেখ করে তা আম দলীল।”      বস্তুতঃ তাদের এটা শুধু অপপ্রচার নয় বরং ডাহা মিথ্যাও বটে। কেননা, জানাযার পর মুনাজাতকে জায়িয বলে ফতওয়া প্রদানকারীগণ শুধুমাত্র আমদলীলের ভিত্তিতেই তা জায়িয বলেন না বরং তার স্বপক্ষে অসংখ্য খাছদলীলও বিদ্যমান রয়েছে। যা ইতোপূর্বেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতেউল্লেখ করা হয়েছে।           মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত বক্তব্য যে ডাহা মিথ্য তা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে এবং হক্ব তালাশীদের বিভ্রান্তি দূর করার লক্ষ্যে নিম্নে তার কিছু প্রমাণ উল্লেখ করা হলো-    নাছবুর রাইয়াহ লি আহাদীসিল হিদায়াহ’-র ২য় জিঃ ২৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن عبد الله بن ابى بكر قال: لما التقى الناس بمئونة، جلس رسول الله صلى الله عليه وسلم على المنير، وكشف له ما بينه وبين الشام، فهو ينظر الى معركتهم، فقال عليه السلام: اخذ الراية زيد بن حارثة، فمضى حتى استشهد، وصلى عليه ودعاله، وقال استغفرو اله، وقد دخل الجنة، وهو يسعى، ثم اخذ الراية جعفر بن ابى طالب، فمضى حتى استشهد، فصلى عليه رسول الله صلى اله عليه وسلم ودعاله، وقال: استغفروا له، وقد دخل الجنة، فهو يطير فيها بجناحين حيث شاء.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ মাঊনানামক স্থানে মিলিত হলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে উঠে বসলেন। তখন উনার কাছে শাম দেশের (মুতার যুদ্ধের) অবস্থা স্পষ্ট প্রকাশিত হচ্ছিল। তিনি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যুদ্ধের অবস্থা দেখছিলেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (যুদ্ধে) হযরত যায়িদ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পতাকা ধরলেন, অতঃপর তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। তাই তিনি উনার উপর জানাযা নামায পড়লেন এবং উনার জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন, তোমরাও উনার জন্য ইস্তিগফার কর। তিনি জান্নাতে চলে গেছেন, আর তা খুবই দ্রুত। হযরত জাফর ইবনে আবু তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পতাকা ধরলেন অতঃপর তিনিও শহীদ হয়ে গেলেন। তাই, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর জানাযা নামায পড়লেন এবং উনার জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন, তোমরাও উনার জন্য ইস্তিগফারের দোয়া কর। তিনি তাড়াতাড়ি জান্নাতে চলে গেছেন এবং সেখানে দুটি ডানা নিয়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়ে বেড়াবেন।” (অনুরূপ ফতহুল ক্বদীর ২য় জিঃ ৮১ পৃষ্ঠা, মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া ২য় জিঃ ও নূরুল হিদায়াহ ১ম জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।)     
জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস, আলিম, ফক্বীহ হযরত আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখা আশয়াতুল লুময়াতকিতাবের ১ম জিঃ ৬৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
واحتمال دارد كه بر جنازة بعد از نماز يا ..يش ازار بقصد تبرك خوانده باشد ..نانكه الان متعارف است والله اعلم.
অর্থঃ- সম্ভবতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযা নামাযের পরে অথবা পূর্বে বরকতের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন। যেমন, আজকাল এর প্রচলন দৃষ্টি গোচর হয়। আল্লাহ পাক অধিক জ্ঞাত।”             মশহুর কিতাব যাদুল আখিরাত’-এর ৯ম বাব ১১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ودر روايت .. ست له رسول عليه السلام بر مرده نماز كزارد..س بكفت اللهم ان فان بن فلان فى ذمتك دخل فى جوارك فقه من فتنة القبر وعذاب النار وانت اهل الوفاء والحق اللهم اغرله وارحمه انك انت الففور الرحيم.
অর্থঃ- কোন কোন রিওয়ায়েতে রয়েছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযা নামায পড়ে এ দোয়া করেছেন,

اللهم ان فلان بن فلان فى ذمتك دخل فى جوارك فقه من فتنة القبر وعذاب النار وانت اهل اوفاء والحق اللهم اغفرله وارحمه انك انت الغفور الرحيم.
অর্থাৎ আয় আল্লাহ পাক! অমুকের পুত্র অমুক আপনার জিম্মাদারী ও হিফাযতে রয়েছে। আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা ও দোযখের আযাব হতে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা ও হক্ব পূরণকারী। অতএব, আপনি তাকে মাফ করে দিন ও তার প্রতি রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও মহা দয়াবান।”            মুফতিয়ে আযম হযরতুল আল্লামা আমীমুল ইহসান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত হাদিয়্যাতুল মুছাল্লীন’ -এর ১১২ ও ১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
بعض روا  یتوں میں ھے کہ حضور صلی اللہ علیہ وسلم نے نماز جنازہ پڑھی پھربہ دعا پڑھی. اَللھم ان فلان بن فلان (یھاں پرنام لے) فی ذمتک دخل فی جوارک فقہ من فتنۃ القبر وعذاب النار وانت اھل  الوفاء والحق اللھم اغفرلہ وارحمہ انک انت الغفور  الرحیم.
অর্থঃ- কোন কোন রিওয়ায়েতে আছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযা নামায পড়ার পর এ দোয়া করেছেন,

اللهم ان فلان بن فلان (يهاى ........) فى ذمتك دخل فى جوارك فقه عن فتنة القبر وعذاب النار وانت اهل الوفاء والحق اللهم اغفرله وارحمه انك انت الغفور الرحيم.
অর্থাৎ আয় আল্লাহ পাক! অমুকের পুত্র অমুক (এখানে মৃতের নাম বলবে) আপনার জিম্মাদারী ও হিফাযতে রয়েছে। আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা ও দোযখের আযাব হতে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা ও হক্ব পূরণকারী। অতএব, আপনি তাকে মাফ করে দিন ও তাকে রহম করুন।নিশ্চয়ই আপনি মহা ক্ষমাশীল ও মহা দয়াবান।অনুরূপ যাদুল আখিরাহ কিতাবেও আছে।           ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব মাবসূত লিস সারাখসী’-এর ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ورى عن ابن عباس رضى الله عنهما وابن عمر رضى الله عنه انهما فاتهما الصلاة على الجنازة فلما حضرا مازادا على الاستغفار له.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণিত। উনাদের দুজনের একদা জানাযা নামায ফউত হলো। যখন উনারা (নামাযের পর মাইয়্যিতের কাছে) উপস্থিত হলেন, তখন মাইয়্যিতের জন্য অতিরিক্ত ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।”           ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব মাবসূত লিস সারাখসী’-এর ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

وعبد الله بن سلام رضى الله عنه فاتته الصلاة على جنازة عمر فلما حضر قال ان سبقتمونى بالصلاة عليه فلاتسبقونى بالدعاء له.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জানাযা পাননি। (জানাযার পর) তিনি যখন (সেখানে) উপস্থিত হলেন তখন বললেন, “তোমরা জানাযা নামায যদিও আমার পূর্বে পড়ে ফেলেছ, তবে দোয়ার ক্ষেত্রে আমার থেকে অগ্রগামী হয়োনা।”     
উল্লিখিত প্রতিটি দলীলই খাছদলীল। অর্থাৎ উল্লিখিত দলীলের দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জানাযার নামাযের পর মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করেছেন এবং আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, ইমাম-মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণও স্পষ্টভাবেই জানাযার পর মুনাজাত করাকে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন।”    
সুতরাং মুনাজাত বিরোধীরা যে বলে, “জানাযার পর মুনাজাতের পক্ষে কোন খাছদলীল নেই।মুনাজাত বিরোধীদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা প্রমাণিত হলো।       তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, “আম দলীল দিয়ে খাছ বিষয় প্রমাণিত হয়না।মুনাজাত বিরোধীদের এ বক্তব্য শুধু চরম জিহালতপূর্ণই নয় বরং কুরআন-সুন্নাহকে অস্বীকার করারও নামান্তর। কেননা, শরীয়তে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো স্পষ্টভাবে অর্থাৎ খাছ ভাবে কুরআন-সুন্নাহয় উল্লেখ নেই। ইমাম-মুজতাহিদগণ আমদলীলের ভিত্তিতেই উল্লিখিত বিষয়গুলোকে হারাম বা হালাল, জায়িয বা নাজায়িয প্রমাণ করেছেন। এরূপ বহু দৃষ্টান্ত শরীয়তে আছে। নিম্নে এ সম্পর্কিত কতিপয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো-         প্রথম দৃষ্টান্ত
নানী-দাদী, নাতনী-পুতনীকে বিবাহ করা হারাম।কুরআন-সুন্নাহর কোথাও তার স্পষ্ট বা খাছ দলীল নেই। বরং ইমাম-মুজতাহিদগণ সূরা আন নিসা”-এর ২৩ নং আয়াত শরীফ

حرمت عليكم+ امها تكم .............)
অর্থাৎ  তোমাদের   জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে ও বোনদেরকে ......।) দ্বারাই নানী-দাদীকে বিবাহ  করা হারাম সাব্যস্ত করেছেন। অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণের বক্তব্য হলো, উক্ত আয়াত শরীফে বর্ণিত امهات শব্দটি مطلق বা আম। অর্থাৎ ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই মাকে বিবাহ করা যেরূপ হারাম তদ্রুপ উনার মা, তার মা অর্থাৎ নানী-দাদী প্রমুখকেও বিবাহ করা হারাম।    অতএব, প্রমাণিত হলো যে, অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণও আমদলীলের দ্বারা খাছবিষয় প্রমাণ করেছেন।   এখন আমাদের প্রশ্ন হলো, “যারা জানাযা সম্পর্কিত আমদলীলগুলো মানতে চায়না অথবা আমদলীলের ভিত্তিতে জানাযার পর দোয়াকেমেনে নিতে অস্বীকার করেতারা কি নানী-দাদীকে বিবাহ করা জায়িয মনে করে? কেননা, নানী-দাদীকে বিবাহ করার বিষয়টিও তো আমদলীলের দ্বারা প্রমাণিত। যদি তারা এটাকে অস্বীকার না করে তবে জানাযার দোয়াকে অস্বীকার করবে কিভাবে?
 দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত     
ইমাম-মুজতাহিদগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, “একই প্রকার বস্তু লেনদেনের সময় ওজনে কম-বেশী করা হলে তা সূদের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন, এক সের আাঁ দিয়ে দেড় সের আাঁ আদান-প্রদান করা। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ের কথাই উল্লেখ আছে। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الذهب بالذهب والفضة با لفضة والير با لير والشعير با لشعير والتمر بالتمر والملح بالملح مثلا بمثل يدا بيد فمن زاد او استزاد فقد اربى الاخذ والمعطى فيه سواء.
অর্থঃ- হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, স্বর্ণ, চান্দি, আাঁ, গম, খেজুর, লবণ এগুলো সমান ওজন এবং হাতে হাতে লেনদেন করবে। যে ব্যক্তি এগুলো আদান-প্রদানের সময় বেশী নিলো বা দিলো সে সূদ নিলো বা দিলো। দাতা এবং গ্রহিতা উভয়ে এক্ষেত্রে সমান।”             উল্লিখিত হাদীস শরীফে শুধুমাত্র স্বর্ণ-চান্দি, আাঁ-গম, খেজুর, লবন এই ছয়টি বিষয়ের কথাই উল্লেখ আছে। কুরআন-সুন্নাহর কোথাও ধান, ডাল, চিনি অনুরূপ আরো যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলোর কথা উল্লেখ নেই।     
অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণ উল্লিখিত ছয়টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এ জাতীয় যত প্রকার বিষয় রয়েছে সবগুলোর ক্ষেত্রে একই ফায়ছালা প্রদান করেছেন।          
সুতরাং এতেও প্রমাণিত হলো যে, ‘আমদলীলের দ্বারা খাছবিষয় প্রমাণিত হয়। যদি না হতো তবে ইমাম-মুজতাহিদগণ ধান, ডাল, চিনি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সেই একই রকম ফায়ছালা দিতেন না। কেননা, কুরআন-সুন্নাহর কোথাও তো ধান, ডাল, চিনি ইত্যাদির কথা সুস্পষ্ট বা খাছভাবে উল্লেখ নেই।    অতএব, মুনাজাত বিরোধীদের মতে উল্লিখিত বিষয়টি যদি আমদলীলের দ্বারা প্রমাণিত হতে পারে তবে জানাযার পর দোয়া জায়িযএটা কেন আমদলীলের দ্বারা প্রমাণিত হবেনা? অর্থাৎ এক্ষেত্রে কেন আমদলীল গ্রহণযোগ্য হবেনা?
তৃতীয় দৃষ্টান্ত
ঈদ, তারাবীহ ও আযানের পর আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হাত তুলে দোয়া-মুনাজাত করেছেন বলে কুরআন-সুন্নাহর কোথাও সুস্পষ্ট বা খাছভাবে উল্লেখ নেই। তথাপিও ইমাম-মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ مطلق বা আমদলীলের ভিত্তিতে ঈদ, তারাবীহ ও আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত করাকে জায়িয ফতওয়া দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মুনাজাত বিরোধীদের মুরুব্বী উলামায়ে দেওবন্দও এটাকে مطلق বা আমদলীলের ভিত্তিতে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো- প্রসঙ্গঃ দোয়া-মুনাজাতে হাত উঠানো        
দোয়া-মুনাজাতে হাত উঠানোর ব্যাপারে অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণের ফতওয়া হলো নামাযের বাইরে যে কোন দোয়াতেই হাত উঠানো জায়িয। কেননা, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই দোয়ায় হাত উঠিয়েছেন এবং হাদীস শরীফে হাত উঠিয়েই দোয়া করার কথা ব্যক্ত হয়েছে। যেহেতু কুরআন-সুন্নাহর কোথাও হাত উঠানোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের কথা উল্লেখ নেই। তাই ইমাম-মুজতাহিদগণ আমভাবে সকল দোয়াতে হাত উঠানোকেই জায়িয ও সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন।          যেমন, এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব ফতহুল ক্বদীর”-এর বিতরের অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,

ووجهه عموم دليل الرفع الدعاء ويجاب بانه مخصوص بما ليس فى الصلوة لاجماع على ان رفع فى دعاء التشهد.
অর্থঃ- দোয়ায় হাত উঠানোর বিষয়টি আম দলীলের দ্বারা প্রমাণিত। তাই যাবতীয় দোয়াতেই হাত উঠানো জায়িয। তবে ইজমা মতে নামাযে তাশাহহুদের সময় হাত উঠানো জায়িয নেই।”            আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফতওয়ায়ে শামীতে লিখেন,

قوله كالدعاء اى كما يرفعهما لمطلق الدعاء فى سائر الامكنه والازمنة على طبق ماوردت به السنة.
অর্থঃ- দোয়া বা মুনাজাতে হাত উঠানোর বিষয়টি مطلق বা আম অর্থাৎ ব্যাপক বিধায় সর্বত্র এবং সবসময় হাত উঠিয়ে দোয়া করা হাদীস শরীফ অনুযায়ী জায়িয ও সুন্নত।”       
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কুরআন-সুন্নায় স্পষ্ট বর্ণিত না থাকার পরও ইমাম-মুজতাহিদগণ আম দলীলের দ্বারা নামাযের বাইরে যে কোন দোয়ায় হাত উঠানোকে জায়িয ও সুন্নত প্রমাণ করেছেন। 
প্রসঙ্গঃ আযানের দোয়ায় হাত উঠানো         অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণ যেহেতু আম দলীলের দ্বারা যে কোন দোয়ার হাত উঠানোকে জায়িয বলেছেন। তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে,তাদের মতে আযানের দোয়াতেও হাত উঠানো জায়িয। মূলতঃ উনারা এটাকে জায়িয বলেই ফতওয়া দিয়েছেন। শুধু যে অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণই এটাকে জায়িয বলেছেন তাই নয় বরং যারা জানাযার পর দোয়া করার ক্ষেত্রে আম দলীলকে গ্রহণ করতে চায় না তাদের মুরুব্বী দেওবন্দীরা পর্যন্ত আম দলীলের ভিত্তিতে আযানের দোয়ায় হাত উঠানোকে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে।   
যেমন,“ইমদাদুল ফতওয়াতেউল্লেখ আছে যে,

بالتخصیص دعاء اذان مین ھاتھ اٹھانا تو  نھین دیکھاگر مطلقا دعا مین ھاتھ اٹھانا احادیث قولیۃ، فعلیۃ، مرفوعۃ، موقوفہ کثیرہ شھیدہ سے ثابت ھے من غیر تخصیص بدعاء  دون دعاء پس دعاء اذان مین بھی ھاتھ اٹھانا سنت ھوگا لاطلاق الدلائل.

অর্থঃ- খাছভাবে আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা পরিলক্ষিত হয়না। তবে আম বা সাধারণভাবে (যে কোন) মুনাজাতের সময় হাত উঠিনো সম্পর্কে বহু ক্বাওলী, ফেলী, মরফূ, মওকূফ ও বহু প্রসিদ্ধ হাদীস শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। কোন দোয়াকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সুতরাং আযানের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করাও সুন্নত প্রমাণিত হয়। কেননা দলীলসমূহ মুতলক্ব বা আম অর্থাৎ ব্যাপক।”      “ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ২য় জিঃ ১১০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

خصوصیت کے ساتھ اس موقع پر رفع یدین ثا بت نھین ھے  اگر چہ عموما دعاء مین رفع یدین کا مستحب ھونا اسکے استحباب کومقتضی ھے.

অর্থঃ- খাছভাবে আযানের মুনাজাতে হাত উঠানো প্রমাণিত নেই। তবে আম বা সাধারণভাবে যেহেতু মুনাজাতের মধ্যে হাত উঠানো মুস্তাহাব, তাই আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণই বহন করে।”              এ প্রসঙ্গে ফতওয়ায়ে রহীমিয়াতেউল্লেখ আছে যে,

اذان کے بعد کی دعأ مین ھاتھ اٹھانا متقول  نھین ھے ویسے مطلقا دعا مین ھاتھ اٹھانا قولی اور فعلی (حدیث) سے ثابت ھے. لھذا دعائے اذان  مین ھاتھ اطھائے کوسنت کی خلاف ورزی نھین کھا جائیگا.

অর্থঃ- আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা  (আমল দ্বারা) বর্ণিত নেই। তবে আম বা সাধারণভাবে মুনাজাতে হাত উঠানো ক্বাওলী এবং ফেলী (উভয় প্রকার হাদীস শরীফ) দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। তাই আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাকে সুন্নতের খিলাফ (বিপরীত) বলা যাবেনা।”             দেওবন্দীদের উক্ত বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত হলো যে, আম দলীল দ্বারা খাছ বিষয় প্রমাণিত হয়। কেননা তারা নিজেরাই আম দলীলের দ্বারা খাছ বিষয়কে অর্থাৎ আযানের দোয়ায় হাত উঠানোকে জায়িয ও সুন্নত প্রমাণ করেছে।প্রসঙ্গঃ ঈদ ও তারাবীহ নামাযের  পর দোয়া     আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদ ও তারাবীহ নামাযের পর দোয়া-মুনাজাত করেছেন এরূপ খাছ বা স্পষ্ট কোন বর্ণনা কুরআন-সুন্নাহর কোথাও নেই। তবে ফরয নামায ও ইস্তেস্কার নামাযের পর দোয়া-মুনাজাত করেছেন বলে হাদীস শরীফে স্পষ্টই বর্ণিত আছে। অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণ আযানের দোয়ায় হাত উঠানোর অনুরূপ আম দলীলের ভিত্তিতে ঈদ ও তারাবীহসহ সকল নামাযের পরেই দোয়া মুনাজাত করাকে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন।  শুধু তাই নয় দেওবন্দী মুরুব্বীরাও আম দলীলের ভিত্তিতে ঈদ ও তারাবীহ নামাযের পর দোয়া-মুনাজাত করা ও দোয়ায় হাত উঠানোকে জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে।            আহসানুল ফতওয়া”-এর ৩য় জিঃ ৫১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اس سے متعلق کوئی صریح جزیہ نھین البتہ دعا بعد الصلوۃ کے گلیہ مین یہ بھی داخل  ھے. کیونکہ تراویح مستقل نمار ھے.

অর্থঃ- এ ব্যাপারে খাছ বা স্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায়না, অবশ্য নামাযের পর মুনাজাত করা সংক্রান্ত হাদীস শরীফের মধ্যে তারাবীহ নামাযও অন্তর্ভুক্ত, কেননা তারাবীহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পৃথক নামায। (সুতরাং তারাবীহ নামাযের পরও মুনাজাত করা জায়িয)।    ইমদাদুল আহকাম১ম জিঃ ২৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تراویح کے بعد دعا کرنا احادیث سے صراحۃ تو ثابت نھین ھان عام طور پر نماز کے بعد  دعاکو مستحب ھونا احادیث سے مفھوم ھوتا ھے  اس عموم مین ترا ویح بھی داخل ھے. الخ.

অর্থঃ- তারাবীহ নামাযের পর মুনাজাত করা হাদীস শরীফ দ্বারা স্পষ্ট  বা খাছভাবে প্রমাণিত নেই। হ্যাঁ, হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আম বা সাধারণভাবে নামাযের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব। তারাবীহ নামাযও এটার অন্তর্ভুক্ত। (অতএব, অন্যান্য নামাযের ন্যায় তারাবীহ নামাযের পরও মুনাজাত করা মুস্তাহাব)”       “ফতওয়ায়ে দেওবন্দ৫ম জিঃ ১৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عام طور سے نماز کے بعد دعا مانگنا  وارد ھوا ھے اھذا عیدین کی نماز کے بعد بھی  دعا مانگنا مسنون ومستحب ھے.

অর্থঃ- আম বা সাধারণভাবে নামাযের পর মুনাজাত করার কথা বর্ণিত রয়েছে। এজন্যে ঈদাইনের নামাযের পরও মুনাজাত করা সুন্নত ও মুস্তাহাব।” “ফতওয়ায়ে দেওবন্দ৫ম জিঃ ২০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

دعا يعد الصلوات مسنون ومستحب اسنت ودر احاديث وارد شده است كما نقلها فى الحصن الحصين وغيره ..س د صلوات صلوة عيدين هم داخل وشامل است بدعت كفت اند صحيح نيست .... حضرت مولانا رشيد احمد محدث وفقيه كنكوهى راوجميع اكابر واساتذه ما بعد نماز عيدين مثل صلوات مكنوبات داعا كى فرمودند س هركه اورابد عت كفت صحيح نيست.
অর্থঃ- সকল নামাযের পরেই মুনাজাত করা সুন্নত ও মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে হিসনে হাসীন ও অন্যান্য হাদীস শরীফের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। সুতরাং নামাযসমূহের মধ্যে ঈদাইনের নামাযও অন্তর্ভুক্ত, বিদয়াত বলা সঠিক নয়। ....... মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী এবং সকল আকাবির ও আসাতিযাগণ ফরজ নামাযের ন্যায় ঈদাইনের নামাযের পরও মুনাজাত করতেন। সুতরাং ঈদাইনের নামাযের পর মুনাজাত করাকে বিদয়াত বলা কারো জন্যে শুদ্ধ হবেনা।     ইমদাদুল আহকাম”-এর ১ম জিঃ ৬৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

نماز کے بعد دعاء کرنا مطلقا جانز ھے اور رفع یدین اداب دعا سے ھے اھذا بعد نماز  عیدین کے دعاء برفع یدین جائز ھے. اور ثواب کی بھی امید ھے.

অর্থঃ- আম বা সাধারণভাবে (সকল) নামাযের পর মুনাজাত করা জায়িয, আর মুনাজাতে হাত উঠানো আদবের অন্তর্ভুক্ত। তাই ঈদাইনের নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা জায়িয এবং ছওয়াব লাভের আশা করা যায়।        আশ্রাফী বেহেশতী জিওর”-এর ১১ জিঃ ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

بعد نماز عیدین کے (یاخطبہ کے بعد) دعا مانگنا گو نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم اور  انکے صحابہ، تابعین اور تبع تابعین رضی اللہ عنھم سے منقول نھین مگر چونکہ ھر نماز کے  بعد دعا مانگنا مسنون ھے اسلئے بعد نماز  عبدین بھی دعا مانگنا مسنون ھوگا.
অর্থঃ- ঈদের নামাযের পর অথবা খুৎবার পর মুনাজাত করা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীনগণ হতে বর্ণিত নেই। আমভাবে প্রত্যেক নামাযের পর যেহেতু মুনাজাত করা সুন্নত, সেহেতু ঈদের নামাযের পরও মুনাজাত করা সুন্নত।      আহসানুল ফতওয়া”-এর ৩০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

چونکہ نصوص عام سے فضیلت دعاء بعد  الصلوۃ ثابت ھے احادیث کثیرہ کے علاوہ "فاذا فرغت فانصب" سے بھی استدلال کیا جاتا ھے لھذا نماز عیدین کے بعد بھی دعا جائز ھے.
অর্থঃ- যেহেতু আম বা সাধারণভাবে দলীল দ্বারা নামাযের পর মুনাজাত করার ফযীলত প্রমাণিত রয়েছে। অসংখ্য হাদীস শরীফ ছাড়াও فاذا فرغت এ আয়াত শরীফ দ্বারাও নামাযের পর মুনাজাত করা প্রমাণিত হয়। তাই ঈদের নামাযের পরও মুনাজাত করা জায়িয।”            “ফতওয়ায়ে মাহমূদিয়াহ২য় জিঃ ২৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور عیدین کی نماز کے بعد خصوصیت سے دعاء یا عدم دعاء منقول نھین لیکن مطلقا ھر  نماز کے بعد دعا روایات سے ثابت ھے. پس  عیدین کے بعد بھی دعا کرنا مسنون ھوگا.
অর্থঃ- এবং ঈদের নামাযের পর নির্দিষ্টভাবে মুনাজাত করার ব্যাপারে কোন আদেশ বা নিষেধ বর্ণিত নেই। কিন্তু আম বা সাধারণভাবে প্রত্যেক নামাযের পর মুনাজাত করা, হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। সুতরাং ঈদের নামাযের পর মুনাজাত করাও সুন্নত।”    দেওবন্দীদের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারাও স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আম দলীল দ্বারা খাছ বিষয় প্রমাণিত হয়। তাই তারা ঈদ, তারাবীহ, আযানের পর দোয়া-মুনাজাত করা ও দোয়ায় হাত উঠানোকে আম দলীলের ভিত্তিতেই জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে।  
মূলকথা হলো, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা অকা্যঁভাবে প্রমাণিত হলো যে, ‘জানাযার পর দোয়া-মুনাজাত করা জায়িয।এটা শুধু আম দলীল দ্বারাই প্রমাণিত নয় বরং এর স্বপক্ষে বহু খাছ দলীলও বিদ্যমান রয়েছে। আরো প্রমাণিত হলো যে, “আমদলীল দ্বারা খাছ বিষয় প্রমাণিত হয়নামুনাজাত বিরোধীদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। সুতরাং খাছ দলীল বাদ দিলেও আম দলীলের দ্বারাই জানাযার পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে দোয়া-
মুনাজাত করা জায়িয ও সুন্নত প্রমাণিত হয়। জানাযার পর মুনাজাত বিরোধীদের মনগড়া যুক্তি ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য  এবং তার খন্ডনমূলক জাওয়াব-৩    
মুনাজাত বিরোধীরা তাদের বাতিল মতকে ছাবিত করার উদ্দেশ্যে আরো বলে থাকে যে, “জানাযা মূলতঃ দোয়া, অর্থাৎ জানাযা দোয়ার উদ্দেশ্যে পড়া হয়। তাই জানাযার পর দোয়া করার কোনই প্রয়োজন নেই।”    মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, ‘জানাযা মূলতঃ দোয়া’  এ কথা মোটেও শুদ্ধ নয় বরং সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ ও ইমাম-মুজতাহিদগণের মতের খিলাফ।
মূল ফতওয়া হলো, জানাযা মূলতঃ ছলাত বা নামায।এটাকে শুধু দোয়া বলে এরপর পুনরায় দোয়া করার হুকুমকে বাদ দেয়া অজ্ঞতা ও গোমরাহীরই নামান্তর। কেননা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার পবিত্র কালামে পাকে জানাযাকে ছলাত বা নামাযবলে উল্লেখ করেছেন। আর আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও হাদীস শরীফে জানাযাকে” “ছলাত বা নামাযবলে উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয় ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও হাদীস শরীফ, শরাহ ও ফিক্বাহের কিতাব সমূহে জানাযাকে নামাযবলেই উল্লেখ করেছেন। যেমন, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
صل عليهم ان صلاتك سكن لهم.
অর্থঃ- “(হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি উনাদের (মুমিনগণের) উদ্দেশ্যে ছলাত বা নামায” (জানাযা) পড়ুন। নিশ্চয়ই আপনার ছলাত বা নামাযতাদের জন্য শান্তির কারণ।” (সূরা তাওবা/১০৩)          
কুরআন শরীফের ন্যায় হাদীস শরীফেও জানাযাকে ছলাত বা নামায বলা হয়েছে। কোথাও জানাযাকে দোয়া বলা হয়নি। নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ ও তার ব্যাখা দ্বারাই বিষয়টি স্পষ্ট  হয়ে যাবে। যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

وقال النبى صلى الله عليه وسلم من صلى على الجنازة وقا صلوا على صاحبكم وقال صلوا على النجاشى سماها صلوة ليس فيها ركوع ولا سجود ولا ينكلم فيها وفيها تكبير وتسليم، وكان ابن عمر لايصلى الا طاهرا ولا يصلى عند طلوع الشمس ولا عند غروبها ويرفع يديه، وقال الحسن ادركت الناس واحقهم على جنائزهم من رضوه لفر ائضهم واذا احدث يوم العيد او عند الجنازة يطلب الماء ولا يتيمم واذا انتهى الى الجنازة وهم يصلون يدخل معهم بتكبيرة. وقال ابن المسيب يكبر باليل والنهار والسفر والحضر ارعا وقال انس التكبيرة الواحدة استفتاح الصلوة وقلا عزوجل ولاتصل على احد منهم مات ابدا وفيه صفوف وامام.
অর্থঃ- হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জানাযা নামায পড়বে (সে এক ক্বীরাত ছওয়াব পাবে)। তিনি আরো বলেন, তোমরা তোমাদের সাথীগণের জানাযা নামায পড়বে। আবিসিনিয়ার অধিপতির মৃত্যু সংবাদে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা নাজ্জাশীর উপর জানাযা নামায পড়। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযাকে صلوة বা নামায বলে নামকরণ করেছেন। কিন্তু এই নামাযে রুকু ও সিজদা নেই এবং এতে কথা-বার্তাও বলা হয়না। এতে আছে তাকবীর ও পরে সালাম। হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা পবিত্রতা ছাড়া জানাযা নামায পড়তেন না এবং সূর্যোদয় ও অস্তকালীন সময়েও পড়তেন না। তিনি তাকবীরের সাথে হাত উঠাতেন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে এ নিয়মে জানাযা আদায় করতে পেয়েছি যে, উনারা এমন ব্যক্তিকে জানাযার জন্য অগ্রাধিকার দিতেন, যাঁকে উনারা ফরয নামাযের জন্য পছন্দ করতেন। কেননা, উনারা এটাকে ফরয মনে করতেন। যদি কোন ব্যক্তির ঈদের নামাযে অথবা জানাযার সময় অযূ ভেঙ্গে যেত, তাহলে পানি খোঁজ করতেন, তাইয়াম্মুম করতেন না। আর যখন জানাযার নিকট পৌঁছে দেখতেন যে, লোকেরা নামায পড়ছে, তখন তিনি তাকবীর উচ্চারণ করে তাদের সাথে নামাযে শরীক হতেন। হযরত ইবনে মুসাইয়্যিব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রাতে ও দিনে স্বদেশে ও বিদেশে (স্বগৃহে ও সফরে) জানাযায় চার তাকবীরই হবে। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক তাকবীর হচ্ছে নামায আরম্ভ করার জন্য। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “উনাদের (মুনাফিকদের) কোন মৃতের উপর কখনো জানাযার নামায পড়বেনা।আর জানাযার মধ্যে কয়েকটি সারি ও ইমামের ব্যবস্থা থাকবে।” (বুখারী শরীফ ১ম জিঃ ১৭৬ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী ৩য় জিঃ ১৮৯, ১৯০ পৃষ্ঠা, উমদাতুল ক্বারী ৮ম জিঃ ১২২, ১২৩ পৃষ্ঠা, ইরশাদুস সারী, শরহুল কিরমানী ৭ম জিঃ ১০৮ পৃষ্ঠা, তাইসীরুল বারী)   অত্র হাদীস শরীফের سماها صلوة এর  ব্যাখ্যায়  ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তাহচ্ছে, যেমন বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফতহুল বারী”-এর ৩য় জিঃ ১৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 قوله (سماها صلاة) اى يشترط فيها ما يشترط فى الصلاو وان م يكن فيها ركوع واسجود انه لا يتكلم فيها ويكير فيها ويسلم منها بالاتقاق، وان اختلف فى عدد التكبير والتسليم.
অর্থঃ- হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্তি (سماها صلاة হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযাকে صلوة বা নামায বলে নাম করণ করেছেন।) অর্থাৎ অন্যান্য নামাযে যেরকম শর্ত করা হয়, জানাযা নামাযেও সেরকম শর্ত বিদ্যমান। যদিও জানাযায় রুকূ ও সিজদা নাই। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কথা-বার্তাও বলা হয় না। এতে (চার) তাকবীর দিতে হয় এবং এটা থেকে ফারেগ হওয়ার জন্য সম্মিলিতভাবে সালাম ফিরাতে হয়। যদিও এর তাকবীর (এর সংখ্যা) এবং সালাম (এর সংখ্যা) নিয়ে মতানৈক্য বিদ্যমান আছে।”      “ফতহুল বারী”-এর ৩য় জিঃ ১৯১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,



مراد هذا الباب الرد على من يقول ان الصلاة على الجنازة انما هى دعاء لها واستغفار فتجوز عى غير طهارة، فاول المصنف الرد عليه من جهة التسمية التى سماها رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة، ولوكان الغرض الدعاء وحده لما اخرجهم الى البقيع، ولدعا فى المسجد وامرهم بالدعاء معه او التامين على دعاءه، ولما صفهم خلفه كما يصنع فى الصلاة المغروضة والمسنونة.

অর্থঃ- ““জানাযা নামাযেরনিয়ম-কানুন সম্পর্কে পরিচ্ছেদ) বাব দ্বারা রদ করা উদ্দেশ্য তাদের উক্তি, যারা বলে নিশ্চয়ই জানাযা নামায মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তিগফারস্বরূপ। অথচ দোয়া, ইস্তিগফার পবিত্রতা ছাড়াও জায়িয।
প্রথমতঃ মুছান্নিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উহাকে নাম করণের কারণ দ্বারা রদ করেছেন। তা হচ্ছে, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযাকে ম্বব্জৈব্ধ বা নামায বলে নাম করণ করেছেন। যদি শুধু দোয়াই উদ্দেশ্য হতো, তবে কেন তিনি উনাদেরকে জান্নাতুল বাক্বীর দিকে বের করে দিলেন? দোয়াতো মসজিদেই হতো। আর তিনি উনাদেরকে উনার সাথে দোয়া করতে অথবা উনার দোয়ায় আমীন বলতে নির্দেশ করলেন। আর কেনই বা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনার পিছনে কাঁতার করে দাঁড়ালেন? যেমন ফরয ও সুন্নত নামায সমূহে সাঁরিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো হয়। (অর্থাৎ জানাযা নামায صلاة বা নামাযএটা استغفار বা دعاءনয়)”           বুখারী শরীফের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারী”-এর ৮ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

(سماها صلاة ليس فيها ركوع ولا سجود) اى سمى النبى صلى الله عليه وسلم الهيئة الخاصة التى يدعى فيها للميت صلاة والحال انه ليس فيها ركوع ولا سجود.

অর্থঃ- “(তিনি জানাযাকে নাম করণ করেছেন صلاةবা নামায বলে, যার মধ্যে রুকু ও সিজদা নাই) অর্থাৎ নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাছ ভাবে (জানাযাকে) নামায হিসেবে নাম করণ করেছেন, যার মধ্যে মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করা হয়। আর অবস্থা এমন যে, নিশ্চয়ই এর মধ্যে রুকু ও সিজদার ব্যবস্থা নেই।”         বুখারী শরীফের শরাহ     শরহুল কিরমানী”-এর ৭ম জিঃ ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قوله (سماها) اى سمى النبى صلى الله عليه وسلم الهيئة الخاصة التى يدعى فيها للميت صلاة.

অর্থঃ- ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্তি (سماها এর নাম করণ করা হয়েছে) অর্থাৎ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাছ ভাবে (জানাযাকে) নামায বলে নাম করণ করেছেন, যাতে মাইয়্যিতের জন্য দোয়ার ব্যবস্থা আছে।”              মুয়াত্তা শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ         আওজাযুল মাসালিক”-এর  ৪র্থ জিঃ ২৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقد سمى صلى الله عليه وسلم الصلاة على الجنازة صلاة فى نحوقوله: صلواعلى صاحبكم، وقوله فى النجاشى صلوا عليه.
অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযা নামাযকে صلاة বা নামাযহিসেবে নাম করণ করেছেন। যেমন, উনার (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) হাদীস শরীফ, তোমরা তোমাদের সাথীদের উদ্দেশ্যে (জানাযা) নামায পড়। নাজ্জাশীর জানাযার ব্যাপারে উনার(হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) হাদীস শরীফ তোমরা উনার (জানাযা) নামায পড়।”      “আওজাযুল মাসালিক ইলা মুয়াত্তা মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি”-এর ৪র্থ জিঃ ২৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال ابن المرابط قد سماها رسول الله صلى اله عليه وسلم صلاة ولو كان الغرض الدعاء وحده ما اخر جهم الى المصلى ولدعا فى المسجد وامرهم بالدعاء معه او التامين على دعائه ولما صفهم خلفه كما يصنع فى الصلاة المفروضة والمسزنة.
অর্থঃ- হযরত ইবনুল মারাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযার নাম করণ করেছেন صلاة বা নামায হিসেবে। যদি শুধু দোয়াই উদ্দেশ্যে হতো, তবে কেন উনাদেরকে তিনি নামাযের স্থান তথা ঈদগাহের দিকে বের করলেন? দোয়াতো মসজিদেই হতো। আর তিনি উনাদেরকে উনার সাথে দোয়া করতে অথবা উনার দোয়ায় আমীন বলতে নির্দেশ করলেন। আর কেনই বা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনার পিছনে কাঁতার করে দাঁড়ালেন? যেমন, ফরয ও সুন্নত নামায সমূহে কাঁতার করে দাঁড়ানো হয়।”          “আওজাযুল মাসালিক”-এর ৪র্থ জিঃ ২৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

(مالك، عن نافع ان عبد الله بن عمر رضى الله عنهما كان يقول: لا يصلى الرجل على الجنازة الاوهو طاهر) من الحدث الاكبر والاصغر نقل ابن عبد البر الاتفاق على اشتراط الطهارة فيها، الا عن الشعبى لانه دعاء واستغفار فيجوز بلاطهارة.
অর্থঃ- “(হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম নাফি রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বলেন, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেছেন; লোকেরা জানাযা নামায পবিত্রতা ছাড়া পড়তেন না।) হদসে আকবর (অর্থাৎ গোসল ফরযজনিত অপবিত্রতা) এবং হদসে আছগর (অযূর জরুরত মূলক অপবিত্রতা) থেকে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত জানাযা পড়তেন না। হযরত ইবনে আব্দুল্লাহ বাব নকল করেছেন যে, ঐক্যমতানুযায়ী জানাযার জন্য ত্বাহারাত অর্জন করা শর্ত। তবে শাবী-এর মতে শর্ত নয়। কেননা জানাযা দোয়া ও ইস্তিগফার আর তা ত্বহারাত ব্যতীতও জায়িয।”  “উমদাতুল ক্বারী”-এর ৮ম জিঃ ১২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان عبد الله ابن عمر كان لايصلى على الجنازة الابطهارة وقال ابن بطال كان غرض البخارى بهذا الرد على الشعبى فانه اجاز الصلاة على الجنازة يغير طهارة قال لانه دعاء ليس فيها ركوع ولا سجود قال والفقهاء مجمعون من السلف والخلف على خلاف قوله.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা জানাযা নামায ত্বহারাত ছাড়া পড়তেন না। হযরত ইবনে বাত্তাল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, শাবী-এর মত খন্ডন করা। কেননা তিনি ত্বাহারাত ছাড়া জানাযা নামায জায়িয ফতওয়া দেন। তিনি বলেন, কেননা জানাযা দোয়া, যার মধ্যে রুকূ ও সিজদা নেই।হযরত ইবনে বাত্তাল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সালফ ও খলফ ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মত শাবী-এর মতের সম্পূর্ণই বিপরীত। অর্থাৎ জানাযা নামায পবিত্রতাসহ পড়তে হবে এ বিষয়ে ইজমাহয়েছে।”          
উপরোক্ত ইবারত দুটি থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, আমাদের মতে জানাযার নামায অযূসহ পড়তে হবে। ত্বহারাত ছাড়া শুদ্ধ হবেনা। যেহেতু এটা صلاة বা নামায। কিন্তু দোয়ার জন্য ত্বহারাত হাছিল করতে তাকিদ প্রদান করা হয় নাই।         
তাই প্রমাণিত হলো যে, জানাযা মূলতঃ صلوة বা নামায। এটা দোয়া বা ইস্তিগফার নয়। এটা যেহেতু নামায। আর নামাযের পর দোয়া করার প্রয়োজনীয়তা কুরআন-সুন্নাহতেই বর্ণিত রয়েছে। কাজেই জানাযার পর দোয়া করার প্রয়োজন নেইমুনাজাত বিরোধীদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। যা কূফরীও বটে।   
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, হ্যাঁ, জানাযার নামায অবশ্যই মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া-ইস্তিগফারের উদ্দেশ্যে পড়া হয়। জানাযার নামাযে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা হয় বলে নামাযের পর আর দোয়া করা যাবেনা বা দোয়া করার প্রয়োজন নেইএ কথা মোটেও কুরআন সুন্নাহ সম্মত নয়। যদি তাই হতো তবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয নামায আদায় করে তারপর মুনাজাত করতেন না। কেননা ফরয নামাযের মধ্যেও তো দোয়া রয়েছে। যেমন, সূরায়ে ফাতিহা একটি দোয়া। ছানা, দোয়ায়ে মাছূরা, তাশাহহুদ, কুনূত ইত্যাদি প্রত্যেকটিই দোয়ার অন্তর্ভুক্ত।
যদি জানাযায় মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা হয় বলে নামাযের পর আর দোয়া করা না যায় তবে ফরয নামাযের পরও দোয়া করা যাবেনা বা দোয়া করার কোন প্রয়োজন নেই। মুনাজাত বিরোধীরা এটা মেনে নিবে কি?         
মূলতঃ ফরয নামাযে দোয়া থাকা সত্ত্বেও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু নামাযের পর পুনরায় দোয়া করেছেন এবং অসংখ্য হাদীস শরীফ দ্বারা ফরয নামাযের পর দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেহেতু প্রমাণিত হয় যে,জানাযা নামাযে দোয়া করার পরও জানাযা নামাযের পর দোয়া করা অবশ্যই জায়িয এবং অবশ্যই জানাযার পর দোয়া করার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা, মৃত ব্যক্তির জন্যে বেশী বেশী দোয়া করার নির্দেশ হাদীস শরীফেই এসেছে। 
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই অজ্ঞতামূলক ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।  য (অসমাপ্ত) 

0 Comments: